রায়হান ও মুন্নার খোঁজে পুলিশ by আবদুস সামাদ
কলেজছাত্রীর আপত্তিকর দৃশ্য জড়িয়ে তা ফেসবুকে দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের সঙ্গে জড়িত রায়হান ও মুন্নাকে গ্রেপ্তারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। গতকাল দিনভর বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এদিকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে সাংগঠনিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে পুলিশ কোন সিদ্ধান্ত নিলে এ ব্যাপারে আপত্তি থাকবে না বলেও জানিয়েছেন তারা। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কলেজছাত্রী বাদী হয়ে মামলা করেছে খুলশি থানায়। এতে নগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযুক্ত বাকি দু’জন রায়হান ও মুন্নকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে চট্টগ্রাম। আটক দু’জনকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা চলছে বিভিন্ন মহল থেকে। আটককৃত রাকিব উদ্দিন ও ফরমান উদ্দিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে খুলশি থানা পুলিশ। এ সময় মুন্না ও রায়হান ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানায় পুলিশকে। এ ছাড়া তাদের প্ররোচনায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও জানায় তারা। এ ছাড়া তারা আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে কলেজছাত্রীর কাছ থেকে টাকা দাবি করা ও হাটহাজারীতে টাকা তুলতে যাওয়ার কথা স্বীকার করে। এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য রাকিব উদ্দিনের ব্যাপারে চবি ছাত্রলীগ কোন সিদ্ধান্ত নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা রাকিবের ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে সংগঠন জড়িত নয়। তাই এ ব্যাপারে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তারা আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে হেয় করার জন্যই প্রতিপক্ষরা এমনটি ঘটিয়েছে। খুলশি থানার ইনচার্জ রাসেল মিয়া মানবজমিনকে জানান, আটক দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকি দু’জনকে গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে। শিগগিরই তাদের খুঁজে পাবো বলে আশা করছি। এদিকে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপু বলেন, রাকিব ছাত্রলীগের কর্মী; কিন্তু যে ঘটনা ঘটেছে তা একেবারেই তার ব্যক্তিগত বিষয়। এ ব্যাপারে পুলিশ তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। প্রসঙ্গত, নগরীর নাসিরাবাদ মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় মুন্না নামে এক তরুণের। মুন্নার মাধ্যমে ওই ছাত্রীর কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা রায়হান উদ্দিন ও রাকিব উদ্দিন। মুন্নার বন্ধু হিসেবে রায়হান ও রাকিবকে ফ্রেন্ড করে নেয় সে। কিছুদিন পর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় নগরীর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরমান উদ্দিন। এ সময় শহরে তারা গোপন মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়, কলেজপড়ুয়া মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করবে। চারজন মিলে পরামর্শ করে ওই ছাত্রীর ছবির সঙ্গে আপত্তিকর ছবি জুড়ে দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ ফেলবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু নগ্ন ছবিও তৈরি করে তারা। এসব ছবির কয়েকটি ছাত্রীর মেইল ও ফেসবুকে পাঠিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করে। এতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে তার পরিবার। চক্ষুলজ্জার ভয়ে তারা আপসের সিদ্ধান্ত নেন। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয়। নগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রতারক চক্রটিকে ধরতে মাঠে নামে। বুধবার বিকালে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নেয়। রাকিব ও ফরমান টাকা তুলতে আসে। এক পর্যায়ে টাকা তুলে বের হলে দুই লাখ টাকা ও অস্ত্রসহ হাতেনাতে তাদের আটক করে।
No comments