আড়ালে চাপা পড়েছে যে রহস্য by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
সিলেটে
স্কুলছাত্র আবু সাঈদ হত্যার জট খুব দ্রুতই খুলছে। আটক তিনজনই হত্যার দায়
স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। টাকার জন্যই হত্যা করা হয়েছে আবু
সাঈদকে। স্বীকারোক্তিতে এমনই উঠে এসেছে। অভিযুক্তদের জবানবন্দিতে তদন্ত যেন
একটা উপসংহারেই পৌঁছে গেছে- ‘মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই আবু সাঈদকে অপহরণ করা
হয়েছে। আর অপহরণকারীদের চিনে ফেলায় হত্যা করা হয় শিশু সাঈদকে।’ সহজ গল্প।
সে গল্পটিই মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এর আড়ালে চাপা পড়ে গেছে কিছু
রহস্য, কিছু ফাঁক-ফোকর। অভিযুক্তদের তথ্যগুলো প্রায় একই রকম হলেও কি কারণে
এগুলো যেনো এক সুতোয় বাঁধা যাচ্ছে না। কোথায় যেনো ছিঁড়ে যেতে চাইছে তথ্যের
সম্পর্ক। আবু সাঈদকে হত্যার পেছনে মূল হোতা হিসেবে যে তিনজনের নাম এসেছে
তিনজনই অল্প বিস্তর প্রভাবশালী। এর মধ্যে আবদুর রকিব ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী
লীগের অঙ্গ সংগঠন ওলামা লীগের সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক। র্যাবের সোর্স
হওয়ায় আতাউর রহমান গেদা মিয়ারও প্রভাব কম নয়। পুলিশের পোশাক গায়ে থাকায়
কনস্টেবল এবাদুর রহমানের ভালোই প্রভাব রয়েছে। ছোট অঙ্কের একটি মুক্তিপণ
আদায়ের উদ্দেশ্যে তাদের জোট বাঁধাটা একটু খটকারই সৃষ্টি করে। শুধুই
মুক্তিপণ আদায় নাকি অন্য কিছু তাদের এক বিন্দুতে এনে মিলিয়েছে।
মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই আবু সাঈদ হত্যা ঘটনার সৃষ্টি-এমন মেনে নিলেও খটকা শেষ হয় না। বিরাট অঙ্কের মুক্তিপণ দেয়ার মতো অবস্থা নেই সাঈদের পরিবারের। নগরীর দর্জিবন্দে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। তাও ঐ বাসার সরাসরি ভাড়াটে নন তিনি। সাবলেট থাকেন অর্থাৎ মূল ভাড়াটের সঙ্গে ভাড়া ভাগ করে থাকেন। গ্রামের বাড়ি জগন্নাথপুরের খাসিলাতে পৈতৃক কিছু জমিজমা আছে সাঈদের পিতা আবদুল মতিনের। তার আয় দিয়েই কোনমতে সংসার চলে। সাঈদের এক ফুপু থাকেন যুক্তরাজ্যে, তিনি মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করেন। সব মিলিয়ে বাড়তি টাকা সঞ্চয়ের কোন পথই নেই আবদুল মতিনের। সে হিসেবে ছেলেকে অপহরণ করে তার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চিন্তা বোধহয় কোন অপরাধীই করবে না। সাঈদদের বাসার পাশেই এক সময় ভাড়া থাকতো গেদা ও এবাদুল। সাঈদের পরিবারের সঙ্গে তাদের চেনাজানাও ছিলো। সাঈদ তাদের মামা বলে ডাকতো। গেদা ও এবাদুলের তো ভালোভাবেই জানার কথা আবদুল মতিনের আর্থিক সঙ্গতি কতটুকু। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সাঈদকে অপহরণের ‘বুদ্ধি’ বোধহয় তাদের মাথায় থাকার কথা নয়। যদি না অন্য কোন কারণ থাকে।
অভিযুক্তদের জবানবন্দি মতে শিশু আবু সাঈদকে হত্যা ঘটনার দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি অপহরণ পর্ব-দ্বিতীয়টি হত্যার অংশ। অভিযুক্তদের ভাষ্যমতে, অপহরণের পর চিনে ফেলায়ই সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে। সাদা চোখে গল্পটির বিশ্বাসযোগ্যতা থাকলেও একটু ভাবলেই ধরা পড়বে বিরাট ফাঁকি। গেদা ও এবাদুরের তো আগে থেকেই জানার কথা যে সাঈদ তাদের চিনে ফেলবে। মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়ার উদ্দেশ্য থাকলে এমন কাউকেই তো বেছে নেয়ার কথা যে ছেড়ে দিলেও তাদের চিনিয়ে দিতে পারবে না। তবে কি সাঈদকে ছেড়ে দেয়ার কোন উদ্দেশ্যই ছিলো না অপহরণকারীদের। তারা কি জানতো চিনে ফেলা না ফেলায় কোন সমস্যা নেই। সাঈদ তো আর কোনদিন কাউকে কিছু বলতে পারবে না।
সাঈদ হত্যা ‘কাহিনী’র মতো ফাঁক রয়ে গেছে ঘটনার তদন্তেও। জবাব মেলেনি কয়েকটি প্রশ্নের, পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর, ওলামা লীগ সভাপতি আব্দুর রকিব ও খুনের ঘটনার নেতৃত্বদানকারী র্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপহরণের পর সাঈদকে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানায়। কিন্তু পুলিশ এ সিএনজি অটোরিকশা, তার মালিক বা চালক সম্পর্কে কোন তথ্যই যোগাড় করতে পারেনি। তবে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, তদন্তে সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহারের কোন প্রমাণ পাচ্ছি না। কারণ যে স্থানে সাঈদকে আটকে রাখা হয় অপহরণস্থল থেকে তার দূরত্ব পঞ্চাশ গজের মধ্যে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের পর যে মোবাইল ফোনে সাঈদের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয় সে মোবাইল ফোনটি এখনও পুলিশের কব্জায় আসেনি। আদালতে মুহিবুল ইসলাম মাসুম ছাড়াও গেদা অজ্ঞাত এক ব্যক্তির পরিচয় বলেছে। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মচারী। গেদার পরিচিত। কিন্তু অপর অভিযুক্ত ওলামা লীগ নেতা আবদুর রকিব এ দুজন ছাড়াও ‘লম্বা এক লোক’ বলে আরও একজনের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছিলো। এদের কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনায় এ চারজনের সংশ্লিষ্টতাই পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, মর্মান্তিক এ ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখে পানি ঝরেছে। আইজিপি মহোদয় থেকে শুরু করে পুরো বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে। পুলিশ কমিশনার মহোদয় সরাসরি মামলাটি মনিটরিং করছেন। যারাই জড়িত থাকবে কেউই ছাড়া পাবে না।
প্রসঙ্গত, সিলেটের শাহমীর (রহ.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আবু সাঈদ ১১ই মার্চ স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। ১৪ই মার্চ পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশের এক কনস্টেবলসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকার করেছেন হত্যার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা। এক দফা তদন্ত কর্মকর্তাও বদলি হয়েছে এ মামলায়। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই ফজলে আজিম পাটোয়ারী। গত রোববার থেকে তার পরিবর্তে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন।
মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই আবু সাঈদ হত্যা ঘটনার সৃষ্টি-এমন মেনে নিলেও খটকা শেষ হয় না। বিরাট অঙ্কের মুক্তিপণ দেয়ার মতো অবস্থা নেই সাঈদের পরিবারের। নগরীর দর্জিবন্দে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। তাও ঐ বাসার সরাসরি ভাড়াটে নন তিনি। সাবলেট থাকেন অর্থাৎ মূল ভাড়াটের সঙ্গে ভাড়া ভাগ করে থাকেন। গ্রামের বাড়ি জগন্নাথপুরের খাসিলাতে পৈতৃক কিছু জমিজমা আছে সাঈদের পিতা আবদুল মতিনের। তার আয় দিয়েই কোনমতে সংসার চলে। সাঈদের এক ফুপু থাকেন যুক্তরাজ্যে, তিনি মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করেন। সব মিলিয়ে বাড়তি টাকা সঞ্চয়ের কোন পথই নেই আবদুল মতিনের। সে হিসেবে ছেলেকে অপহরণ করে তার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চিন্তা বোধহয় কোন অপরাধীই করবে না। সাঈদদের বাসার পাশেই এক সময় ভাড়া থাকতো গেদা ও এবাদুল। সাঈদের পরিবারের সঙ্গে তাদের চেনাজানাও ছিলো। সাঈদ তাদের মামা বলে ডাকতো। গেদা ও এবাদুলের তো ভালোভাবেই জানার কথা আবদুল মতিনের আর্থিক সঙ্গতি কতটুকু। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সাঈদকে অপহরণের ‘বুদ্ধি’ বোধহয় তাদের মাথায় থাকার কথা নয়। যদি না অন্য কোন কারণ থাকে।
অভিযুক্তদের জবানবন্দি মতে শিশু আবু সাঈদকে হত্যা ঘটনার দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি অপহরণ পর্ব-দ্বিতীয়টি হত্যার অংশ। অভিযুক্তদের ভাষ্যমতে, অপহরণের পর চিনে ফেলায়ই সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে। সাদা চোখে গল্পটির বিশ্বাসযোগ্যতা থাকলেও একটু ভাবলেই ধরা পড়বে বিরাট ফাঁকি। গেদা ও এবাদুরের তো আগে থেকেই জানার কথা যে সাঈদ তাদের চিনে ফেলবে। মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়ার উদ্দেশ্য থাকলে এমন কাউকেই তো বেছে নেয়ার কথা যে ছেড়ে দিলেও তাদের চিনিয়ে দিতে পারবে না। তবে কি সাঈদকে ছেড়ে দেয়ার কোন উদ্দেশ্যই ছিলো না অপহরণকারীদের। তারা কি জানতো চিনে ফেলা না ফেলায় কোন সমস্যা নেই। সাঈদ তো আর কোনদিন কাউকে কিছু বলতে পারবে না।
সাঈদ হত্যা ‘কাহিনী’র মতো ফাঁক রয়ে গেছে ঘটনার তদন্তেও। জবাব মেলেনি কয়েকটি প্রশ্নের, পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর, ওলামা লীগ সভাপতি আব্দুর রকিব ও খুনের ঘটনার নেতৃত্বদানকারী র্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপহরণের পর সাঈদকে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানায়। কিন্তু পুলিশ এ সিএনজি অটোরিকশা, তার মালিক বা চালক সম্পর্কে কোন তথ্যই যোগাড় করতে পারেনি। তবে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, তদন্তে সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহারের কোন প্রমাণ পাচ্ছি না। কারণ যে স্থানে সাঈদকে আটকে রাখা হয় অপহরণস্থল থেকে তার দূরত্ব পঞ্চাশ গজের মধ্যে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের পর যে মোবাইল ফোনে সাঈদের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয় সে মোবাইল ফোনটি এখনও পুলিশের কব্জায় আসেনি। আদালতে মুহিবুল ইসলাম মাসুম ছাড়াও গেদা অজ্ঞাত এক ব্যক্তির পরিচয় বলেছে। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মচারী। গেদার পরিচিত। কিন্তু অপর অভিযুক্ত ওলামা লীগ নেতা আবদুর রকিব এ দুজন ছাড়াও ‘লম্বা এক লোক’ বলে আরও একজনের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছিলো। এদের কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনায় এ চারজনের সংশ্লিষ্টতাই পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, মর্মান্তিক এ ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখে পানি ঝরেছে। আইজিপি মহোদয় থেকে শুরু করে পুরো বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে। পুলিশ কমিশনার মহোদয় সরাসরি মামলাটি মনিটরিং করছেন। যারাই জড়িত থাকবে কেউই ছাড়া পাবে না।
প্রসঙ্গত, সিলেটের শাহমীর (রহ.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আবু সাঈদ ১১ই মার্চ স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। ১৪ই মার্চ পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশের এক কনস্টেবলসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকার করেছেন হত্যার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা। এক দফা তদন্ত কর্মকর্তাও বদলি হয়েছে এ মামলায়। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই ফজলে আজিম পাটোয়ারী। গত রোববার থেকে তার পরিবর্তে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন।
No comments