চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে গ্রেপ্তার ১০০ by মহিউদ্দীন জুয়েল
প্রতিদিন
গড়ে গ্রেপ্তার ১০০ জন। তার বিপরীতে জামিন নেই একজনের বেশি। ১০ দিনে
বিভিন্ন ঘটনায় আটক করা হয়েছিল ৪,০০০ জনকে। তাদের মধ্য থেকে ১০০০ জনকে
গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দেয়া হয়েছে আদালতে। রাজনৈতিক ঘটনায় উত্তপ্ত
চট্টগ্রামে ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধে আসামি ধরার চিত্র ছিল এমনই। ভাঙচুর,
সহিংসতা, গাড়ি পোড়ানো ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় দায়ের
হওয়া একাধিক মামলায় এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের
অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে সবচেয়ে বেশি আসামি ধরা হয়েছে
কোতোয়ালি, চকবাজার ও চান্দগাঁও থানায়। এই ৩ থানায় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা
৩০০০ এর বেশি। এসব আসামির অনেকেই নিরীহ বলে দাবি করেছে তাদের অভিভাবক ও
আত্মীয়স্বজনরা। গত ৫ই জানুয়ারি কাজীর দেউড়ি মোড়ে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে
পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ
চৌধুরী ও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ৩৪৫ জনের বিরুদ্ধে
মামলা করে পুলিশ। কোতোয়ালি থানার এসআই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এতে সব আসামীর বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র লুটের
চেষ্টা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের আহত করার অভিযোগ আনা হয়। পরে মামলাটি
সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই ঘটনায়
চকবাজার থানায়ও দায়ের করা হয় আরেকটি মামলা। চট্টগ্রাম কারাগারের একটি সূত্র
জানায়, প্রতিদিন অসংখ্য বন্দিকে দেখতে সেখানে ভিড় করছেন তাদের
আত্মীয়স্বজনরা। দলে দলে ছুটে আসছেন ৫০০ এর বেশি লোক। সবারই এক অভিযোগ,
পুলিশ অন্যায়ভাবে সন্দেহজনক কারণে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এই সময় কারা
ফটকের সামনে উৎকণ্ঠায় থাকা লোকজন তাদের কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেনি বলে
ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কামাল উদ্দিন নামের এক ঠিকাদারি কোম্পানির সুপারভাইজার
বলেন, হরতালে কাজীর দেউড়ি থেকে আলমগীর, শোয়েব ও টিটু নামের কয়েকজন শ্রমিককে
পুলিশ বিএনপিকর্মী মনে করে ধরে এনেছে। আমি বহুবার তার জামিন চেয়েছি।
কিন্তু পাইনি। এখন তারা কারাগারে। ঘটনার সময় ওরা রাস্তা দিয়ে কর্মস্থলে
যাচ্ছিল। তবে নগর পুলিশ দাবি করেছে, ঢাকায় খালেদাকে অবরুদ্ধ করে রাখার খবরে
চট্টগ্রামে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের
সঙ্গে। এই সময় অনেকে সেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাই ক্যামেরা ফুটেজ থেকে
সবাইকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যাদের ধরা হয়েছে তাদের অনেককে আটকের পরপরই
ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।
চকবাজার থানার ওসি আতিক আহমেদ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, আমাদের থানায় যে
মামলাটি হয়েছে তা বিস্ফোরক আইনে। তবে সেখানে কারও নাম নেই। সবাই অজ্ঞাত।
আমরা জড়িতদের খুঁজে বের করছি। যাদের আটক করা হয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ
করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান দিয়েছি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয়
কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতিরিক্ত আসামির কারণে বর্তমানে সেখানে
ধারণক্ষমতা নেই। বন্দি ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৮৫৩ জন। অথচ ১০ দিনেই সেখানে আনা
হয়েছে ১০০০ জন। ফলে একাধিক বন্দি নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এই
বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাহাবুবুল ইসলাম বলেন,
বন্দি এখন অনেক বেশি। এরা সবাই ভাঙচুর ও নাশকতার মামলার আসামি। জামিন খুব
একটা পাচ্ছে না বললেই চলে।
No comments