আতংকে ব্লগাররা, ‘আন্দোলন বুমেরাং হয়ে ফিরছে’
বিভিন্ন ব্লগে ও ওয়েব সাইটে ধর্মীয়
উস্কানিমূলক নেতিবাচক লেখালেখির কারণে রাজধানীতে তিনজন ব্লগারকে গ্রেফতার ও
রিমাণ্ডে নেয়ার ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে নাস্তিক ব্লগারদের মধ্যে।
গ্রেফতারকৃত রিমাণ্ডে যাওয়া তিন ব্লগার হলেন- সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজ।
বিভিন্ন ব্লগে ও ওয়েব সাইটে ধর্মীয় উস্কানিমূলক নেতিবাচক লেখালেখির
কারণে তিন ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি ঢাকা
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের।
সোমবার রাতে তাদের রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড়, মনিপুরিপাড়া ও পলাশী থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ল্যাপটপ ও কম্পিউটারসহ আরো বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করা হয়।
ডিবি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মশিউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানিমূলক বিভিন্ন লেখালেখির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ব্লগার রাসেল পারভেজ, সুব্রত অধিকারী শুভ ও মশিউর রহমান বিপ্লবকে আটক ও তাদের ল্যাপটপ ও কম্পিউটারও জব্দ করার বিষয়ে সামহ্যয়ার ইন ব্লগের নোটিশ বোর্ডে বলা হয়েছে, আটক বিষয়ক কোন আইনগত চিঠিপত্রও পাননি ব্লগার কিংবা ব্লগ প্ল্যাটফর্ম। তারা অবিলম্বে তিনজন ব্লগারের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানান।
পাশাপাশি এই মূহুর্তে বাকস্বাধীনতায় বাংলা ব্লগারদের অবস্থান/নিরাপত্তা নিয়ে আমরা এবং পুরো বাংলাব্লগোস্ফিয়ার উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠিত।
এদিকে, ইসলাম ও মহানবীকে (স.) কটূক্তি করার অভিযোগে সরকারের নজরদারি ব্লগারদের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন।
তার মতে, জামায়াত-শিবিরের চক্রান্তের ফসল হিসেবে মতপ্রকাশের মুক্ত জায়গাটি এখন সবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। চাইছে অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের মুখবন্ধ করে দিতে। সমাজ ও রাষ্ট্রর সংস্কারের আন্দোলন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে। এ চক্রান্তকে রুখে দিতে প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আলোচিত এ ব্লগার।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় আসিফ মহিউদ্দীনের ফেসবুকের পাতায় স্ট্যাটাসে দেয়া পোস্টটিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা অনলাইনে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। ব্লগে ও ফেসবুকে আমি বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সাথে কম যুদ্ধ করি নি। কখনও ধর্মান্ধ মৌলবাদী, কখনও প্রগতিশীলতার ছদ্মবেশি, কখনও নারী অবমাননাকারী, কখনও সাম্প্রদায়িক আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে, কখনও এই বা কখনও সেই। মানবতার খাতিরে, অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশের জন্য জাত পাত ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ অনেকের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছি, আমরা লিখে গেছি বিনা পারিশ্রমিকে। এর মধ্যে নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে গেছে, আমাদের নানাবিধ আন্দোলন সংগ্রাম সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কারের চিন্তা এখন আমাদের দিকেই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে। আমরা এখন ভীত, আমাদের কণ্ঠ এখন রোধ করে দেয়া হচ্ছে।’
পোস্টটিতে আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আজ নিতান্তই নিরুপায় হয়ে আবেদন জানাচ্ছি, বিনীত আবেদন জানাচ্ছি অনলাইনের সকল পাঠক, সকল লেখক, সকল মতের মানুষের কাছে। এক অন্ধকার ধেয়ে আসছে বাঙলা ব্লগ এবং অনলাইন জগতের ওপর। এই মুক্ত অঞ্চলটি ধ্বংস করে দেয়ার সমস্ত পরিকল্পনাই পাকাপোক্ত করে ফেলা হয়েছে। মুক্তচিন্তার ব্লগারদের দমন করা হবে যেকোনো ভাবেই হোক। নিজের জন্য আবেদন করছি না, আবেদন করছি আমাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা এই মুক্ত মাধ্যমটি বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে। আমাদের মুখের ভাষাকে শৃঙ্খল মুক্ত করার তাগিদে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন আর সময় নেই। যদি ভেবে থাকেন, আপনার নামটি লিস্টে নেই, আপনি বেঁচে গেছেন, তাহলে এর চাইতে বড় ভুল আর কিছুই হতে পারে না। কারণ বাক-স্বাধীনতা একবার হরণ করা শুরু হলে আমরা কেউই আর কথা বলতে পারব না। এখন নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির আর সময় নেই, ব্যক্তিগত মারামারি আর কোন্দলে এক মুহূর্ত নষ্ট করা যাবে না। এখন একত্রিত হতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে আপনার আমার বাক-স্বাধীনতাকে শেকল পড়ান এই অপশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে।’
পোস্টটিতে বলা হয়, ‘আপনারা এবার অনুগ্রহ করে সমস্ত মতপার্থক্য ভুলে একত্রিত হোন, সংগঠিত হোন। ব্লগারদের মধ্যে এখন সামগ্রিক ঐক ভীষণ জরুরি। আজ নানান পক্ষ থেকেই আমাদের ভয় দেখান হচ্ছে, আমাদের দমন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ তারা আমাকে হত্যা করলে কাল আপনাকেও করবে। আর তার না করলে করবে প্রগতিশীলতার মুখোশধারীরা, করবে সরকার, করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নানা বাহিনী। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সরকারও এখন তাদের ভাষাতেই কথা বলছে। আমাদের কথা বলার এই জায়গাটিই তাদের মূল লক্ষ্যবস্তু।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কী পারি না, সবাই মিলে একত্রিত হয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে? সমস্ত ব্লগারের বাক-স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে লড়াই শুরু করতে? এই লড়াই হতে পারে আইনী লড়াই, এই লড়াই হতে পারে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার লড়াই। মনে রাখতে হবে, আজ আমাদের কথা বলার এই ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাবার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিভক্তি। ধর্মান্ধ মৌলবাদী জামাত-শিবির বা হিজবুত তাহরিরের মধ্যে কোন বিভক্তি নেই। আমরা নিজেদের মধ্যে কোন্দল করে শক্তিক্ষয় করতে থাকলে তাদেরই শক্তি যোগানো হয়।’
আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘সমস্ত ব্লগারদের নিয়ে একটি বাক-স্বাধীনতা বা ব্লগার অধিকার সংগঠন করা কী খুব অসম্ভব? যেই সংগঠনটি ব্লগার এবং অনলাইন একটিভিস্টদের উপরে ক্রমাগত হয়ে আসা নানা ধরণের নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে? আইনী এবং প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দেবে? আপনি ব্লগারদের প্রতিনিধি, আপনি এই দুঃসময়ে চুপ করে থাকলে তরুণ ব্লগারদের কী হবে? আমাদের সম্ভাবনাময় এই মাধ্যমটির ভবিষ্যত কী হবে? একবার শেষ যুদ্ধ কি আমরা করবো না? নাকি এভাবেই হার মেনে চুপ হয়ে বাঙলা ব্লগস্ফিয়ারের মৃত্যুর প্রহর গুনবো?’
এদিকে, সারাদেশে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯টি ব্লগের ৮৪ জনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে বলে মিডিয়াকে জানানো হয়েছে।
৯টি ব্লগের ৮৪ জনের এই তালিকা হস্তান্তর করেছে দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ মাহবুব আলম আরিফ।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত নয় সদস্যের কমিটির সঙ্গে দেশের আলেম সমাজের বৈঠকে কমিটির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইনউদ্দিন খন্দকারের কাছে এ তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইনউদ্দিন খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ জানানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ই-মেইল (complainmoha@gmail.com) একাউন্ট খুলেছে।
মইনউদ্দিন খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকরীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ চেয়েছেন আলেম সমাজের কাছে। ইতিমধ্যে এই কমিটির কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। এগুলো দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হবে অনুসন্ধানের জন্য। পরবর্তীতে এদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, নতুন খোলা ই-মেইলে যে কেউই নির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে পারবেন। পাশাপাশি লেখাটিও এখানে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
সভায় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহম্মেদ জমাদার বলেন, ঢাকায় একমাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারক নিয়োগের চেষ্টা চলছে।
এছাড়াও দেশের অন্য আদালতেও বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব দেশের প্রচলিত আইনেই।
ওই সময়ে দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ মাহবুব আলম আরিফ বলেন, ব্লগারদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন। এর নেতৃত্বেই এসব চলছে।
তিনি বলেন, বাক স্বাধীনতার নামে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী নাস্তিকতারই নামান্তর। এদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ভারতের কোনো ব্লগে বাংলাদেশিরা কোনো মন্তব্য করতে পারে না। অথচ বাংলাদেশের ব্লগে ভারতীয়রা মন্তব্য করতে পারেন।
তিনি বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে-বিটিআরসি তাদের কাজ করছে না। এ জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করা, সরকারের নিজ উদ্যোগে একটি মামলা করারও সুপারিশ করা হয়েছে। মাহবুব আলম আরিফ এ সময়ে কমিটির সভাপতি কাছে একটি প্রতিবেদনও জমা দেন।
প্রতিবেদনে যে নয়টি ব্লগের নাম দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো-স্যামহোয়ার ব্লগ, আমার ব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, ধর্মকারী ব্লগ, নবযুগ ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ, চুতরাপাতা ব্লগ ও মতিকন্ঠ ব্লগ।
তালিকায় যেসব ব্লগার ইসলাম ও মহানবীকে নিয়ে অপ্রচার চালাচ্ছেন তারা হলেন আরিফুর রহমান, মনির হাসান, বৃত্তবন্ধি, সবাক, শয়তান, মনজুরুল হক, কখগ, রাসেল, নাস্তিকের ধর্মকতা, দূরের পাখি, আরিফুল হক তুইন, তিতি আনা, নাজিম উদ্দিন, আলমগীর কুমকুম, ফরহাদ উদদিন স্বপন, দুস্যবনহুর, ফারহানা আহমেদ, ঘনাদা, রাহান, অন্যকেউ, পাপী০০৭, হোরাস, প্রশ্নোত্তর, ভালমানুষ, ভন্ডপীর, বৈকুন্ঠ, সত্যান্বেষী, পড়ুয়া, হাল্ক (সানাউল), বিপ্লব০০৭, রাস্তার ছেলে, ঘাতক, বিশাল বিডি, সাহোশি ৬, লাইটহাউজ, মমতা জাহান, রাতমজুর, কৌশিক, মেঘদুত, স্বপ্নকথক, প্রায়পাস, আহমেদ মোস্তফা কামাল, লুকার, নুহান, সোজাকথা, ট্রানজিস্টার, দিওয়ান, রিসাত, আমি এবং আধার, অরন্যদেব, কেল্টুদা, আমি রোধের ছেলে, ভিন্নচিন্তা, আউটসাইডার ও প্রণব আচার্যা।
অন্য আর একটি তালিকায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে-আসিফ মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম, আলমগীর হোসেন, অন্যআজাদ, অনন্ত বীজয় দাস, আশীষ চ্যাটানজি, অভিজিত রায়, বিপ্লব কান্তিদে, দাড়িপাল্লা ধমা ধম (নিতাই ভট্রাচার্য, ইব্রহীম খলিল সবাগ,(সুমন সওদাগর) কৈশীক, আহমেদ, নুরনবী দুলাল, পারভেজ আলম, রাজিব হায়দার শোভন(থাবাবাবা) রতন (শন্যাসী), সৈকত চৌধুরী, শর্মী আমিন, সৌমিত্র মজুমদার(সৌম্য) আল্লামা শয়তান, (বিপ্লব) শুভজিদ ভৌমিক, সুমিত চৌধুরী, সৈকত বড়ুয়া, সুব্রত শুভ ও সুসান্তদাস গুপ্ত, সৈয়দ কামরান মির্জা, তাহসিন, তন্ময় এবং তালুকদার ও জোবায়েন সন্ধি।
ইসলাম বিদ্বেষী, স্বঘোষিত কুখ্যাত নাস্তিক যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ লেখক, আদালত অবমাননাকারী তালিকায় তাদের নাম এসেছে বলে দাবি করা হয়।
সোমবার রাতে তাদের রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড়, মনিপুরিপাড়া ও পলাশী থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ল্যাপটপ ও কম্পিউটারসহ আরো বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করা হয়।
ডিবি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মশিউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানিমূলক বিভিন্ন লেখালেখির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ব্লগার রাসেল পারভেজ, সুব্রত অধিকারী শুভ ও মশিউর রহমান বিপ্লবকে আটক ও তাদের ল্যাপটপ ও কম্পিউটারও জব্দ করার বিষয়ে সামহ্যয়ার ইন ব্লগের নোটিশ বোর্ডে বলা হয়েছে, আটক বিষয়ক কোন আইনগত চিঠিপত্রও পাননি ব্লগার কিংবা ব্লগ প্ল্যাটফর্ম। তারা অবিলম্বে তিনজন ব্লগারের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানান।
পাশাপাশি এই মূহুর্তে বাকস্বাধীনতায় বাংলা ব্লগারদের অবস্থান/নিরাপত্তা নিয়ে আমরা এবং পুরো বাংলাব্লগোস্ফিয়ার উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠিত।
এদিকে, ইসলাম ও মহানবীকে (স.) কটূক্তি করার অভিযোগে সরকারের নজরদারি ব্লগারদের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন।
তার মতে, জামায়াত-শিবিরের চক্রান্তের ফসল হিসেবে মতপ্রকাশের মুক্ত জায়গাটি এখন সবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। চাইছে অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের মুখবন্ধ করে দিতে। সমাজ ও রাষ্ট্রর সংস্কারের আন্দোলন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে। এ চক্রান্তকে রুখে দিতে প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আলোচিত এ ব্লগার।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় আসিফ মহিউদ্দীনের ফেসবুকের পাতায় স্ট্যাটাসে দেয়া পোস্টটিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা অনলাইনে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। ব্লগে ও ফেসবুকে আমি বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সাথে কম যুদ্ধ করি নি। কখনও ধর্মান্ধ মৌলবাদী, কখনও প্রগতিশীলতার ছদ্মবেশি, কখনও নারী অবমাননাকারী, কখনও সাম্প্রদায়িক আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে, কখনও এই বা কখনও সেই। মানবতার খাতিরে, অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশের জন্য জাত পাত ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ অনেকের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছি, আমরা লিখে গেছি বিনা পারিশ্রমিকে। এর মধ্যে নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে গেছে, আমাদের নানাবিধ আন্দোলন সংগ্রাম সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কারের চিন্তা এখন আমাদের দিকেই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে। আমরা এখন ভীত, আমাদের কণ্ঠ এখন রোধ করে দেয়া হচ্ছে।’
পোস্টটিতে আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আজ নিতান্তই নিরুপায় হয়ে আবেদন জানাচ্ছি, বিনীত আবেদন জানাচ্ছি অনলাইনের সকল পাঠক, সকল লেখক, সকল মতের মানুষের কাছে। এক অন্ধকার ধেয়ে আসছে বাঙলা ব্লগ এবং অনলাইন জগতের ওপর। এই মুক্ত অঞ্চলটি ধ্বংস করে দেয়ার সমস্ত পরিকল্পনাই পাকাপোক্ত করে ফেলা হয়েছে। মুক্তচিন্তার ব্লগারদের দমন করা হবে যেকোনো ভাবেই হোক। নিজের জন্য আবেদন করছি না, আবেদন করছি আমাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা এই মুক্ত মাধ্যমটি বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে। আমাদের মুখের ভাষাকে শৃঙ্খল মুক্ত করার তাগিদে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন আর সময় নেই। যদি ভেবে থাকেন, আপনার নামটি লিস্টে নেই, আপনি বেঁচে গেছেন, তাহলে এর চাইতে বড় ভুল আর কিছুই হতে পারে না। কারণ বাক-স্বাধীনতা একবার হরণ করা শুরু হলে আমরা কেউই আর কথা বলতে পারব না। এখন নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির আর সময় নেই, ব্যক্তিগত মারামারি আর কোন্দলে এক মুহূর্ত নষ্ট করা যাবে না। এখন একত্রিত হতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে আপনার আমার বাক-স্বাধীনতাকে শেকল পড়ান এই অপশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে।’
পোস্টটিতে বলা হয়, ‘আপনারা এবার অনুগ্রহ করে সমস্ত মতপার্থক্য ভুলে একত্রিত হোন, সংগঠিত হোন। ব্লগারদের মধ্যে এখন সামগ্রিক ঐক ভীষণ জরুরি। আজ নানান পক্ষ থেকেই আমাদের ভয় দেখান হচ্ছে, আমাদের দমন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ তারা আমাকে হত্যা করলে কাল আপনাকেও করবে। আর তার না করলে করবে প্রগতিশীলতার মুখোশধারীরা, করবে সরকার, করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নানা বাহিনী। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সরকারও এখন তাদের ভাষাতেই কথা বলছে। আমাদের কথা বলার এই জায়গাটিই তাদের মূল লক্ষ্যবস্তু।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কী পারি না, সবাই মিলে একত্রিত হয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে? সমস্ত ব্লগারের বাক-স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে লড়াই শুরু করতে? এই লড়াই হতে পারে আইনী লড়াই, এই লড়াই হতে পারে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার লড়াই। মনে রাখতে হবে, আজ আমাদের কথা বলার এই ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাবার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিভক্তি। ধর্মান্ধ মৌলবাদী জামাত-শিবির বা হিজবুত তাহরিরের মধ্যে কোন বিভক্তি নেই। আমরা নিজেদের মধ্যে কোন্দল করে শক্তিক্ষয় করতে থাকলে তাদেরই শক্তি যোগানো হয়।’
আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘সমস্ত ব্লগারদের নিয়ে একটি বাক-স্বাধীনতা বা ব্লগার অধিকার সংগঠন করা কী খুব অসম্ভব? যেই সংগঠনটি ব্লগার এবং অনলাইন একটিভিস্টদের উপরে ক্রমাগত হয়ে আসা নানা ধরণের নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে? আইনী এবং প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দেবে? আপনি ব্লগারদের প্রতিনিধি, আপনি এই দুঃসময়ে চুপ করে থাকলে তরুণ ব্লগারদের কী হবে? আমাদের সম্ভাবনাময় এই মাধ্যমটির ভবিষ্যত কী হবে? একবার শেষ যুদ্ধ কি আমরা করবো না? নাকি এভাবেই হার মেনে চুপ হয়ে বাঙলা ব্লগস্ফিয়ারের মৃত্যুর প্রহর গুনবো?’
এদিকে, সারাদেশে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯টি ব্লগের ৮৪ জনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে বলে মিডিয়াকে জানানো হয়েছে।
৯টি ব্লগের ৮৪ জনের এই তালিকা হস্তান্তর করেছে দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ মাহবুব আলম আরিফ।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত নয় সদস্যের কমিটির সঙ্গে দেশের আলেম সমাজের বৈঠকে কমিটির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইনউদ্দিন খন্দকারের কাছে এ তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইনউদ্দিন খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ জানানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ই-মেইল (complainmoha@gmail.com) একাউন্ট খুলেছে।
মইনউদ্দিন খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকরীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ চেয়েছেন আলেম সমাজের কাছে। ইতিমধ্যে এই কমিটির কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। এগুলো দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হবে অনুসন্ধানের জন্য। পরবর্তীতে এদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, নতুন খোলা ই-মেইলে যে কেউই নির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে পারবেন। পাশাপাশি লেখাটিও এখানে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
সভায় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহম্মেদ জমাদার বলেন, ঢাকায় একমাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারক নিয়োগের চেষ্টা চলছে।
এছাড়াও দেশের অন্য আদালতেও বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব দেশের প্রচলিত আইনেই।
ওই সময়ে দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ মাহবুব আলম আরিফ বলেন, ব্লগারদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আসিফ মহিউদ্দিন। এর নেতৃত্বেই এসব চলছে।
তিনি বলেন, বাক স্বাধীনতার নামে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী নাস্তিকতারই নামান্তর। এদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ভারতের কোনো ব্লগে বাংলাদেশিরা কোনো মন্তব্য করতে পারে না। অথচ বাংলাদেশের ব্লগে ভারতীয়রা মন্তব্য করতে পারেন।
তিনি বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে-বিটিআরসি তাদের কাজ করছে না। এ জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করা, সরকারের নিজ উদ্যোগে একটি মামলা করারও সুপারিশ করা হয়েছে। মাহবুব আলম আরিফ এ সময়ে কমিটির সভাপতি কাছে একটি প্রতিবেদনও জমা দেন।
প্রতিবেদনে যে নয়টি ব্লগের নাম দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো-স্যামহোয়ার ব্লগ, আমার ব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, ধর্মকারী ব্লগ, নবযুগ ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ, চুতরাপাতা ব্লগ ও মতিকন্ঠ ব্লগ।
তালিকায় যেসব ব্লগার ইসলাম ও মহানবীকে নিয়ে অপ্রচার চালাচ্ছেন তারা হলেন আরিফুর রহমান, মনির হাসান, বৃত্তবন্ধি, সবাক, শয়তান, মনজুরুল হক, কখগ, রাসেল, নাস্তিকের ধর্মকতা, দূরের পাখি, আরিফুল হক তুইন, তিতি আনা, নাজিম উদ্দিন, আলমগীর কুমকুম, ফরহাদ উদদিন স্বপন, দুস্যবনহুর, ফারহানা আহমেদ, ঘনাদা, রাহান, অন্যকেউ, পাপী০০৭, হোরাস, প্রশ্নোত্তর, ভালমানুষ, ভন্ডপীর, বৈকুন্ঠ, সত্যান্বেষী, পড়ুয়া, হাল্ক (সানাউল), বিপ্লব০০৭, রাস্তার ছেলে, ঘাতক, বিশাল বিডি, সাহোশি ৬, লাইটহাউজ, মমতা জাহান, রাতমজুর, কৌশিক, মেঘদুত, স্বপ্নকথক, প্রায়পাস, আহমেদ মোস্তফা কামাল, লুকার, নুহান, সোজাকথা, ট্রানজিস্টার, দিওয়ান, রিসাত, আমি এবং আধার, অরন্যদেব, কেল্টুদা, আমি রোধের ছেলে, ভিন্নচিন্তা, আউটসাইডার ও প্রণব আচার্যা।
অন্য আর একটি তালিকায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে-আসিফ মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম, আলমগীর হোসেন, অন্যআজাদ, অনন্ত বীজয় দাস, আশীষ চ্যাটানজি, অভিজিত রায়, বিপ্লব কান্তিদে, দাড়িপাল্লা ধমা ধম (নিতাই ভট্রাচার্য, ইব্রহীম খলিল সবাগ,(সুমন সওদাগর) কৈশীক, আহমেদ, নুরনবী দুলাল, পারভেজ আলম, রাজিব হায়দার শোভন(থাবাবাবা) রতন (শন্যাসী), সৈকত চৌধুরী, শর্মী আমিন, সৌমিত্র মজুমদার(সৌম্য) আল্লামা শয়তান, (বিপ্লব) শুভজিদ ভৌমিক, সুমিত চৌধুরী, সৈকত বড়ুয়া, সুব্রত শুভ ও সুসান্তদাস গুপ্ত, সৈয়দ কামরান মির্জা, তাহসিন, তন্ময় এবং তালুকদার ও জোবায়েন সন্ধি।
ইসলাম বিদ্বেষী, স্বঘোষিত কুখ্যাত নাস্তিক যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ লেখক, আদালত অবমাননাকারী তালিকায় তাদের নাম এসেছে বলে দাবি করা হয়।
No comments