লক্ষ্মীপ্যাঁচা- ঘরে তাঁর পাঁচ লক্ষ্মী by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
( জন্মের
পাঁচ দিন পর মা উধাও। বাচ্চারা মায়ের পথ চেয়ে থাকে, মা আর ফেরে না। এই
অবস্থা দেখে বাচ্চাদের খাবার দিতে শুরু করেন আরেকজন। কিন্তু মাংস ছাড়া যে
ওদের মন ভরে না! পাঁচটি বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে শেষে তিনি সে খাবারই
দিতে থাকলেন। ফিরোজ কবির এ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিন মাস ধরে। তিনি
গ্রামীণ ব্যাংকের রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা শাখার কর্মকর্তা। আর যে
পাঁচটি বাচ্চা নিয়ে কথা হচ্ছে, সেগুলো লক্ষ্মীপ্যাঁচা। পারিলাতে ফিরোজের
ঘরের একটি ঘুলঘুলির ছোট্ট জায়গাটুকুতেই ওদের বসবাস। বাংলাদেশে প্রায় ১৭
প্রজাতির প্যাঁচা রয়েছে। লক্ষ্মীপ্যাঁচা তাদেরই একটি। বাংলা একাডেমি থেকে
প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান বলছে, লক্ষ্মীপ্যাঁচারা সাধারণত ধানের
গোলায় থাকত। আর ধানের গোলা হচ্ছে সম্পদের আধার। ধনসম্পদ ও সৌভাগ্যের
প্রতীক লক্ষ্মীর (পৌরাণিক দেবী) নামানুসারে প্রাচীনকালের পণ্ডিতেরা এই
পাখির নাম দেন লক্ষ্মীপ্যাঁচা। এখন ধানের গোলার ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক
কমেছে। লক্ষ্মীপ্যাঁচারাও আবাস হিসেবে বেছে নিয়েছে গাছের কোটর, পাহাড় বা
পাথরের গর্ত ও পুরোনো দালানকোঠার মতো জায়গাকে। )
ফিরোজ কবির স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে পারিলার বাসায় থাকেন। গত ১১ অক্টোবর তাঁর ১২ বছর বয়সী ছেলে আনোয়ার হোসেন ঘরের ঘুলঘুলিতে পাঁচটি ডিম দেখতে পায়। ওগুলো সাপের ডিম মনে করে তার ভয় লেগেছিল। ছেলের কথা শুনে ফিরোজও প্রথমে হকচকিয়ে যান। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় তাঁর ভয় দূর করে একটি লক্ষ্মীপ্যাঁচা এসে ওই ডিমে তা দিতে শুরু করে। ঘুলঘুলির অবস্থান এমন জায়গায় যে শুধু দোতলার ছাদ থেকেই তা দেখা যায়। কাছে যাওয়া যায় না। এ জন্যই হয়তো প্যাঁচা পরিবারটি নিরাপদ মনে করে সেখানে ডিম পেড়েছে।
ফিরোজ বলেন, তাঁরা ডিম দেখতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পাঁচটি বাচ্চা ফোটে। দেখে প্রথম প্রথম হাঁসের ছানা মনে হচ্ছিল। দেখে তাঁদের মায়া পড়ে যায়। প্রতিদিনই গিয়ে দেখতেন, ওরা ঠিক আছে কি না। দিন পনেরো পর এক সন্ধ্যায় গিয়ে দেখেন, মা প্যাঁচাটি নেই। রাতে তিনি উৎকণ্ঠায় রইলেন,- মা যদি না ফেরে, ছানাগুলো কীভাবে রাত কাটাবে। সকালে তড়িঘড়ি করে উঠে ছাদে গিয়ে দেখেন, ছানাগুলোই শুধু গুটিসুটি মেরে পড়ে রয়েছে। মা আর ফেরেনি। সেদিন থেকেই ফিরোজ প্যাঁচার ছানাগুলোকে খাবার দিতে লাগলেন। এই পাখির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই জানতেন, তারা ইঁদুর ও মাংসজাতীয় খাবার পছন্দ করে। এর পরও প্রথম প্রথম অন্য খাবার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন, সেগুলো পড়েই থাকে। পরে মুরগির নাড়িভুঁড়িসহ মাংসজাতীয় বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করতে থাকেন। কিন্তু সমস্যা হলো, সরাসরি খাবার পৌঁছানো যায় না, একটি লাঠির মাথায় খাবার বেঁধে ঘুলঘুলিতে দিতে হয়। কাজটা বেশ কঠিন, তার পরেও তিনি প্রতিদিনই এ কাজ করতে লাগলেন।
ফিরোজ বলেন, তাঁর পরিবারের সদস্যসংখ্যা ছিল চার। এখন প্যাঁচার পাঁচ ছানাসহ সদস্যসংখ্যা হয়েছে নয়। তাঁর স্ত্রী প্রতিদিন প্যাঁচার ছানাদের জন্য খাবার তৈরি করেন। এখন পাঁচটি ছানাই উড়তে শিখেছে। খাবারের সন্ধানে তারা মাঝে মাঝে রাতে বাইরে বের হয়, আবার ফিরে আসে। একদিন বাইরে বেরিয়ে একটি ছানা এক ঝাঁক কাকের কবলে পড়ে। কাকের ঠোকর খেয়ে ছানাটি মাটিতে পড়ে যায়। দেখতে পেয়ে ছুটে যায় আনোয়ার। আর তাকে দেখেই কাকের দল উড়ে পালায়। আনোয়ার প্যাঁচার ছানাটিকে হাতে তুলে নিয়ে আবার ভেন্টিলেটরের বাসায় পৌঁছে দেয়।
মাঝে মাঝে ছানাগুলো উড়ে ছাদে এসে বসে। আনোয়ার ও তার ছোট বোন ফারহানা ইয়াসমিন তাদের কাছে গেলেও তারা উড়ে যায় না। ধরতে গেলেও ভয় পায় না। কয়েক দিন আগে এক বিকেলে ছবি তুলতে গিয়ে পাঁচটি ছানাকেই ঘুলঘুলিতে পাওয়া যায়। তারা চোখ মেলে তাকায়, একে অপরের গায়ের ভেতরে লুকোতে চায়। তবে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে না। ফিরোজের ধারণা, প্যাঁচাগুলো ঘরে বসে খাবার পাচ্ছে। কেউ ওদের বিরক্ত করছে না। বাড়িটাকে তারা এখন নিরাপদ মনে করছে। হয়তো এখানেই থেকে যাবে।
ফিরোজ কবির স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে পারিলার বাসায় থাকেন। গত ১১ অক্টোবর তাঁর ১২ বছর বয়সী ছেলে আনোয়ার হোসেন ঘরের ঘুলঘুলিতে পাঁচটি ডিম দেখতে পায়। ওগুলো সাপের ডিম মনে করে তার ভয় লেগেছিল। ছেলের কথা শুনে ফিরোজও প্রথমে হকচকিয়ে যান। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় তাঁর ভয় দূর করে একটি লক্ষ্মীপ্যাঁচা এসে ওই ডিমে তা দিতে শুরু করে। ঘুলঘুলির অবস্থান এমন জায়গায় যে শুধু দোতলার ছাদ থেকেই তা দেখা যায়। কাছে যাওয়া যায় না। এ জন্যই হয়তো প্যাঁচা পরিবারটি নিরাপদ মনে করে সেখানে ডিম পেড়েছে।
ফিরোজ বলেন, তাঁরা ডিম দেখতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পাঁচটি বাচ্চা ফোটে। দেখে প্রথম প্রথম হাঁসের ছানা মনে হচ্ছিল। দেখে তাঁদের মায়া পড়ে যায়। প্রতিদিনই গিয়ে দেখতেন, ওরা ঠিক আছে কি না। দিন পনেরো পর এক সন্ধ্যায় গিয়ে দেখেন, মা প্যাঁচাটি নেই। রাতে তিনি উৎকণ্ঠায় রইলেন,- মা যদি না ফেরে, ছানাগুলো কীভাবে রাত কাটাবে। সকালে তড়িঘড়ি করে উঠে ছাদে গিয়ে দেখেন, ছানাগুলোই শুধু গুটিসুটি মেরে পড়ে রয়েছে। মা আর ফেরেনি। সেদিন থেকেই ফিরোজ প্যাঁচার ছানাগুলোকে খাবার দিতে লাগলেন। এই পাখির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই জানতেন, তারা ইঁদুর ও মাংসজাতীয় খাবার পছন্দ করে। এর পরও প্রথম প্রথম অন্য খাবার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন, সেগুলো পড়েই থাকে। পরে মুরগির নাড়িভুঁড়িসহ মাংসজাতীয় বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করতে থাকেন। কিন্তু সমস্যা হলো, সরাসরি খাবার পৌঁছানো যায় না, একটি লাঠির মাথায় খাবার বেঁধে ঘুলঘুলিতে দিতে হয়। কাজটা বেশ কঠিন, তার পরেও তিনি প্রতিদিনই এ কাজ করতে লাগলেন।
ফিরোজ বলেন, তাঁর পরিবারের সদস্যসংখ্যা ছিল চার। এখন প্যাঁচার পাঁচ ছানাসহ সদস্যসংখ্যা হয়েছে নয়। তাঁর স্ত্রী প্রতিদিন প্যাঁচার ছানাদের জন্য খাবার তৈরি করেন। এখন পাঁচটি ছানাই উড়তে শিখেছে। খাবারের সন্ধানে তারা মাঝে মাঝে রাতে বাইরে বের হয়, আবার ফিরে আসে। একদিন বাইরে বেরিয়ে একটি ছানা এক ঝাঁক কাকের কবলে পড়ে। কাকের ঠোকর খেয়ে ছানাটি মাটিতে পড়ে যায়। দেখতে পেয়ে ছুটে যায় আনোয়ার। আর তাকে দেখেই কাকের দল উড়ে পালায়। আনোয়ার প্যাঁচার ছানাটিকে হাতে তুলে নিয়ে আবার ভেন্টিলেটরের বাসায় পৌঁছে দেয়।
মাঝে মাঝে ছানাগুলো উড়ে ছাদে এসে বসে। আনোয়ার ও তার ছোট বোন ফারহানা ইয়াসমিন তাদের কাছে গেলেও তারা উড়ে যায় না। ধরতে গেলেও ভয় পায় না। কয়েক দিন আগে এক বিকেলে ছবি তুলতে গিয়ে পাঁচটি ছানাকেই ঘুলঘুলিতে পাওয়া যায়। তারা চোখ মেলে তাকায়, একে অপরের গায়ের ভেতরে লুকোতে চায়। তবে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে না। ফিরোজের ধারণা, প্যাঁচাগুলো ঘরে বসে খাবার পাচ্ছে। কেউ ওদের বিরক্ত করছে না। বাড়িটাকে তারা এখন নিরাপদ মনে করছে। হয়তো এখানেই থেকে যাবে।
No comments