দেশের রাজনীতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে by কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের
ক্ষমতার মেয়াদ যখন শেষ দিকে তখনই বাংলাদেশের রাজনীতি জটিল থেকে জটিলতর
হচ্ছে এবং হিংসা, প্রতিহিংসা ও সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।
সাধারণ
মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী সবার
প্রশ্ন সামনের দিনগুলোতে কী হতে যাচ্ছে। নির্দিষ্টভাবে কী হবে তা কেউ বলতে
পারছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রবণতা এখন মারাত্মক আকার ধারণ করে রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যুদ্ধাপরাধ বিচারকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী বড় নিষ্ঠুর ও বেপরোয়া আচরণ এবং জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসের রাজনীতি শুরু করেছে। বোমা-ককটেল, বেধড়ক পুলিশের উপর গুপ্ত হামলায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ ও জামায়াতের ও শিবিরের মিছিল-শ্লোগানের উপর এতো মারমুখী যে, তাদেরকে বলা যায় শেষ মরণ-কামড় দিয়ে রাস্তায় হিংসাত্মক রাজনীতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, অর্ন্তর্বতীকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমসংখ্যক করার জন্য বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে। এ ধরনের সরকারের প্রধান রাষ্ট্রপতি স্পিকার আবদুল হামিদ হতে চাইলে বিএনপি তা মেনে নেবে বলে জানা যায়। এছাড়া দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে, রাজনীতি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে মাইনাস করা এবং ওয়ান-ইলেভেন মার্কা সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এ ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেনাবাহিনী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন লবি ও দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসায়ী সমাজের একটি অংশের সমর্থন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করেন এ যাত্রায় ওয়ান-ইলেভেন ধরনের কোনো সরকার গঠিত হলে ক্ষমতায় এসে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে।বিএনপি ও আওয়ামী সূত্র থেকে জানা যায়, দু’দলেই ক্ষমতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত নেতাদের অনেকে ওয়ান-ইলেভেন মার্কা নতুন দলে যোগ দিতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এ ধরনের কথিত জাতীয় সরকার দুর্নীতির দায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক নেতাকেই অভিযুক্ত করে জেলে পাঠাতে পারে। এক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলই তোপের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামনের রাজনৈতিক তৃতীয় বিকল্পটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনী মাঠের বাইরে রেখে একটি পাতানো নির্বাচন করবে এবং আরও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি দরকষাকষি করে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বড় ধরনের সুবিধা পেলে পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতির পদও দাবি করতে পারেন। তাদের দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি আবারো চরম অনিশ্চয়তা, উৎকণ্ঠা ও অন্ধকারের দিকে ধাবমান হচ্ছে। দিন দিন সরকার আর বিরোধী পক্ষ যেভাবে পরস্পরবিরোধী ও পাল্টা অবস্থানে নিজেদের নিয়ে যাচ্ছে, অনিশ্চয়তা ও সহিংসতার আশঙ্কা ততই বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে বিরোধী পক্ষকে মোকাবেলার নামে সরকারি দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, হামলা, মামলা, কটূক্তি, উসকানিমূলক বক্তব্যসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্বন্ধে মানহানিকর বক্তব্য এবং গ্রেফতার নির্যাতন দেশের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করে চলেছে। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, শিক্ষা-আইন-বিদ্যুৎ-যোগাযোগ-প্রশাসনে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি-অস্থিরতা, দেশব্যাপী ক্ষমতাসীন দলীয় ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য, শেয়ারবাজারে ধস ইত্যাদি কর্মকা-ে সরকার ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষে এত দিক সামাল দেয়া অসম্ভব। নিজ কর্মদোষেই সরকার যে জনগণ থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে।
সাবেক কেবিনেট সচিব ডঃ আকবর আলী খান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো সমঝোতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন। বাইরের প্রেসক্রিপশনে এই সমস্যা সমাধান হবেনা।
প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, বাজারে গুজব আছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পাশাপাশি আওয়ামীলীগ জামায়াতের সাথে সমঝোতায় আসতে চাচ্ছে-আগামী নির্বাচনের প্রাক্কালে। জামায়াতের প্রতি নরম মনোভাব আগামীর সমঝোতার পথ খোলে দেয়ার সিগন্যাল মাত্র।
অধ্যাপক ডঃ শফিক বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উচিৎ নিজেদের মধ্যে ব্যাপক মতামত, আলাপ-আলোচনা ও ইন্টার একশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমূহের সমাধানের পথে ঐকমত্যে পৌঁছানো।কোন বিদেশী সাহায্যে নয়, বরং বিদেশীদের লজিস্টিক এক্সপার্ট সাহায্য নেয়া যেতে পারে, কিন্তু মূল পার্ট নিতে হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল এবং জনগণকেই।
রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ডঃ আলী রিয়াজের ফেইস বুক ষ্ট্যাটাস এ বলেন, দেশে একের পর এক নাটক চলছে, জামায়াতের মারমুখী আচরণ, পুলিশের উপর আক্রমণ আর পুলিশের নীরবতা এবং প্রতি-আক্রমণ, তরীকুলের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জামায়াতের দায়-ভার বিএনপি-র নিতে অস্বীকৃতি এবং যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভাঙ্গার বিপক্ষে অবস্থান, ফখরুলের একের পর এক জামিন না-মঞ্জুর, আবার হঠাৎ করে জামিন মঞ্জুর, তথ্যমন্ত্রীর আন্দোলনে শরীক, এরশাদের অস্বস্থি প্রকাশ আবার একক নির্বাচনের ঘোষণা, নারীদের উপর আক্রমণের মহোৎসব, একের পর এক লুট-পাটের পর এখন আবার নাটকের পর নাটক-সবই যেন একই সূত্রে গাঁথা। আরো যে কতো নাটক বাংলাদেশের রাজনীতির রঙ্গ-মঞ্চে মঞ্চস্থ হবে-সময়ই তা বলে দেবে।
No comments