বোনদের বিক্রি করছে ভাইয়েরা
যেভাবেই হোক, বেঁচে থাকতে হবে। বাঁচিয়ে রাখতে হবে প্রিয়জনদের। জীবনধর্মের একমাত্র মন্ত্র এটাই। আর এই রূঢ় বাস্তবতার যাঁতাকলে পড়ে অনিশ্চিত জীবনকে মুখ বুঁজে মেনে নিতে হচ্ছে সিরীয় মেয়েদের। বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়া এখন এক বিধ্বস্ত জনপদ। খাবার নেই, বাসস্থান নেই, নিরাপত্তা নেইÑ জীবনের অন্বেষণে এক-তৃতীয়াংশ সিরীয় আজ ভিনদেশে শরণার্থী পরিচয়ে দিন কাটাচ্ছেন। দিন যত যাচ্ছে শরণার্থী শুধু বাড়ছেই। শরণার্থীদের এই চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। একদিকে খাদ্যের সংকট অন্যদিকে যে কোনো মুহূর্তে আবারও ফিরতে হতে পারে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে। এই দোটানার মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে প্রতিটি সিরীয়কে। এই অবস্থায় শরণার্থীরা আশ্রয়দাতা দেশগুলোর পরিবারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইছে বলে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। এ রকমই একজন সামিরা ইসমাইল। তিনি তার ছোট বোনকে এমন এক পুরুষের কাছে ‘বিক্রি করতে’ চান যে তার বোনকে বিয়ে করবে এবং তার পুরো পরিবারের দেখাশোনা করবে।
সম্প্রতি এ রকমই এক পাত্রের সঙ্গে দেখা করেছেন সামিরা, যিনি তার ছোট বোনের বিনিময়ে তিন হাজার ডলার সামিরার পরিবারকে দিতে প্রস্তুত। শুধু অর্থ সাহায্য নয়, এই বছরের শেষেই সামিরার পুরো পরিবারকে তার নিজের দেশে পাকাপাকিভাবে থাকার বন্দোবস্তও করে দেবে। ‘আমার পরিবার যদি আজ সিরিয়াতে থাকতো তাহলে হয়তো কোনো এক বসন্তে বিয়ে হতো আমার ছোট বোনের’, এমন কথাই জানালেন সামিরা। তার কণ্ঠে ফুটে উঠেছে অপারগতার সেই বেদনা, ‘এমন একটা সময় নির্ধারণ করা হতো যখন বেশি গরমও পড়বে না আবার বেশি ঠাণ্ডাও পড়বে না। পুরো গ্রামবাসীকে খাইয়ে দিতাম আমরা। হাতে এবং গলায় সোনার গয়না পরিয়ে বিয়ে দেয়া হতো আমার বোনকে।’প্রায় আট মাস আগে সামিরাও তার পরিবার নিয়ে জর্ডানের শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেয়। জর্ডানে সামিরার মতো আরও অনেকেই শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরও টিকে থাকার তাগিদে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে তাদের কন্যাসন্তানদের।
No comments