এ এক অসহায়ত্বের যুগ by জোসেফ ই স্টিগলিৎজ
দুটি নতুন সমীক্ষায় দেখা যায়, মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে অসমতার ব্যাপারটি কোন মাত্রায় পৌঁছেছে। প্রথমত,
যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস ব্যুরোর ইনকাম অ্যান্ড পোভার্টি প্রতিবেদনে দেখা
যায়, দেশটির সাধারণ মানুষের আয় এক জায়গায় এসে থমকে গেছে; যদিও দাবি করা হয়,
মার্কিন অর্থনীতি মন্দা কাটিয়ে উঠেছে। মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় করে দেখা যায়,
দেশটির মানুষের গড়পড়তা আয় সিকি শতাব্দীর আগের পর্যায়ের চেয়েও নিচে নেমে
গেছে। এটা একসময় ভাবা হতো যে দুনিয়ার অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি
ঈর্ষা বোধ করে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতার কারণে, সামরিক শক্তির কারণে নয়।
কিন্তু এখন সেখানকার শীর্ষ ধনীদের আয় বাড়লেও আমজনতার আয় কমেছে। এ কারণে
মানুষ এমন একটি অর্থনৈতিক মডেল কেন অনুসরণ করবে?
দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রতিবেদন ২০১৪ উল্লিখিত তথ্য-উপাত্তের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। প্রতিবছর ইউএনডিপি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে। এতে উপার্জনের বাইরেও মানুষের ভালো থাকার আরও কিছু মাত্রা আমলে নেয়, যেমন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা। এই হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের মাপকাঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পঞ্চম, তার আগে আছে যথাক্রমে নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। কিন্তু অসমতার মাপকাঠিতে যখন তার অবস্থান নির্ণয় করা হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও ২৩ ধাপ পেছনে চলে যায়। দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান গ্রিস ও স্লোভাকিয়ার পেছনে। এসব দেশকে মানুষ সাধারণ অনুকরণীয় মডেল হিসেবে বিবেচনা করে না বা তারা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের কাতারে পড়ে না।
ইউএনডিপির উল্লিখিত প্রতিবেদনে সামাজিক পারফরম্যান্সের আরও একটি সূচকে জোরারোপ করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে অসহায়ত্ব। এ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, অনেক দেশ সফলভাবে দারিদ্র্য থেকে বের হলেও বহু মানুষের জীবন এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অসুস্থতার মতো ছোট একটি ঘটনায় তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যেতে পারে। জীবনের নিম্নমুখী গমনই সেখানে প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর ঊর্ধ্বমুখী গমনের সম্ভাবনাও খুবই সীমিত। যুক্তরাষ্ট্রে উল্লিখিত ঊর্ধ্বমুখী গমন কোনো বাস্তবসম্মত ব্যাপার নয়, বরং সেটা একধরনের রূপকথার মতোই। বহু মানুষের জীবনে অসহায়ত্ব এখন নিত্যসঙ্গী। এর আংশিক কারণ হচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ খাতে সংস্কার করলেও এর কারণে বহু দরিদ্র মার্কিনের জীবন অনিশ্চয়তার পঙ্কে নিমজ্জিত হয়েছে। সমাজের নিচু কোটির মানুষেরা সেখানে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে, অর্থাৎ দেউলিয়া হওয়ার আগের ধাপে অবস্থান করছে। অসুস্থতা, বিবাহবিচ্ছেদ ও চাকরি হারানোর মতো ঘটনা তাদের ঠেলে খাদ পার করে দিতে পারে।
২০১০ সালে পেশেন্ট কেয়ার অ্যান্ড অ্যাফর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট করা হয়, এর লক্ষ্য ছিল এসব হুমকির মাত্রা কমানো। আর প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমাহীন মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু অংশত সর্বোচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত ও রিপাবলিকান গভর্নর ও আইনপ্রণেতাদের গোঁয়ার্তুমির কারণে ২৪টি রাজ্যে মেডিকেইড-সেবা (দরিদ্র্যদের বিমাসেবা) ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি; যদিও এর পুরো প্রিমিয়ামই ফেডারেল সরকারের দেওয়ার কথা—যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ মিলিয়ন মানুষের বিমা নেই। আর অর্থনৈতিক অসমতা রাজনৈতিক অসমতায় পরিণত হলে সরকার নিচু কোটির মানুষের দিকে কোনো নজরই দেয় না। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ রাজেই ব্যাপারটা এমন।
জিডিপি বা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটে না। আবার অসহায়ত্বে নিপতিত দেশগুলোর মধ্যকার পার্থক্যও এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশেই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবনমন ঘটেছে। যাদের চাকরি আছে, তারা সব সময় চাকরি হারানোর ভয়ে থাকে, আর যাদের চাকরি নেই, তারা চাকরি পাবে কি না, সেই শঙ্কায় দিনাতিপাত করে।
সাম্প্রতিক সময়ের এই অর্থনৈতিক মন্দায় বহু মানুষের সম্পদ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে স্টক মার্কেট ঘুরে দাঁড়ালেও মধ্যবিত্তের সম্পদ ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কমেছে। তার মানে, মধ্যবয়স্ক ও বয়স্ক লোকজন তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে, আরও লাখ লাখ মানুষ বাড়িঘর হারানোর আশঙ্কায় দিন গুনছে।
এই অনিরাপত্তার বিষয়টি মূল ধারার মার্কিনদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, উল্লিখিত অনিরাপত্তার ব্যাপারটি ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন শহরে বসবাসরত হিস্পানি ও আফ্রিকান-আমেরিকান মানুষ একটি অকার্যকর বিচারিক ও পুলিশি ব্যবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। রাতে একটু পান করে সকালে কেউ পুলিশের হাতে পড়লে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির শিকার হতে হয়, সেটা কারাবাস পর্যন্ত গড়াতে পারে।
ইউরোপ এ ব্যাপারটি বোঝে। তাই তারা আগে থেকেই সামাজিক সুরক্ষা প্রবর্তন করেছে। ইউরোপীয়রা এটা বোঝে যে সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলে তা পরিণামে অর্থনীতিতেও সুফল বয়ে আনতে পারে। কারণ, মানুষ বেশি ঝুঁকি নিলে তা উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত হয়।
কিন্তু আজ ইউরোপের নানা প্রান্তে উচ্চ হারের বেকারত্ব (গড়ে ১২%, সর্বোচ্চ ২৫%) ও এর সঙ্গে কট্টরপন্থাজনিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেট হ্রাসের কারণে অভূতপূর্বভাবে অসহায়ত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামাজিক সমৃদ্ধির অবস্থা প্রথাগতভাবে মোট দেশজ উৎপাদনে যা দেখানো হয়, তার চেয়ে অনেক নিম্নগামী। এই পরিসংখ্যান আবেদন হারিয়ে ফেলেছে। কারণ, অধিকাংশ দেশের প্রকৃত মাথাপিছু (মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়ের পর) আয় সংকটের আগের সময়ের চেয়েও কম।
একটি অর্থনীতির ভালো-মন্দ মোট দেশজ উৎপাদনে প্রকৃতরূপে প্রতিফলিত হয় না। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন দ্য মেজারমেন্ট অব ইকোনমিক পারফরম্যান্সের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। আমি বর্তমানে সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের শুমারি ও ইউএনডিপির প্রতিবেদন আমাদের এই অন্তর্দৃষ্টির গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়। এই মোট দেশজ উৎপাদন একটি বদ্ধ সংস্কারে পরিণত হয়েছে, আমরা এর বেদিতে বহু কিছুই উৎসর্গ করেছি। একটি অর্থনীতিতে মোট দেশজ উৎপাদন যতই বাড়ুক না কেন, তার সুফল যদি অধিকাংশ মানুষ ভোগ না করে, বিপুলসংখ্যক মানুষ যদি ক্রমবর্ধমান হারে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তাহলে সেটি একটি ব্যর্থ অর্থনীতি—একদম মৌলিক বিবেচনায়। আর যে নীতির কারণে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায় বা অধিকাংশ মানুষের জীবনমানের অবনমন ঘটে, সেটাও মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ নীতি।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ ই স্টিগলিৎজ: নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ।
দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রতিবেদন ২০১৪ উল্লিখিত তথ্য-উপাত্তের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। প্রতিবছর ইউএনডিপি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে। এতে উপার্জনের বাইরেও মানুষের ভালো থাকার আরও কিছু মাত্রা আমলে নেয়, যেমন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা। এই হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের মাপকাঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পঞ্চম, তার আগে আছে যথাক্রমে নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। কিন্তু অসমতার মাপকাঠিতে যখন তার অবস্থান নির্ণয় করা হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও ২৩ ধাপ পেছনে চলে যায়। দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান গ্রিস ও স্লোভাকিয়ার পেছনে। এসব দেশকে মানুষ সাধারণ অনুকরণীয় মডেল হিসেবে বিবেচনা করে না বা তারা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের কাতারে পড়ে না।
ইউএনডিপির উল্লিখিত প্রতিবেদনে সামাজিক পারফরম্যান্সের আরও একটি সূচকে জোরারোপ করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে অসহায়ত্ব। এ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, অনেক দেশ সফলভাবে দারিদ্র্য থেকে বের হলেও বহু মানুষের জীবন এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অসুস্থতার মতো ছোট একটি ঘটনায় তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যেতে পারে। জীবনের নিম্নমুখী গমনই সেখানে প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর ঊর্ধ্বমুখী গমনের সম্ভাবনাও খুবই সীমিত। যুক্তরাষ্ট্রে উল্লিখিত ঊর্ধ্বমুখী গমন কোনো বাস্তবসম্মত ব্যাপার নয়, বরং সেটা একধরনের রূপকথার মতোই। বহু মানুষের জীবনে অসহায়ত্ব এখন নিত্যসঙ্গী। এর আংশিক কারণ হচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ খাতে সংস্কার করলেও এর কারণে বহু দরিদ্র মার্কিনের জীবন অনিশ্চয়তার পঙ্কে নিমজ্জিত হয়েছে। সমাজের নিচু কোটির মানুষেরা সেখানে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে, অর্থাৎ দেউলিয়া হওয়ার আগের ধাপে অবস্থান করছে। অসুস্থতা, বিবাহবিচ্ছেদ ও চাকরি হারানোর মতো ঘটনা তাদের ঠেলে খাদ পার করে দিতে পারে।
২০১০ সালে পেশেন্ট কেয়ার অ্যান্ড অ্যাফর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট করা হয়, এর লক্ষ্য ছিল এসব হুমকির মাত্রা কমানো। আর প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমাহীন মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু অংশত সর্বোচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত ও রিপাবলিকান গভর্নর ও আইনপ্রণেতাদের গোঁয়ার্তুমির কারণে ২৪টি রাজ্যে মেডিকেইড-সেবা (দরিদ্র্যদের বিমাসেবা) ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি; যদিও এর পুরো প্রিমিয়ামই ফেডারেল সরকারের দেওয়ার কথা—যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ মিলিয়ন মানুষের বিমা নেই। আর অর্থনৈতিক অসমতা রাজনৈতিক অসমতায় পরিণত হলে সরকার নিচু কোটির মানুষের দিকে কোনো নজরই দেয় না। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ রাজেই ব্যাপারটা এমন।
জিডিপি বা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটে না। আবার অসহায়ত্বে নিপতিত দেশগুলোর মধ্যকার পার্থক্যও এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশেই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবনমন ঘটেছে। যাদের চাকরি আছে, তারা সব সময় চাকরি হারানোর ভয়ে থাকে, আর যাদের চাকরি নেই, তারা চাকরি পাবে কি না, সেই শঙ্কায় দিনাতিপাত করে।
সাম্প্রতিক সময়ের এই অর্থনৈতিক মন্দায় বহু মানুষের সম্পদ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে স্টক মার্কেট ঘুরে দাঁড়ালেও মধ্যবিত্তের সম্পদ ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কমেছে। তার মানে, মধ্যবয়স্ক ও বয়স্ক লোকজন তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে, আরও লাখ লাখ মানুষ বাড়িঘর হারানোর আশঙ্কায় দিন গুনছে।
এই অনিরাপত্তার বিষয়টি মূল ধারার মার্কিনদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, উল্লিখিত অনিরাপত্তার ব্যাপারটি ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন শহরে বসবাসরত হিস্পানি ও আফ্রিকান-আমেরিকান মানুষ একটি অকার্যকর বিচারিক ও পুলিশি ব্যবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। রাতে একটু পান করে সকালে কেউ পুলিশের হাতে পড়লে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির শিকার হতে হয়, সেটা কারাবাস পর্যন্ত গড়াতে পারে।
ইউরোপ এ ব্যাপারটি বোঝে। তাই তারা আগে থেকেই সামাজিক সুরক্ষা প্রবর্তন করেছে। ইউরোপীয়রা এটা বোঝে যে সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলে তা পরিণামে অর্থনীতিতেও সুফল বয়ে আনতে পারে। কারণ, মানুষ বেশি ঝুঁকি নিলে তা উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত হয়।
কিন্তু আজ ইউরোপের নানা প্রান্তে উচ্চ হারের বেকারত্ব (গড়ে ১২%, সর্বোচ্চ ২৫%) ও এর সঙ্গে কট্টরপন্থাজনিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেট হ্রাসের কারণে অভূতপূর্বভাবে অসহায়ত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামাজিক সমৃদ্ধির অবস্থা প্রথাগতভাবে মোট দেশজ উৎপাদনে যা দেখানো হয়, তার চেয়ে অনেক নিম্নগামী। এই পরিসংখ্যান আবেদন হারিয়ে ফেলেছে। কারণ, অধিকাংশ দেশের প্রকৃত মাথাপিছু (মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়ের পর) আয় সংকটের আগের সময়ের চেয়েও কম।
একটি অর্থনীতির ভালো-মন্দ মোট দেশজ উৎপাদনে প্রকৃতরূপে প্রতিফলিত হয় না। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন দ্য মেজারমেন্ট অব ইকোনমিক পারফরম্যান্সের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। আমি বর্তমানে সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের শুমারি ও ইউএনডিপির প্রতিবেদন আমাদের এই অন্তর্দৃষ্টির গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়। এই মোট দেশজ উৎপাদন একটি বদ্ধ সংস্কারে পরিণত হয়েছে, আমরা এর বেদিতে বহু কিছুই উৎসর্গ করেছি। একটি অর্থনীতিতে মোট দেশজ উৎপাদন যতই বাড়ুক না কেন, তার সুফল যদি অধিকাংশ মানুষ ভোগ না করে, বিপুলসংখ্যক মানুষ যদি ক্রমবর্ধমান হারে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তাহলে সেটি একটি ব্যর্থ অর্থনীতি—একদম মৌলিক বিবেচনায়। আর যে নীতির কারণে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায় বা অধিকাংশ মানুষের জীবনমানের অবনমন ঘটে, সেটাও মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ নীতি।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ ই স্টিগলিৎজ: নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ।
No comments