সুযোগের নতুন জানালা? by তোফায়েল আহমেদ
ঢাকা
মহানগরের দুটি সিটি করপোরেশনের বিলম্বিত ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের
আগাম নির্বাচনের ঘোষণায় সারা দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ শুরু হলো।
খোলা হলো সুযোগের নতুন জানালা। আশা করব এ জানালা দিয়ে শান্তি, সমঝোতা,
নিয়মতান্ত্রিকতা ও সাংবিধানিকতার সুবাতাস প্রবাহিত হয়ে একসময় চলমান
রাজনৈতিক সংকটের বদ্ধ দরজাও খুলে যাবে। বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর ও
আতঙ্কগ্রস্ত রাজনীতি নবতর সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর নিয়মতান্ত্রিক ধারায় পরিণতি
লাভ করবে। এ সবই আশাবাদ, কিন্তু দলীয় সংকীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা, হঠকারিতা
এখানে সব গুড়ে বালি দিয়ে দেবে না, তা বলা মুশকিল। এসবের মধ্যে সরকারের
সদিচ্ছা শুধু নয়, আইনের শাসন, ভিন্নমত ও গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার
প্রয়োজন।
সিটি নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সম্পূর্ণভাবে কৌশলগত। এ কৌশলেরও তিনটি দিক থাকতে পারে। এক. প্রধান বিরোধী শক্তিকে বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনের বাইরে রেখে বা নির্বাচনে এলেই হাত-পা বেঁধে রেখে খালি মাঠে গোল করা। দুই. বিরোধী জোটের স্তিমিত বা নিস্তেজ হয়ে আসা হরতাল–অবরোধ সমূলে স্তব্ধ করার কৌশল হিসেবে স্থানীয় নির্বাচনী বটিকার সময়মতো ব্যবহার করে নির্বাচনের ডামাডোলে আন্দোলনের গতি থামিয়ে দেওয়া। তিন. আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা তথা সংলাপ না করেও নির্বাচনে বিরোধী শক্তিকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন-সংগ্রামকে গঠনমূলক ও নিয়মতান্ত্রিকতার পথে পুনঃপ্রবাহিত করা।
যেকোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপেই পদক্ষেপ গ্রহণকারীর কৌশলগত অবস্থানকে উপেক্ষা করা যায় না। কিন্তু অন্য পক্ষের পাল্টা ও সুনিশ্চিত কৌশলও উপেক্ষার নয়। তাই কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ থেকে এককভাবে কোনো একটি শক্তিই শুধু সুবিধা পেতে পারে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। দেশের দুই প্রধান মহানগরের তিনটি সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী বুলেট ব্যারেল থেকে বের হয়ে গেল। এটিকে আর ফেরত আনা সম্ভব নয়। এখন নাগরিক সমাজের দিক থেকে আকুল প্রত্যাশা হবে, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হোক। যতটুকু আন্দাজ–অনুমান করা যাচ্ছিল, তা সর্বাংশে না হলেও মোটামুটি ঘটতে যাচ্ছে। আন্দোলনরত ২০-দলীয় জোট এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এই মর্মে স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই অংশগ্রহণ রাজনীতিতে নতুন চমক শুধু নয়, গুণগত পরিবর্তনেরও সূচনা করতে পারে। রাজনীতিতে সহিংসতার বিস্তার রোধ হতে পারে, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ ও নতুন রাজনীতির শক্তির উত্থানও ঘটাতে পারে।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নিয়ম, নিয়ম-নীতি ও গ্রহণযোগ্যতার একটি নতুন স্তরে উপনীত হয়েছিল। প্রার্থী ও নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মেনে চলার নতুন সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। বিশেষত, ১৯৯১—২০০৮ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯—২০১৩ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলো অন্তত সে আশা জাগরূক রেখেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সে আশা-ভরসাকে সমূলে নস্যাৎ করে দিয়েছে। বিশেষত পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের দলতান্ত্রিকতা (Partyarchy) একটি ভয়ানক দানবীয় রূপে আবির্ভূত হতে শুরু করে।
এই ধারাবাহিকতায় সব নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। এ রকম একটি অবস্থায় ২০১৫ সালের তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, অবিশ্বাস, সংশয়, ভয়ভীতি অমূলক নয়। তবু বলব, সর্বশেষ বিশ্লেষণে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিকল্প, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অসমতলতা বা বৈষম্যনীতি আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি তাদের আন্দোলন-সংগ্রামকে সংহত করতে গিয়েও তাই-ই হয়তো করবে।
সোহরাব হাসান তাঁর কলামে যথার্থই লিখেছেন, ৬২ লাখ ভোটার এবং দুই মহানগরের প্রায় দুই কোটি মানুষের সঙ্গেই এ সুযোগে দুই রাজনৈতিক পরাশক্তিকে অর্থবহ সংলাপে সম্পৃক্ত হতে এ নির্বাচনে কিছুটা বাধ্য করবে (প্রথম আলো ২১/০৩/২০১৫)। দুই দলের বড় নেতাদের সংলাপের আপাতত প্রয়োজন ফুরিয়েছে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ জরুরি। কমিশন আশা করি চতুর্মুখী সক্রিয়তা বজায় রাখবে। মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো উসকানিমূলক বক্তব্য ও গতিবিধির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে। প্রশাসনকে তাদের অধীনে এনে নিরপেক্ষতার জন্য যা যা দরকার, তা করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বিশেষত, দুই শহরের ৬২ লাখ ভোটারের ভোটদান নির্বিঘ্ন করার জন্য ২ হাজার ৭১০টি কেন্দ্রের ১৫ হাজার ৫১৭টি বুথে অন্তত সতর্কতার সঙ্গে লোক নিয়োগ করতে হবে। এখানে কোনো বিতর্কের অবকাশ রাখা চলবে না।
নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি প্রতিপালনের ব্যাপারে এনজিও, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমের সহায়তা ও সক্রিয়তাকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ইতিমধ্যে যে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালনের জন্য তিনটি সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রতিটি ওয়ার্ডের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সক্রিয়তা প্রয়োজন। বিলবোর্ড দখলদার, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, সন্ত্রাসী, অতিদলবাজ লোকদের থেকে নির্বাচনকে দূরে রাখতে হবে। সৎ, যোগ্য, চরিত্রবান প্রার্থীদের সর্বাংশে উৎসাহিত করুন। নাগরিক উদাসীনতার সুযোগে এ-জাতীয় আবর্জনা বৈধতা পেলে সিন্দবাদী ভূতের মতো তারা কাঁধে চড়ে বসবে, তাতে পরবর্তী সময়ে হা-হুতাশ করে কোনো লাভ হবে না।
বাংলাদেশে সরকারব্যবস্থা এককেন্দ্রিক এবং সংসদব্যবস্থা এক কক্ষবিশিষ্ট। এ রকম একটি ব্যবস্থায় রাজনৈতিক বহুত্ববাদের একমাত্র জায়গা বা পরিসর হচ্ছে স্থানীয় সরকার। জনগণের এ পরিসরটিকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। এখানে ভিন্নমতের অবকাশটি সযত্নে লালন করতে হবে। নতুবা সমাজ, রাজনীতি পুরোটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে কিছু অনতিক্রম্য বাস্তবতার কারণে আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় নির্বাচনকে প্রায়ই কেন্দ্রীয় রাজনীতির দুরূহ বোঝা বহন করতে হয়। এটি হওয়ার কথা ছিল না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে স্থানীয় সমস্যা ও ইস্যুকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা হওয়ার নয়। জাতীয় রাজনীতির মেরুকরণ এত প্রকট ও উৎকট যে তাতে স্থানীয় ইস্যু ও বিষয় হালে পানি পাচ্ছে না। তবু বলব, ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রার্থীরা এবং নাগরিক সমাজ স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে নির্বাচনকালীন কর্মসূচি আকারে সামনে নিয়ে আসবেন। নির্বাচনী প্রচারণা দিনে দিনে গতি পাবে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সমস্যাগুলোর প্রকার, প্রকৃতি ও তার অর্থপূর্ণ সমাধানের অঙ্গীকারগুলো দৃঢ় ভিত্তি পাবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ। পরিচালক গভর্নেন্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং সম্মানীয় ফেলো, বিইজিডি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
সিটি নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সম্পূর্ণভাবে কৌশলগত। এ কৌশলেরও তিনটি দিক থাকতে পারে। এক. প্রধান বিরোধী শক্তিকে বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনের বাইরে রেখে বা নির্বাচনে এলেই হাত-পা বেঁধে রেখে খালি মাঠে গোল করা। দুই. বিরোধী জোটের স্তিমিত বা নিস্তেজ হয়ে আসা হরতাল–অবরোধ সমূলে স্তব্ধ করার কৌশল হিসেবে স্থানীয় নির্বাচনী বটিকার সময়মতো ব্যবহার করে নির্বাচনের ডামাডোলে আন্দোলনের গতি থামিয়ে দেওয়া। তিন. আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা তথা সংলাপ না করেও নির্বাচনে বিরোধী শক্তিকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন-সংগ্রামকে গঠনমূলক ও নিয়মতান্ত্রিকতার পথে পুনঃপ্রবাহিত করা।
যেকোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপেই পদক্ষেপ গ্রহণকারীর কৌশলগত অবস্থানকে উপেক্ষা করা যায় না। কিন্তু অন্য পক্ষের পাল্টা ও সুনিশ্চিত কৌশলও উপেক্ষার নয়। তাই কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ থেকে এককভাবে কোনো একটি শক্তিই শুধু সুবিধা পেতে পারে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। দেশের দুই প্রধান মহানগরের তিনটি সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী বুলেট ব্যারেল থেকে বের হয়ে গেল। এটিকে আর ফেরত আনা সম্ভব নয়। এখন নাগরিক সমাজের দিক থেকে আকুল প্রত্যাশা হবে, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হোক। যতটুকু আন্দাজ–অনুমান করা যাচ্ছিল, তা সর্বাংশে না হলেও মোটামুটি ঘটতে যাচ্ছে। আন্দোলনরত ২০-দলীয় জোট এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এই মর্মে স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই অংশগ্রহণ রাজনীতিতে নতুন চমক শুধু নয়, গুণগত পরিবর্তনেরও সূচনা করতে পারে। রাজনীতিতে সহিংসতার বিস্তার রোধ হতে পারে, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ ও নতুন রাজনীতির শক্তির উত্থানও ঘটাতে পারে।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নিয়ম, নিয়ম-নীতি ও গ্রহণযোগ্যতার একটি নতুন স্তরে উপনীত হয়েছিল। প্রার্থী ও নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মেনে চলার নতুন সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। বিশেষত, ১৯৯১—২০০৮ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯—২০১৩ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলো অন্তত সে আশা জাগরূক রেখেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সে আশা-ভরসাকে সমূলে নস্যাৎ করে দিয়েছে। বিশেষত পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের দলতান্ত্রিকতা (Partyarchy) একটি ভয়ানক দানবীয় রূপে আবির্ভূত হতে শুরু করে।
এই ধারাবাহিকতায় সব নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। এ রকম একটি অবস্থায় ২০১৫ সালের তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, অবিশ্বাস, সংশয়, ভয়ভীতি অমূলক নয়। তবু বলব, সর্বশেষ বিশ্লেষণে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিকল্প, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অসমতলতা বা বৈষম্যনীতি আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি তাদের আন্দোলন-সংগ্রামকে সংহত করতে গিয়েও তাই-ই হয়তো করবে।
সোহরাব হাসান তাঁর কলামে যথার্থই লিখেছেন, ৬২ লাখ ভোটার এবং দুই মহানগরের প্রায় দুই কোটি মানুষের সঙ্গেই এ সুযোগে দুই রাজনৈতিক পরাশক্তিকে অর্থবহ সংলাপে সম্পৃক্ত হতে এ নির্বাচনে কিছুটা বাধ্য করবে (প্রথম আলো ২১/০৩/২০১৫)। দুই দলের বড় নেতাদের সংলাপের আপাতত প্রয়োজন ফুরিয়েছে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ জরুরি। কমিশন আশা করি চতুর্মুখী সক্রিয়তা বজায় রাখবে। মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো উসকানিমূলক বক্তব্য ও গতিবিধির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে। প্রশাসনকে তাদের অধীনে এনে নিরপেক্ষতার জন্য যা যা দরকার, তা করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বিশেষত, দুই শহরের ৬২ লাখ ভোটারের ভোটদান নির্বিঘ্ন করার জন্য ২ হাজার ৭১০টি কেন্দ্রের ১৫ হাজার ৫১৭টি বুথে অন্তত সতর্কতার সঙ্গে লোক নিয়োগ করতে হবে। এখানে কোনো বিতর্কের অবকাশ রাখা চলবে না।
নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি প্রতিপালনের ব্যাপারে এনজিও, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমের সহায়তা ও সক্রিয়তাকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ইতিমধ্যে যে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালনের জন্য তিনটি সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রতিটি ওয়ার্ডের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সক্রিয়তা প্রয়োজন। বিলবোর্ড দখলদার, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, সন্ত্রাসী, অতিদলবাজ লোকদের থেকে নির্বাচনকে দূরে রাখতে হবে। সৎ, যোগ্য, চরিত্রবান প্রার্থীদের সর্বাংশে উৎসাহিত করুন। নাগরিক উদাসীনতার সুযোগে এ-জাতীয় আবর্জনা বৈধতা পেলে সিন্দবাদী ভূতের মতো তারা কাঁধে চড়ে বসবে, তাতে পরবর্তী সময়ে হা-হুতাশ করে কোনো লাভ হবে না।
বাংলাদেশে সরকারব্যবস্থা এককেন্দ্রিক এবং সংসদব্যবস্থা এক কক্ষবিশিষ্ট। এ রকম একটি ব্যবস্থায় রাজনৈতিক বহুত্ববাদের একমাত্র জায়গা বা পরিসর হচ্ছে স্থানীয় সরকার। জনগণের এ পরিসরটিকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। এখানে ভিন্নমতের অবকাশটি সযত্নে লালন করতে হবে। নতুবা সমাজ, রাজনীতি পুরোটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে কিছু অনতিক্রম্য বাস্তবতার কারণে আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় নির্বাচনকে প্রায়ই কেন্দ্রীয় রাজনীতির দুরূহ বোঝা বহন করতে হয়। এটি হওয়ার কথা ছিল না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে স্থানীয় সমস্যা ও ইস্যুকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা হওয়ার নয়। জাতীয় রাজনীতির মেরুকরণ এত প্রকট ও উৎকট যে তাতে স্থানীয় ইস্যু ও বিষয় হালে পানি পাচ্ছে না। তবু বলব, ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রার্থীরা এবং নাগরিক সমাজ স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে নির্বাচনকালীন কর্মসূচি আকারে সামনে নিয়ে আসবেন। নির্বাচনী প্রচারণা দিনে দিনে গতি পাবে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সমস্যাগুলোর প্রকার, প্রকৃতি ও তার অর্থপূর্ণ সমাধানের অঙ্গীকারগুলো দৃঢ় ভিত্তি পাবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ। পরিচালক গভর্নেন্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং সম্মানীয় ফেলো, বিইজিডি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments