খোকন-সেলিম মুখোমুখি
ঢাকা
সিটি করপোরেশন দক্ষিণের নির্বাচনে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন দুই প্রার্থী
সাঈদ খোকন ও হাজী মোহাম্মদ সেলিম। সাঈদ খোকনের প্রতি আওয়ামী লীগের সমর্থনের
বিষয়ে ঘোষণা আসলেও হাজী সেলিমও দলীয় সমর্থন পাবেন বলে আশা করছেন। তারা
দুইজন গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিম
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দলীয় সমর্থন না পেলেও তিনি
নির্বাচনে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা
শুরুর আগেই দুই প্রার্থী একে অপরের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন। সাঈদ
খোকন ইতিমধ্যে নির্বাচনী অচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনে হাজী সেলিমের
বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন। গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর এ
বিষয়ে তিনি হাজী সেলিমের নাম উল্লেখ না করে বলেন, একজন প্রার্থী অস্ত্র ও
পেশিশক্তি ব্যবহার করে ভোটারদের ভয় ভীতি দেখাচ্ছে। এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘন
করে প্রচারণা চালাচ্ছে। এদিকে এ অভিযোগের জবাবে হাজী সেলিম বলেছেন, একজন
সংসদ সদস্য হিসেবে তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ হচ্ছে। মানুষের সঙ্গে
হাত মেলানো বা সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণ বিধিতে কোন নিষেধাজ্ঞা
নেই। এদিকে গতকাল জাতীয় সংসদে তিনি জানিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যে তিনি জাতীয়
সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এদিকে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সাঈদ খোকন। সাক্ষাৎ শেষে
তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে নির্বাচনের সব ধরনের
প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন।
এদিকে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া আনিসুল হকের পাশাপাশি দলের সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনিও নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রত্যয়ী। কবরী মাঠে থাকলে এ সিটি করপোরেশনেও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হবে।
মেয়র পদে ৩৩, কাউন্সিলর ১৩৮৭
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ পর্যন্ত মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৩৩ জন সম্ভাব্য প্রার্থী। কাউন্সিলর পদে সংগ্রহ করেছেন ১৩৮৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৫৮ এবং সংরক্ষিত নারী পদে ২২৯ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গতকাল ঢাকা সিটি দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রয়াত মেয়র হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ও ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মো. সেলিম। আর ঢাকা সিটি উত্তরের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী। মান্নার পক্ষে তার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য আতিকুর রহমান এবং কবরীর পক্ষে তার ব্যক্তিগত সহকারী শহীদুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
বেলা ১২টার দিকে গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন সাঈদ খোকন। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে তিনি বলেন, অনেকেই আগাম প্রচারণা চালাচ্ছে। অস্ত্র ও পেশিশক্তি প্রদর্শন করে সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এগুলো সুস্পষ্ট নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর মনোয়নয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসেন ঢাকা-৭ আসনের এমপি ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি ঢাকার মানুষের সেবা করতে চাই, তাই আমি মনোনয়ন নিয়েছি। দল থেকে কাউকেই সর্মথন দেয়া হয়নি, সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমার সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগ থেকে সাঈদ খোকনকে সমর্থন দেয়ার পরেও তিনি প্রার্থী হওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের, আমি দলের মানুষ। দল এখনও যাচাই-বাছাই করছে। আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত দল আমাকেই সমর্থন করবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণ ব্যাখ্যায় হাজী সেলিম বলেন, আমি বসন্তের কোকিল নই। ঢাকাবাসী, ঢাকাইয়ারা চায় আমি মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়াই। তাই মনোনয়নপত্র নিলাম। দক্ষিণের আরেক সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকনের তোলা আচরণবিধি ভঙের অভিযোগ প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, তিনি যা ইচ্ছে বলতে পারেন, আ???মি পারি না। সংসদ সদস্য হিসেবে রাস্তায় দাঁড়ালে এক শ’ লোক জড়ো হলে, আমার কিছুই করার নেই। আচরণ বিধিতে সালাম দেয়া, হাত মেলানো তো মানা নেই।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বলা আছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সিটি করপোরেশন এলাকায় কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন অন্য কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণকে ব্যবহার করতে পারবেন না। বিধিমালার এই ধারা অনুসারে এমপি’দের গাড়ি নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। অথচ গতকাল সংসদ সদস্যের লোগো সংবলিত গাড়িতে করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আসেন ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মো. সেলিম।
ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এমপির লোগো লাগানো আরেকটি গাড়ি দেখা যায়। যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-৫১৬৯৫১। গাড়ির ড্রাইভার জানান, গাড়িটি ঢাকা-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলের। প্রথমে নির্বাচনী কাজে আসার কথা স্বীকার করলেও পরে ড্রাইভার জানান, তারা ঘুরতে এসেছেন। মনোনয়ন জমার সময় কার্যালয়ের ভেতরে পাঁচজনের বেশি প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও ধাক্কাধাক্কি করে অনেক নেতাকর্মী ঢুকে পড়েন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলবো- আপনারা প্রার্থীদের কোন অনুষ্ঠানে ডাকবেন না। প্রার্থীরাও গুরুত্বপূর্ণদের আমন্ত্রণ করবেন না। তাদের কোন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না। না হলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। ইতিমধ্যে ২৬ জন কাউন্সিলকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শোকজ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে অনেকে ক্ষমাও চেয়েছেন। তাদের ফাইল খোলাই আছে। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী হাজী সেলিমের বিরুদ্ধেও ৪টি অভিযোগ রয়েছে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে তাকেও প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তদের উদ্দেশে বলবো- আমাদের দৃষ্টি আপনাদের ওপর রয়েছে। আপনারা সতর্ক হোন। এমন কিছু করবেন না যাতে আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়। এ সময় তিনি কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙের অভিযোগ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণসহ অভিযোগের পরামর্শ দেন। এদিকে নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সরওয়ার মোর্শেদ। চিঠি পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মিহির সরওয়ার মোর্শেদ। তিনি বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের কাজ হবে। এই কাযক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজন। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে পাঁচজনের বেশি লোকের প্রবেশ, মিছিল, শো-ডাউন যাতে না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে চিঠিতে। রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গতকাল পর্যন্ত মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৫ জন। সাধারণ কাউন্সিল পদে সংগ্রহ করেছেন ৭২৪ জন এবং সংরক্ষিত পদে সংগ্রহ করেছেন ১৪৩ জন।
পশ্চিম আগারগাঁওয়ে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন পাঁচজন প্রার্থী। উৎসব মুখর পরিবেশে নিজ নিজ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এদিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এখলাস উদ্দিন মোল্লা, নাঈম হাসান, মো. তাইফুল সিরাজ, সারাহ বেগম কবরীর পক্ষে শহীদুল ইসলাম এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষে আতিকুর রহমান। মনোনয়নপত্র গ্রহণ শেষে এখলাস উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। ব্যবসার লক্ষ্যে রাজনীতি করি না। ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীর সেবা করতে চাই। বিশেষ করে ঢাকা উত্তরের যানজট নিরসন করতে চাই, পরিকল্পিত নগর গড়তে চাই। এর জন্য ঢাকা উত্তর নগরবাসীর সমর্থন প্রত্যাশা করছি। বেলা ১২টার দিকে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম আতিক আগারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এরপর সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শহীদুল্লাহ কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আইনজীবীর মাধ্যমে এটা কারাগারে পাঠানোর পর বিধি মোতাবেক জমা দেয়া হবে। মান্নার জয়ের আশা প্রকাশ করে সংগঠনের এই নেতা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। আমাদের জনসমর্থন রয়েছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মান্না রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এ পর্যন্ত মোট ১৮জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে গতকাল মনোনয়নপত্র নেন ৫ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন মোট ৪৩৪ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৬ জন। সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. শাহ আলম বলেন, ১৯শে মার্চ থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র গ্রহণ করছেন। দিন যত এগুচ্ছে প্রার্থীদের চাপও বাড়ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯শে মার্চ, যাচাই-বাছাই ১লা ও ২রা এপ্রিল এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ই এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ১০ই এপ্রিল এবং ভোটগ্রহণ হবে ২৮শে এপ্রিল।
এদিকে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া আনিসুল হকের পাশাপাশি দলের সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনিও নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রত্যয়ী। কবরী মাঠে থাকলে এ সিটি করপোরেশনেও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হবে।
মেয়র পদে ৩৩, কাউন্সিলর ১৩৮৭
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ পর্যন্ত মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৩৩ জন সম্ভাব্য প্রার্থী। কাউন্সিলর পদে সংগ্রহ করেছেন ১৩৮৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৫৮ এবং সংরক্ষিত নারী পদে ২২৯ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গতকাল ঢাকা সিটি দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রয়াত মেয়র হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ও ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মো. সেলিম। আর ঢাকা সিটি উত্তরের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী। মান্নার পক্ষে তার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য আতিকুর রহমান এবং কবরীর পক্ষে তার ব্যক্তিগত সহকারী শহীদুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
বেলা ১২টার দিকে গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন সাঈদ খোকন। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে তিনি বলেন, অনেকেই আগাম প্রচারণা চালাচ্ছে। অস্ত্র ও পেশিশক্তি প্রদর্শন করে সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এগুলো সুস্পষ্ট নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর মনোয়নয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসেন ঢাকা-৭ আসনের এমপি ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি ঢাকার মানুষের সেবা করতে চাই, তাই আমি মনোনয়ন নিয়েছি। দল থেকে কাউকেই সর্মথন দেয়া হয়নি, সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমার সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগ থেকে সাঈদ খোকনকে সমর্থন দেয়ার পরেও তিনি প্রার্থী হওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের, আমি দলের মানুষ। দল এখনও যাচাই-বাছাই করছে। আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত দল আমাকেই সমর্থন করবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণ ব্যাখ্যায় হাজী সেলিম বলেন, আমি বসন্তের কোকিল নই। ঢাকাবাসী, ঢাকাইয়ারা চায় আমি মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়াই। তাই মনোনয়নপত্র নিলাম। দক্ষিণের আরেক সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকনের তোলা আচরণবিধি ভঙের অভিযোগ প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, তিনি যা ইচ্ছে বলতে পারেন, আ???মি পারি না। সংসদ সদস্য হিসেবে রাস্তায় দাঁড়ালে এক শ’ লোক জড়ো হলে, আমার কিছুই করার নেই। আচরণ বিধিতে সালাম দেয়া, হাত মেলানো তো মানা নেই।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বলা আছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সিটি করপোরেশন এলাকায় কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন অন্য কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণকে ব্যবহার করতে পারবেন না। বিধিমালার এই ধারা অনুসারে এমপি’দের গাড়ি নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। অথচ গতকাল সংসদ সদস্যের লোগো সংবলিত গাড়িতে করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আসেন ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মো. সেলিম।
ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এমপির লোগো লাগানো আরেকটি গাড়ি দেখা যায়। যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-৫১৬৯৫১। গাড়ির ড্রাইভার জানান, গাড়িটি ঢাকা-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলের। প্রথমে নির্বাচনী কাজে আসার কথা স্বীকার করলেও পরে ড্রাইভার জানান, তারা ঘুরতে এসেছেন। মনোনয়ন জমার সময় কার্যালয়ের ভেতরে পাঁচজনের বেশি প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও ধাক্কাধাক্কি করে অনেক নেতাকর্মী ঢুকে পড়েন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলবো- আপনারা প্রার্থীদের কোন অনুষ্ঠানে ডাকবেন না। প্রার্থীরাও গুরুত্বপূর্ণদের আমন্ত্রণ করবেন না। তাদের কোন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না। না হলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। ইতিমধ্যে ২৬ জন কাউন্সিলকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শোকজ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে অনেকে ক্ষমাও চেয়েছেন। তাদের ফাইল খোলাই আছে। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী হাজী সেলিমের বিরুদ্ধেও ৪টি অভিযোগ রয়েছে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে তাকেও প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তদের উদ্দেশে বলবো- আমাদের দৃষ্টি আপনাদের ওপর রয়েছে। আপনারা সতর্ক হোন। এমন কিছু করবেন না যাতে আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়। এ সময় তিনি কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙের অভিযোগ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণসহ অভিযোগের পরামর্শ দেন। এদিকে নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সরওয়ার মোর্শেদ। চিঠি পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মিহির সরওয়ার মোর্শেদ। তিনি বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের কাজ হবে। এই কাযক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজন। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে পাঁচজনের বেশি লোকের প্রবেশ, মিছিল, শো-ডাউন যাতে না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে চিঠিতে। রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গতকাল পর্যন্ত মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৫ জন। সাধারণ কাউন্সিল পদে সংগ্রহ করেছেন ৭২৪ জন এবং সংরক্ষিত পদে সংগ্রহ করেছেন ১৪৩ জন।
পশ্চিম আগারগাঁওয়ে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন পাঁচজন প্রার্থী। উৎসব মুখর পরিবেশে নিজ নিজ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এদিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এখলাস উদ্দিন মোল্লা, নাঈম হাসান, মো. তাইফুল সিরাজ, সারাহ বেগম কবরীর পক্ষে শহীদুল ইসলাম এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষে আতিকুর রহমান। মনোনয়নপত্র গ্রহণ শেষে এখলাস উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। ব্যবসার লক্ষ্যে রাজনীতি করি না। ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীর সেবা করতে চাই। বিশেষ করে ঢাকা উত্তরের যানজট নিরসন করতে চাই, পরিকল্পিত নগর গড়তে চাই। এর জন্য ঢাকা উত্তর নগরবাসীর সমর্থন প্রত্যাশা করছি। বেলা ১২টার দিকে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম আতিক আগারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এরপর সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শহীদুল্লাহ কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আইনজীবীর মাধ্যমে এটা কারাগারে পাঠানোর পর বিধি মোতাবেক জমা দেয়া হবে। মান্নার জয়ের আশা প্রকাশ করে সংগঠনের এই নেতা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। আমাদের জনসমর্থন রয়েছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মান্না রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এ পর্যন্ত মোট ১৮জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে গতকাল মনোনয়নপত্র নেন ৫ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন মোট ৪৩৪ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৬ জন। সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. শাহ আলম বলেন, ১৯শে মার্চ থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র গ্রহণ করছেন। দিন যত এগুচ্ছে প্রার্থীদের চাপও বাড়ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯শে মার্চ, যাচাই-বাছাই ১লা ও ২রা এপ্রিল এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ই এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ১০ই এপ্রিল এবং ভোটগ্রহণ হবে ২৮শে এপ্রিল।
No comments