কোথায় যেন কলকাঠি নড়ছে by জয়া ফারহানা
সাম্প্রতিকতম সময়ে রাজনৈতিক খেরোখাতার
সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দটি নিঃসন্দেহে সংলাপ। সংলাপ কখন, কোথায়, কিভাবে, কোন
পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে, তার পুরোটাই নির্ভর করছে দুই নেত্রীর
বিষয়টি হৃদয়ঙ্গমের ওপর
। তাঁদের রাজনীতির অতীত রেকর্ড
পর্যালোচনা করে দেখুন, সিংহাসন রক্ষার তাগিদে অভূতপূর্ব ঐক্যের দৃষ্টান্ত
কি তাঁরা দেখাননি? ভিন্ন কোনো শাসনের আওয়াজ পাওয়া গেলেই কি কেবল সেই
মাহেন্দ্রক্ষণ (মীমাংসার) আসবে? যা কিছু ঘটছে, এখন তার মূল সুরটি কি ২০০৬
সালেরই পুনরাবৃত্তি নয়? সিংহাসন হস্তান্তরের বছরটি একটু টালমাটাল হবেই। এ
হলো গণতান্ত্রিক মাদকতা। ২০০৬ সালে পছন্দমাফিক বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের প্রধান বানানোর জন্য বিএনপি কি বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে দেওয়ার আইন
পাস করেনি? বর্তমান সরকার সংসদে তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অহমে
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটিই বাতিল করে দিয়েছে। বিনোদনহীন আমাদের ভুবনে
একমাত্র রাজনীতিবিদরাই তাঁদের বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে আমাদের বিশুদ্ধভাবে
বিনোদিত করেন। হরতালে হরতালে নিষ্পেষিত জনজীবনে এটা কি চান্সের বোনাস নয়?
সংলাপ হবে। নির্বাচনও হবে। কিন্তু নির্বাচন শেষে বিজয়ী দল সরকার গঠন করার পর সংবিধানে প্রদত্ত সাধারণ অঙ্গীকার কিংবা দলীয় নির্বাচনের ইশতেহারে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতিগুলো বিস্মৃত হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের রীতি অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নিজস্ব রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবেন না, তা সে যত গণবিরোধীই হোক। দলের প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে যাওয়ার অধিকার সংসদ সদস্যদের নেই! কিন্তু দলীয় বুদ্ধিজীবীদের মাথার ওপরও কি খড়গের মতো ঝুলে আছে ৭০ অনুচ্ছেদ?
না হলে কেন বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারেন না? 'এ' বা 'বি' দলের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাঁদের ভূমিকা অ্যাক্টিভিস্টদেরও ছাড়িয়ে যায়। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ এবং আইন সভার প্রধান একই ব্যক্তি হলে সরকারের গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যে অসম্ভব হয়ে পড়ে, সেটা নিয়ে তাঁরা কোনো কথা বলেন না। নূ্যনতম গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা বর্জিত শাসকশ্রেণী রাষ্ট্রের সব বিভাগকে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত এবং দলীয় স্বার্থে এতটাই নগ্ন এবং স্থূলভাবে ব্যবহার করেন যে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশের কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। আমাদের শাসকশ্রেণীর দুটি দলই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তঃসারশূন্য গণবিরোধী রাজনীতির সূতিকাগারে পরিণত করেছে। কবে শেষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা সম্ভবত এখন প্রত্নতাত্তি্বক গবেষণার বিষয়।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের প্রতি নির্বাচিত সরকারের নিরন্তর জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকা গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান দাবি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র কি সেই দাবি পূরণ করেছে? যে শাসনব্যবস্থায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই, প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে বিত্তবান শ্রেণীর কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত করা ছাড়া যে গণতন্ত্রে দরিদ্র শ্রেণীর আর কোনোভাবেই ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই; রাজনৈতিক অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে দরিদ্রের অংশগ্রহণ যে তন্ত্র স্বীকৃতিই দিচ্ছে না, যে ব্যবস্থায় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দরিদ্রের নেই, যে ব্যবস্থা কেবল ধনীর স্বার্থ সুরক্ষা করে, যে ব্যবস্থা সব নাগরিকের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, লৈঙ্গিক, জাতিগত সমতা নিশ্চিত করে না, সেই শাসনব্যবস্থাকে আর যা-ই বলা যাক, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলার কোনো দার্শনিক ভিত্তি নেই। অথচ আমাদের দেশে ২০ বছর ধরে এই গণতন্ত্রেরই জয়ধ্বনি দিচ্ছে স্বার্থান্ধ বুদ্ধিজীবিতা। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে চূড়ান্ত অপব্যবহার করে জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যমে রাজনীতিবিদরা পুঁজিবাদী শ্রেণীর বিকাশ ঘটিয়ে অর্থনৈতিক অসাম্যকে প্রকট করে তুলছেন। জাতীয় অর্থনীতির স্বাধীন বিকাশের পথে তীব্র বাধা সৃষ্টি করছেন; যে অসাম্যের ভার এই দরিদ্র দেশটি বহন করতে অক্ষম, সেখানেও আমাদের বুদ্ধিজীবীরা নির্বাক। অথচ এই মুহূর্তে একটি অন্ধকার পশ্চাৎপদ ভাবাদর্শকে মোকাবিলা করার জন্য যখন প্রয়োজন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ভাবাদর্শ-প্রণোদিত সুস্থ রাজনৈতিক ধারার, তখন শুধু সংকীর্ণ গোষ্ঠী স্বার্থের প্রতি অন্ধ আনুগত্য বোধ থেকে তাঁরা হেফাজতের দাবিগুলো বিবেচনার জন্য; একে শ্রেণী-সংগ্রামের ভাবাদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন। সাপের মুখে চুমু খাওয়া সত্যি ভয়ংকর, তবে আরো ভয়ংকর সাপ কোন দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে সেটা বুঝতে না পারা। জনতার মগজ, মনন এবং হৃদয়স্পর্শী কোনো ভাবাদর্শকে কোনোদিনই রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মাধ্যমে পরাজিত করা যায়নি। কিন্তু ভুল মগজ, ভুল মনন এবং ভুল হৃদয় তৈরির দায় বুদ্ধিজীবীরা কিছুতেই এড়াতে পারেন না। যাঁদের বই পড়ে আমরা বাম রাজনীতির প্রথম পাঠ নিয়েছি, বামদের অন্তর্গত বিভাজন এখন আর তাঁদের মগজকে উদ্বিগ্ন করে না।
বৈষম্যমূলক বাজার অর্থনীতির বিরুদ্ধে সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেই অঙ্গীকারের বিরুদ্ধাচরণ যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা কোনটি? চার দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশের জনগণ সংগ্রাম করছে। জাতীয় সম্পদের ওপর বিদেশি বহুজাতিক কম্পানির দখলদারিত্ব কায়েমের প্রশ্নে বাম দলগুলো যতটা সোচ্চার, আমি ভীষণভাবে আশা করছি, আমাদের মূল ধারার সাংঘর্ষিক রাজনীতির সুযোগে যে ধর্মান্ধ রাজনীতির প্রবেশের চেষ্টা, এর বিরুদ্ধে তাঁরা তেমনিই সোচ্চার হবেন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই, তখন ফ্রান্সে দ্য গল (ফ্রান্সের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট) ক্ষমতায়। জাঁ পঁল সাঁর্ত্রের নেতৃত্বে দ্য গলের বিরুদ্ধে রাজপথে চলছে অপ্রতিরোধ্য মিছিল। সাঁর্ত্রেকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে এ মিছিল বন্ধ করা সম্ভব হবে না ভেবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্য গলের বাসস্থানে উপস্থিত হয়।
তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। তাঁকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলা হলো আপনার অনুমতি না পেলে সাঁর্ত্রেকে কী করে গ্রেপ্তার করব? তাঁর নেতৃত্বে যে মিছিল বেরিয়েছে, তা বন্ধ করতে না পারলে ভয়ানক রূপ নেবে। দ্য গল মৃদু হেসে জবাব দিয়েছিলেন, ‘I am France. Jean Paul Sartre is also France. তাঁকে গ্রেপ্তার করবে কী করে? তোমরা তাঁর মিছিল থেকে সব পুলিশ বেষ্টনী তুলে নাও। তাঁকে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে দাও।' দ্য গলের নির্দেশমতো মিছিল থেকে পুলিশ বেষ্টনী প্রত্যাহার করা হয়। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল প্যারিসের এভিনিউগুলো প্রদক্ষিণ করে। তার পরের ইতিহাস তো সবারই জানা।
লেখক : পরিচালক, কিংবদন্তী মিডিয়া।
সংলাপ হবে। নির্বাচনও হবে। কিন্তু নির্বাচন শেষে বিজয়ী দল সরকার গঠন করার পর সংবিধানে প্রদত্ত সাধারণ অঙ্গীকার কিংবা দলীয় নির্বাচনের ইশতেহারে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতিগুলো বিস্মৃত হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের রীতি অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নিজস্ব রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবেন না, তা সে যত গণবিরোধীই হোক। দলের প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে যাওয়ার অধিকার সংসদ সদস্যদের নেই! কিন্তু দলীয় বুদ্ধিজীবীদের মাথার ওপরও কি খড়গের মতো ঝুলে আছে ৭০ অনুচ্ছেদ?
না হলে কেন বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারেন না? 'এ' বা 'বি' দলের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাঁদের ভূমিকা অ্যাক্টিভিস্টদেরও ছাড়িয়ে যায়। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ এবং আইন সভার প্রধান একই ব্যক্তি হলে সরকারের গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যে অসম্ভব হয়ে পড়ে, সেটা নিয়ে তাঁরা কোনো কথা বলেন না। নূ্যনতম গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা বর্জিত শাসকশ্রেণী রাষ্ট্রের সব বিভাগকে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত এবং দলীয় স্বার্থে এতটাই নগ্ন এবং স্থূলভাবে ব্যবহার করেন যে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশের কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। আমাদের শাসকশ্রেণীর দুটি দলই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তঃসারশূন্য গণবিরোধী রাজনীতির সূতিকাগারে পরিণত করেছে। কবে শেষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা সম্ভবত এখন প্রত্নতাত্তি্বক গবেষণার বিষয়।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের প্রতি নির্বাচিত সরকারের নিরন্তর জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকা গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান দাবি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র কি সেই দাবি পূরণ করেছে? যে শাসনব্যবস্থায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই, প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে বিত্তবান শ্রেণীর কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত করা ছাড়া যে গণতন্ত্রে দরিদ্র শ্রেণীর আর কোনোভাবেই ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই; রাজনৈতিক অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে দরিদ্রের অংশগ্রহণ যে তন্ত্র স্বীকৃতিই দিচ্ছে না, যে ব্যবস্থায় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দরিদ্রের নেই, যে ব্যবস্থা কেবল ধনীর স্বার্থ সুরক্ষা করে, যে ব্যবস্থা সব নাগরিকের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, লৈঙ্গিক, জাতিগত সমতা নিশ্চিত করে না, সেই শাসনব্যবস্থাকে আর যা-ই বলা যাক, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলার কোনো দার্শনিক ভিত্তি নেই। অথচ আমাদের দেশে ২০ বছর ধরে এই গণতন্ত্রেরই জয়ধ্বনি দিচ্ছে স্বার্থান্ধ বুদ্ধিজীবিতা। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে চূড়ান্ত অপব্যবহার করে জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যমে রাজনীতিবিদরা পুঁজিবাদী শ্রেণীর বিকাশ ঘটিয়ে অর্থনৈতিক অসাম্যকে প্রকট করে তুলছেন। জাতীয় অর্থনীতির স্বাধীন বিকাশের পথে তীব্র বাধা সৃষ্টি করছেন; যে অসাম্যের ভার এই দরিদ্র দেশটি বহন করতে অক্ষম, সেখানেও আমাদের বুদ্ধিজীবীরা নির্বাক। অথচ এই মুহূর্তে একটি অন্ধকার পশ্চাৎপদ ভাবাদর্শকে মোকাবিলা করার জন্য যখন প্রয়োজন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ভাবাদর্শ-প্রণোদিত সুস্থ রাজনৈতিক ধারার, তখন শুধু সংকীর্ণ গোষ্ঠী স্বার্থের প্রতি অন্ধ আনুগত্য বোধ থেকে তাঁরা হেফাজতের দাবিগুলো বিবেচনার জন্য; একে শ্রেণী-সংগ্রামের ভাবাদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন। সাপের মুখে চুমু খাওয়া সত্যি ভয়ংকর, তবে আরো ভয়ংকর সাপ কোন দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে সেটা বুঝতে না পারা। জনতার মগজ, মনন এবং হৃদয়স্পর্শী কোনো ভাবাদর্শকে কোনোদিনই রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মাধ্যমে পরাজিত করা যায়নি। কিন্তু ভুল মগজ, ভুল মনন এবং ভুল হৃদয় তৈরির দায় বুদ্ধিজীবীরা কিছুতেই এড়াতে পারেন না। যাঁদের বই পড়ে আমরা বাম রাজনীতির প্রথম পাঠ নিয়েছি, বামদের অন্তর্গত বিভাজন এখন আর তাঁদের মগজকে উদ্বিগ্ন করে না।
বৈষম্যমূলক বাজার অর্থনীতির বিরুদ্ধে সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেই অঙ্গীকারের বিরুদ্ধাচরণ যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা কোনটি? চার দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশের জনগণ সংগ্রাম করছে। জাতীয় সম্পদের ওপর বিদেশি বহুজাতিক কম্পানির দখলদারিত্ব কায়েমের প্রশ্নে বাম দলগুলো যতটা সোচ্চার, আমি ভীষণভাবে আশা করছি, আমাদের মূল ধারার সাংঘর্ষিক রাজনীতির সুযোগে যে ধর্মান্ধ রাজনীতির প্রবেশের চেষ্টা, এর বিরুদ্ধে তাঁরা তেমনিই সোচ্চার হবেন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই, তখন ফ্রান্সে দ্য গল (ফ্রান্সের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট) ক্ষমতায়। জাঁ পঁল সাঁর্ত্রের নেতৃত্বে দ্য গলের বিরুদ্ধে রাজপথে চলছে অপ্রতিরোধ্য মিছিল। সাঁর্ত্রেকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে এ মিছিল বন্ধ করা সম্ভব হবে না ভেবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্য গলের বাসস্থানে উপস্থিত হয়।
তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। তাঁকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলা হলো আপনার অনুমতি না পেলে সাঁর্ত্রেকে কী করে গ্রেপ্তার করব? তাঁর নেতৃত্বে যে মিছিল বেরিয়েছে, তা বন্ধ করতে না পারলে ভয়ানক রূপ নেবে। দ্য গল মৃদু হেসে জবাব দিয়েছিলেন, ‘I am France. Jean Paul Sartre is also France. তাঁকে গ্রেপ্তার করবে কী করে? তোমরা তাঁর মিছিল থেকে সব পুলিশ বেষ্টনী তুলে নাও। তাঁকে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে দাও।' দ্য গলের নির্দেশমতো মিছিল থেকে পুলিশ বেষ্টনী প্রত্যাহার করা হয়। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল প্যারিসের এভিনিউগুলো প্রদক্ষিণ করে। তার পরের ইতিহাস তো সবারই জানা।
লেখক : পরিচালক, কিংবদন্তী মিডিয়া।
No comments