সিসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে রিট স্থিতাবস্থা
এবার
আদালতে গেলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র সালেহ আহমদ। গতকাল
হাইকোর্টে তার পক্ষে রিট করা হয়েছে। আর রিটের রুল শুনানির পূর্ব পর্যন্ত
সালেহ আহমদকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই
সঙ্গে আদালত ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেয়া
প্রজ্ঞাপনের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত
প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের
সিনিয়র সহকারী সচিবকে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অ্যাডভোকেট
সালেহ আহমদ দায়েরকৃত রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল হাইকোর্টের বিচারপতি
নাঈমা হায়দার ও মোস্তফা জামান ইসলাম এ আদেশ দেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের
ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে ধূম্রজাল কাটছিল না। সিলেট সিটি করপোরেশনের
নির্বাচনের পর নির্বাচিত পরিষদ ভোটের মাধ্যমে প্যানেল পরিষদ গঠন করেছিল। এর
মধ্যে প্যানেল মেয়র-১ হয়েছিলেন কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদি, প্যানেল
মেয়র-২ হয়েছিলেন কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ। আর প্যানেল মেয়র-৩
নির্বাচিত হয়েছিলেন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রোকসানা বেগম
শাহনাজ। প্যানেল মেয়র নির্বাচনের পর কাউন্সিলরদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের
সূত্রপাত হয়। আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র থাকা অবস্থায়ই দ্বন্দ্বের জের ধরে
প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদির ওপর ৩৩ কাউন্সিলরের অনাস্থা
পড়েছিল। এ কারণে মেয়র আরিফ চীন সফরে যাওয়ার সময় প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট
সালেহ আহমদকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনের লিখিত নির্দেশ দিয়ে যান।
এতে আনুষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। এ নিয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়।
সর্বশেষ গত মাসের শেষের দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি
হিসেবে কারান্তরীণ হয়েছিলেন। তিনি কারান্তরীণ হওয়ার আগেই অ্যাডভোকেট সালেহ
আহমদকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে যান। অন্যদিকে, মন্ত্রণালয় প্যানেল মেয়র-১
রেজাউল হাসান কয়েস লোদিকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে
প্যানেল মেয়র-১-কে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের আদেশসংক্রান্ত
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে সোমবার সালেহ
আহমদ চৌধুরী উচ্চ আদালতে রিট পিটিশনটি করেন। গতকাল বিকালে সিলেট সিটি
করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ জানিয়েছেন, তার পক্ষেই
হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্থানীয় সরকার
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কেন অবৈধ হবে না- এ মর্মে জবাব দিতে চার সপ্তাহের
সময় দিয়েছেন। আর ওই চার সপ্তাহ দায়িত্ব পালন করতে তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মেয়রে মতামতের ব্যক্তিই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হবেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, গত ৭ই জানুয়ারি স্থানীয় সরকার পল্লী
উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে
সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আর এ বরখাস্তপত্রেই প্যানেল মেয়র-১-কে ভারপ্রাপ্ত
মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের আদেশ দেন। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্যানেল মেয়র-১
রেজাউল হাসান কয়েস লোদি ১১ই জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করতে
নগর ভবনে যান। কিন্তু কাউন্সিলরদের বাধায় তিনি ওই দিন দায়িত্ব গ্রহণ করতে
পারেননি। এদিকে, রেজাউল হাসান কয়েস লোদি দায়িত্ব গ্রহণ করতে সিটি করপোরেশনে
গেলে হট্টগোল হয়। আর বিষয়টি সুরাহা করতে এগিয়ে আসেন কাউন্সিলররা।
কাউন্সিলরদের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র
আরিফুল হক চৌধুরী যাকে লিখিতভাবে দায়িত্ব দেন তিনিই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের
দায়িত্ব পালন করবেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কপি
আরিফের কাছে পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা হয়নি। এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আরিফ কাউকে
লিখিতভাবে দায়িত্ব দিতে পারেননি।
No comments