বাংলাদেশ সঙ্কটে ভারতের হস্তক্ষেপ করা উচিত
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের প্রতি ভারতের
সাড়াকে ‘কুসুম কুসুম গরম’ আখ্যা দিয়েছেন দিল্লি ভিত্তিক এশীয় হিউম্যান
রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশীয় পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।
একই
সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে এর আগে খালেদা
জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াতের কোয়ালিশন সরকার নিস্পৃহ মনোভাব
দেখিয়েছিল। এর মাশুল হিসেবেই বর্তমান সঙ্কটে ভারত [বিএনপির প্রতিকূলে]
ঔদাসীন্যের পরিচয় দিচ্ছে।
গতকাল ভারতের ইংরেজি দৈনিক দি এশিয়ান এজ পত্রিকায় লেখা এক নিবন্ধে তিনি অবশ্য চলতি অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বের করতে ভারতীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। টাইম ম্যাগাজিনের সাবেক দক্ষিণ এশীয় সংবাদদাতা মীনাক্ষী লিখেছেন, ভারত নিজেকে যখন আঞ্চলিক, এমনকি বিশ্ব নেতৃত্বের দাবিদার মনে করে তখন তার উচিত বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করা এবং একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়তে সহায়তা প্রদান করা। সহিংসতা ও আটকাভিযান বন্ধ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও বিরাধী দলকে আহবান জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেয়া কোন যৌথ উদ্যোগে ভারতের উচিত হবে অংশগ্রহণ করা।
মীনাক্ষী মন্তব্য করেন, প্রধান বিরোধী দলের বয়কট করা এক অসাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন। তবে প্রচলিত রাজনীতির পথ বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে। তিনি লিখেছেন, আওয়ামী লীগ দাবি করেছে যে, হিন্দুদের ৭০০-র বেশি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জামায়াত ও বিএনপি সমর্থকরা হামলা করেছে। কিন্তু এই অভিযোগ জামায়াত ও বিএনপি উভয়ে নাকচ করেছে। তারা এসব ঘটনার স্বাধীনভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
ওই নিবন্ধে সুপারিশ করা হয়- ভারতের উচিত হবে আরও বেশি ঘনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশ বিষয়ে সম্পৃক্ত হওয়া। ভারত ঘোষণা দিয়েছে যে, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অবশ্যই এগিয়ে নিতে হবে’। কিন্তু যদি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ফৌজদারি অপরাধের মামলা মোকাবিলা কিংবা পালিয়ে বেড়াতে হয় তাহলে একথার বাস্তবায়ন বর্তমান বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে দুরূহ হবে। সরকারের এই কর্তৃত্ববাদী মনোভাবটাই বাংলাদেশে নতুন করে সহিংসতা বৃদ্ধি ও অচলাবস্থার রেসিপি হিসেবে দেখা দিতে পারে। এটা চলতে থাকলে এমনকি হয়তো ভারতের যেটা সবচেয়ে বেশি ভয়, সেই ইসলামি জঙ্গিত্বের বৃদ্ধি ঘটতে পারে। রাজনীতি বিষয়ে বাংলাদেশীদের বিমুখ করা হয়েছে। তারা এখন মত প্রকাশের অন্য উপায়ের দিকে ঝুঁকেছে।
উল্লেখ্য, নিবন্ধে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নাশকতার জন্য বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করার পাশাপাশি উল্লেখ করা হয় যে, ‘শাসক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সহিংস ঘটনা ঘটাতে সমর্থ রয়েছে। দৃশ্যত রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রশ্রয়ে তারা বিরোধী দলের সদস্যদের প্রহার করেছে। দুষ্কৃতকারী ও বিরোধী কর্মীদের মধ্যে তফাৎ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ সরকার পাইকারি হারে জ্যেষ্ঠ নেতাদেরসহ বিরোধী দলের বিপুল সংখ্যক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক জামায়াতকর্মী পলাতক রয়েছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে গুলি করেছে।
ওই নিবন্ধে এই পর্যায়ে মন্তব্য করা হয় যে, ভারত দীর্ঘকাল ধরে ভারতের কাছে হুমকি বিবেচিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মদতদান বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশের কাছে। আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের এই অনুরোধে সাড়া দিয়েছিল। এই বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের রেকর্ড দুর্বল। সে কারণে ভারতের বিদেশ নীতিনির্ধারণী মহলের কেউ কেউ অধিকতর ধর্মনিরেপক্ষ আওয়ামী লীগকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন- যা চলতি সঙ্কটের প্রতি ভারতের দৃশ্যমান ঔদাসীন্য অনুধাবনে সহায়ক হতে পারে।
No comments