পোশাক খাতে নজিরবিহীন বিপর্যয়- অর্ডার কমছে, নিরাপত্তায়ও অর্ধেক পণ্য যাচ্ছে না by এমএম মাসুদ
টানা
অবরোধে ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে না পারায় অর্ডার সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে পোশাক
শিল্প। ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। সরকারি নিরাপত্তায় কাভার্ড ভ্যান
চললেও এ খাতে পণ্য পরিবহনের অর্ধেকও হচ্ছে না। এমন অবস্থা চললে অর্ডারের
সঙ্গে কারখানা বন্ধ হওয়া ও বহু শ্রমিকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন এ খাত
সংশ্লিষ্টরা। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতিতে আশি
ভাগ অবদান রাখা পুরো পোশাক খাত অর্ডার সঙ্কটে পড়বে। এর কারণ বর্তমান
রাজনৈতিক অস্থিরতায় কোন ক্রেতাই দেশে আসতে চাচ্ছে না। তারা অনলাইনে কোন
পণ্য দেখেও অর্ডার দিচ্ছে না। তারা চান বাস্তবে দেখেশুনে অর্ডার দিতে।
এছাড়া কমে যাচ্ছে শ্রমিকদের ওভারটাইমের পরিমাণ, যা দিয়ে তারা বাড়তি উপার্জন
করতে পারতো। অন্যদিকে স্বাভাবিক অবস্থায় একদিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম পোশাক পণ্য
আনা-নেয়া করে ৫০০ থেকে ৬০০ কাভার্ড ভ্যান। সেটা এখন ৬০ থেকে ৭০-এ
দাঁড়িয়েছে। বিজিএমইএ ও পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজিএমইএ’র সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ম্যাগপাই ও কিউ পয়েন্ট গ্রুপসহ কয়েকটি
কারখানার ক্ষতির হিসাব বিজিএমইএ’তে জমা দিয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, ম্যাগপাই
গ্রুপ ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য সময়মতো পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই পণ্য এখন স্টক
লট হওয়ার অপেক্ষায়। অন্যদিকে একই প্রতিষ্ঠানের ১৬ লাখ ডলারের পণ্য পাঠাতে
দেরি হয়েছে। ফলে এ জন্য ক্রেতাকে ডিসকাউন্ট দিতে হবে। বিজিএমইএ সূত্র
জানায়, এ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে শুধু শিপমেন্ট বাতিল হওয়ার
কারণে। কিউ পয়েন্ট গ্রুপের কর্ণধার দারাজ সোহেল মানবজমিনকে জানান,
তুরস্কের ক্রেতা তেমা কোম্পানির কর্মকর্তার বাংলাদেশে এ সপ্তাহে আসার কথা
ছিল। কিন্তু এ অবস্থায় তারা প্রোগ্রাম বাতিল করেছেন। ওয়েবসাইটে দেখে অর্ডার
দিতে অনুরোধ করা হলে তারা বাস্তবে না দেখে অর্ডার দিতে চাইছেন না বলে
জানান তিনি। তেমা অনেক বড় ক্রেতা বলে জানান তিনি। বিজিএমইএ সহসভাপতি
শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, অবরোধের ক্ষতি উদ্যোক্তারা এ পর্যন্ত টেনে নিচ্ছেন।
কিন্তু এ সমস্যার আশু সমাধান না হলে তা উদ্যোক্তাদের জন্য ভয়ানক বিপদের
কারণ হবে। কেননা, এখনই উৎপাদন কমেছে ২৫%। এর পাশাপাশি অর্ডারও কমেছে। এভাবে
চলতে থাকলে আগামী মাসে অর্ডার সঙ্কটে পড়বে দেশ। অন্যদিকে ঋণপত্র না থাকলে
উৎপাদকরা ব্যাংকের কাছ থেকে শ্রমিকের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য
ঋণ পাবেন না। ফলে তখন বেতন দিতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর ফলে আগামী মার্চ
বা এপ্রিল থেকে শ্রম অসন্তোষেরও আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান বিজিএমইএ’র এ নেতা।
বিজিএমইএ তথ্যে দেখা গেছে, গত ৫ই জানুয়ারির পর থেকে শনিবার পর্যন্ত ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে মোট ৩৪৮০টি কাভার্ড ভ্যান পোশাক পণ্য নিয়ে গেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে ২৮১০টি গাড়ি পণ্য নিয়ে ঢাকায় এসেছে। এর মধ্যে একদিনের হিসাবে শনিবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ৭০টি গাড়ি ঢাকা ছেড়ে যায়। অন্যদিকে একই পরিমাণ গাড়ি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। এছাড়া, গত দু’সপ্তাহে কোন কোন দিন ১০০/২০০ গাড়ি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা- যাওয়া করে। যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় একদিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম পোশাক পণ্য আনা-নেয়া করে ৫০০ থেকে ৬০০ কাভার্ড ভ্যান।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিরোধী জোটের টানা অবরোধের কারণে পোশাক খাতের শ্রমিকরাও গভীর শঙ্কায় পড়েছে। তারা জানান, ক্রেতাদের অর্ডার হ্রাস পাওয়ায় কারখানা মালিকরা ওভারটাইম দিচ্ছে না। ফলে কষ্ট করে যে বাড়তি উপার্জন করা হতো তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
সাভার এলাকার শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনেই কারখানায় পোশাকের উৎপাদন কমে গেছে। কাজের চাপও কমে গেছে। তবে আগামী মাসে এর চাপ আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে জানান সাইফুল।
গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, সে সময় কোন শ্রমিক ওভারটাইম করতে পারেনি। মালিকরা অর্ডার না পেলে কিভাবে কাজ দেবে। তাদের শুধু দোষ দিলেই তো হবে না। এবারও পোশাক কারখানার ভাগ্য সেদিকেই যাচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে বর্তমান পরিস্থিতির আশু সমাধান চান তিনি।
মিরপুর শেওড়াপাড়ার শ্রমিক নেতা সেলিম রেজা জানান, কোন সমাধান না হলে আগামী ২০শে জানুয়ারি খালেদা জিয়ার বাড়ি অভিমুখে পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অবস্থিত নাসা গ্রুপের এক শ্রমিক জানান, কারখানার পোশাক শিপমেন্টের জন্য ৫ দিন হাতে রেখে কাজ করা হচ্ছে। প্রথম দিন না হলে দ্বিতীয় দিন, তা না হলে তৃতীয় দিন। এভাবে পঞ্চম দিনে শিপমেন্ট নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ গ্রুপের এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা তৈরি হয়নি। তবে আগামী মাসে একটা বড় ধকল আসতে পারে বলে জানান তিনি। এ অঞ্চলের আরেক কারখানার মহিলা শ্রমিক অপারেটর বলেন, ‘আগে ওভারটাইম করে মূল বেতনের দ্বিগুণ টাকা কামাইতে পারতাম। কিন্তু এখন আসল কাজ করাই দুষ্কর। ওভারটাইমের তো প্রশ্নই আসে না।’ তার বক্তব্য, ‘এভাবে চলতে থাকলে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ কিভাবে জোগাবো চিন্তা করে দিশা পাচ্ছি না।’
এদিকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিতে শুরু করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ লক্ষ্যে সংগঠনটি সব সদস্য কারখানার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। অবরোধের কারণে অর্ডার বাতিল, সময়মতো না পাঠানোর কারণে ক্রেতাকে দেয়া ডিসকাউন্ট, বন্দরে পণ্য পাঠাতে গিয়ে বাড়তি পরিবহন ব্যয় বা ক্ষতি, বিমানে পাঠানোর ক্ষতিসহ অন্যান্য ক্ষতির হিসাব পাঠাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় প্রকৃত আর্থিক ক্ষতির হিসাবও পাঠাতে বলা হয়েছে। দুই দিন আগে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ চিঠি পাঠিয়েছে। বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষয়ক্ষতির চিত্র সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে।
বিজিএমইএ তথ্যে দেখা গেছে, গত ৫ই জানুয়ারির পর থেকে শনিবার পর্যন্ত ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে মোট ৩৪৮০টি কাভার্ড ভ্যান পোশাক পণ্য নিয়ে গেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে ২৮১০টি গাড়ি পণ্য নিয়ে ঢাকায় এসেছে। এর মধ্যে একদিনের হিসাবে শনিবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ৭০টি গাড়ি ঢাকা ছেড়ে যায়। অন্যদিকে একই পরিমাণ গাড়ি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। এছাড়া, গত দু’সপ্তাহে কোন কোন দিন ১০০/২০০ গাড়ি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা- যাওয়া করে। যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় একদিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম পোশাক পণ্য আনা-নেয়া করে ৫০০ থেকে ৬০০ কাভার্ড ভ্যান।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিরোধী জোটের টানা অবরোধের কারণে পোশাক খাতের শ্রমিকরাও গভীর শঙ্কায় পড়েছে। তারা জানান, ক্রেতাদের অর্ডার হ্রাস পাওয়ায় কারখানা মালিকরা ওভারটাইম দিচ্ছে না। ফলে কষ্ট করে যে বাড়তি উপার্জন করা হতো তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
সাভার এলাকার শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনেই কারখানায় পোশাকের উৎপাদন কমে গেছে। কাজের চাপও কমে গেছে। তবে আগামী মাসে এর চাপ আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে জানান সাইফুল।
গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, সে সময় কোন শ্রমিক ওভারটাইম করতে পারেনি। মালিকরা অর্ডার না পেলে কিভাবে কাজ দেবে। তাদের শুধু দোষ দিলেই তো হবে না। এবারও পোশাক কারখানার ভাগ্য সেদিকেই যাচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে বর্তমান পরিস্থিতির আশু সমাধান চান তিনি।
মিরপুর শেওড়াপাড়ার শ্রমিক নেতা সেলিম রেজা জানান, কোন সমাধান না হলে আগামী ২০শে জানুয়ারি খালেদা জিয়ার বাড়ি অভিমুখে পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অবস্থিত নাসা গ্রুপের এক শ্রমিক জানান, কারখানার পোশাক শিপমেন্টের জন্য ৫ দিন হাতে রেখে কাজ করা হচ্ছে। প্রথম দিন না হলে দ্বিতীয় দিন, তা না হলে তৃতীয় দিন। এভাবে পঞ্চম দিনে শিপমেন্ট নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ গ্রুপের এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা তৈরি হয়নি। তবে আগামী মাসে একটা বড় ধকল আসতে পারে বলে জানান তিনি। এ অঞ্চলের আরেক কারখানার মহিলা শ্রমিক অপারেটর বলেন, ‘আগে ওভারটাইম করে মূল বেতনের দ্বিগুণ টাকা কামাইতে পারতাম। কিন্তু এখন আসল কাজ করাই দুষ্কর। ওভারটাইমের তো প্রশ্নই আসে না।’ তার বক্তব্য, ‘এভাবে চলতে থাকলে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ কিভাবে জোগাবো চিন্তা করে দিশা পাচ্ছি না।’
এদিকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিতে শুরু করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ লক্ষ্যে সংগঠনটি সব সদস্য কারখানার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। অবরোধের কারণে অর্ডার বাতিল, সময়মতো না পাঠানোর কারণে ক্রেতাকে দেয়া ডিসকাউন্ট, বন্দরে পণ্য পাঠাতে গিয়ে বাড়তি পরিবহন ব্যয় বা ক্ষতি, বিমানে পাঠানোর ক্ষতিসহ অন্যান্য ক্ষতির হিসাব পাঠাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় প্রকৃত আর্থিক ক্ষতির হিসাবও পাঠাতে বলা হয়েছে। দুই দিন আগে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ চিঠি পাঠিয়েছে। বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষয়ক্ষতির চিত্র সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে।
No comments