এখনও হিসাব কষছে বিএনপি by কাফি কামাল
সিটি
করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে এখনও হিসাব কষছে বিএনপি। ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত
দিলেও গতকাল পর্যন্ত অবস্থান পরিষ্কার করেনি দলটি। তফসিল ঘোষণার পাঁচদিন
পেরিয়ে গেলেও ‘যদি-কিন্তু’র ঘূর্ণাবর্তে রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল।
সার্বিক পরিস্থিতিতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে ওঠতে পারেননি বিরোধী জোট
নেতারা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আন্দোলন চলাকালে নির্বাচনে অংশগ্রহণের
যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রচার-প্রচারণায় সমান সুযোগ-সুবিধা, বিরোধী
নেতাকর্মীদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেষ মুহূর্তের বিশ্লেষণ চলছে
বিরোধী জোটে। কারণ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এখনও তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি
করতে পারেনি। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বসহ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই
অবস্থান ঘোষণা করবে বিএনপি। আর সেটা ইতিবাচক হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ
সৃষ্টির স্বার্থে কিছু শর্ত ও পরামর্শ দেবে নির্বাচন কমিশনকে। শর্ত সংবলিত
চিঠি ও প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে এ ব্যাপারে তৎপরতা চালাবে তারা। এদিকে বিএনপি
প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার না করলেও কৌশলে এগুচ্ছে। বিশিষ্ট
নাগরিকদের নেতৃত্বে প্রাথমিক পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে বিশিষ্ট
নাগরিকদের সংগঠন ‘শত নাগরিক’ এ নিয়ে কিছু কাজ করেছে। গতকাল সংগঠনটির একটি
জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত
করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেবে তারা।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সংগঠনটির একটি জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি দল আজ সকালে
নির্বাচন কমিশনে যাবে। ওদিকে সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই শীর্ষ
নেতৃত্বের ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেন বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতৃত্ব। পরে
দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা তাদের বক্তব্যে সে ইঙ্গিতের পক্ষে সায় দেন। এ
নিয়ে দলের নেতাকর্মী, জোটের শরিক দল ও শুভাকাঙ্ক্ষী পেশাজীবী নেতাদের
অনানুষ্ঠানিক মতামত নেয়া হয়। এদিকে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন,
নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো মত
রয়েছে। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক
নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। এটা দলটির ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব
ফেলেছে। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা নির্বাচনের বিপক্ষে মতামত দিয়ে বলেছেন,
জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন চলাকালে স্থানীয় সরকার
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আন্দোলনের দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সবচেয়ে বড় বিষয়
হচ্ছে, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে বিরোধী নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ
করতে পারবে কিনা সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ সবার বিরুদ্ধে কম বেশি মামলা
রয়েছে। এখন নির্বাচনের সময় কর্মীদের পালিয়ে বেড়াতে হলে নির্বাচনের
কর্মকাণ্ড চালাবে কারা? ওদিকে চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিটি
নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে নেতাদের
যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা কমেনি। ফলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনার
মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এমন পরিস্থিতিতে
দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এছাড়া নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক
মনোভাবের ইঙ্গিত দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক বা
আলোচনার সুযোগ পাচ্ছেন না চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফলে সিদ্ধান্তগ্রহণে
বিলম্ব হচ্ছে। এদিকে বিশিষ্ট নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি নাগরিক মঞ্চ গঠনের
মাধ্যমে সিটি নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে একটি আলোচনা রয়েছে বিএনপিতে। এ
ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদের
নেতৃত্বাধীন ‘শত নাগরিক’ সংগঠনটি সে ভূমিকা পালন করতে পারে এমন ইঙ্গিত আসে
২০ দলের তরফে। গতকাল সন্ধ্যার পর প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদের বাসায় সংগঠনটির
একটি বৈঠকও হয়। তবে ‘শত নাগরিক’-এর সদস্য সচিব কবি আবদুল হাই শিকদার
মানবজমিনকে জানান, এটি ছিল নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠক। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র
করে বিশেষ কোন বৈঠক নয়। শত নাগরিক সাধারণত চিন্তার জগৎ নিয়ে কাজ করে।
সেক্ষেত্রে দেশের জন্য, জাতির জন্য, মানুষের জন্য ভাল-মন্দ নিয়ে কথা বলে।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, আজকের বৈঠকে সিটি নির্বাচনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন চলাকালে হঠাৎ সিটি
নির্বাচনের আয়োজনের বিষয়টি কৌতূহলোদ্দীপক। ফলে সিটি নির্বাচন ২০ দলের
আন্দোলনকে থামানোর চেষ্টা কিনা, আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা
কিনা, বিএনপি নির্বাচনে গেলে সরকার ও প্রশাসনের আচরণ কেমন হবে, নির্বাচন
কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারবে কিনা, সরকার ও বিরোধী
জোটের প্রার্থীরা সমান সুযোগ পাবে কিনা, দমন-পীড়ন ও গ্রেপ্তার বন্ধ হবে
কিনা এবং বিশেষ করে নির্বাচনের পাশাপাশি আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কেমন হতে
পারে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আবদুল হাই শিকদার বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে
নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছি। তবে শত নাগরিক কোন
দলের ভ্যানগার্ড নয়। নির্বাচনের ব্যাপারে তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার
বিএনপির ও ২০ দল নেতৃত্বের। সেখান থেকে এখন সুনির্দিষ্ট কোন ঘোষণা আসেনি।
ফলে সমস্ত আলোচনাই ঘুরপাক খেয়েছে যদি এবং কিন্তুর মধ্যে। সূত্র জানায়,
জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
No comments