খুনোখুনিতে সাড়ে চার বছরে নিহত ১৫ টাকার পেছনে ছুটছে ছাত্রলীগ by মোশতাক আহমেদ ও আহমেদ জায়িফ
গত সাড়ে চার বছরে ক্ষমতাসীন দলের
ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি,
সংঘর্ষসহ একের পর এক অপকর্ম করে গেলেও কেউ তাঁদের থামাতে পারছে না। এই সময়ে
ছাত্রলীগের সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৫ জন মারা গেছেন।
আহত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার। এসব ঘটনার কয়েকটির বিচারকাজ চলছে, বাকিগুলোর তদন্তই হয়নি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রদের বহিষ্কার করলেও তাঁরা নানা কৌশলে ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে, অংশ নিচ্ছেন পরীক্ষায়ও। সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ গত দুই বছরে (বর্তমান কমিটির মেয়াদে) কেন্দ্র থেকেই অন্তত ৮৫ জনকে বহিষ্কার করেছে।
সংগঠনের একটি অংশের নেতারা বলেন, কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই নিজেদের আখের গোছাতে টাকার পেছনে ছুটছেন। ফলে একের পর এক খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিজেদের শক্তি বাড়াতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
পত্রপত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারির রাজনীতি শুরু করে ছাত্রলীগ। পাশাপাশি টাকার পেছনে ছুটতে শুরু করেন ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী। এ জন্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। গত সাড়ে চার বছরে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছোট-বড় সংঘর্ষ হয়েছে পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন শ ঘটনা ঘটেছে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে। বাকিগুলো ছাত্রদল, শিবিরসহ অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে।
সর্বশেষ গত সোমবার চট্টগ্রামে রেলের দরপত্র নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গোলাগুলিতে শিশুসহ দুজন মারা যায়। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে এ খবর পড়ে একজন পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘এই সোনার ছেলেরাই পারবে সরকারকে ডোবাতে। বিরোধী দলের আন্দোলন দরকার নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ছাত্রসংগঠন, বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম করছে। বড় বড় কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে ফলাও করে আসায় সেগুলো বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাকি অসংখ্য ঘটনার কথা আসে না।
ঘটনা ঘটে, বিচার হয় না: আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের দুই উপদলের গোলাগুলিতে ক্যাম্পাসের পাশের গ্রাম বয়রা বেপারিপাড়ার এক দরিদ্র পরিবারের ১০ বছরের শিশু রাব্বি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ঘটনার পরদিন রাব্বির বাবা দুলাল মিয়া বাদী হয়ে ২৫ জনের নামসহ আরও ১৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এজাহারে মামলার এক নম্বর আসামি করা হয় ওই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ এবং এরপরই আছেন সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান। উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহীন মাহমুদ ও পারভেজ আনোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান। কিন্তু পাঁচ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দিন চারজন ও পরে আরও দুজনকে আটক করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতারা এখনো ধারাছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, মামলার মূল আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন আছে।
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় আলোচিত ঘটনা ঘটে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর। ওই দিন অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্বজিৎ দাসকে। দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত এ ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২১ আসামির মধ্যে ১২ জনকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। তবে বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গত বছরের ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। এ ঘটনার প্রায় সব আসামিই এখন জামিনে আছেন। বহিষ্কার হলেও কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার বিচার হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। এ ঘটনায় প্রথমে আটজনকে আসামি করা হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে ১৭ মাস পর গত বছরের ২৬ নভেম্বর ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সম্পূরক অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের এফ রহমান হল শাখার সাবেক সভাপতি (ঘটনার পর কমিটি বিলুপ্ত হয়) সাইদুজ্জামান ফারুকসহ কয়েকজন। ফারুক জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
২০০৯ সালের মার্চে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই উপদলের সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রদল নেতা আবিদুর রহমান নিহত হন।
২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানী। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের টোকেন ভাগাভাগি নিয়ে শাহ মখদুম হলের দোতলার ছাদ থেকে ছাত্রলীগের কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে ফেলে দেন ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। নয় দিন মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৩ আগস্ট মারা যান তিনি।
২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ছাত্রলীগের হামলায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহসভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী মারা যান। ২০১০ সালের ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের কর্মী পলাশ খুন হন।
শুধু খুনোখুনি নয়, দেশের প্রায় সব বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শহরে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি এবং ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। রাজধানীর বাঙলা কলেজ ও ঢাকা কলেজসহ কয়েকটিতে চলতি একাদশ শ্রেণীর ভর্তি নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্রলীগের সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় গত সাড়ে চার বছরে অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ (একই প্রতিষ্ঠান একাধিকবারও) করতে হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের হাতে একাধিক শিক্ষক ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত, অপহরণ, দরপত্র ছিনতাই, অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ বাম সংগঠনগুলোর মতো কোনো ছোট পরিধির সংগঠন নয়। তাই সব নেতা-কর্মীর ব্যক্তিগত জীবন সংগঠন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যেসব অপকর্ম হয়, সেগুলোতে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো নেতা-কর্মী যান না। কিছু ‘বড় ভাই’য়ের দ্বারা তাঁরা প্ররোচিত হন এবং ঘটনা ঘটিয়ে সংগঠনের নাম ব্যবহার করেন। তিনি মনে করেন, নেতা-কর্মীদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হওয়ায় এসব ঘটনা ঘটছে। এ জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে কাজ করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রদের বহিষ্কার করলেও তাঁরা নানা কৌশলে ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে, অংশ নিচ্ছেন পরীক্ষায়ও। সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ গত দুই বছরে (বর্তমান কমিটির মেয়াদে) কেন্দ্র থেকেই অন্তত ৮৫ জনকে বহিষ্কার করেছে।
সংগঠনের একটি অংশের নেতারা বলেন, কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই নিজেদের আখের গোছাতে টাকার পেছনে ছুটছেন। ফলে একের পর এক খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিজেদের শক্তি বাড়াতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
পত্রপত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারির রাজনীতি শুরু করে ছাত্রলীগ। পাশাপাশি টাকার পেছনে ছুটতে শুরু করেন ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী। এ জন্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। গত সাড়ে চার বছরে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছোট-বড় সংঘর্ষ হয়েছে পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন শ ঘটনা ঘটেছে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে। বাকিগুলো ছাত্রদল, শিবিরসহ অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে।
সর্বশেষ গত সোমবার চট্টগ্রামে রেলের দরপত্র নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গোলাগুলিতে শিশুসহ দুজন মারা যায়। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে এ খবর পড়ে একজন পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘এই সোনার ছেলেরাই পারবে সরকারকে ডোবাতে। বিরোধী দলের আন্দোলন দরকার নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ছাত্রসংগঠন, বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম করছে। বড় বড় কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে ফলাও করে আসায় সেগুলো বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাকি অসংখ্য ঘটনার কথা আসে না।
ঘটনা ঘটে, বিচার হয় না: আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের দুই উপদলের গোলাগুলিতে ক্যাম্পাসের পাশের গ্রাম বয়রা বেপারিপাড়ার এক দরিদ্র পরিবারের ১০ বছরের শিশু রাব্বি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ঘটনার পরদিন রাব্বির বাবা দুলাল মিয়া বাদী হয়ে ২৫ জনের নামসহ আরও ১৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এজাহারে মামলার এক নম্বর আসামি করা হয় ওই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ এবং এরপরই আছেন সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান। উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহীন মাহমুদ ও পারভেজ আনোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান। কিন্তু পাঁচ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দিন চারজন ও পরে আরও দুজনকে আটক করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতারা এখনো ধারাছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, মামলার মূল আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন আছে।
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় আলোচিত ঘটনা ঘটে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর। ওই দিন অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্বজিৎ দাসকে। দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত এ ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২১ আসামির মধ্যে ১২ জনকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। তবে বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গত বছরের ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। এ ঘটনার প্রায় সব আসামিই এখন জামিনে আছেন। বহিষ্কার হলেও কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার বিচার হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। এ ঘটনায় প্রথমে আটজনকে আসামি করা হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে ১৭ মাস পর গত বছরের ২৬ নভেম্বর ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সম্পূরক অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের এফ রহমান হল শাখার সাবেক সভাপতি (ঘটনার পর কমিটি বিলুপ্ত হয়) সাইদুজ্জামান ফারুকসহ কয়েকজন। ফারুক জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
২০০৯ সালের মার্চে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই উপদলের সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রদল নেতা আবিদুর রহমান নিহত হন।
২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানী। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের টোকেন ভাগাভাগি নিয়ে শাহ মখদুম হলের দোতলার ছাদ থেকে ছাত্রলীগের কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে ফেলে দেন ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। নয় দিন মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৩ আগস্ট মারা যান তিনি।
২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ছাত্রলীগের হামলায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহসভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী মারা যান। ২০১০ সালের ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের কর্মী পলাশ খুন হন।
শুধু খুনোখুনি নয়, দেশের প্রায় সব বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শহরে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি এবং ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। রাজধানীর বাঙলা কলেজ ও ঢাকা কলেজসহ কয়েকটিতে চলতি একাদশ শ্রেণীর ভর্তি নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্রলীগের সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় গত সাড়ে চার বছরে অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ (একই প্রতিষ্ঠান একাধিকবারও) করতে হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের হাতে একাধিক শিক্ষক ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত, অপহরণ, দরপত্র ছিনতাই, অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ বাম সংগঠনগুলোর মতো কোনো ছোট পরিধির সংগঠন নয়। তাই সব নেতা-কর্মীর ব্যক্তিগত জীবন সংগঠন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যেসব অপকর্ম হয়, সেগুলোতে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো নেতা-কর্মী যান না। কিছু ‘বড় ভাই’য়ের দ্বারা তাঁরা প্ররোচিত হন এবং ঘটনা ঘটিয়ে সংগঠনের নাম ব্যবহার করেন। তিনি মনে করেন, নেতা-কর্মীদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হওয়ায় এসব ঘটনা ঘটছে। এ জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে কাজ করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
No comments