মোবাইল ফোনে এসএমএস: ‘যত বাধাই আসুক, শহীদ হতে পিছপা হবো না’ by মহিউদ্দীন জুয়েল
“যত বাধাই আসুক ইসলামী আন্দোলনে শহীদ হতে
পিছপা হবো না আমরা কেউ। আল্লাহ, নবী-রাসুলকে নিয়ে কটূক্তিকারীদের নিশ্চয়
সাজা হবে আখেরাতে। হে মোমিনগণ, ঘরে বসে না থেকে চলো শামিল হই হেফাজতের
পতাকাতলে। দলে দলে। ঢাকার লং মার্চে।”
মোবাইলে এভাবেই
এসএমএস পাঠিয়ে জনসমর্থন তৈরি করছে হেফাজতে ইসলাম। তবে একটি নয়, বিভিন্ন
বার্তার এসব এসএমএস পাঠানো হচ্ছে দলের সব তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের কাছে।
তাদের কাছ থেকে বার্তা ঘুরে চলে যাচ্ছে এই হাত থেকে ওই হাত।
এসএমএস পাঠানো হচ্ছে কওমি মাদরাসার আদর্শের সব বয়সী লোকজনের কাছে। তারা এসব বার্তা পেয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে উজ্জীবিত হচ্ছেন। আলোচনা করছেন সর্বত্র।
চট্টগ্রামের হেফাজতে ইসলামের নেতারা জানান, ঢাকার লংমার্চেও কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে ৫০ লাখ নেতা-কর্মী জড়ো করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এসব এসএমএসের সব বার্তাই গতকাল থেকে পাঠানো শুরু হয়েছে। আজ ও আগামীকাল শনিবার কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তা সবার কাছে পৌঁছে যাওয়ার কথা বলে তারা জানিয়েছেন। বলেছেন, এ নিয়ে কাজ করছে বেশ কয়েকটি কমিটি। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কওমি শিক্ষার অনুসারীরা ও ঢাকার লালবাগের বেশ কয়েকটি দল এসএমএস পাঠানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। কওমি শিক্ষায় উজ্জীবিত সব বয়সী লোকজনের কাছেই কেবল মাত্র এই এসএমএস পাঠাচ্ছেন হেফাজত।
বিষয়টির সত্যতা জানতে গতকাল চট্টগ্রামের হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর মোবাইল ঘেঁটে দেখা যায়, কারও কাছে একটি নয়, দু’টি করে এসএমএস আসছে কেন্দ্রীয়ভাবে। লংমার্চ কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে ১০ ধরনের এসএমএস তৈরি করা হয়েছে বলে একজন সিনিয়র নেতা জানান।
এসব বার্তায় সরকারের বাধা দেয়ার প্রসঙ্গ, শাহবাগের আন্দোলন কোন পথে যাচ্ছে, নাস্তিক ব্লগাদের বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো, ইসলামী আন্দোলন নিয়ে ষড়যন্ত্র হওয়ার কথাসহ নানাবিধ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের প্রসঙ্গে এসএমএস লেখা হয়েছে- ‘সরকার মুখে বলে ইসলামের জন্য ধর্মপ্রাণ। অন্যদিকে নাস্তিকদের ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আসুন ইসলামের এসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
আরেকটি এসএমসে লেখা হয়েছে- ‘নবী, রাসুলকে নিয়ে ওরা হাসাহাসি করে। অশ্লীল কথা লেখে ওইসব ব্লগে, ইন্টারনেটে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের এসব বেয়াদবি ক্ষমা করবেন না। স্বঘোষিত নাস্তিকদের ঠেকাতে চলো চলো ঢাকা চলো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘লংমার্চের কর্মসূচি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ব্যাপক প্রচারণা চলছে আমাদের। ইতিমধ্যে ৪০ লাখের বেশি লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার ছাপা হয়েছে সারা দেশে। মোবাইলেও আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বেশির ভাগ নেতাই সন্দিহান। তাদের কাছ থেকে আদৌ কোন সহযোগিতা পাবো কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। হরতালের কর্মসূচিতে তারা নিরপেক্ষ থাকবেন নাকি দলীয় সরকারের পরিচয় দেবেন তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সবাই।’
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ নিয়েই যত আপত্তি এখন হেফাজত ইসলামের। লংমার্চের কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা। বলেছেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম কিংবা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হরতাল ডেকেছে।
তাদের কর্মসূচি নিয়ে মোটেও ভাবছেন না তারা। সব বাধা ডিঙিয়ে দলে দলে ঢাকায় ঢুকবেন সংগঠনের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যে এমন সিদ্ধান্ত মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যদি হরতালকারীদের পক্ষ নেয় তাহলে ঘটতে পারে যত বিপত্তি। আর এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটি।
এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীতে জরুরিভাবে এক বৈঠকে বসেন হেফাজত নেতারা। এতে সবাই মিলে লংমার্চের যাত্রা ঠিক করেন। আজ জুমার নামাজের পর গাড়ি নিয়ে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানের সামনে থেকে সবাই যাত্রা করবেন। চট্টগ্রাম থেকে অন্তত ১৫০০ গাড়ি ঢাকায় যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে গতকাল থেকে হঠাৎ করেই গাড়ির সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অনেকে সংঘর্ষের আশঙ্কায় গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন না বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
হেফাজতের নেতারা মনে করছেন, কোন ধরনের বাধা না এলে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হবে তাদের লংমার্চের কর্মসূচি। কিন্তু সরকারের একটি পক্ষ বেশ কিছু সংগঠনের ব্যানারে হরতাল ডেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামসহ ২৭টিরও বেশি সংগঠন হরতালে মাঠে থেকে তাদের বাধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা ঘটতেও পারে। এর আগে লংমার্চের কর্মসূচিকে ঘিরে হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এ সম্মেলনে তারা জানান, ধর্ম অবমাননকারী নাস্তিক-মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাশ, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, শাহবাগি নাস্তিক-মুরতাদ, প্রিয় নবীর শানে কুৎসা রটনাকারী বগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের গ্রেপ্তারপূর্বক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাসহ ১৩ দফা দাবিতে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর ডাকে ৬ই এপ্রিলের লংমার্চ আহ্বান করেছে। ইতিমধ্যে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ নবীপ্রেমিক তৌহিদি জনতা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। একদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমাদের শান্তিপূর্ণ লংমার্চে কোন প্রকার বাধা দেয়া হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি শোনাচ্ছেন, অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর লোকেরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে, লংমার্চের প্রস্তুতি কাজে নানা রকম বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করছে। মহাজোট সরকারের দায়িত্বশীল বিভিন্ন মন্ত্রী লংমার্চ প্রতিহত করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের উস্কানি দিচ্ছেন। সরকার ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত, কার্যকর, বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে, কালক্ষেপণ, সমঝোতা চেষ্টা, অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ ও লোক দেখানো কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে আল্লাহ ও রাসূলের অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন কথাগুলোর পুনঃস্থাপন করতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা না করে হেফাজতে ইসলামকে নানা রকম, হুমকি-ধমকি ও উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের কোথাও যেন লংমার্চে অংশগ্রহণকারী জনতাকে হয়রানি না করা হয়। অন্যথায় সরকারকে এর কঠিন পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে হরতালের কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন সমর্থন জানানো গণজাগরণ মঞ্চ। সন্ধ্যায় তারা মশাল মিছিল বের করার ঘোষণা দেন। এর আগে দুপুরে জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সেখানে লংমার্চের নামে জামায়াত-শিবির যাতে কোন ধরনের তাণ্ডব চালাতে না পারে সে ব্যাপারে দাবি জানানো হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান তাদের আশ্বস্ত করেন বলে উপস্থিত একটি সূত্র মানবজমিনকে জানান।
এদিকে লংমার্চের কর্মসূচিতে হেফাজতে ইসলাম কোন ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা রুখে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অনেক বিপদে-আপদে আপনাদের পাশে ছিলাম। অথচ এখন লংমার্চ নিয়ে হেফাজত নেতারা যা করছেন তাতে এক সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে দেশ। লংমার্চ হোক শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সংঘাতের চেষ্টা করলে তা ছেড়ে দেয়া হবে না। আগে থেকেই বলে দিচ্ছি। এ নিয়ে কিছু হলে সবাই রুখে দাঁড়াবো। এখানে লীলাখেলার জায়গা নয়। যা করবেন ভেবে করুন। কারও কথায় চলবেন না।’ সাবেক মেয়র গতকাল বিকালে নগরীর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ এসব কথা জানান। এ সময় তার সঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসএমএস পাঠানো হচ্ছে কওমি মাদরাসার আদর্শের সব বয়সী লোকজনের কাছে। তারা এসব বার্তা পেয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে উজ্জীবিত হচ্ছেন। আলোচনা করছেন সর্বত্র।
চট্টগ্রামের হেফাজতে ইসলামের নেতারা জানান, ঢাকার লংমার্চেও কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে ৫০ লাখ নেতা-কর্মী জড়ো করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এসব এসএমএসের সব বার্তাই গতকাল থেকে পাঠানো শুরু হয়েছে। আজ ও আগামীকাল শনিবার কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তা সবার কাছে পৌঁছে যাওয়ার কথা বলে তারা জানিয়েছেন। বলেছেন, এ নিয়ে কাজ করছে বেশ কয়েকটি কমিটি। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কওমি শিক্ষার অনুসারীরা ও ঢাকার লালবাগের বেশ কয়েকটি দল এসএমএস পাঠানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। কওমি শিক্ষায় উজ্জীবিত সব বয়সী লোকজনের কাছেই কেবল মাত্র এই এসএমএস পাঠাচ্ছেন হেফাজত।
বিষয়টির সত্যতা জানতে গতকাল চট্টগ্রামের হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর মোবাইল ঘেঁটে দেখা যায়, কারও কাছে একটি নয়, দু’টি করে এসএমএস আসছে কেন্দ্রীয়ভাবে। লংমার্চ কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে ১০ ধরনের এসএমএস তৈরি করা হয়েছে বলে একজন সিনিয়র নেতা জানান।
এসব বার্তায় সরকারের বাধা দেয়ার প্রসঙ্গ, শাহবাগের আন্দোলন কোন পথে যাচ্ছে, নাস্তিক ব্লগাদের বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো, ইসলামী আন্দোলন নিয়ে ষড়যন্ত্র হওয়ার কথাসহ নানাবিধ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের প্রসঙ্গে এসএমএস লেখা হয়েছে- ‘সরকার মুখে বলে ইসলামের জন্য ধর্মপ্রাণ। অন্যদিকে নাস্তিকদের ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আসুন ইসলামের এসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
আরেকটি এসএমসে লেখা হয়েছে- ‘নবী, রাসুলকে নিয়ে ওরা হাসাহাসি করে। অশ্লীল কথা লেখে ওইসব ব্লগে, ইন্টারনেটে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের এসব বেয়াদবি ক্ষমা করবেন না। স্বঘোষিত নাস্তিকদের ঠেকাতে চলো চলো ঢাকা চলো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘লংমার্চের কর্মসূচি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ব্যাপক প্রচারণা চলছে আমাদের। ইতিমধ্যে ৪০ লাখের বেশি লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার ছাপা হয়েছে সারা দেশে। মোবাইলেও আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বেশির ভাগ নেতাই সন্দিহান। তাদের কাছ থেকে আদৌ কোন সহযোগিতা পাবো কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। হরতালের কর্মসূচিতে তারা নিরপেক্ষ থাকবেন নাকি দলীয় সরকারের পরিচয় দেবেন তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সবাই।’
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ নিয়েই যত আপত্তি এখন হেফাজত ইসলামের। লংমার্চের কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা। বলেছেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম কিংবা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হরতাল ডেকেছে।
তাদের কর্মসূচি নিয়ে মোটেও ভাবছেন না তারা। সব বাধা ডিঙিয়ে দলে দলে ঢাকায় ঢুকবেন সংগঠনের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যে এমন সিদ্ধান্ত মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যদি হরতালকারীদের পক্ষ নেয় তাহলে ঘটতে পারে যত বিপত্তি। আর এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটি।
এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীতে জরুরিভাবে এক বৈঠকে বসেন হেফাজত নেতারা। এতে সবাই মিলে লংমার্চের যাত্রা ঠিক করেন। আজ জুমার নামাজের পর গাড়ি নিয়ে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানের সামনে থেকে সবাই যাত্রা করবেন। চট্টগ্রাম থেকে অন্তত ১৫০০ গাড়ি ঢাকায় যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে গতকাল থেকে হঠাৎ করেই গাড়ির সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অনেকে সংঘর্ষের আশঙ্কায় গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন না বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
হেফাজতের নেতারা মনে করছেন, কোন ধরনের বাধা না এলে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হবে তাদের লংমার্চের কর্মসূচি। কিন্তু সরকারের একটি পক্ষ বেশ কিছু সংগঠনের ব্যানারে হরতাল ডেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামসহ ২৭টিরও বেশি সংগঠন হরতালে মাঠে থেকে তাদের বাধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা ঘটতেও পারে। এর আগে লংমার্চের কর্মসূচিকে ঘিরে হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এ সম্মেলনে তারা জানান, ধর্ম অবমাননকারী নাস্তিক-মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাশ, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, শাহবাগি নাস্তিক-মুরতাদ, প্রিয় নবীর শানে কুৎসা রটনাকারী বগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের গ্রেপ্তারপূর্বক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাসহ ১৩ দফা দাবিতে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর ডাকে ৬ই এপ্রিলের লংমার্চ আহ্বান করেছে। ইতিমধ্যে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ নবীপ্রেমিক তৌহিদি জনতা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। একদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমাদের শান্তিপূর্ণ লংমার্চে কোন প্রকার বাধা দেয়া হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি শোনাচ্ছেন, অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর লোকেরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে, লংমার্চের প্রস্তুতি কাজে নানা রকম বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করছে। মহাজোট সরকারের দায়িত্বশীল বিভিন্ন মন্ত্রী লংমার্চ প্রতিহত করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের উস্কানি দিচ্ছেন। সরকার ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত, কার্যকর, বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে, কালক্ষেপণ, সমঝোতা চেষ্টা, অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ ও লোক দেখানো কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে আল্লাহ ও রাসূলের অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন কথাগুলোর পুনঃস্থাপন করতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা না করে হেফাজতে ইসলামকে নানা রকম, হুমকি-ধমকি ও উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের কোথাও যেন লংমার্চে অংশগ্রহণকারী জনতাকে হয়রানি না করা হয়। অন্যথায় সরকারকে এর কঠিন পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে হরতালের কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন সমর্থন জানানো গণজাগরণ মঞ্চ। সন্ধ্যায় তারা মশাল মিছিল বের করার ঘোষণা দেন। এর আগে দুপুরে জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সেখানে লংমার্চের নামে জামায়াত-শিবির যাতে কোন ধরনের তাণ্ডব চালাতে না পারে সে ব্যাপারে দাবি জানানো হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান তাদের আশ্বস্ত করেন বলে উপস্থিত একটি সূত্র মানবজমিনকে জানান।
এদিকে লংমার্চের কর্মসূচিতে হেফাজতে ইসলাম কোন ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা রুখে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অনেক বিপদে-আপদে আপনাদের পাশে ছিলাম। অথচ এখন লংমার্চ নিয়ে হেফাজত নেতারা যা করছেন তাতে এক সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে দেশ। লংমার্চ হোক শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সংঘাতের চেষ্টা করলে তা ছেড়ে দেয়া হবে না। আগে থেকেই বলে দিচ্ছি। এ নিয়ে কিছু হলে সবাই রুখে দাঁড়াবো। এখানে লীলাখেলার জায়গা নয়। যা করবেন ভেবে করুন। কারও কথায় চলবেন না।’ সাবেক মেয়র গতকাল বিকালে নগরীর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ এসব কথা জানান। এ সময় তার সঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
No comments