আবারও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার
আড়াই মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জিম্বাবুয়ে সিরিজে একদম রাজার মতোই ফিরেছন সাকিব আল হাসান। রাজসিক প্রত্যাবর্তনের পর এবার রাজমুকুটও ফিরে পেলেন বাংলাদেশের এই চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার। খুলনা টেস্টে ব্যাটে-বলে অনবদ্য পারফরম্যান্স আইসিসি টেস্ট অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান ফিরিয়ে দিয়েছে তাকে। সাকিবই এখন বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডার। গত সেপ্টেম্বরে যার কাছে শীর্ষস্থান হারিয়েছিলেন সেই রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে হটিয়েই কাল সিংহাসনে বসলেন সাকিব। তৃতীয় স্থান থেকে এক লাফে শীর্ষে উঠে আসা সাকিবের রেটিং পয়েন্ট এখন ৪১৯। এটাই তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট। সাকিবের উত্তরণে একধাপ করে পিছিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে নেমে গেছেন ভারতের অশ্বিন (৩৫৭) ও দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্যান্ডার (৩৪৮)। খুলনা টেস্টে সেঞ্চুরির পাশাপাশি দশ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন সাকিব। ইয়ান বোথাম ও ইমরান খান। নামগুলো শুনলেই শ্রদ্ধায় নুয়ে আসে ক্রিকেটরসিকদের মাথা। এই কিংবদন্তিদের অনন্য এক কীর্তির ভাগিদার হয়ে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্রিকেটের রূপকথার নায়কের সৌজন্যে ৩১ বছর পর বিরল এক অলরাউন্ড নৈপুণ্যের সাক্ষী হল টেস্ট ক্রিকেট। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৭ বছরের ইতিহাসে এই কীর্তি আছে মাত্র তিনজনের। ইয়ান বোথাম ও ইমরান খানের পর ইতিহাসের তৃতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে কাল সেই অভিজাত ক্লাবে নাম লেখালেন বাংলাদেশের সোনার ছেলে সাকিব আল হাসান।খুলনা টেস্টে কাল জিম্বাবুয়েকে ১৬২ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিবের হাত ধরে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা। খুলনা টেস্টটা বাংলাদেশের মতো সাকিবের জন্যও সব পাওয়ার এক ম্যাচ। প্রথম ইনিংসে ৮০ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। তার ঘূর্ণি জাদুতেই জিম্বাবুয়েকে ৩৬৮ রানে অলআউট করে ৬৫ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। এর আগে ব্যাট হাতেও দলকে পথ দেখান সাকিব। তার ১৩৭ রানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৪৩৩ রানের বড় সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ে আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন সাকিব। এবার মাত্র ৪৪ রানে নিলেন পাঁচ উইকেট। সাকিবের ভেলকিতে শেষদিনে ১৫১ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে। টেস্টে এই প্রথম দশ উইকেট নিলেন সাকিব। তাতে বাংলাদেশ সিরিজ তো জিতলই, জিম্বাবুয়েকে পেছনে ফেলে আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়ের নয় নম্বরে উঠে আসাও নিশ্চিত হল মুশফিকদের।একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও দশ উইকেট। সাকিবের আগে এই কীর্তি ছিল মাত্র দু’জনের। এতেই বোঝা যায় সাকিবের অর্জন কত বড়। গত ৩১ বছরে অনেক চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডারের আবির্ভাব হলেও সাকিবই প্রথম বোথাম-ইমরানের পাশে বসলেন। স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে সেঞ্চুরি ও দশ উইকেট নেয়া প্রথম ক্রিকেটার সাকিব। কাকতালীয়ভাবে বিরল এই অলরাউন্ড নৈপুণ্যের তিনটি কীর্তিই উপমহাদেশের মাটিতে। প্রথম নজিরটি গড়েছিলেন ইংলিশ গ্রেট বোথাম। ১৯৮০ সালে ভারতের বিপক্ষে মুম্বাই টেস্টে। বোথামের সেঞ্চুরি (১১৪) ও ১৩ উইকেটের সুবাদে ম্যাচটা দশ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড। বোথামের তিন বছর পর ইমরানের কীর্তিও ভারতের বিপক্ষে। ফয়সালাবাদ টেস্টে বিধ্বংসী সেঞ্চুরির (১১৭) পর ১১ উইকেট নিয়ে ভারতকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন ইমরান। এরপর কাল সাকিবের সৌজন্যে এমন কীর্তি দেখল টেস্ট ক্রিকেট। এর আগে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি দু’বার গড়ে স্যার গ্যারি সোবার্স, বোথাম, মুশতাক মোহাম্মদ ও জ্যাক ক্যালিসদের পাশে নাম লিখিয়েছিলেন। কাল সেই কীর্তি ছাপিয়ে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিলেন সাকিব।
No comments