শেষ পর্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপিত

যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার দেশব্যাপী উদ্যাপিত হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। তবে দেশের কয়েকটি এলাকায় ফানুস না উড়িয়ে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে।


সম্প্রতি রামুসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দিরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় এবারের পূর্ণিমায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের আনন্দ উদ্যাপন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার হস্তক্ষেপে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা।
গতকাল রাজধানীর কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে ‘প্রবারণা পূর্ণিমার তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উড়িয়ে বৌদ্ধসমাজ হাজার বছরের বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। এই ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি উৎসাহিত হতো। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের বৌদ্ধসমাজ সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শুদ্ধানন্দ মহাথেরো।
এ ছাড়া বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের উদ্যোগে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার, মিরপুরে শাক্য মুনি বৌদ্ধবিহারসহ দেশের নানা অঞ্চলের বৌদ্ধমন্দিরে চীবর দান, পূজা, শীল গ্রহণ, ফানুস ওড়ানোসহ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
গত রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপে প্রবারণা পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রবারণা সংহতি সমাবেশ, হাজার দীপ প্রজ্বালন ও ফানুস ওড়ানোতে অংশ নেন শিল্পমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের স্লোগান ছিল, ‘প্রবারণার আলোয় দূর হয়ে যাক সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আঁধার’।
বৌদ্ধ ধর্মমতে, তথাগত বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে তিন মাস মাতৃ দেবীকে ধর্মের কথা শোনানোর পর প্রবারণা পূর্ণিমায় সাংকাশ্য নামের নগরে অবতরণ করেন। মানুষের কল্যাণে ধর্ম প্রচারের জন্য বুদ্ধ তাঁর ভিক্ষু সংঘকে নির্দেশ দেন। প্রবারণা পূর্ণিমার পরের দিন থেকে বিভিন্ন বিহারে মাসব্যাপী পালিত হয় কঠিন চীবর দান উৎসব।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরসহ বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করার প্রতিবাদে ৩৬টি রাখাইনপাড়ায় ঢিলেঢালাভাবে এ উৎসব পালন করা হচ্ছে। কলাপাড়া রাখাইন সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি উসুয়ে হাওলাদার বলেন, ‘উৎসব পালনের জন্য মনের অবস্থা আমাদের মোটেও নেই।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার জানান, কক্সবাজারের রামুতে গতকাল প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে বৌদ্ধরা আকাশে ওড়াননি রংবেরঙের ফানুস। বাঁকখালী নদীতে ভাসাননি স্বর্গের কোনো জাহাজ। সকাল সাতটায় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ সত্যপ্রিয় মহাথেরোর সভাপতিত্বে ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা দুইটায় রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহার থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। বিকেল চারটায় সীমা বিহারে হাজারো মোমবাতি প্রজ্বালন, সন্ধ্যায় শ্রীকুলের লালচিং বৌদ্ধমন্দিরে প্রতীকী ফানুস উড্ডয়ন ও মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন এবং সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের চৌমুহনী চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হয়। রামু বৌদ্ধ যুব পরিষদ দিনব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে। পরিষদের আহ্বায়ক রজত বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা মন্দিরে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও শোভাযাত্রা করেছি।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সন্ধ্যা নামতেই একসঙ্গে জ্বলে ওঠে কয়েক শ মোমবাতি। কাছেই আকাশে তখন উড়তে শুরু করে ফানুস। গতকাল প্রবারণার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি জ্বেলে জানানো হয় সম্প্রীতির আহ্বান। ‘নাগরিক অঙ্গীকার’-এর এই আয়োজনে অংশ নেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজন ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ স্লোগান সামনে রেখে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী।

No comments

Powered by Blogger.