সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ছিলেন আমাদের সমাজে উদারনৈতিক মূল্যবোধের উজ্জ্বল ব্যক্তিদের একজন। কিছুদিন আগে চলে গেলেন আরেক গুণীজন অধ্যাপক সালাহ্ উদ্দীন আহমদ। তাদের চলে যাওয়াতে আমাদের সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীকে আমি প্রথম দেখি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের নির্বাচনের সময়। আমি তখন কলেজে পড়ি। আমরা থাকতাম আজিমপুর সরকারি কলোনিতে। তখন হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতো, যা আমাদের আকৃষ্ট করত। আমি যখন তাকে প্রথম দেখি- ওই বছর সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ওই বছর সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (পরে যিনি প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন)। তখন হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন শেষে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটার অর্থাৎ ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেয়ার রেওয়াজ ছিল। হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যে বক্তৃতা দেন, ওই বক্তৃতা শুনে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীকে আমাদের আপনজন মনে হয়েছে।
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও আমি একই বিভাগের শিক্ষার্থী হলেও বিভাগে তাকে আমরা বেশিদিন পাইনি; কারণ ১৯৫২ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই- ওই বছরই তিনি মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যান। বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকার কারণে তার ভালো ফলাফল ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তখনই আমরা জানতে পারি। তখন তাকে আমরা কবি হিসেবেও জানতাম।
পেশাগত কারণে বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। এতে আমাদের পরিচয় আরও ঘনিষ্ট হয়েছে। এক পর্যায়ে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নূরউল ইসলামের যৌথ উদ্যোগে পূর্বমেঘ নামে একটি পত্রিকা বের হয়। পূর্বমেঘ তখন পাঠক সমাজে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। ওই পত্রিকায় আমিও লিখতাম। লেখার সূত্রে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ বাড়ে। তার কবিতা, প্রবন্ধ ও বক্তৃতা- সবকিছুতেই একটা নিজস্বতা ছিল। তার অনুবাদকর্মও বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
শিক্ষক হিসেবে, দক্ষ প্রশাসক হিসেবেও তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। তার সঙ্গে কাজ করাটা ছিল আমার জন্য আনন্দদায়ক। তার ভদ্রতা ও বিনয় ছিল অসাধারণ; কিন্তু যে কোনো বিষয়ে তিনি তার অবস্থানে দৃঢ় থাকতেন। বিভিন্ন বিষয়ে তার উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনাড়ম্বর ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তার মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ পাওয়া আমাদের জন্য ছিল সৌভাগ্যের বিষয়। এটা আমরা কখনোই ভুলতে পারব না। লেখক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর প্রথম পরিচিতি ছিল কবি হিসেবে। যখন তিনি কবিতা লিখতেন না, তখন তার অন্য লেখা ও বক্তব্যে কবিতার গুণ লক্ষ করা যেত।
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী শিক্ষক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : লেখক ও শিক্ষাবিদ
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও আমি একই বিভাগের শিক্ষার্থী হলেও বিভাগে তাকে আমরা বেশিদিন পাইনি; কারণ ১৯৫২ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই- ওই বছরই তিনি মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যান। বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকার কারণে তার ভালো ফলাফল ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তখনই আমরা জানতে পারি। তখন তাকে আমরা কবি হিসেবেও জানতাম।
পেশাগত কারণে বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। এতে আমাদের পরিচয় আরও ঘনিষ্ট হয়েছে। এক পর্যায়ে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নূরউল ইসলামের যৌথ উদ্যোগে পূর্বমেঘ নামে একটি পত্রিকা বের হয়। পূর্বমেঘ তখন পাঠক সমাজে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। ওই পত্রিকায় আমিও লিখতাম। লেখার সূত্রে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ বাড়ে। তার কবিতা, প্রবন্ধ ও বক্তৃতা- সবকিছুতেই একটা নিজস্বতা ছিল। তার অনুবাদকর্মও বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
শিক্ষক হিসেবে, দক্ষ প্রশাসক হিসেবেও তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। তার সঙ্গে কাজ করাটা ছিল আমার জন্য আনন্দদায়ক। তার ভদ্রতা ও বিনয় ছিল অসাধারণ; কিন্তু যে কোনো বিষয়ে তিনি তার অবস্থানে দৃঢ় থাকতেন। বিভিন্ন বিষয়ে তার উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনাড়ম্বর ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তার মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ পাওয়া আমাদের জন্য ছিল সৌভাগ্যের বিষয়। এটা আমরা কখনোই ভুলতে পারব না। লেখক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর প্রথম পরিচিতি ছিল কবি হিসেবে। যখন তিনি কবিতা লিখতেন না, তখন তার অন্য লেখা ও বক্তব্যে কবিতার গুণ লক্ষ করা যেত।
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী শিক্ষক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : লেখক ও শিক্ষাবিদ
No comments