ইটের নিচে চাপা পড়ছে শৈশব- বরগুনার ইটভাটায় আড়াই হাজার শিশু শ্রমিক by এম জসীম উদ্দীন
(বরগুনার আমতলী উপজেলার তালতলা এলাকার একটি ইটভাটায় ইট শুকানোর কাজ করছে শিশুরা। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো) বরগুনার
ইটভাটাগুলোতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে শিশুরা। এতে শিক্ষার অধিকার থেকে
বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে
পড়ছে তারা। বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় অনুমোদিত ইটভাটা
২৫টি। অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য
অনুযায়ী, জেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ভাটার সংখ্যা ৫৪টি। এর মধ্যে পরিবেশ
ছাড়পত্র আছে ৩০টির, অনুমোদনহীন ইটভাটা ১৬টি ও ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী
চিমনি আছে সাতটি। তবে স্থানীয় হিসাবে জেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে কমপক্ষে
১০০টি ইটভাটা ও পাজা আছে। বরগুনা সদর, আমতলী ও পাথরঘাটার বেশ কয়েকটি
ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, দুপুর বেলা রোদ মাথায় নিয়ে একদল শিশু কাজ
করছে। এরা সবাই ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী। কেউ মা-বাবার সঙ্গে, কেউ শ্রমিক
সরদারের সঙ্গে ইটভাটায় কাজে এসেছে। কাঁচা ইট রোদে শুকানো, ইট তৈরি,
ট্রলিতে করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, মাটি বহন করাসহ সব কাজেই নিয়োজিত
আছে এই শিশুরা।
এসব শিশু তাদের মা-বাবার সঙ্গে বা কেউ সরদারের সঙ্গে সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেছে ছয় মাসের কাজের চুক্তিতে। সদরের কুমাখালী ও ভূতমারা, মাছখালী এলাকার ছয়টি; আমতলী উপজেলার মহিষডাঙ্গা, তালতলা ও কুতুবপুর এলাকার তিনটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, এসব ভাটায়ও অনেক শিশু কাজ করছে। সদরের নিশানবাড়িয়ার একটি ইটভাটায় কর্মরত শিশু শিল্পী (৯), অন্তরা (১০), সামাদের (১১) মতো অনেকে ইটভাটায় কাজ করে। শিল্পীর মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় ইটভাটার কাজ করি। বাচ্চা স্কুলে দিলি তো কাম করন যাবি না। এ জন্যি ওগোও কামে দিছি, দু পয়সা রোজগার করুক।’
কুমড়াখালী এলাকার এবিএম ব্রিকসে কাজ করে সাতক্ষীরার ৩৯ জন শ্রমিক। এর মধ্যে ৩০ জনের বয়সই ১০ থেকে ১৬ বছর। আলমগীর নামে ১২ বছর বয়সী এক শিশু জানায়, সে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এরপর ইটভাটার কাজে চলে এসেছে। এখন মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে ইট শুকানোর কাজ করে। শিশুশ্রমিক শুভ্র (১২) ভাটায় ইট তৈরির কাজ করে। সে বলে, ‘ফাইভ পর্যন্ত পড়ছিলাম। ছয়জনের সংসার। বাবা সাগরে মাছ ধরি যে পয়সা আয় করে তা দিয়ে খাবা-দাবা চলে না। পড়তি তো ইচ্ছা করে কিন্তু কাম না করলি খাব কি?’
শ্রম আইন-২০০৬-এর ২৮৪ ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে অথবা আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করে কোনো শিশুকে চাকরি করার অনুমতি দিলে, তিনি ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’ সনি ব্রিকসের মালিক জাফর হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরার শ্রমিকেরা এই কাজে পারদর্শী হওয়ায় এদের দিয়ে কাজ করানো ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’ ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক উপপরিচালক মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘ইটভাটায় দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে শিশুদের ত্বক ও নখ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ভাটায় শিশুশ্রমের বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ বলেন, ‘অল্প কিছু ভাটায় শিশুশ্রমিক থাকতে পারে তবে বেশির ভাগ ভাটায় নেই।’
জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ এসব ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব শিশু তাদের মা-বাবার সঙ্গে বা কেউ সরদারের সঙ্গে সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেছে ছয় মাসের কাজের চুক্তিতে। সদরের কুমাখালী ও ভূতমারা, মাছখালী এলাকার ছয়টি; আমতলী উপজেলার মহিষডাঙ্গা, তালতলা ও কুতুবপুর এলাকার তিনটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, এসব ভাটায়ও অনেক শিশু কাজ করছে। সদরের নিশানবাড়িয়ার একটি ইটভাটায় কর্মরত শিশু শিল্পী (৯), অন্তরা (১০), সামাদের (১১) মতো অনেকে ইটভাটায় কাজ করে। শিল্পীর মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় ইটভাটার কাজ করি। বাচ্চা স্কুলে দিলি তো কাম করন যাবি না। এ জন্যি ওগোও কামে দিছি, দু পয়সা রোজগার করুক।’
কুমড়াখালী এলাকার এবিএম ব্রিকসে কাজ করে সাতক্ষীরার ৩৯ জন শ্রমিক। এর মধ্যে ৩০ জনের বয়সই ১০ থেকে ১৬ বছর। আলমগীর নামে ১২ বছর বয়সী এক শিশু জানায়, সে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এরপর ইটভাটার কাজে চলে এসেছে। এখন মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে ইট শুকানোর কাজ করে। শিশুশ্রমিক শুভ্র (১২) ভাটায় ইট তৈরির কাজ করে। সে বলে, ‘ফাইভ পর্যন্ত পড়ছিলাম। ছয়জনের সংসার। বাবা সাগরে মাছ ধরি যে পয়সা আয় করে তা দিয়ে খাবা-দাবা চলে না। পড়তি তো ইচ্ছা করে কিন্তু কাম না করলি খাব কি?’
শ্রম আইন-২০০৬-এর ২৮৪ ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে অথবা আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করে কোনো শিশুকে চাকরি করার অনুমতি দিলে, তিনি ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’ সনি ব্রিকসের মালিক জাফর হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরার শ্রমিকেরা এই কাজে পারদর্শী হওয়ায় এদের দিয়ে কাজ করানো ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’ ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক উপপরিচালক মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘ইটভাটায় দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে শিশুদের ত্বক ও নখ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ভাটায় শিশুশ্রমের বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ বলেন, ‘অল্প কিছু ভাটায় শিশুশ্রমিক থাকতে পারে তবে বেশির ভাগ ভাটায় নেই।’
জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ এসব ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments