রোহিঙ্গা সমস্যা-মিয়ানমারের হাতেই সমাধান

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর নিদারুণ উদ্বেগের। ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গারা আবারও সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নিষ্ঠুরতার অসহায় শিকার। হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া_ কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না।


এ অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে, কয়েকদিন ধরেই এমন সংবাদ দিয়ে চলেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। বাংলাদেশের জন্য এখন উভয় সংকট_ একদিকে মিয়ানমারের শাসকদের সাম্প্রদায়িক কূটকৌশলের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আশ্রয় প্রার্থীদের বিমুখ না করার আহ্বান, অন্যদিকে নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামার শঙ্কা। নিকট ও দূর অতীতে মিয়ানমারে নিপীড়নের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আলোচনার মাধ্যমে তাদের একটি অংশকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হলেও টেকনাফসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা যেন রোহিঙ্গা শরণার্থীতে গিজগিজ করছে। তাদের কারণে বহুবিধ সমস্যায় পড়ছে বাংলাদেশ। অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দিয়ে দালালের মাধ্যমে এ দেশের পাসপোর্ট ও অন্যান্য পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে কাজের জন্য গিয়ে অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তাদের এমন আচরণে এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারের জন্যও ঝুঁকি এবং কখনও কখনও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এমনকি শ্রমবাজার হারানোর শঙ্কাও দেখা দেয় । এমন প্রেক্ষাপটে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রবেশ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। মানবিক বিবেচনা অবশ্যই গুরুত্বপূূর্ণ। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের মুখে লাখ লাখ বাঙালি ভারতে আশ্রয় প্রার্থনার পর ভারত সরকারের সদয় মনোভাবের দৃষ্টান্ত অনেকেই এখন টেনে আনছেন এবং তাতে হয়তো যুক্তিও রয়েছে। কিন্তু দুই সময়ের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা শরণার্থীদের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। তদুপরি যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে প্রবেশ করেছে, তারা আমাদের দেশের জন্য বহুবিধ সমস্যা তৈরি করছে এবং একটি অংশ তো জঙ্গিবাদী তৎপরতার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত রয়েছে বলে সুুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। রামু, টেকনাফ ও উখিয়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি সাম্প্র্রতিক সহিংসতার ঘটনার পেছনে এক শ্রেণীর রোহিঙ্গা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে ওই এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার শঙ্কা অমূলক নয়। সঙ্গত কারণেই স্থানীয় অধিবাসীরা রোহিঙ্গাদের পুশব্যাকের পদক্ষেপ সমর্থন করছে। আমরা আশা করব, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্কতামূলক অবস্থান বজায় রাখবে এবং অবৈধভাবে কাউকেই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে দেবে না। একই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করাও গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা পরিকল্পিত বলেই ধারণা করা হয়। এটা রোধ করতে হলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ওপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের দিক থেকে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। তারা নিজ দেশের জনগণের একটি অংশের ওপর নির্যাতন বন্ধেই কেবল ব্যর্থ হচ্ছে না, তাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশেও বাধ্য করছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ভারত, চীন ও অন্যান্য প্রভাবশালী দেশের কাছে এ বাস্তবতা তুলে ধরায় আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও সক্রিয় হবে, এটাই কাম্য। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ নয় বরং মিয়ানমারেরই সৃষ্টি এবং এর সমাধান তাদেরই করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.