সন্তান পালন ওর কাজ ওকেই করতে দিন by নাইর ইকবাল
কে যেন বলেছিলেন কথাটা। শিশুরা হচ্ছে
কুমারের হাঁড়িকুঁড়ি তৈরির কাদামাটির মতো। যেভাবে গড়তে চাইবেন, সেভাবেই তারা
তৈরি হবে। শিশুদের প্রাথমিক অভ্যাস সাধারণত গড়ে ওঠে বাবা-মাকে অনুসরণ করে।
সে ক্ষেত্রে মা-বাবাই হচ্ছে শিশুর প্রথম শিক্ষা।
ছোটবেলার
শিক্ষা সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনকেও প্রভাবিত করে। বাবা-মায়েরা সন্তানকে
কীভাবে বড় করছেন, কী আদর্শে অনুপ্রাণিত করছেন, সেটার একটা প্রভাব থাকে
সন্তান বড় হওয়ার পরও। ছোটবেলা থেকে স্বাবলম্বী জীবন যাপন করা ছেলেটি বা
মেয়েটি বড় হওয়ার পরও নিজস্বতা বজায় রেখে চলতে পারে। অন্যদিকে, শৈশবে
প্রচণ্ড চাপের মধ্যে বড় হওয়া বাচ্চাটি নিজের জীবনযাপনের বিভিন্ন সময়েও সেই
চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে অক্ষমতার পরিচয় দেয়। যেটা তার উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত
জীবনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।
ছোটবেলা থেকে বাবা-মা সন্তানকে আদর্শিক জীবনের সন্ধান দিতে পারেন। খুব ছোট থেকে তাকে নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাওয়া বাচ্চাটির মধ্যে চেতনাবোধের জন্ম দিতে পারে। একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক শানিলা শারমিন ঠিক এভাবেই তাঁর ছয় বছরের মেয়েটির মধ্যে গড়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভালোবাসা। বুনে দিয়েছেন দেশপ্রেমের বীজ। শানিলার বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা অসংখ্য বইয়ের এক সংগ্রহশালা আছে। তিনি নিজেই জানালেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনার ব্যাপারে তাঁর মেয়েটির আগ্রহের কথা। শানিলা বলেন, ‘বাচ্চার এ আগ্রহটা আমার কাছ থেকেই হয়েছে, এটা বুঝতে পারি। এটি থেকেই হয়তো ভবিষ্যতে সে তার কাজের প্রতি আরও আগ্রহী হবে। জানার আগ্রহ তাকে আগামী দিনগুলোতে কর্মঠ করে তুলবে।’
বিভিন্ন বিষয়ে বাবা-মায়ের আগ্রহ ছেলেমেয়েদের সেসব ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরে আশফাক আগ্রহী হুবহু নকল গাড়ি সংগ্রহের ব্যাপারে। তাঁর তিন বছরের ছেলেটিও এখন গাড়ি বলতে পাগল। এই বয়সেই সে অজস্র গাড়ির নাম মুখস্থ করে ফেলেছে।
পড়াশোনার বাইরে শিশুকে আরও নানা বিষয়ে জানতে উৎসাহী করতে হবে। এটি তার ভবিষ্যতের পথে আরেকটি পালক যোগ করবে। সে জন্য সন্তানের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে হবে। আবার সন্তানকে নিজের মতো করে কাজ করতে দিতে হবে। এতে করে শিশুটি একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হবে, অন্যদিকে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। আর ভুল হলে মা-বাবা তো আছেনই সহযোগিতা করার জন্য। বাড়িতে তার নিজের কাপড় গুছিয়ে রাখা, ছোট ভাইবোন থাকলে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা, যেকোনো কিছু শেয়ার করা, নিজের পড়ার টেবিল ও স্কুলের ব্যাগ এসব টুকটাক জিনিস গুছিয়ে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা—এসব বিষয় সহজেই করতে পারবে সে।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) তেরোটি ব্যাচের হাজার খানেক ক্যাডেটের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন বর্তমানে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবু সালেহ। তাঁর গবেষণা থেকেও সন্তানের গড়ে ওঠা কিংবা আচার-আচরণে বাবা বা মায়ের প্রভাবের ব্যাপারটি বেশ স্পষ্ট।
তিনি জানান, বিএমএতে আচরণগত কারণে বাদ পড়ে যাওয়া ক্যাডেটদের জীবনবৃত্তান্ত ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে দেখা গেছে, আচরণগত কারণে সমস্যায় পড়া ক্যাডেটদের সমস্যাটার মূল আসলে পরিবারেই প্রোথিত।
তিনি একটি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বিএমএতে একবার একটি ছেলেকে পেয়েছিলাম, যার পারিবারিক প্রেক্ষাপট খুব উন্নত হওয়া সত্ত্বেও তার আচার-আচরণে সমস্যা ছিল। শাস্তিস্বরূপ তাকে পড়া বাদ দিয়ে চলে যেতে হয়। তার পারিবারিক জীবন পর্যালোচনা করে দেখলাম, ছোট থেকে সে কখনোই বাবা-মায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময়টুকু পায়নি।’
বাবা-মায়েরা যদি তাঁর সন্তানের ভালো ও খারাপ আচরণের একটা রেকর্ড নিয়মিত রাখেন, তাহলে তাঁদের পক্ষে সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হবে। বকাঝকা দিয়ে নয়, কঠিন শাসনের মধ্যে রেখেও নয়, সন্তানের মন বুঝে, তার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেই তার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে ইতিবাচক গুণগুলো। তাহলে দেখা যাবে, সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে মা-বাবাকে ভাবতে হচ্ছে না।
পড়াশোনার তদারকি যেমন করবেন, তেমনি একজন ভালো মানুষ হচ্ছে কি না সন্তানটি, সেদিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ভালো ক্যারিয়ার ও সুসন্তান দুটিই পাবেন একসঙ্গে।
ছোটবেলা থেকে বাবা-মা সন্তানকে আদর্শিক জীবনের সন্ধান দিতে পারেন। খুব ছোট থেকে তাকে নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাওয়া বাচ্চাটির মধ্যে চেতনাবোধের জন্ম দিতে পারে। একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক শানিলা শারমিন ঠিক এভাবেই তাঁর ছয় বছরের মেয়েটির মধ্যে গড়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভালোবাসা। বুনে দিয়েছেন দেশপ্রেমের বীজ। শানিলার বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা অসংখ্য বইয়ের এক সংগ্রহশালা আছে। তিনি নিজেই জানালেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনার ব্যাপারে তাঁর মেয়েটির আগ্রহের কথা। শানিলা বলেন, ‘বাচ্চার এ আগ্রহটা আমার কাছ থেকেই হয়েছে, এটা বুঝতে পারি। এটি থেকেই হয়তো ভবিষ্যতে সে তার কাজের প্রতি আরও আগ্রহী হবে। জানার আগ্রহ তাকে আগামী দিনগুলোতে কর্মঠ করে তুলবে।’
বিভিন্ন বিষয়ে বাবা-মায়ের আগ্রহ ছেলেমেয়েদের সেসব ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরে আশফাক আগ্রহী হুবহু নকল গাড়ি সংগ্রহের ব্যাপারে। তাঁর তিন বছরের ছেলেটিও এখন গাড়ি বলতে পাগল। এই বয়সেই সে অজস্র গাড়ির নাম মুখস্থ করে ফেলেছে।
পড়াশোনার বাইরে শিশুকে আরও নানা বিষয়ে জানতে উৎসাহী করতে হবে। এটি তার ভবিষ্যতের পথে আরেকটি পালক যোগ করবে। সে জন্য সন্তানের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে হবে। আবার সন্তানকে নিজের মতো করে কাজ করতে দিতে হবে। এতে করে শিশুটি একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হবে, অন্যদিকে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। আর ভুল হলে মা-বাবা তো আছেনই সহযোগিতা করার জন্য। বাড়িতে তার নিজের কাপড় গুছিয়ে রাখা, ছোট ভাইবোন থাকলে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা, যেকোনো কিছু শেয়ার করা, নিজের পড়ার টেবিল ও স্কুলের ব্যাগ এসব টুকটাক জিনিস গুছিয়ে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা—এসব বিষয় সহজেই করতে পারবে সে।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) তেরোটি ব্যাচের হাজার খানেক ক্যাডেটের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন বর্তমানে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবু সালেহ। তাঁর গবেষণা থেকেও সন্তানের গড়ে ওঠা কিংবা আচার-আচরণে বাবা বা মায়ের প্রভাবের ব্যাপারটি বেশ স্পষ্ট।
তিনি জানান, বিএমএতে আচরণগত কারণে বাদ পড়ে যাওয়া ক্যাডেটদের জীবনবৃত্তান্ত ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে দেখা গেছে, আচরণগত কারণে সমস্যায় পড়া ক্যাডেটদের সমস্যাটার মূল আসলে পরিবারেই প্রোথিত।
তিনি একটি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বিএমএতে একবার একটি ছেলেকে পেয়েছিলাম, যার পারিবারিক প্রেক্ষাপট খুব উন্নত হওয়া সত্ত্বেও তার আচার-আচরণে সমস্যা ছিল। শাস্তিস্বরূপ তাকে পড়া বাদ দিয়ে চলে যেতে হয়। তার পারিবারিক জীবন পর্যালোচনা করে দেখলাম, ছোট থেকে সে কখনোই বাবা-মায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময়টুকু পায়নি।’
বাবা-মায়েরা যদি তাঁর সন্তানের ভালো ও খারাপ আচরণের একটা রেকর্ড নিয়মিত রাখেন, তাহলে তাঁদের পক্ষে সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হবে। বকাঝকা দিয়ে নয়, কঠিন শাসনের মধ্যে রেখেও নয়, সন্তানের মন বুঝে, তার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেই তার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে ইতিবাচক গুণগুলো। তাহলে দেখা যাবে, সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে মা-বাবাকে ভাবতে হচ্ছে না।
পড়াশোনার তদারকি যেমন করবেন, তেমনি একজন ভালো মানুষ হচ্ছে কি না সন্তানটি, সেদিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ভালো ক্যারিয়ার ও সুসন্তান দুটিই পাবেন একসঙ্গে।
No comments