৭৪ শতাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই মৌলিক সরঞ্জামের অভাব by শিশির মোড়ল
দেশের ৭৪ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ন্যূনতম মৌলিক সরঞ্জামের অভাব আছে। ৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ প্রতিরোধের মানসম্পন্ন ব্যবস্থা নেই। স্বাভাবিক প্রসবসেবার ব্যবস্থা আছে ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।
সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান জরিপ ২০১৪’-তে দেশের স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) চালিত ও ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ওপর জাতীয় এই জরিপ চালানো হয়। জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে শিশুদের টিকাদানের হার কমছে। ৬১ শতাংশ সেবাপ্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার সময় রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা হয় না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোর দিক থেকে দেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু সেবার মান সেই অনুপাতে বাড়েনি। জরিপে সেটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট), অ্যাসোসিয়েটস ফর কমিউনিটি অ্যান্ড পপুলেশন রিসার্চ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইসিএফ ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ জরিপ করেছে। জরিপে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএসএআইডি। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। আজ ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের আগে এই ফল প্রকাশ করা হলো।
জরিপে ১ হাজার ৫৪৮টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল ২৯৪টি, ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি ক্লিনিক ও সেবাকেন্দ্র ৫৯০টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ৪২০টি, এনজিও ক্লিনিক ও হাসপাতাল ১৫৭টি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ৮৭টি। গত বছরের ২২ মে থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান ও সেবাকেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
জরিপ সম্পর্কে নিপোর্টের সাবেক পরিচালক (গবেষণা) আহমেদ-আল-সাবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই জরিপ থেকে ভিত্তিমূলক তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপে ত্রুটিগুলো সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে চিকিৎসাসেবার মান বাড়ানো সম্ভব হবে।’
জরিপের ফলের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। গতকালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক মাখদুমা নার্গিস প্রথম আলোকে বলেন, সব কমিউনিটি ক্লিনিকে ওজন মাপার যন্ত্র, থার্মোমিটার আছে। ৫০ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু এ জরিপে এর প্রতিফলন নেই।
সহায়ক সুযোগ-সুবিধা: জরিপে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৭০ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকে। ৮১ শতাংশ এনজিও ক্লিনিক ও ৯৮ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালে নিয়মিত বিদ্যুৎ আছে।
৮৭ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন পানি সরবরাহ আছে। গ্রামীণ এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে খারাপ। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগের ৩৩ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন পানির সরবরাহ নেই।
জরিপে দেখা গেছে, সেবা নিতে আসা মানুষের জন্য ২৮ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাট্রিন নেই। সরকারি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের ৮৬ শতাংশে রোগীদের জন্য ল্যাট্রিন আছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও এনজিও ক্লিনিকে এই হার আরও কিছু বেশি। তবে ১০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে, ১৭ শতাংশ উপজেলা হাসপাতালে এবং ৪২ শতাংশ মা ও শিশুসেবাকেন্দ্রে জরুরি যানবাহন সেবা নেই। সরকারের ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে এবং কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকেই জরুরি যানবাহন সেবার ব্যবস্থা নেই। নবজাতক ও প্রসূতি মৃত্যুর অন্যতম কারণ জরুরি প্রয়োজনে যানবাহনের অভাবে রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারা।
অনেকে অভিযোগ করেন, সরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা হয় না। জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা হয় না। এ কারণে রোগী খোলামেলাভাবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার আছে। এই পাঁচ ধরনের সহায়ক সুযোগ আছে মাত্র ১১ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে।
মৌলিক সরঞ্জাম: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (২০১২ সাল) নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রতিটি চিকিৎসাকেন্দ্রে ছয়টি চিকিৎসা-সরঞ্জাম থাকা আবশ্যক। এগুলো হচ্ছে বয়স্কদের ওজন পরিমাপ যন্ত্র, শিশুদের ওজন পরিমাপ যন্ত্র, থার্মোমিটার, স্টেথিসকোপ, রক্তচাপ পরিমাপ যন্ত্র এবং বাতি।
জরিপে দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই এসব সরঞ্জামের অভাব আছে। ২৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে এই ছয় ধরনের সরঞ্জামের সবগুলোই আছে। জরিপকারীরা ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে স্টেথিসকোপ, ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে থার্মোমিটার, ১৩ শতাংশে রক্তচাপ মাপা যন্ত্র, ১৮ শতাংশে বয়স্কদের ওজন পরিমাপ যন্ত্র এবং ৪৩ শতাংশে শিশুদের ওজন পরিমাপ যন্ত্র পাননি। ৬০ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে আলো বা বাতির ব্যবস্থা নেই।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ: নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনা মেনে চললে এবং কড়া নজরদারি থাকলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। জীবাণুমুক্ত করা সরঞ্জাম, ইনসেনেটর যন্ত্রপাতি, ব্যবহৃত ধারালো ছুরি-কাঁচি রাখার পাত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সিরিঞ্জ ও সুই ফেলার ব্যবস্থা, সাবান, প্রবহমান পানি, গ্লাভস, মুখোশ, গাউন—এসব সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে।
জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০টির মধ্যে দুটি চিকিৎসাকেন্দ্রে ধারালো ছুরি-কাঁচি, সিরিঞ্জ ও সুই ফেলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। অর্ধেক প্রতিষ্ঠানে প্রবহমান পানি ও সাবান নেই। ২৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে সেবাকর্মীদের মুখোশ পরার ব্যবস্থা আছে। ৮৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে জীবাণুমুক্ত করার সরঞ্জাম নেই। ১৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনা মানার কথা বলা হয়। আর ওপরে উল্লিখিত নয় ধরনের জিনিসই আছে মাত্র ৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।
রোগনির্ণয় ক্ষমতা: চিকিৎসা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার জন্য পাঁচটি পরীক্ষা (হিমোগ্লোবিন, রক্তে শর্করা, প্রস্রাবে প্রোটিন, প্রস্রাবে শর্করা এবং গর্ভাবস্থা) ও এক্স-রে দরকার হয়। এগুলো ন্যূনতম প্রয়োজন। জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরীক্ষা করা হয়—এমন প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশেরও কম। হিমোগ্লোবিন ও রক্তে শর্করা পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে যথাক্রমে ১২ ও ৭ শতাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রে। গর্ভাবস্থা পরীক্ষা হয় ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে। প্রস্রাবে প্রোটিন ও শর্করা পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে যথাক্রমে ৬ ও ৫ শতাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রে। এই পাঁচ ধরনের পরীক্ষাই করা হয় মাত্র ৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।
জরিপে দেখা গেছে, সরকারি পর্যায়ে জেলা ও উপজেলার নিচে কোনো প্রতিষ্ঠানে এক্স-রে যন্ত্র নেই। তার পরও ২৭ শতাংশ জেলা হাসপাতালে এক্স-রে যন্ত্র চালু পাওয়া যায়নি। তবে ৬২ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালে এই যন্ত্র আছে। এনজিওগুলোর ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে যন্ত্রটি দেখা যায়।
গতকাল অনুষ্ঠানে জরিপ প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ উপস্থাপন করেন ইউএসএআইডির গবেষণা উপদেষ্টা কান্তা জামিল, যুক্তরাষ্ট্রের আইসিএফের পরামর্শক আহমেদ আল-সাবির, সেভ দ্য চিলড্রেনের মা ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান ইশতিয়াক মান্নান, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক শামস-এল-আরেফিন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ কারার জুনায়েত আহসান, নিপোর্টের মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আহসানুল আলম, একই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী শাহীন সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন নিপোর্টের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন।
সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান জরিপ ২০১৪’-তে দেশের স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) চালিত ও ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ওপর জাতীয় এই জরিপ চালানো হয়। জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে শিশুদের টিকাদানের হার কমছে। ৬১ শতাংশ সেবাপ্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার সময় রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা হয় না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোর দিক থেকে দেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু সেবার মান সেই অনুপাতে বাড়েনি। জরিপে সেটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট), অ্যাসোসিয়েটস ফর কমিউনিটি অ্যান্ড পপুলেশন রিসার্চ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইসিএফ ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ জরিপ করেছে। জরিপে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএসএআইডি। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। আজ ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের আগে এই ফল প্রকাশ করা হলো।
জরিপে ১ হাজার ৫৪৮টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল ২৯৪টি, ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি ক্লিনিক ও সেবাকেন্দ্র ৫৯০টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ৪২০টি, এনজিও ক্লিনিক ও হাসপাতাল ১৫৭টি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ৮৭টি। গত বছরের ২২ মে থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান ও সেবাকেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
জরিপ সম্পর্কে নিপোর্টের সাবেক পরিচালক (গবেষণা) আহমেদ-আল-সাবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই জরিপ থেকে ভিত্তিমূলক তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপে ত্রুটিগুলো সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে চিকিৎসাসেবার মান বাড়ানো সম্ভব হবে।’
জরিপের ফলের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। গতকালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক মাখদুমা নার্গিস প্রথম আলোকে বলেন, সব কমিউনিটি ক্লিনিকে ওজন মাপার যন্ত্র, থার্মোমিটার আছে। ৫০ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু এ জরিপে এর প্রতিফলন নেই।
সহায়ক সুযোগ-সুবিধা: জরিপে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৭০ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকে। ৮১ শতাংশ এনজিও ক্লিনিক ও ৯৮ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালে নিয়মিত বিদ্যুৎ আছে।
৮৭ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন পানি সরবরাহ আছে। গ্রামীণ এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে খারাপ। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগের ৩৩ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন পানির সরবরাহ নেই।
জরিপে দেখা গেছে, সেবা নিতে আসা মানুষের জন্য ২৮ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাট্রিন নেই। সরকারি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের ৮৬ শতাংশে রোগীদের জন্য ল্যাট্রিন আছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও এনজিও ক্লিনিকে এই হার আরও কিছু বেশি। তবে ১০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে, ১৭ শতাংশ উপজেলা হাসপাতালে এবং ৪২ শতাংশ মা ও শিশুসেবাকেন্দ্রে জরুরি যানবাহন সেবা নেই। সরকারের ইউনিয়ন পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে এবং কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকেই জরুরি যানবাহন সেবার ব্যবস্থা নেই। নবজাতক ও প্রসূতি মৃত্যুর অন্যতম কারণ জরুরি প্রয়োজনে যানবাহনের অভাবে রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারা।
অনেকে অভিযোগ করেন, সরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা হয় না। জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা হয় না। এ কারণে রোগী খোলামেলাভাবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার আছে। এই পাঁচ ধরনের সহায়ক সুযোগ আছে মাত্র ১১ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে।
মৌলিক সরঞ্জাম: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (২০১২ সাল) নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রতিটি চিকিৎসাকেন্দ্রে ছয়টি চিকিৎসা-সরঞ্জাম থাকা আবশ্যক। এগুলো হচ্ছে বয়স্কদের ওজন পরিমাপ যন্ত্র, শিশুদের ওজন পরিমাপ যন্ত্র, থার্মোমিটার, স্টেথিসকোপ, রক্তচাপ পরিমাপ যন্ত্র এবং বাতি।
জরিপে দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই এসব সরঞ্জামের অভাব আছে। ২৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে এই ছয় ধরনের সরঞ্জামের সবগুলোই আছে। জরিপকারীরা ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে স্টেথিসকোপ, ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে থার্মোমিটার, ১৩ শতাংশে রক্তচাপ মাপা যন্ত্র, ১৮ শতাংশে বয়স্কদের ওজন পরিমাপ যন্ত্র এবং ৪৩ শতাংশে শিশুদের ওজন পরিমাপ যন্ত্র পাননি। ৬০ শতাংশ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে আলো বা বাতির ব্যবস্থা নেই।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ: নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনা মেনে চললে এবং কড়া নজরদারি থাকলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। জীবাণুমুক্ত করা সরঞ্জাম, ইনসেনেটর যন্ত্রপাতি, ব্যবহৃত ধারালো ছুরি-কাঁচি রাখার পাত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সিরিঞ্জ ও সুই ফেলার ব্যবস্থা, সাবান, প্রবহমান পানি, গ্লাভস, মুখোশ, গাউন—এসব সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে।
জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০টির মধ্যে দুটি চিকিৎসাকেন্দ্রে ধারালো ছুরি-কাঁচি, সিরিঞ্জ ও সুই ফেলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। অর্ধেক প্রতিষ্ঠানে প্রবহমান পানি ও সাবান নেই। ২৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে সেবাকর্মীদের মুখোশ পরার ব্যবস্থা আছে। ৮৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে জীবাণুমুক্ত করার সরঞ্জাম নেই। ১৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনা মানার কথা বলা হয়। আর ওপরে উল্লিখিত নয় ধরনের জিনিসই আছে মাত্র ৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।
রোগনির্ণয় ক্ষমতা: চিকিৎসা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার জন্য পাঁচটি পরীক্ষা (হিমোগ্লোবিন, রক্তে শর্করা, প্রস্রাবে প্রোটিন, প্রস্রাবে শর্করা এবং গর্ভাবস্থা) ও এক্স-রে দরকার হয়। এগুলো ন্যূনতম প্রয়োজন। জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরীক্ষা করা হয়—এমন প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশেরও কম। হিমোগ্লোবিন ও রক্তে শর্করা পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে যথাক্রমে ১২ ও ৭ শতাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রে। গর্ভাবস্থা পরীক্ষা হয় ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে। প্রস্রাবে প্রোটিন ও শর্করা পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে যথাক্রমে ৬ ও ৫ শতাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রে। এই পাঁচ ধরনের পরীক্ষাই করা হয় মাত্র ৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।
জরিপে দেখা গেছে, সরকারি পর্যায়ে জেলা ও উপজেলার নিচে কোনো প্রতিষ্ঠানে এক্স-রে যন্ত্র নেই। তার পরও ২৭ শতাংশ জেলা হাসপাতালে এক্স-রে যন্ত্র চালু পাওয়া যায়নি। তবে ৬২ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালে এই যন্ত্র আছে। এনজিওগুলোর ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে যন্ত্রটি দেখা যায়।
গতকাল অনুষ্ঠানে জরিপ প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ উপস্থাপন করেন ইউএসএআইডির গবেষণা উপদেষ্টা কান্তা জামিল, যুক্তরাষ্ট্রের আইসিএফের পরামর্শক আহমেদ আল-সাবির, সেভ দ্য চিলড্রেনের মা ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান ইশতিয়াক মান্নান, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক শামস-এল-আরেফিন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ কারার জুনায়েত আহসান, নিপোর্টের মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আহসানুল আলম, একই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী শাহীন সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন নিপোর্টের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন।
No comments