দিল্লির আম আদমি দলের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ
দিল্লিতে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল আম আদমি
পার্টির বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে নারীদের বিক্ষোভ করেছেন নারীরা।
মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নজিরবিহীন বিক্ষোভ শেষ হতে না হতেই ওই
ঘটনায় ধর্নাকারীদের বিরুদ্ধে দু’ দুটি এফআইআর দাখিল করেছে দিল্লি পুলিশ।
পাশাপাশি,
কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টির অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিল্লির মহিলা কমিশনও
এ কথা নিশ্চিত করেছে যে, কয়েকজন উগান্ডান মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তারা
দিল্লির আইনমন্ত্রীকে সমন পাঠিয়েছেন, যদিও তিনি এখনও তাতে সাড়া দেন নি। এ
খবর দিয়েছে বিবিসি। এতে আরও বলা হয়েছে, মাসখানেক আগে আম আদমি পার্টির
অভাবনীয় উত্থানের পর যে লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা এই নতুন দলের উচ্ছ্বসিত
প্রশংসা করছিলেন, তাদেরও অনেকের গলাতেই এখন শোনা যাচ্ছে সমালোচনার সুর।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর কুয়াশা, সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাগাতার তিরিশ
ঘণ্টারও বেশি রাস্তায় ধর্নায় বসেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল । অবশেষে মঙ্গলবার
রাতে তিনি যখন ধর্না তুলে নিলেন, শুধু কেন্দ্রীয় সরকারই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল
না, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল দিল্লির অনেক আম আদমি সদস্যও। কেন্দ্রীয় সরকার
নিশ্চিন্ত, কারণ সামনে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ নিয়ে আর কোন সমস্যা
রইল না। দিল্লির সাধারণ মানুষেরও দু’দিনের চরম ভোগান্তির আপাতত অবসান হলো।
কিন্তু দু’ পুলিশ কর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়ে কেন্দ্র কেজরিওয়ালের মুখরক্ষার পথ
খুলে দিলেও তার বা তাঁর দলের সমস্যার কিন্তু সেখানেই শেষ নয়, বরং শুরু।
ধর্না প্রত্যাহারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
অধীন দিল্লি পুলিশ ওই বিক্ষোভের সময় ঘটা সংঘর্ষের ঘটনায় দু’টি এফআইআর দাখিল
করে, যদিও তাতে কেজরিওয়ালের নাম রাখা হয়নি। কেজরিওয়ালের সরকারের যে
আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতির মধ্যরাতের অভিযান থেকে এই গোটা বিতর্কের
সূত্রপাত, তাকেও উগান্ডান মহিলাদের নির্যাতনের ঘটনায় দু’দিন আগেই সমন
পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দিল্লির মহিলা কমিশন। কমিশনের সদস্য সুধা
টোকাস বিবিসিকে বলেন, তাদের কাছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডা থেকে আসা
পাঁচজন নারী নির্যাতিত হয়েছেন বলে শুক্রবারই লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
সোমবার দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতিকে সমন পাঠায় কমিশন। কিন্তু তিনি
এখনও তার কোনও জবাব দেন নি, কমিশনে এসে দেখাও করেন নি। কিন্তু আফ্রিকান
বিদ্বেষের অভিযোগ এবং গত দু’দিনের বিতর্কিত ধর্নার পর আম আদমি পার্টিকে এখন
যে রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যে
বুদ্ধিজীবীরা আম আদমি পার্টির উত্থানকে প্রায় দু’হাত তুলে স্বাগত
জানিয়েছিলেন, তারাও এখন কিছুটা সংশয়ে। তরুণ সমাজের প্রিয় লেখক চেতন ভগত তো
একটি টিভি চ্যানেলকে সরাসরি বলেছেন, আম আদমি সম্পর্কে তার মোহভঙ্গ হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ধর্না থেকে কি পেল তারা? দু’জন পুলিশ ছুটিতে গেলেন, তার বদলে
গোটা দিল্লি স্তব্ধ হয়ে রইল, পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভাঙল, আর ব্যবসায়িক
পরিবেশের এতটাই ক্ষতি হলো দিল্লিতে ব্যবসা করার আগে কোন কোম্পানি বোধহয় এখন
দশবার ভাববে। আম আদমির আরেক সমর্থক নৃত্যশিল্পী মল্লিকা সারাভাই তো আরও এক
ধাপ এগিয়ে আফ্রিকান নিগ্রহের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ
এনেছেন। ফলে দিল্লির ক্ষমতায় আসার পর এক মাসও পেরোয় নি, তার মধ্যেই আম আদমি
পার্টি টের পেয়ে গেছে রাস্তার আন্দোলন আর সচিবালয় থেকে সরকার চালানো,
দু'টো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস!
No comments