সিরিয়ায় অনাহার, নির্যাতনে ১১ হাজার বন্দীর মৃত্যু
সিরিয়ায় গণবিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নির্যাতনের মাধ্যমে কারাগারে ১১ হাজার বন্দীকে হত্যা করার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধবিষয়ক সাবেক তিন কৌঁসুলি ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। সিরিয়া-পরিস্থিতি নিয়ে সুইজারল্যান্ডে শান্তি আলোচনা শুরুর আগে এসব ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সিরিয়ার সব পক্ষকে নিয়ে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান প্রতিবেদনটি গত সোমবার প্রথম প্রকাশ করে। সিরিয়ায় তিন বছর ধরে চলা লড়াইয়ের অবসানের লক্ষ্যে এবারের আলোচনাটি সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারাগারে বন্দী নির্যাতনে সিরিয়া সরকার জড়িত বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী স্যার জেওফ্রি নাইস। তবে দামেস্ক এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মৃত কয়েদিদের হাজার হাজার ছবি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। সিরিয়ায় বাশার-আল আসাদ সরকারের পক্ষত্যাগী এক ব্যক্তি (সামরিক পুলিশের আলোকচিত্রী) ১১ হাজার বন্দীর প্রায় ৫৫ হাজার ডিজিটাল ছবি বিদেশে পাচার করেছিলেন। ‘সিজার’ নামে উল্লিখিত ওই ব্যক্তি বলেন, মৃত্যুসনদ তৈরির জন্য লাশের ছবি তোলার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তবে তিনি নিজে এসব হত্যাকাণ্ড বা নির্যাতনের ঘটনা দেখেননি।
দিনে তিনি প্রায় ৫০টি করে লাশের ছবি তুলতেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর ১৫ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা সময় লাগত। ২০১১ সাল থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত কারাগারে নির্যাতনে নিহত ব্যক্তিদের ছবি তোলা হয়। আর প্রতিবেদনটি তৈরির নেপথ্যে জড়িত রয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থনকারী দেশ কাতার। ফরেনসিক চিকিত্সক স্টুয়ার্ট হ্যামিল্টন বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে স্পষ্ট যে ‘বন্দীদের অনাহারে রাখা হয়েছিল’। বহু কয়েদিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং অল্পসংখ্যক বন্দীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। প্রতিবেদনটির ব্যাপারে সিরিয়া সরকার সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও দেশটিতে ৩৪ মাস ধরে যুদ্ধ চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একাধিক সূত্র জানায়, সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের লড়াইয়ে এ পর্যন্ত এক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া কয়েক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞ স্টুয়ার্ট হ্যামিল্টন এসব ছবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, এসব ছবি দেখে মনে হচ্ছে, কারাগারে বিপুলসংখ্যক বন্দীকে ‘অনাহারে’ রাখা হয়েছে। জিওফ্রে নাইস বলেন, হত্যাকাণ্ডের ব্যাপকতা ও পূর্বাপর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সিরিয়া সরকার যে ফৌজদারি অপরাধ করছে—এসব ছবি তার পক্ষে বড় প্রমাণ হতে পারে। বিবিসি।
No comments