যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে হরতাল কিসের? by মোঃ আবু সালেহ সেকেন্দার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরতাল নতুন কিছু নয়। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই বাঙালিরা তাদের দাবি আদায়ের মূল অস্ত্র হিসেবে হরতালকে ব্যবহার করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ রাজনৈতিক অস্ত্র একটু বেশিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাগাতার হরতাল। একই দিনে দুটি বিপরীতধর্মী দাবিতে ভিন্ন দুটি গোষ্ঠীর হরতালও আমরা দেখেছি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনুষঙ্গ হিসেবে হরতাল মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এ কথা ঠিক, এই কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে সংঘাত-সংঘর্ষ ও প্রাণহানির আশংকা থাকে। গত বছর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াতের ডাকা প্রতিটি হরতালের আগের দিন হরতালকে সফল করতে আয়োজিত বিক্ষোভ মির্ছিল অথবা হরতালের দিন পিকেটিংয়ের সময় দেশের কোথাও না কোথাও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
অর্থনীতির জন্য হরতাল মারাত্মক ক্ষতিকর এক অস্ত্র, যার অধিক ব্যবহারে পুরো অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। আর জনমনে হরতাল যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে সে বিষয়টিও বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী ও কামারুজ্জামানের রায়কে কেন্দ্র করে আবারও হরতাল পালন করেছে জামায়াত-শিবির। যদিও হরতাল সাম্প্রতিক সময়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি হরতালে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের কোথাও হরতাল পালিত হয়নি। জনগণ কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে। দোকানপাট খুলছে। পাবলিক যানবাহনের পাশাপাশি অনেক ব্যক্তিগত গাড়িও রাস্তায় চলছে। ফলে সকাল গড়িয়ে দুপুর না হতেই হরতালের দিন আর অন্যদিনের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। কিন্তু হরতাল পালিত হয়েছে, কী হয়নি- এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের হরতাল ডাকার অধিকার আছে কি? মহাত্মা গান্ধী যে উদ্দেশ্য সামনে রেখে ভারতবর্ষে হরতাল প্রবর্তন করেছিলেন, সেই বিবেচনায় জামায়াত-শিবিরের হরতাল কি গ্রহণযোগ্য?
‘হরতাল’ গুজরাটি শব্দ। এর অর্থ কোনো দাবি বা প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতি বা ধর্মঘট। রাজনীতি কোষের মতে, ‘কোনো দাবি বা প্রতিবাদের ভিত্তিতে অফিস-আদালত, দোকানপাট, শিল্প-কারখানা ও যানবাহন চলাচল ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়াকেই বলা হয় হরতাল।’ ১৯১৯ সালে রাওলাট আইন প্রবর্তিত হলে গান্ধী ওই আইনকে ‘শয়তানের প্রতিভূ’ অভিহিত করে ১ এপ্রিল ওই বিল বাতিলের দাবিতে সমগ্র ভারতে হরতাল বা ধর্মঘট আহ্বান করেন, যা ভারতবর্ষের প্রথম হরতাল হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে। যদিও গান্ধী প্রবর্তিত অহিংস হরতাল সহিংস হয়ে উঠলে তিনি ওই কর্মসূচি পরিত্যাগ করেন। তবে প্রতিবাদ বা দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে গান্ধী প্রবর্তিত হরতাল বা ধর্মঘটকে ভারতীয়রা কখনও ত্যাগ করেনি। তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের কৌশল হিসেবে ব্রিটিশ ভারতে হরতাল আহ্বান করেছে। তারা শুধু ইংরেজদের বিরোধিতায় নয়, সামন্ততান্ত্রিক জমিদার শোষণের বিরুদ্ধে এবং শোষক মালিকদের বিরুদ্ধেও হরতাল বা ধর্মঘট পালন করেছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বহু হরতাল আহ্বান করা হলেও আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হরতাল পালনের ঘটনা বিরলই বলা চলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি, হরতাল তার সব রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় যাই হোক না কেন, তা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করার কথা। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সব আইন, নীতি-নৈতিকতা, রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও ঐতিহ্য উপেক্ষা করে একের পর এক হরতাল আহ্বান করছে। মহাত্মা গান্ধী যে উদ্দেশ্যে হরতাল প্রবর্তন করেছিলেন তার সঙ্গে বর্তমান হরতালের কোনো মিল নেই। পাকিস্তানি শাসনামল অথবা স্বাধীন বাংলাদেশের হরতালের ঐতিহ্যকেও এই হরতাল ধারণ করে না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অধিকার আদায়ে হরতাল পালন করা যেতে পারে। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অথবা স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসনের সময়ে অথবা গণতান্ত্রিক সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদে বহুবার হরতাল পালন করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অন্যতম চিহ্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে হরতাল আহ্বানের সঙ্গে ওইসব হরতালের চারিত্রিক কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় কি? আরেকটি প্রশ্ন অবশ্যই উত্থাপিত হওয়া উচিত- এ দেশে হরতাল আহ্বান করার নৈতিক অধিকার আছে কাদের? আমার মনে হয়, এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই হবে- এ দেশে তারাই হরতাল আহ্বান করতে পারবে, যারা এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে স্বীকার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। পাশাপাশি একাত্তরে পাকিস্তানের সহযোগী হয়ে যারা এ দেশে গণহত্যায় যুক্ত ছিল, লুণ্ঠন-ধর্ষণে মদদ দিয়েছিল তাদের কেউ অথবা তাদের পক্ষ নিয়ে কারও হরতাল করার অধিকার আছে কি-না, তা ভাবার সময় এসেছে। এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে এখনই এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। অন্যথায় স্বাধীনতাবিরোধীদের স্পর্ধা এত বেড়ে যাবে যে, তারা হয়তো একসময় বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে হরতাল আহ্বান করে বসবে!
গণতন্ত্রের নামে, গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে পাকিস্তানপন্থী বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো শক্তির হরতাল পালন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একাত্তরের নরঘাতকদের বাঁচাতে হরতাল ডাকা কোনোভাবেই বৈধ রাজনৈতিক অধিকার হতে পারে না। আজ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে যারা হরতাল ডাকছে, তাদের আর যাই হোক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ভাবার কারণ নেই। আর যারা এ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না, তাদের এ দেশে হরতাল ডাকার কোনো অধিকার নেই। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার নামে যারা হরতাল ডাকছে, তারা প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সার্বভৌমত্ব ও বিচার ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে। একাত্তরকে পাকিস্তানিদের চোখে দেখছে। মুক্তিযুদ্ধকে রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের চিন্তা-চেতনায় বিশ্লেষণ করছে। যারা পাকিস্তানি চেতনায় বাংলাদেশকে বিচার করতে চায়, এ দেশের সাংবিধানিক কোনো অধিকার ভোগ করা তাদের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই জায়েজ নয়। এ দেশের সাংবিধানিক অধিকার তারাই পাওয়ার অধিকার রাখে, যারা এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে।
পরিশেষে সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে জামায়াত-শিবিরের অবৈধ হরতালের কবল থেকে এ দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে নতুন আইন প্রণয়নের। ওই আইনে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার নামে হরতাল আহ্বান করা যাবে না এমন বিধান অবশ্যই সংযোজন করতে হবে।
মোঃ আবু সালেহ সেকেন্দার : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
অর্থনীতির জন্য হরতাল মারাত্মক ক্ষতিকর এক অস্ত্র, যার অধিক ব্যবহারে পুরো অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। আর জনমনে হরতাল যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে সে বিষয়টিও বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী ও কামারুজ্জামানের রায়কে কেন্দ্র করে আবারও হরতাল পালন করেছে জামায়াত-শিবির। যদিও হরতাল সাম্প্রতিক সময়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি হরতালে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের কোথাও হরতাল পালিত হয়নি। জনগণ কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে। দোকানপাট খুলছে। পাবলিক যানবাহনের পাশাপাশি অনেক ব্যক্তিগত গাড়িও রাস্তায় চলছে। ফলে সকাল গড়িয়ে দুপুর না হতেই হরতালের দিন আর অন্যদিনের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। কিন্তু হরতাল পালিত হয়েছে, কী হয়নি- এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের হরতাল ডাকার অধিকার আছে কি? মহাত্মা গান্ধী যে উদ্দেশ্য সামনে রেখে ভারতবর্ষে হরতাল প্রবর্তন করেছিলেন, সেই বিবেচনায় জামায়াত-শিবিরের হরতাল কি গ্রহণযোগ্য?
‘হরতাল’ গুজরাটি শব্দ। এর অর্থ কোনো দাবি বা প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতি বা ধর্মঘট। রাজনীতি কোষের মতে, ‘কোনো দাবি বা প্রতিবাদের ভিত্তিতে অফিস-আদালত, দোকানপাট, শিল্প-কারখানা ও যানবাহন চলাচল ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়াকেই বলা হয় হরতাল।’ ১৯১৯ সালে রাওলাট আইন প্রবর্তিত হলে গান্ধী ওই আইনকে ‘শয়তানের প্রতিভূ’ অভিহিত করে ১ এপ্রিল ওই বিল বাতিলের দাবিতে সমগ্র ভারতে হরতাল বা ধর্মঘট আহ্বান করেন, যা ভারতবর্ষের প্রথম হরতাল হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে। যদিও গান্ধী প্রবর্তিত অহিংস হরতাল সহিংস হয়ে উঠলে তিনি ওই কর্মসূচি পরিত্যাগ করেন। তবে প্রতিবাদ বা দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে গান্ধী প্রবর্তিত হরতাল বা ধর্মঘটকে ভারতীয়রা কখনও ত্যাগ করেনি। তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের কৌশল হিসেবে ব্রিটিশ ভারতে হরতাল আহ্বান করেছে। তারা শুধু ইংরেজদের বিরোধিতায় নয়, সামন্ততান্ত্রিক জমিদার শোষণের বিরুদ্ধে এবং শোষক মালিকদের বিরুদ্ধেও হরতাল বা ধর্মঘট পালন করেছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বহু হরতাল আহ্বান করা হলেও আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হরতাল পালনের ঘটনা বিরলই বলা চলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি, হরতাল তার সব রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় যাই হোক না কেন, তা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করার কথা। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সব আইন, নীতি-নৈতিকতা, রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও ঐতিহ্য উপেক্ষা করে একের পর এক হরতাল আহ্বান করছে। মহাত্মা গান্ধী যে উদ্দেশ্যে হরতাল প্রবর্তন করেছিলেন তার সঙ্গে বর্তমান হরতালের কোনো মিল নেই। পাকিস্তানি শাসনামল অথবা স্বাধীন বাংলাদেশের হরতালের ঐতিহ্যকেও এই হরতাল ধারণ করে না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অধিকার আদায়ে হরতাল পালন করা যেতে পারে। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অথবা স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসনের সময়ে অথবা গণতান্ত্রিক সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদে বহুবার হরতাল পালন করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অন্যতম চিহ্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে হরতাল আহ্বানের সঙ্গে ওইসব হরতালের চারিত্রিক কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় কি? আরেকটি প্রশ্ন অবশ্যই উত্থাপিত হওয়া উচিত- এ দেশে হরতাল আহ্বান করার নৈতিক অধিকার আছে কাদের? আমার মনে হয়, এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই হবে- এ দেশে তারাই হরতাল আহ্বান করতে পারবে, যারা এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে স্বীকার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। পাশাপাশি একাত্তরে পাকিস্তানের সহযোগী হয়ে যারা এ দেশে গণহত্যায় যুক্ত ছিল, লুণ্ঠন-ধর্ষণে মদদ দিয়েছিল তাদের কেউ অথবা তাদের পক্ষ নিয়ে কারও হরতাল করার অধিকার আছে কি-না, তা ভাবার সময় এসেছে। এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে এখনই এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। অন্যথায় স্বাধীনতাবিরোধীদের স্পর্ধা এত বেড়ে যাবে যে, তারা হয়তো একসময় বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে হরতাল আহ্বান করে বসবে!
গণতন্ত্রের নামে, গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে পাকিস্তানপন্থী বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো শক্তির হরতাল পালন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একাত্তরের নরঘাতকদের বাঁচাতে হরতাল ডাকা কোনোভাবেই বৈধ রাজনৈতিক অধিকার হতে পারে না। আজ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে যারা হরতাল ডাকছে, তাদের আর যাই হোক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ভাবার কারণ নেই। আর যারা এ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না, তাদের এ দেশে হরতাল ডাকার কোনো অধিকার নেই। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার নামে যারা হরতাল ডাকছে, তারা প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সার্বভৌমত্ব ও বিচার ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে। একাত্তরকে পাকিস্তানিদের চোখে দেখছে। মুক্তিযুদ্ধকে রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের চিন্তা-চেতনায় বিশ্লেষণ করছে। যারা পাকিস্তানি চেতনায় বাংলাদেশকে বিচার করতে চায়, এ দেশের সাংবিধানিক কোনো অধিকার ভোগ করা তাদের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই জায়েজ নয়। এ দেশের সাংবিধানিক অধিকার তারাই পাওয়ার অধিকার রাখে, যারা এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে।
পরিশেষে সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে জামায়াত-শিবিরের অবৈধ হরতালের কবল থেকে এ দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে নতুন আইন প্রণয়নের। ওই আইনে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার নামে হরতাল আহ্বান করা যাবে না এমন বিধান অবশ্যই সংযোজন করতে হবে।
মোঃ আবু সালেহ সেকেন্দার : সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
No comments