ড. মিজান-ডিএমপি মুখোমুখি
পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলে উল্টো তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। পুলিশের গুলিতে আহত যুবককে দেখতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড. মিজান পুলিশের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। তার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিবৃতি দিয়ে ড. মিজানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে কড়া ভাষায়। ডিএমপির ওই বিবৃতিতে আহত যুবককে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য দাবি করে বলা হয়েছে ড. মিজানের এ বক্তব্য জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে। যদিও গতকাল আরেক প্রতিক্রিয়া ড. মিজান বলেছেন, নিজস্ব ক্ষমতাবলেই তিনি হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। আর আহত যুবক হিযবুত তাহরীরের সদস্য হলেও তার পায়ে গুলি করার অধিকার পুলিশের নেই। সে অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ড. মিজান পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বাড়াবাড়ি’র অভিযোগ তুলে বলেন, একটি জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা যেন ‘আইনের ঊর্ধ্বে’ উঠে গেছেন। যদিও মিজান কোন জেলার নাম উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সেই জেলা কোনটি তা আপনারা সবাই জানেন। তার এ বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে পুলিশ প্রশাসনে। তিক্ত বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে পুলিশ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে।
এমনকি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মিলের ইঙ্গিতও করা হয়েছে পুলিশের প্রতিবাদলিপিতে। গত বছরের ২৯শে ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে খালেদা জিয়া এক নারী পুলিশ সদস্যকে কটাক্ষ করেছিলেন। পুলিশের প্রতিবাদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদে থেকে আদালতের অনুমতি ছাড়াই তিনি পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন আসামিকে দেখতে গিয়েছিলেন। এতে আইন ও শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হয়েছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, এটা ভবিষ্যতে অন্যান্য নাগরিকের মধ্যে আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে। অপরদিকে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তারা হয়তো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ ভালভাবে পড়ে দেখেনি। এখানে যে কোন হাসপাতাল, এমনকি কারাগার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেগুলো পরিদর্শন করার এখতিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান গুলিবিদ্ধ নাফিস সালাম ওরফে উদয়কে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। পুলিশের দাবি, নাফিস হিযবুত তাহরির উলাই’য়াহ বাংলাদেশ-এর সক্রিয় সদস্য। নাফিসের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে ড. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ বাড়াবাড়ি সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যেন নাগরিকরা দাসে রূপান্তরিত হয়ে গেছে এবং তারা সবাই দাস মালিক এবং তাদের ভিতরে কোন রকম চেইন অব কমান্ড কাজ করছে বলে মনে হয় না।’ ড. মিজান সে সময় বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বিষয় এখানে পুলিশ বর্বরোচিত আচরণ করছে। আমরা সাংঘাতিকভাবে শঙ্কিত ও উদ্বেগ প্রকাশ করি যখন কোন একটি নির্দিষ্ট জেলা থেকে যখন কেউ দায়িত্বে থাকে, তাদের ধারণার সৃষ্টি হয় তারা যেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে, আইন তাদের স্পর্শ করতে পারবে না।’ ড. মিজানের এ বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে তোলপাড় শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনে। ড. মিজানের ইঙ্গিত করা ‘নির্দিষ্ট জেলা’ যে কোনটি তা বোঝার বাকি থাকে না কারও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে রাতেই গণমাধ্যমে এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রতিবাদ পাঠানো হয়। প্রতিবাদে বলা হয়, গত ১৭ই অক্টোবর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে মোহাম্মদপুর ইকবাল রোড বায়তুস সালাম মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা চলে যাওয়ার সময় মসজিদের উত্তর গেটের কাছে ২০-২৫ জন সমবেত হয়ে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর’-এর ব্যানার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি সমাবেশসহ লিফলেট বিতরণ করে। এসময় পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে হিযুবতের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে এবং ইট নিক্ষেপ করে পুলিশ সদস্যদের আহত করে। পুলিশ আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে শটগানের গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। এতে হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য নাফিস আহত হয় এবং পুলিশ তাকে আটক করে। পুলিশ তার কাছ থেকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের লেখা সংবলিত ৬০টি লিফলেট উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত লিফলেটের ২৫টিতে ‘হে মুসলিমগণ! হাসিনা-খালেদা শাসনের অধীনে মৃত্যুবরণ হচ্ছে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ এবং এ কুফর শাসনব্যবস্থাকে অপসারণ করা ফরজ দায়িত্ব’ লেখা ছিল। আহত নাফিসকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় নাফিসের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় দণ্ডবিধি ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে ২০১০ সালের ৩রা মে নাফিস সালাম ওরফে উদয়কে হিযবুত তাহরীরের আপত্তিকর লেখা সংবলিত লিফলেটসহ আদাবর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। সে সময় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করা হয়েছে।
প্রতিবাদে বলা হয়, হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন। নাফিস সালাম এ সংগঠনের তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক পরামর্শক। ড. মিজানুর রহমান বাংলাদেশ সরকারের একটি সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। যাচাই বাছাই ব্যতীত নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনের আসামির বক্তব্যের ভিত্তিতে একতরফাভাবে বক্তব্য প্রদান জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে। এর মাধ্যমে তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমান সরকারের সাফল্য হচ্ছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও জঙ্গিবাদ নির্মূল। অথচ তিনি হাসপাতালে গিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতার সঙ্গে দেখা করে সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে অনভিপ্রেত মন্তব্য করেছেন। যা পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে পারে এবং ফলে জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও এ বক্তব্য পুলিশ বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা বিনষ্টের কারণ হতে পারে।
প্রতিবাদে বলা হয়, গত বছর ডিসেম্বর মাসে আমরা একটি নির্দিষ্ট জেলাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদান করতে দেখেছিলাম। ড. মিজানুর রহমানের নিকট থেকে এ পর্যায়ে একই সুরে একটি জেলাকে কটাক্ষ করে একই প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। তার বক্তব্যে পুরো জাতি স্তম্ভিত এবং আমরা হতাশাগ্রস্ত। ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্যে বর্তমান সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভুল ইঙ্গিত দিতে পারে। একটি সাংবিধানিক পদে থেকে পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়ে তিনি কি অর্জন করতে চেয়েছেন তা বোধগম্য নয়। আমরা দায়িত্বশীল সকল ব্যক্তিকে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য পরিহার করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
এদিকে জাতীয় মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যাকে দেখতে গিয়েছি, বলা হচ্ছে সে একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থেকেও থাকে এবং প্রমাণও যদি থেকে থাকে যে সে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য এরপরেও কিন্তু কোন বাহিনীর কোন অধিকার নেই যে তার পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করবার। আমরা কিন্তু সে জঙ্গি সংগঠন না কি করে এটি কিন্তু দেখার জন্য যাইনি। আমরা কিন্তু গিয়েছি পুলিশের যে বর্বরোচিত আচরণ, সে আচরণটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন, এ কথাটি তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য। ড. মিজান বলেন, কিছুদিন আগে মিরপুরের একটি ঘটনাতে, মিরপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যিনি পুলিশ ছিলেন তিনি এমন কিছু কর্মকাণ্ড করেছেন যেগুলো মানবধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এবং তারপর উনি দম্ভসহকারে বলেছিলেন, উনি এমন স্থান থেকে এসেছেন তাকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। এরকম বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটার পরেই কিন্তু জনমনে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, তারা এটিকে একটি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। এতে সরকারের সুনাম যে বিনষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার একটা অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় এটা তো বলাই বাহুল্য।
এদিকে গুলিবিদ্ধ নাফিসকে ঠিক কতদূর বা কি অবস্থায় গুলি করা হয়েছিল এ বিষয়ে ডিএমপির প্রতিবাদলিপিতে কিছু বলা হয়নি। তবে ঢাকা মেডিকেলের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া নাফিসের তত্ত্বাবধানকারী একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, নাফিসের বাম পায়ে হাঁটুর নিচে ও কোমরে যে ছররা গুলি বিদ্ধ হয়েছে তা খুব কাছ থেকে করা হয়েছে। দূর থেকে গুলি করা হলে এভাবে বিদ্ধ হতো না।
বৃহস্পতিবার ড. মিজান পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বাড়াবাড়ি’র অভিযোগ তুলে বলেন, একটি জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা যেন ‘আইনের ঊর্ধ্বে’ উঠে গেছেন। যদিও মিজান কোন জেলার নাম উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সেই জেলা কোনটি তা আপনারা সবাই জানেন। তার এ বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে পুলিশ প্রশাসনে। তিক্ত বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে পুলিশ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে।
এমনকি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মিলের ইঙ্গিতও করা হয়েছে পুলিশের প্রতিবাদলিপিতে। গত বছরের ২৯শে ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে খালেদা জিয়া এক নারী পুলিশ সদস্যকে কটাক্ষ করেছিলেন। পুলিশের প্রতিবাদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদে থেকে আদালতের অনুমতি ছাড়াই তিনি পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন আসামিকে দেখতে গিয়েছিলেন। এতে আইন ও শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হয়েছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, এটা ভবিষ্যতে অন্যান্য নাগরিকের মধ্যে আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে। অপরদিকে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তারা হয়তো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ ভালভাবে পড়ে দেখেনি। এখানে যে কোন হাসপাতাল, এমনকি কারাগার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেগুলো পরিদর্শন করার এখতিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান গুলিবিদ্ধ নাফিস সালাম ওরফে উদয়কে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। পুলিশের দাবি, নাফিস হিযবুত তাহরির উলাই’য়াহ বাংলাদেশ-এর সক্রিয় সদস্য। নাফিসের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে ড. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ বাড়াবাড়ি সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যেন নাগরিকরা দাসে রূপান্তরিত হয়ে গেছে এবং তারা সবাই দাস মালিক এবং তাদের ভিতরে কোন রকম চেইন অব কমান্ড কাজ করছে বলে মনে হয় না।’ ড. মিজান সে সময় বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বিষয় এখানে পুলিশ বর্বরোচিত আচরণ করছে। আমরা সাংঘাতিকভাবে শঙ্কিত ও উদ্বেগ প্রকাশ করি যখন কোন একটি নির্দিষ্ট জেলা থেকে যখন কেউ দায়িত্বে থাকে, তাদের ধারণার সৃষ্টি হয় তারা যেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে, আইন তাদের স্পর্শ করতে পারবে না।’ ড. মিজানের এ বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে তোলপাড় শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনে। ড. মিজানের ইঙ্গিত করা ‘নির্দিষ্ট জেলা’ যে কোনটি তা বোঝার বাকি থাকে না কারও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে রাতেই গণমাধ্যমে এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রতিবাদ পাঠানো হয়। প্রতিবাদে বলা হয়, গত ১৭ই অক্টোবর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে মোহাম্মদপুর ইকবাল রোড বায়তুস সালাম মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা চলে যাওয়ার সময় মসজিদের উত্তর গেটের কাছে ২০-২৫ জন সমবেত হয়ে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর’-এর ব্যানার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি সমাবেশসহ লিফলেট বিতরণ করে। এসময় পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে হিযুবতের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে এবং ইট নিক্ষেপ করে পুলিশ সদস্যদের আহত করে। পুলিশ আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে শটগানের গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। এতে হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য নাফিস আহত হয় এবং পুলিশ তাকে আটক করে। পুলিশ তার কাছ থেকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের লেখা সংবলিত ৬০টি লিফলেট উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত লিফলেটের ২৫টিতে ‘হে মুসলিমগণ! হাসিনা-খালেদা শাসনের অধীনে মৃত্যুবরণ হচ্ছে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ এবং এ কুফর শাসনব্যবস্থাকে অপসারণ করা ফরজ দায়িত্ব’ লেখা ছিল। আহত নাফিসকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় নাফিসের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় দণ্ডবিধি ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে ২০১০ সালের ৩রা মে নাফিস সালাম ওরফে উদয়কে হিযবুত তাহরীরের আপত্তিকর লেখা সংবলিত লিফলেটসহ আদাবর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। সে সময় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করা হয়েছে।
প্রতিবাদে বলা হয়, হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন। নাফিস সালাম এ সংগঠনের তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক পরামর্শক। ড. মিজানুর রহমান বাংলাদেশ সরকারের একটি সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। যাচাই বাছাই ব্যতীত নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনের আসামির বক্তব্যের ভিত্তিতে একতরফাভাবে বক্তব্য প্রদান জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে। এর মাধ্যমে তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমান সরকারের সাফল্য হচ্ছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও জঙ্গিবাদ নির্মূল। অথচ তিনি হাসপাতালে গিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতার সঙ্গে দেখা করে সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে অনভিপ্রেত মন্তব্য করেছেন। যা পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে পারে এবং ফলে জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও এ বক্তব্য পুলিশ বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা বিনষ্টের কারণ হতে পারে।
প্রতিবাদে বলা হয়, গত বছর ডিসেম্বর মাসে আমরা একটি নির্দিষ্ট জেলাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদান করতে দেখেছিলাম। ড. মিজানুর রহমানের নিকট থেকে এ পর্যায়ে একই সুরে একটি জেলাকে কটাক্ষ করে একই প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। তার বক্তব্যে পুরো জাতি স্তম্ভিত এবং আমরা হতাশাগ্রস্ত। ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্যে বর্তমান সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভুল ইঙ্গিত দিতে পারে। একটি সাংবিধানিক পদে থেকে পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়ে তিনি কি অর্জন করতে চেয়েছেন তা বোধগম্য নয়। আমরা দায়িত্বশীল সকল ব্যক্তিকে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য পরিহার করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
এদিকে জাতীয় মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যাকে দেখতে গিয়েছি, বলা হচ্ছে সে একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থেকেও থাকে এবং প্রমাণও যদি থেকে থাকে যে সে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য এরপরেও কিন্তু কোন বাহিনীর কোন অধিকার নেই যে তার পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করবার। আমরা কিন্তু সে জঙ্গি সংগঠন না কি করে এটি কিন্তু দেখার জন্য যাইনি। আমরা কিন্তু গিয়েছি পুলিশের যে বর্বরোচিত আচরণ, সে আচরণটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন, এ কথাটি তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য। ড. মিজান বলেন, কিছুদিন আগে মিরপুরের একটি ঘটনাতে, মিরপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যিনি পুলিশ ছিলেন তিনি এমন কিছু কর্মকাণ্ড করেছেন যেগুলো মানবধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এবং তারপর উনি দম্ভসহকারে বলেছিলেন, উনি এমন স্থান থেকে এসেছেন তাকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। এরকম বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটার পরেই কিন্তু জনমনে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, তারা এটিকে একটি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। এতে সরকারের সুনাম যে বিনষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার একটা অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় এটা তো বলাই বাহুল্য।
এদিকে গুলিবিদ্ধ নাফিসকে ঠিক কতদূর বা কি অবস্থায় গুলি করা হয়েছিল এ বিষয়ে ডিএমপির প্রতিবাদলিপিতে কিছু বলা হয়নি। তবে ঢাকা মেডিকেলের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া নাফিসের তত্ত্বাবধানকারী একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, নাফিসের বাম পায়ে হাঁটুর নিচে ও কোমরে যে ছররা গুলি বিদ্ধ হয়েছে তা খুব কাছ থেকে করা হয়েছে। দূর থেকে গুলি করা হলে এভাবে বিদ্ধ হতো না।
ন্যায়বিচারের কথা বললে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা বলা হয়: এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরসি মজুমদার আর্টস অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. মিজান বলেন, ন্যায়বিচার সম্পর্কে কোন কথা বললেই আমাকে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। ‘হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ পাস্ট, প্রেজেন্ট এবং ফিউচার্স’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে তিনি বলেন, দেশের পুলিশ যখন বন্দুক ঠেকিয়ে কোন সাধারণ জনগণকে গুলি করে এটা কোন ধরনের আইনের মধ্যে পড়ে? এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না? আর আমি যদি তাদের ন্যায়বিচারের কথা বলি তখন আমাকে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশে আইন আছে, কেউ অপরাধ করলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। পুলিশের এ ধরনের বর্বরতা কোন সভ্য দেশে নেই।
No comments