গণজাগরণ মঞ্চের অবরোধের ডাক
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার বিকাল
৪টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ২২ ঘণ্টা অবরোধ ডেকেছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ।
একইসঙ্গে শনিবার মহাসমাবেশ ডেকেছে সংগঠনটি। বিকাল চারটায় গণজাগরণ মঞ্চের
প্রজন্ম চত্বরে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রাতে গণজাগরণ
মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচী ঘোষণা
করেন। তিনি বলেন, সব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও দেশবিরোধী ও
স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলাম ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্র
শিবিরকে আইন করে নিষিদ্ধের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলেছে
সারা দেশব্যাপী। ইতোমধ্যেই এ আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরের
সবখানে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্যোগে। এ আন্দোলনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে
উদ্ধত হয়েছে বিভিন্ন মহল, নানা অপকৌশলের মাধ্যমে তারা আদতে যুদ্ধাপরাধীদের
সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামাত-শিবির নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে।
এসব মহলের পিছনে স্পষ্টতই হায়েনা দল জামায়াতে ইসলাম ও তাদের হিংস্র বর্বর
বাহিনী ছাত্রশিবিরের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। তারা দেশজুড়ে নানা সহিংসতার
মাধ্যমে গণজাগরণ মঞ্চের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অন্যায়ভাবে
বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, তারপরও গণজাগরণ মঞ্চ ধ্রুব সত্যের মতো তার
লক্ষ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ দৃপ্ত প্রত্যয়ের অখ- অনুপ্রেরণা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপন্থী প্রতিটি মানুষ, বাঙালির আবহমান সংস্কৃতিকে বুকে
লালন করা বাংলার সাহসী জনগণ। তাই যখনই গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি নানা অপকৌশল চালিয়েছে, তখনই দেশব্যাপী সচেতন
জনগণ তা প্রতিহত করেছেন। ডা. ইমরান বলেন, ছয় এপ্রিল গণজাগরণ মঞ্চ প্রজন্ম
চত্বরে জনসভার ডাক দেয়। ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত এ কর্মসূচী ঘোষিত হয় গত
ছাব্বিশে মার্চের মহান স্বাধীনতা দিবসের ‘মুক্তিযোদ্ধা-জনতা’ মহাসমাবেশ
থেকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের কর্মসূচীকে লক্ষ্য করেই লং
মার্চের ঘোষণা দেয় একটি মহল। আপনারা জানেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একাত্তরে
সকল বাঙালি যেমন একই শক্তিতে বলীয়ান হয়েছিলো, তারই ধারাবাহিকতায়, আজও আমরা
সেই যূথবদ্ধতার স্মারক দেখতে পেয়েছি। ইতোমধ্যেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট,
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং সেক্টর কমান্ডারস’ ফোরামসহ মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের ২৭টি সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬
টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টার অহিংস হরতাল ডেকেছেন।
আমরা গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে তাদের সংহতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ
করছি। ডা. ইমরান বলেন, সকল পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতি অবরোধ কর্মসূচী
সফল করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা চান। তিনি সকল বাস মালিক-শ্রমিকগণের
প্রতি, সকল রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের প্রতি, সকল লঞ্চঘাটের
মালিক-শ্রমিকগণের প্রতি বিনীত আহবান জানাই, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে
ধারণ করে, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচীকে সফল করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিন।
একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনারা
নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসহযোগিতার মাধ্যমে, অহিংস থেকে আমাদের কর্মসূচী
বাস্তবায়নে সহায়তা করুন। সারাদেশের সকল একাত্তরে আমরা সবাই একসঙ্গে হয়ে
যেমন পরাস্ত করেছিলাম পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনীকে, আজও আমরা সকলে
একসাথে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিকে
সোচ্চার করার জন্য কাজ করবো। গণজাগরণ মঞ্চের মূলশক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বিশ্বাসী সারা পৃথিবীর সকল বাঙালি। এই দুর্বার শক্তিই আমাদের সংগ্রামের
অনুপ্রেরণা। ডা. ইমরান বলেন, আমাদের সংগ্রাম যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ
শাস্তির দাবির সংগ্রাম, আমাদের সংগ্রাম জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবির
সংগ্রাম। এ সংগ্রামে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
No comments