মোদির নিউ ইয়র্ক সফর by শশী থারুর
ভারতে লোকসভার বিগত নির্বাচনে কংগ্রেসকে শোচনীয়ভাবে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি। সেই মোদির কিছুটা প্রশংসা করেছেন কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী এবং বর্তমানে এমপি ও দলীয় মুখপাত্র ড. শশী থারুর।
মোদির প্রশংসার দায়ে তাকে গত সোমবার দল থেকে বহিষ্কার করেছেন দলের প্রধান
সোনিয়া গান্ধী। শশী থারুর লিখেছিলেন মোদির জাতিসঙ্ঘে বক্তৃতাসহ নিউ ইয়র্ক
সফর নিয়ে। এখানে লেখাটির অনুবাদ ছাপা হলো।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিউ ইয়র্ক যাবেন, সে জন্য আমি ছিলাম সেখানে। তিনি ওয়াশিংটন যাওয়ার আগেই দেশে ফিরে এসেছি। মোদি বাবু নিঃসন্দেহে এখন বিশ্বমঞ্চে উপস্থিত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আপাত দ্বিধায় পর এখন চট করে বলা হচ্ছে, মোদি হলেন কূটনীতির ‘রকস্টার’। এ টাইটেল দেয়ার স্বাদ লবণ মাখিয়ে আমাদের উপভোগ করা উচিত। তবে এটা অনস্বীকার্য, নিজের স্টাইল, প্রাধান্য বিস্তারকারী উপস্থিতি, আর উপচে পড়া আত্মবিশ্বাসের জোরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান, সেখানেই ছাপ ফেলেন। আগের সপ্তাহে নেপালে ছিলাম। সেখানে তার কথা আর আচরণের প্রতি মানুষের আগ্রহের কথা শুনেছি।
যা হোক, এ সবকিছু যে ভারতের কাজে আসবেই, তা নিশ্চিত নয়। তবে এর মাধ্যমে যা হচ্ছে, তা হলোÑ এ ভারতীয় নেতার উপস্থিতি তার পূর্বসূরির চেয়ে ভিন্ন। ড. মনমোহন সিংকে যথেষ্ট তুলে ধরা হয়নি। তিনি বুদ্ধিবৃত্তির জন্য এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক ইস্যুতে অতুলনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার জন্য খুবই শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। এখন কেউ অর্থবাজারের ব্যাপারেই মিস্টার মোদির অভিমত জানতে চাইবে না।
অবশ্য হাজারখানেক হর্ষধ্বনিমুখর সমর্থক নিয়ে মোদি যখন জাতিসঙ্ঘে যান কিংবা উৎফুল্ল ও কৌতূহলী দর্শকদের সামনে গাড়ি থেকে নামেন, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতের নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতির কনফারেন্স চেম্বার আর মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। যে জনগণ ওসব রুদ্ধদ্বার কক্ষের চৌকাঠ মাড়াতে পারে না, তাদের কল্পনার জগতে ছাপ ফেলার জন্যই এটা করা হলো।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ ছিল জোরালো। এ সময়ে তার কণ্ঠে তুঙ্গে উঠেছিল আন্তর্জাতিকতাবাদ, যা ছিল পণ্ডিত নেহরুর বৈশিষ্ট্য। মোদি পরিবেশ ইস্যু ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ফলপ্রসূ বার্তা দিয়েছেন। কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের খোঁচা মারার মোক্ষম জবাবও দিয়েছেন। এনডিটিভি’র বার্খা দত্ত জানতে চাইলেন, ‘জাতিসঙ্ঘে মোদির বক্তৃতা কেমন হলো?’ আমি দ্বিধা না করেই জাতিসঙ্ঘ মঞ্চে তার পারফরম্যান্সকে ‘এ’ দিয়ে দিলাম। বিশ্বসংস্থার প্রধানমন্ত্রীদের ভাষণের দীর্ঘ ও গৎবাঁধা ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটা আসলেই একটা হাই রেটিং।
সেখানে হিন্দিতে বক্তৃতা দিয়ে নরেন্দ্র মোদি আবার জোর দিলেন তার স্বাদেশিকতার নয়া ব্রান্ডের ওপর। এর মাধ্যমে তিনি দেশের মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছেন, যারা ছিলেন সে ভাষণের মূল শ্রোতা। হিন্দিতে বলে মোদি ভুল করেননি। হিন্দি জাতিসঙ্ঘের ছয়টি সরকারি ভাষার মধ্যে পড়ে না। তবে বিভিন্ন দেশের নেতারা এর বাইরে অন্য কোনো ভাষাও ব্যবহার করতে পারেন। শর্ত হলো, তখন অনুবাদের খরচটা সে দেশের সরকারকে বহন করতে হবে।
মোদি ইংরেজির চেয়ে হিন্দিতে অনেক ভালো বলতে পারেন। তার ইংরেজি কাঠখোট্টা ও নড়বড়ে। তাই ভাষার ক্ষেত্রে নিজের শক্তি বা দুর্বলতার হিসেবে তিনি ভালোই খেলেছেন। তবে এর মাশুল দিতে হয়েছে। তা হলোÑ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে উপস্থিত সবাই তার সে বক্তৃতাই শুনেছেন অনুবাদের মাধ্যমে, যার ‘ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে’। এতে তার উপস্থিত মন্তব্যগুলো ছিল না। তদুপরি, যেমনটা আশা ছিল, শ্রোতারা মোদির ভাষণের প্রতি অতটা মনোযোগ দেননি।
আন্তর্জাতিক বিষয়ে উপস্থিত বক্তৃতা বিপজ্জনক। এর একটি নজির হচ্ছে, ‘পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মির’কে স্রেফ ‘পাকিস্তান’ বলে বসলেন মোদি। এমন খামখেয়ালিপনা ভারতের একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য বোকামি। কারণ, নয়া দিল্লি সরকার এখনো দাবি করে, ‘কাশ্মিরের পাকিস্তান-অধিকৃত অঞ্চলও আমাদের।’ এ অবস্থায় সেদিন মোদির জাতিসঙ্ঘ ভাষণের লিখিত কপি তাড়াহুড়ো করে শুদ্ধ করতে হয়েছে; কিন্তু কাশ্মির নিয়ে ভারতের চিরন্তন দাবি এভাবে ‘আপাতত ত্যাগে’র ঘটনায় অবশ্যই ইসলামাবাদ সশব্দে হেসে উঠেছিল।
‘৯/১১’-এর সন্ত্রাসবাদী হামলার স্মৃতিবিজড়িত ‘গ্রাউন্ড জিরো’ পরিদর্শন মোদির একটি চমৎকার আইডিয়া। এতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে সঠিক পথে ভারতীয় অবস্থান হয়েছে আরো সুদৃঢ়। মোদি জাতিসঙ্ঘের ভাষণে সন্ত্রাসবাদের ওপর সর্বাঙ্গীণ কনভেনশনের পক্ষে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বেশ সমর্থন পেয়েছে। তবে, এমন একটি আইডিয়ার ব্যাপারে অনেক মুসলিম রাষ্ট্রের বিরূপ মনোভাব দূর করা এবং সংশ্লিষ্ট কনভেনশনের খসড়ার বিশদ নিয়ে আমাদের বহু কাজ বাকি।
নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে রক কনসার্টে হাজির হয়ে কিছু কথা বলা মোদির চমৎকার একটি কৌশল। আর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এ কাজ করবেন বলে কল্পনাও করা যায় না। বিশেষভাবে স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ প্রধানমন্ত্রিত্বের দৃষ্টান্ত মোদি স্থাপন করতে চান, যা এককভাবে তারই। এই লক্ষ্যে তিনি সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য, এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর জনসংযোগে সহায়ক না হয়ে দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে কি না, তা দেখার বিষয়।
ম্যাডিসন স্কোয়ারে মোদির কর্মসূচি ঠিকঠাক মতোই সম্পন্ন হয়েছে। মোদি চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে তার সমর্থকদের অভিনন্দন জানাতে। তারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন সেই অন্ধকার সময়েও, যখন তার ভিসা দেয়নি আমেরিকা। এই প্রবাসীরা তার নির্বাচনী প্রচারণায় বিরাট অবদান রেখেছেন। ম্যাডিসন স্কোয়ারে মোদির বক্তৃতার টার্গেট তারা তো ছিলেনই, সেই সাথে ছিলেন অবশ্যই ভারতে তার সমর্থকেরাও। আসলে এটা ছিল বিদেশের মাটিতে তার রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা। সেখানে সমাগতদের বেশির ভাগ ছিলেন বিজেপির লোকজন, যারা মোদির ভাষণে প্রেরণা পেয়েছেন। একজন ভারতীয় নেতা আমেরিকায় কত লোক জড়ো করতে পারেন, সেটাই দেখানো হলো। তবে মূলধারার মার্কিন মিডিয়া অনুষ্ঠানটিকে নামেমাত্র গুরুত্ব দিয়েছে।
ম্যাডিসন চত্বরের সমাবেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সম্ভবত, এটাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারে মোদির সমালোচকদের দেখানো লক্ষ্য ছিল যে, ‘তিনি খুব জনপ্রিয় এবং তাকে হেয় করা উচিত হবে না।’ মার্কিন প্রশাসন সেটা আগেই বুঝে নিয়েছে। ম্যাডিসনের মঞ্চে ৪১ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান মোদির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সঙ্কেত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ভারতীয়দের বর্ধিত রাজনৈতিক শক্তি তার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে এবং তারা যেন স্বদেশের জন্য এটা কাজে লাগান। তবে গোড়ার কথা হলো, এটা ছিল এক নেতার নিজেকে প্রশ্রয় দেয়া ভালোবাসার উৎসব, যিনি নিজেকে অতিরঞ্জিত করে বীর হিসেবে মানুষের সামনে বারবার তুলে ধরতে কান্তিবোধ করেন না।
মিস্টার মোদির নিউ ইয়র্ক সফরের সারকথা অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি তা আমাদের সবাইকে জানাতে চান। এই সারকথা হলো : ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি এসেছেন এবং সারা দুনিয়া তার দিকে মনোযোগ দেয়াই উত্তম।’
লেখক : দু’বার এমপি হয়েছেন; ভারতের পররাষ্ট্র ও মানবসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। ১৪টি বইয়ের লেখক
ভাষান্তর : মীযানুল করীম
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিউ ইয়র্ক যাবেন, সে জন্য আমি ছিলাম সেখানে। তিনি ওয়াশিংটন যাওয়ার আগেই দেশে ফিরে এসেছি। মোদি বাবু নিঃসন্দেহে এখন বিশ্বমঞ্চে উপস্থিত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আপাত দ্বিধায় পর এখন চট করে বলা হচ্ছে, মোদি হলেন কূটনীতির ‘রকস্টার’। এ টাইটেল দেয়ার স্বাদ লবণ মাখিয়ে আমাদের উপভোগ করা উচিত। তবে এটা অনস্বীকার্য, নিজের স্টাইল, প্রাধান্য বিস্তারকারী উপস্থিতি, আর উপচে পড়া আত্মবিশ্বাসের জোরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান, সেখানেই ছাপ ফেলেন। আগের সপ্তাহে নেপালে ছিলাম। সেখানে তার কথা আর আচরণের প্রতি মানুষের আগ্রহের কথা শুনেছি।
যা হোক, এ সবকিছু যে ভারতের কাজে আসবেই, তা নিশ্চিত নয়। তবে এর মাধ্যমে যা হচ্ছে, তা হলোÑ এ ভারতীয় নেতার উপস্থিতি তার পূর্বসূরির চেয়ে ভিন্ন। ড. মনমোহন সিংকে যথেষ্ট তুলে ধরা হয়নি। তিনি বুদ্ধিবৃত্তির জন্য এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক ইস্যুতে অতুলনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার জন্য খুবই শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। এখন কেউ অর্থবাজারের ব্যাপারেই মিস্টার মোদির অভিমত জানতে চাইবে না।
অবশ্য হাজারখানেক হর্ষধ্বনিমুখর সমর্থক নিয়ে মোদি যখন জাতিসঙ্ঘে যান কিংবা উৎফুল্ল ও কৌতূহলী দর্শকদের সামনে গাড়ি থেকে নামেন, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতের নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতির কনফারেন্স চেম্বার আর মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। যে জনগণ ওসব রুদ্ধদ্বার কক্ষের চৌকাঠ মাড়াতে পারে না, তাদের কল্পনার জগতে ছাপ ফেলার জন্যই এটা করা হলো।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ ছিল জোরালো। এ সময়ে তার কণ্ঠে তুঙ্গে উঠেছিল আন্তর্জাতিকতাবাদ, যা ছিল পণ্ডিত নেহরুর বৈশিষ্ট্য। মোদি পরিবেশ ইস্যু ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ফলপ্রসূ বার্তা দিয়েছেন। কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের খোঁচা মারার মোক্ষম জবাবও দিয়েছেন। এনডিটিভি’র বার্খা দত্ত জানতে চাইলেন, ‘জাতিসঙ্ঘে মোদির বক্তৃতা কেমন হলো?’ আমি দ্বিধা না করেই জাতিসঙ্ঘ মঞ্চে তার পারফরম্যান্সকে ‘এ’ দিয়ে দিলাম। বিশ্বসংস্থার প্রধানমন্ত্রীদের ভাষণের দীর্ঘ ও গৎবাঁধা ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটা আসলেই একটা হাই রেটিং।
সেখানে হিন্দিতে বক্তৃতা দিয়ে নরেন্দ্র মোদি আবার জোর দিলেন তার স্বাদেশিকতার নয়া ব্রান্ডের ওপর। এর মাধ্যমে তিনি দেশের মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছেন, যারা ছিলেন সে ভাষণের মূল শ্রোতা। হিন্দিতে বলে মোদি ভুল করেননি। হিন্দি জাতিসঙ্ঘের ছয়টি সরকারি ভাষার মধ্যে পড়ে না। তবে বিভিন্ন দেশের নেতারা এর বাইরে অন্য কোনো ভাষাও ব্যবহার করতে পারেন। শর্ত হলো, তখন অনুবাদের খরচটা সে দেশের সরকারকে বহন করতে হবে।
মোদি ইংরেজির চেয়ে হিন্দিতে অনেক ভালো বলতে পারেন। তার ইংরেজি কাঠখোট্টা ও নড়বড়ে। তাই ভাষার ক্ষেত্রে নিজের শক্তি বা দুর্বলতার হিসেবে তিনি ভালোই খেলেছেন। তবে এর মাশুল দিতে হয়েছে। তা হলোÑ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে উপস্থিত সবাই তার সে বক্তৃতাই শুনেছেন অনুবাদের মাধ্যমে, যার ‘ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে’। এতে তার উপস্থিত মন্তব্যগুলো ছিল না। তদুপরি, যেমনটা আশা ছিল, শ্রোতারা মোদির ভাষণের প্রতি অতটা মনোযোগ দেননি।
আন্তর্জাতিক বিষয়ে উপস্থিত বক্তৃতা বিপজ্জনক। এর একটি নজির হচ্ছে, ‘পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মির’কে স্রেফ ‘পাকিস্তান’ বলে বসলেন মোদি। এমন খামখেয়ালিপনা ভারতের একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য বোকামি। কারণ, নয়া দিল্লি সরকার এখনো দাবি করে, ‘কাশ্মিরের পাকিস্তান-অধিকৃত অঞ্চলও আমাদের।’ এ অবস্থায় সেদিন মোদির জাতিসঙ্ঘ ভাষণের লিখিত কপি তাড়াহুড়ো করে শুদ্ধ করতে হয়েছে; কিন্তু কাশ্মির নিয়ে ভারতের চিরন্তন দাবি এভাবে ‘আপাতত ত্যাগে’র ঘটনায় অবশ্যই ইসলামাবাদ সশব্দে হেসে উঠেছিল।
‘৯/১১’-এর সন্ত্রাসবাদী হামলার স্মৃতিবিজড়িত ‘গ্রাউন্ড জিরো’ পরিদর্শন মোদির একটি চমৎকার আইডিয়া। এতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে সঠিক পথে ভারতীয় অবস্থান হয়েছে আরো সুদৃঢ়। মোদি জাতিসঙ্ঘের ভাষণে সন্ত্রাসবাদের ওপর সর্বাঙ্গীণ কনভেনশনের পক্ষে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বেশ সমর্থন পেয়েছে। তবে, এমন একটি আইডিয়ার ব্যাপারে অনেক মুসলিম রাষ্ট্রের বিরূপ মনোভাব দূর করা এবং সংশ্লিষ্ট কনভেনশনের খসড়ার বিশদ নিয়ে আমাদের বহু কাজ বাকি।
নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে রক কনসার্টে হাজির হয়ে কিছু কথা বলা মোদির চমৎকার একটি কৌশল। আর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এ কাজ করবেন বলে কল্পনাও করা যায় না। বিশেষভাবে স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ প্রধানমন্ত্রিত্বের দৃষ্টান্ত মোদি স্থাপন করতে চান, যা এককভাবে তারই। এই লক্ষ্যে তিনি সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য, এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর জনসংযোগে সহায়ক না হয়ে দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে কি না, তা দেখার বিষয়।
ম্যাডিসন স্কোয়ারে মোদির কর্মসূচি ঠিকঠাক মতোই সম্পন্ন হয়েছে। মোদি চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে তার সমর্থকদের অভিনন্দন জানাতে। তারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন সেই অন্ধকার সময়েও, যখন তার ভিসা দেয়নি আমেরিকা। এই প্রবাসীরা তার নির্বাচনী প্রচারণায় বিরাট অবদান রেখেছেন। ম্যাডিসন স্কোয়ারে মোদির বক্তৃতার টার্গেট তারা তো ছিলেনই, সেই সাথে ছিলেন অবশ্যই ভারতে তার সমর্থকেরাও। আসলে এটা ছিল বিদেশের মাটিতে তার রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা। সেখানে সমাগতদের বেশির ভাগ ছিলেন বিজেপির লোকজন, যারা মোদির ভাষণে প্রেরণা পেয়েছেন। একজন ভারতীয় নেতা আমেরিকায় কত লোক জড়ো করতে পারেন, সেটাই দেখানো হলো। তবে মূলধারার মার্কিন মিডিয়া অনুষ্ঠানটিকে নামেমাত্র গুরুত্ব দিয়েছে।
ম্যাডিসন চত্বরের সমাবেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সম্ভবত, এটাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারে মোদির সমালোচকদের দেখানো লক্ষ্য ছিল যে, ‘তিনি খুব জনপ্রিয় এবং তাকে হেয় করা উচিত হবে না।’ মার্কিন প্রশাসন সেটা আগেই বুঝে নিয়েছে। ম্যাডিসনের মঞ্চে ৪১ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান মোদির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সঙ্কেত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ভারতীয়দের বর্ধিত রাজনৈতিক শক্তি তার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে এবং তারা যেন স্বদেশের জন্য এটা কাজে লাগান। তবে গোড়ার কথা হলো, এটা ছিল এক নেতার নিজেকে প্রশ্রয় দেয়া ভালোবাসার উৎসব, যিনি নিজেকে অতিরঞ্জিত করে বীর হিসেবে মানুষের সামনে বারবার তুলে ধরতে কান্তিবোধ করেন না।
মিস্টার মোদির নিউ ইয়র্ক সফরের সারকথা অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি তা আমাদের সবাইকে জানাতে চান। এই সারকথা হলো : ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি এসেছেন এবং সারা দুনিয়া তার দিকে মনোযোগ দেয়াই উত্তম।’
লেখক : দু’বার এমপি হয়েছেন; ভারতের পররাষ্ট্র ও মানবসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। ১৪টি বইয়ের লেখক
ভাষান্তর : মীযানুল করীম
No comments