গণহত্যা কখনোই সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যায় না -বিশেষ সাক্ষাৎকারে: ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন by মিজানুর রহমান খান
একাত্তরে
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তার দোসরেরা বাংলাদেশে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল।
দেরিতে হলেও সেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। এই বিচার যেমন
ইতিহাসের দায়মুক্তি, তেমনি জাতি হিসেবে আমাদের সামনে চলারও প্রেরণা। এই
প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা ও বিচার’
সম্মেলনে যোগদানকারী ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড
স্কলার্স–এর সভাপতি ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
প্রথম আলো: একাত্তরের গণহত্যার সংখ্যাগত দিকসহ অন্যান্য বিষয়কে আপনি কীভাবে দেখেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: সংখ্যাগত দিক নয়, এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে বাঙালি জাতি এবং তার ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সংখ্যা নিয়ে তর্কাতর্কি কাম্য নয়। গণহত্যার বহুমাত্রিক পরিণাম রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মাধ্যমে সমগ্র সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
প্রথম আলো: অন্যান্য দেশের গণহত্যার সঙ্গে বাংলাদেশের গণহত্যা তুলনীয় কি?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: আর্জেন্টিনা, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশ—তিনটি দেশেরই গণহত্যার একটি অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল, যা আমরা সম্মেলনে আলোচনা করেছি। আর সেটা হলো সন্ত্রাস ও গণহত্যার মাধ্যমে সামাজিক রূপান্তর ঘটানো। অর্থাৎ কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করা।
প্রথম আলো : অপরাধ সংঘটনকারী রাজাকারদের (কোলাবরেটর) পুনর্বাসনে এসব সমাজের মধ্যে আপনি কী ধরনের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, এখানে মূল অপরাধীরা বহিরাগত। আর্জেন্টিনা ও কম্বোডিয়ায় যেটা নেই। রাজাকাররাও একই দেশ ও সমাজের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় বিচারকার্য সংঘটিত হচ্ছে, তাতে তিন দেশের মধ্যেই মিল রয়েছে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে রাজাকাররা সাংসদ ও মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। কম্বোডিয়া ও আর্জেন্টিনায়?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: কম্বোডিয়ায় রাজাকারদের ক্ষমতায়ন কিছুটা ঘটেছে। সে তুলনায় আর্জেন্টিনার অবস্থা অারও বেশি খারাপ হয়তো বলব না, তবে কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছেন। এসব ঘটনা মর্মান্তিক, কিন্তু ঘটেছে। যে ব্যক্তি তুকুমান প্রদেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পরে সেখানকার গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে নাগরিক সমাজ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হতে শুরু করে।
প্রথম আলো: নির্বাচন কি অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: নিশ্চয়। আর সেটাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যের কথা।
প্রথম আলো: নির্বাচনের আগে তাঁরা কি তাঁদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: না, মোটেই তাঁরা ক্ষমা চাননি। এটাও লক্ষ করার বিষয় যে তাঁরা কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনেও জয়ী হতে পারলেন। এর ব্যাখ্যা কী? এর উত্তর হলো, আর্জেন্টিনা প্রথমে বিচার শুরু করল। কিন্তু পরে দুটি দায়মুক্তি আইন পাস করল। এর ফলে অভিযুক্তরা জেল থেকে ছাড়া পেলেন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার সুবাদে জয়লাভও করলেন। অথচ দণ্ডিত হিসেবে তাঁদের জেলে থাকার কথা ছিল। তাঁদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারাটা ছিল আর্জেন্টিনার ব্যর্থতা। তবে ২০০৫ সালে পুনরায় বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সুতরাং আপনি যদি তাঁদের বিচার না করেন, তাহলে এভাবে নির্বাচিত হওয়ার ঝুঁকিটা থেকে যায়।
প্রথম আলো: বিচার–প্রক্রিয়ার সাফল্য সম্পর্কে আর্জেন্টিনা ও কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের অর্জনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: এ রকম তুলনা করা কঠিন। বাংলাদেশ পরিস্থিতি বলে নয়, যেকোনো প্রক্রিয়াই একটি থেকে অন্যটি ভিন্ন।
প্রথম আলো: যেমন ধরুন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা কিংবা আমরা সব সময় শুনি ‘আন্তর্জাতিক মান’ বজায় রাখার প্রশ্নটি?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: আন্তর্জাতিক মান নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। আমি মনে করি না যে জাতীয় মানের চেয়ে আন্তর্জাতিক মানকে উন্নত ধরতে হবে। সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলো কি না, আন্তর্জাতিক মান বড় কথা নয়। সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার রক্ষাকবচ হলো, আপনি নিশ্চয়তা দেবেন যে প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয় সেখানে থাকবে না, এটা সত্যিই ন্যায়বিচার।
বাংলাদেশি সমাজ মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু তার বিদ্যমান বিচার– প্রক্রিয়াকে মূল্যবান মনে করি। আমার সব তথ্য এখনো জানা নেই। তবে যত দূর জানতে পেরেছি, তাতে এটা বলতে পারি যে ওই মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছাড়া বাংলাদেশ সমাজ যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পেরেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যুদণ্ড প্রকৃতই একটি সমস্যা, যদিও আমি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত অনুধাবন করতে পারি। আর্জেন্টিনায় মৃত্যুদণ্ড নেই, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে সেটা আর্জেন্টিনায় সম্ভব হয়েছে, কারণ আর্জেন্টিনায় কখনোই মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল না। মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে বাংলাদেশ সাধারণভাবে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু তা বিদ্যমান ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে নয়। কারণ, আইন এই ট্রাইব্যুনালকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এখতিয়ার দিয়েছে।
প্রথম আলো: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রাজনৈতিক সমঝোতার (রিকন্সিলিয়েশন) মধ্যে কি দ্বন্দ্ব আছে?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: মোটেই না। বিচার ছাড়া সমঝোতা হতে পারে না। কারণ, ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে অপরাধীকে তার কৃতকর্মের দায়দায়িত্ব অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। আর বিচারই অপরাধীকে তার কৃতকর্মের দায় স্বীকার করাতে বাধ্য করতে পারে।
প্রথম আলো: যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের বিচারের বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: বিচারিক এখতিয়ার হলো ব্যক্তির অপরাধের বিচার করা। আমার ধারণা, সংগঠনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা অধিকতর রাজনৈতিক। এটা অনেকাংশে সংবাদপত্রের কাজ। আমি মনে করি রাজনীতিকদের কাছে এটা হলো মন পরিবর্তনের প্রশ্ন। কারণ, আপনি কী করে অভিযুক্ত সংগঠনকে কারাগারে পাঠাতে পারেন?
প্রথম আলো: নিষিদ্ধ তো করা যেতে পারে?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: হ্যাঁ। তবে আমি মনে করি সেটা সমস্যাপূর্ণ। কারণ, তখন তারা নিজেদের না বদলিয়ে সংগঠনের নাম বদলে নিতে পারে। আর আপনি তো সেই সংগঠনের অতীত কৃতকর্মের বিচার করছেন।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: ধন্যবাদ।
প্রথম আলো: একাত্তরের গণহত্যার সংখ্যাগত দিকসহ অন্যান্য বিষয়কে আপনি কীভাবে দেখেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: সংখ্যাগত দিক নয়, এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে বাঙালি জাতি এবং তার ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সংখ্যা নিয়ে তর্কাতর্কি কাম্য নয়। গণহত্যার বহুমাত্রিক পরিণাম রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মাধ্যমে সমগ্র সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
প্রথম আলো: অন্যান্য দেশের গণহত্যার সঙ্গে বাংলাদেশের গণহত্যা তুলনীয় কি?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: আর্জেন্টিনা, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশ—তিনটি দেশেরই গণহত্যার একটি অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল, যা আমরা সম্মেলনে আলোচনা করেছি। আর সেটা হলো সন্ত্রাস ও গণহত্যার মাধ্যমে সামাজিক রূপান্তর ঘটানো। অর্থাৎ কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করা।
প্রথম আলো : অপরাধ সংঘটনকারী রাজাকারদের (কোলাবরেটর) পুনর্বাসনে এসব সমাজের মধ্যে আপনি কী ধরনের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, এখানে মূল অপরাধীরা বহিরাগত। আর্জেন্টিনা ও কম্বোডিয়ায় যেটা নেই। রাজাকাররাও একই দেশ ও সমাজের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় বিচারকার্য সংঘটিত হচ্ছে, তাতে তিন দেশের মধ্যেই মিল রয়েছে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে রাজাকাররা সাংসদ ও মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। কম্বোডিয়া ও আর্জেন্টিনায়?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: কম্বোডিয়ায় রাজাকারদের ক্ষমতায়ন কিছুটা ঘটেছে। সে তুলনায় আর্জেন্টিনার অবস্থা অারও বেশি খারাপ হয়তো বলব না, তবে কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছেন। এসব ঘটনা মর্মান্তিক, কিন্তু ঘটেছে। যে ব্যক্তি তুকুমান প্রদেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পরে সেখানকার গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে নাগরিক সমাজ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হতে শুরু করে।
প্রথম আলো: নির্বাচন কি অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: নিশ্চয়। আর সেটাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যের কথা।
প্রথম আলো: নির্বাচনের আগে তাঁরা কি তাঁদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: না, মোটেই তাঁরা ক্ষমা চাননি। এটাও লক্ষ করার বিষয় যে তাঁরা কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনেও জয়ী হতে পারলেন। এর ব্যাখ্যা কী? এর উত্তর হলো, আর্জেন্টিনা প্রথমে বিচার শুরু করল। কিন্তু পরে দুটি দায়মুক্তি আইন পাস করল। এর ফলে অভিযুক্তরা জেল থেকে ছাড়া পেলেন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার সুবাদে জয়লাভও করলেন। অথচ দণ্ডিত হিসেবে তাঁদের জেলে থাকার কথা ছিল। তাঁদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারাটা ছিল আর্জেন্টিনার ব্যর্থতা। তবে ২০০৫ সালে পুনরায় বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সুতরাং আপনি যদি তাঁদের বিচার না করেন, তাহলে এভাবে নির্বাচিত হওয়ার ঝুঁকিটা থেকে যায়।
প্রথম আলো: বিচার–প্রক্রিয়ার সাফল্য সম্পর্কে আর্জেন্টিনা ও কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের অর্জনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: এ রকম তুলনা করা কঠিন। বাংলাদেশ পরিস্থিতি বলে নয়, যেকোনো প্রক্রিয়াই একটি থেকে অন্যটি ভিন্ন।
প্রথম আলো: যেমন ধরুন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা কিংবা আমরা সব সময় শুনি ‘আন্তর্জাতিক মান’ বজায় রাখার প্রশ্নটি?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: আন্তর্জাতিক মান নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। আমি মনে করি না যে জাতীয় মানের চেয়ে আন্তর্জাতিক মানকে উন্নত ধরতে হবে। সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলো কি না, আন্তর্জাতিক মান বড় কথা নয়। সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার রক্ষাকবচ হলো, আপনি নিশ্চয়তা দেবেন যে প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয় সেখানে থাকবে না, এটা সত্যিই ন্যায়বিচার।
বাংলাদেশি সমাজ মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু তার বিদ্যমান বিচার– প্রক্রিয়াকে মূল্যবান মনে করি। আমার সব তথ্য এখনো জানা নেই। তবে যত দূর জানতে পেরেছি, তাতে এটা বলতে পারি যে ওই মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছাড়া বাংলাদেশ সমাজ যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পেরেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যুদণ্ড প্রকৃতই একটি সমস্যা, যদিও আমি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত অনুধাবন করতে পারি। আর্জেন্টিনায় মৃত্যুদণ্ড নেই, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে সেটা আর্জেন্টিনায় সম্ভব হয়েছে, কারণ আর্জেন্টিনায় কখনোই মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল না। মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে বাংলাদেশ সাধারণভাবে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু তা বিদ্যমান ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে নয়। কারণ, আইন এই ট্রাইব্যুনালকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এখতিয়ার দিয়েছে।
প্রথম আলো: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রাজনৈতিক সমঝোতার (রিকন্সিলিয়েশন) মধ্যে কি দ্বন্দ্ব আছে?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: মোটেই না। বিচার ছাড়া সমঝোতা হতে পারে না। কারণ, ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে অপরাধীকে তার কৃতকর্মের দায়দায়িত্ব অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। আর বিচারই অপরাধীকে তার কৃতকর্মের দায় স্বীকার করাতে বাধ্য করতে পারে।
প্রথম আলো: যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের বিচারের বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: বিচারিক এখতিয়ার হলো ব্যক্তির অপরাধের বিচার করা। আমার ধারণা, সংগঠনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা অধিকতর রাজনৈতিক। এটা অনেকাংশে সংবাদপত্রের কাজ। আমি মনে করি রাজনীতিকদের কাছে এটা হলো মন পরিবর্তনের প্রশ্ন। কারণ, আপনি কী করে অভিযুক্ত সংগঠনকে কারাগারে পাঠাতে পারেন?
প্রথম আলো: নিষিদ্ধ তো করা যেতে পারে?
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: হ্যাঁ। তবে আমি মনে করি সেটা সমস্যাপূর্ণ। কারণ, তখন তারা নিজেদের না বদলিয়ে সংগঠনের নাম বদলে নিতে পারে। আর আপনি তো সেই সংগঠনের অতীত কৃতকর্মের বিচার করছেন।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
ড্যানিয়েল ফিয়েরস্টেইন: ধন্যবাদ।
No comments