জ্যোতিষীর গণনায় বাংলাদেশের রাজনীতি by সাযযাদ কাদির
চারদিকে
গুজব গুঞ্জন জল্পনা কল্পনা। কি হতে যাচ্ছে দেশে? কি হবে শেষ পর্যন্ত? নানা
আশঙ্কার কথা ছড়িয়ে পড়ছে জনে-জনে। রাজনীতিকরা বলছেন- গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি
বিরাজ করছে দেশে। বিদেশী মিডিয়া স্পষ্ট করেই বলছে সে কথা।
পত্রিকায়
কলামনিস্ট, ভাষ্যকার, মন্তব্য প্রতিবেদকরা বলছেন এটা হবে, ওটা হবে। রাতে
টিভি’র টক শো’র টকিস্টরাও বলছেন নানা আশঙ্কার কথা। অনলাইনে আসছে
ঘটনা-দুর্ঘটনার আতঙ্কজনক খবর। কিন্তু কি চলছে দেশে? শহরে-গ্রামে প্রতিদিনই
ঝরছে রক্ত, বাতাসে ভাসছে বারুদের গন্ধ। বন্ধ হয়ে পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য,
গুটিয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগ। কোথাও কোন সুখবর নেই। বাংলাদেশ হয়ে পড়ছে নিপীড়িত
মানুষের রক্তাক্ত মুখ। আজ বাংলাদেশ মানে উদ্যত ঘাতক, পথে-প্রান্তরে লাশ,
ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হামলা, উৎপীড়ন। আজ রাজনীতি মানে অ্যাকশন। সংঘাত।
সহিংসতা। পাল্টাপাল্টি। মানুষ বড় উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত এখন। পরিস্থিতির কি
দিনের পর দিন অবনতি ঘটেই চলবে, নাকি সামাল দেয়ার চেষ্টা হবে কোন? হাওয়ায়
ভাসছে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফিসফিসানি। ফেসবুক-এ একজন টকশো হোস্ট করেছেন
‘অপারেশন ফ্রিডম’-এর ভবিষ্যদ্বাণী। আরও অনেক ভবিষ্যদ্বক্তা এখন মাঠ থেকে
আড্ডায়। তবে পেশাদার ভবিষ্যদ্বক্তা, যাদের আমরা জ্যোতিষী বলি, কি বলেন
তারা? তাদের রাশি, গ্রহ, নক্ষত্র গণনায় বিশ্বাস নেই আমাদের, তাহলেও গত
পাঁচ-ছ’ হাজার বছর ধরে চলছে এই জ্যোতিষচর্চা, এর ক্ষতি-বৃদ্ধি দেখছি না
এখনও। আধুনিক বিজ্ঞানের নিত্যনতুন বিস্ময়কর অগ্রগতি যে আগামীতেও একে তেমন
কোণঠাসা করে ফেলবে এমনও মনে হয় না। আচ্ছা, আমরা না হয় অবিশ্বাস নিয়েই পড়ি
জ্যোতিষীর লিখন দেশের আসন্ন অবস্থা সম্পর্কে!
দেশের
সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকনাথ পঞ্জিকা প্রকাশিত হয়েছে কিছু দিন আগে। রাজধানীর
বাংলাবাজার থেকে গত ৬২ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে এ বর্ষপঞ্জি। দিন গণনা
ছাড়াও সংযোজন হিসেবে এতে থাকে রাষ্ট্রগত, ব্যক্তিগত ও নক্ষত্রগত ফল, বৃষ্টি
গণনা, শুভাশুভ নির্ণয় এবং অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান, লগ্ন-তিথি গণনা ও
বিচার। এ পঞ্জিকায় ১৪২০ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ আসন্ন বছরের ভবিষ্যৎ গণনা করেছেন
জ্যোতিষ সম্রাট কে সি পাল। দেখা যাক তাঁর গণনায় ১৪২০ সালটি কেমন যাবে
বাংলাদেশের। তিনি বলেছেন, “সার্বিক গ্রহাবস্থান বিচারে... বাংলাদেশের
অবস্থান অভাবনীয় রূপে খারাপ হবে। একদিকে দেবগুরু বৃহস্পতির প্রভাবে চিকিৎসা
বিজ্ঞান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সন্ত্রাসবাদ দমন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে
বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি লাভ করবে। এছাড়াও দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার
দৃঢ়তার ফলে দেশের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি সাধনের চেষ্টা ছাড়াও সেনা, বিমান, নৌ
ও পুলিশ বাহিনীর দৃঢ়তা, কুশলতা ও দেশপ্রেম সকলকে মুগ্ধ ও সরকারের বলিষ্ঠ
পদক্ষেপের দরুন শিল্প বাণিজ্যের প্রসার, কৃষিজাত দ্রব্য সহ প্রচুর জনশক্তি
রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ বৃদ্ধি তথা বেকারত্ব দূরীকরণে যথেষ্ট
সফলতার ইঙ্গিত দিলেও ২০শে আষাঢ় মঙ্গলের মিথুন রাশিতে মৃগশিরা নক্ষত্রে
সঞ্চার ও দেবগুরু বৃহস্পতির যুতি ও রাহু দৃষ্টি নানাবিধ কারণে ভাল অপেক্ষা
মন্দের ভাগ বেশি ঘটবে।” তাঁর গণনায় ধরা পড়েছে - দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ,
দুর্ঘটনা, সন্ত্রাস, সীমান্ত বিরোধ, রাজনৈতিক আন্দোলন, সমাজবিরোধীদের
তৎপরতা ইত্যাদি বেড়েই চলবে। হতাহত হবে বহু লোক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে
থাকবে বহু দিন ধরে। শেয়ারবাজারে সুস্থিরতা ফিরে এলেও পদ্মা সেতু নির্মাণ
সীমাবদ্ধ থাকবে ঘোষণাতেই। বিরোধীদের আন্দোলনে রক্তক্ষরণ ঘটবে প্রচুর,
কিন্তু পতন ঘটবে না সরকারের। তবে জ্যোতিষ সম্রাট জানিয়েছেন, “জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে... মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরী তীরে ভিড়বে বলে মনে হয়
না।” তিনি লিখেছেন, সরকারি ও বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতার প্রাণহানি ঘটবে
গুম, জঙ্গি হামলা ও আততায়ীর আঘাতে। নিত্যপণ্যের কৃত্রিম অভাবে ও উচ্চমূল্যে
হিমশিম খাবে সাধারণ মানুষ। চিকিৎসা বিভ্রাট ও ভেজাল ওষুধে প্রাণহানি ঘটবে
অনেক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, “মহাজোটের শরিকদের মধ্যে
তীব্র মতভেদ সৃষ্টি হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে দেশে ধর্মীয়
উন্মাদনা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, খুনোখুনি সহ সার্বিক অরাজকতায় দেশকে জীর্ণ
করে তুলবে।” তাহলে বিরোধীদলীয় নেত্রীর কি হবে? জ্যোতিষ সম্রাট লিখেছেন,
“... খালেদা জিয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম, নেতৃত্ব গুণ, মনোবল, ব্যক্তিত্ব ও
সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে সমগ্র বছরটাই দুর্বার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং
সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হবেন বলে মনে
হয়।”
আমরা পলিটিক্যাল পণ্ডিত, কলামনিস্ট, টকিস্ট, সুশীলদের কথা শুনি প্রতিদিন, আজ না হয় একজন ‘অ্যাসট্রোলজিস্ট’-এরও কথা শুনলাম।
আমরা পলিটিক্যাল পণ্ডিত, কলামনিস্ট, টকিস্ট, সুশীলদের কথা শুনি প্রতিদিন, আজ না হয় একজন ‘অ্যাসট্রোলজিস্ট’-এরও কথা শুনলাম।
No comments