ক্ষমতাহীন শিক্ষকসমাজ ও বর্বরতা by ড. নিয়াজ আহম্মেদ
যোগ্যতার বলে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ না পাওয়ায় বরিশালের উজিরপুর উপজেলার এক স্কুলশিক্ষকের গলায় জুতার মালা দিলেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় দলবল নিয়ে ওই শিক্ষককে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই সাধারণ সম্পাদক অফিস সহকারী পদে বরিশাল জিলা স্কুলে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৫তম স্থান অধিকার করায় এবং নিয়োগ না পাওয়ার রেশ ধরে এমন কাণ্ড করেছেন বলে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনাটি আরো বেদনাদায়ক। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় শ্রেণীকক্ষে ঢুকে একজন শিক্ষিকাকে লাঠিপেটা করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কয়েকজন সদস্য। চম্পা খানম মেধার ভিত্তিতে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেলেও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। ইতিমধ্যে তিনি তিন হাজার টাকা ঘুষও দেন। কিন্তু পুরো টাকা না দিতে পারায় তাঁকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। এমনকি শিক্ষিকাকে মারধরের প্রতিবাদ করায় তাঁরা শিক্ষার্থীদেরও মারধর করেন।
শিক্ষকদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা আমরা প্রায়ই লক্ষ করি। উলি্লখিত ঘটনা দুটি সাম্প্রতিক সময়ের। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে বিধায় আমরা এখন আর অবাক হই না। কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে, আমরা অপমানিত হই, আমরা প্রতিবাদ করি ও ধিক্কার জানাই এ ধরনের ঘটনায়। তবু বন্ধ হয় না শিক্ষকদের প্রতি বর্বরতা ও নির্যাতনের মাত্রা। অথচ আমরা সবাই কমবেশি শিক্ষকদের কাছে জ্ঞান অর্জন করেছি। শিক্ষক মানেই সর্বজনশ্রদ্ধেয়, মানুষ গড়ার কারিগর। তিনি ছাত্রদের সঠিকভাবে মানুষ করেন বিধায় কেউ চিকিৎসক আর কেউ বা প্রকৌশলী হন। এর বিনিময়ে শিক্ষক কখনো কিছু চান না। সুন্দরভাবে জীবনযাপন করার মতো বেতনও আমাদের দেশের শিক্ষকদের দেওয়া হয় না। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সম্মান; কিন্তু আমরা তাঁদের তা-ও দিতে জানি না। গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিই কিংবা শিক্ষিকাকে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে মারধর করি। আমরা হয়তো তৃপ্তি পাই, নিজেদের ক্ষমতাধর ভাবি; কিন্তু এ রকম ক্ষমতাধর ভাবা নিজের জন্য, সমাজের জন্য এমনকি রাষ্ট্রের জন্য কতটুকু সম্মানের। আমরা কি ভেবে দেখি, যিনি আজকে ক্ষমতার মোহে এমনটি করছেন তাঁর ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। একদিন হয়তো তাঁর এমন ক্ষমতা থাকবে না। কিন্তু শিক্ষকরা মেধা ও কলমের জোরে অধিক বেশি ক্ষমতাশালী। তাঁর ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী নয় বরং স্থায়ী। তবে এটিও ঠিক, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় নীতি ও কাঠামোয় তাঁরা নিতান্তই ক্ষমতাহীন।
ক্ষমতাহীন বিধায় শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে ও শ্রেণীকক্ষের বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমরা একদিকে যেমন দেখি শ্রেণীকক্ষে প্রশাসনের লোক দ্বারা চড়থাপ্পড় মারার ঘটনা, অন্যদিকে রাস্তায় পুলিশের নির্যাতনের শিকার। বেশ কয়েক মাস আগে রাজপথে আন্দোলনের সময় একজন শিক্ষককে মৃত্যুর মতো করুণ পরিণতিও ভোগ করতে হয়েছিল। শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটা নৈমিত্তিক ঘটনা। উজিরপুরের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিংবা লোহাগড়ার স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের দোষ দিয়ে লাভ কী? তাঁরা এ গ্রহেরই মানুষ। তাঁরা যখন দেখে প্রশাসনের লোকজন ও পুলিশ বাহিনী শিক্ষকদের মারধর করে কিন্তু তাদের কোনো বিচার হয় না, তখন নিজেরা একই ধরনের কাজ করতে উৎসাহী হয়। তাদের সাহস বেড়ে যায়। পুলিশও প্রশাসনের লোকজনের মতো ক্ষমতাধর ভাবা শুরু করে।
শিক্ষকদের ক্ষমতাহীন ভাবার কারণ হলো_রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ক্ষমতায় তাঁরা সরাসরি সম্পৃক্ত নন। এ কারণে শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার প্রতি কোনো সরকারই পুরোপুরি আন্তরিক নয়। সহজভাবে বলতে গেলে, রাষ্ট্র পরিচালনায় শাসকগোষ্ঠী মনে করে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী তাদের অতীব প্রয়োজন। এ জন্য তাদের খুশি করার যত চেষ্টা তা সরকার করে থাকে। সচিব থেকে সিনিয়র সচিব, থানার দ্বিতীয় শ্রেণীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) পদবি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীতকরণ কিংবা সাংবাদিকদের মহার্ঘ ভাতা কোনোটাই বাদ যায় না। তারা চাইলেও পায় আবার না চাইলেও তাদের খুশি করার জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষকরা আন্দোলন করার পরও তাঁদের দাবি পূরণে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় না। এই দেওয়া হবে, আগামী বাজেটে দেওয়া হবে ইত্যাদি প্রলোভন দেখানো হয়। বিরোধী দলে থাকার সময় শহীদ মিনারে শরবত পান করিয়ে ঘোষণা করা হয় ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আপনাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হবে। শিক্ষকরা ফাঁদে পড়ে হয়তো ভোট দিয়ে তাদের ক্ষমতাসীন করেন, কিন্তু চাকরি আর জাতীয়করণ করা হয় না। নির্র্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, শিক্ষকদের জন্য পৃথক স্কেল দেওয়া হবে, কিন্তু পৃথক স্কেল তো দূরের কথা সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্য বেতন-ভাতাও শিক্ষকরা পান না। আমরা মুখে শিক্ষকদের অবদানের কথা স্বীকার করলেও বাস্তবে তাঁদের জন্য কিছু করার তাগিদ বোধ করছি কি না সন্দেহ। ফলে আর্থিক ও সামাজিক দিক দিয়ে ক্ষমতাহীন এই মানুষগুলোর কাছ থেকে সুযোগ কমবেশি আমরা সবাই নিচ্ছি। আমরা ধরেই নিই, শিক্ষকদের আবার কী ক্ষমতা? তাই তো পুলিশ ও প্রশাসনের লোক থেকে শুরু করে এখন রাজনৈতিক দলের লোক দ্বারাও শিক্ষকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অবশ্য এরা পুলিশ কিংবা প্রশাসনের লোকজনের তুলনায় কম কী? কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদের চেয়ে ঢের বেশিও।
সমাজের অরাজকতা, নৈরাজ্য, বর্বরতা, নির্যাতন, অন্যায় বন্ধ করার দুটো পন্থা রয়েছে। একটি হলো সমাজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের পন্থা যেখানে মানুষকে সঠিক শিক্ষা ও নির্দেশনার মাধ্যমে এমনভাবে গড়ে তোলা, যাতে সে অন্যায় আচরণ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। এ কাজটি আমরা সঠিকভাবে করতে পারি না বিধায় অনেকেই অন্যায় আচরণ করে বসে। দ্বিতীয় পন্থাটি হলো, আইনের শাসন কার্যকর করা অর্থাৎ অপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করা। শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অপরাধীর ভেতর অনুশোচনা কাজ করবে এবং অপরাধ আচরণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারি না বিধায় তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। এ দৃষ্টান্ত অন্যদের একই কাজ করতে উৎসাহিত করে। আর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের ঘাটতি তো রয়েই যায়। প্রতিটি ঘটনা ঘটার পর পুলিশ কিছুটা তৎপর হয়ে কাউকে কাউকে আটকও করে, কিন্তু এখানেই শেষ। আবার একটি ঘটনার জন্ম হয়। তবু আমরা সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আমরা চাই, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটুক।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
ই-মেইল-neayahmed-2002@yahoo.com
শিক্ষকদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা আমরা প্রায়ই লক্ষ করি। উলি্লখিত ঘটনা দুটি সাম্প্রতিক সময়ের। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে বিধায় আমরা এখন আর অবাক হই না। কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে, আমরা অপমানিত হই, আমরা প্রতিবাদ করি ও ধিক্কার জানাই এ ধরনের ঘটনায়। তবু বন্ধ হয় না শিক্ষকদের প্রতি বর্বরতা ও নির্যাতনের মাত্রা। অথচ আমরা সবাই কমবেশি শিক্ষকদের কাছে জ্ঞান অর্জন করেছি। শিক্ষক মানেই সর্বজনশ্রদ্ধেয়, মানুষ গড়ার কারিগর। তিনি ছাত্রদের সঠিকভাবে মানুষ করেন বিধায় কেউ চিকিৎসক আর কেউ বা প্রকৌশলী হন। এর বিনিময়ে শিক্ষক কখনো কিছু চান না। সুন্দরভাবে জীবনযাপন করার মতো বেতনও আমাদের দেশের শিক্ষকদের দেওয়া হয় না। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সম্মান; কিন্তু আমরা তাঁদের তা-ও দিতে জানি না। গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিই কিংবা শিক্ষিকাকে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে মারধর করি। আমরা হয়তো তৃপ্তি পাই, নিজেদের ক্ষমতাধর ভাবি; কিন্তু এ রকম ক্ষমতাধর ভাবা নিজের জন্য, সমাজের জন্য এমনকি রাষ্ট্রের জন্য কতটুকু সম্মানের। আমরা কি ভেবে দেখি, যিনি আজকে ক্ষমতার মোহে এমনটি করছেন তাঁর ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। একদিন হয়তো তাঁর এমন ক্ষমতা থাকবে না। কিন্তু শিক্ষকরা মেধা ও কলমের জোরে অধিক বেশি ক্ষমতাশালী। তাঁর ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী নয় বরং স্থায়ী। তবে এটিও ঠিক, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় নীতি ও কাঠামোয় তাঁরা নিতান্তই ক্ষমতাহীন।
ক্ষমতাহীন বিধায় শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে ও শ্রেণীকক্ষের বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমরা একদিকে যেমন দেখি শ্রেণীকক্ষে প্রশাসনের লোক দ্বারা চড়থাপ্পড় মারার ঘটনা, অন্যদিকে রাস্তায় পুলিশের নির্যাতনের শিকার। বেশ কয়েক মাস আগে রাজপথে আন্দোলনের সময় একজন শিক্ষককে মৃত্যুর মতো করুণ পরিণতিও ভোগ করতে হয়েছিল। শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটা নৈমিত্তিক ঘটনা। উজিরপুরের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিংবা লোহাগড়ার স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের দোষ দিয়ে লাভ কী? তাঁরা এ গ্রহেরই মানুষ। তাঁরা যখন দেখে প্রশাসনের লোকজন ও পুলিশ বাহিনী শিক্ষকদের মারধর করে কিন্তু তাদের কোনো বিচার হয় না, তখন নিজেরা একই ধরনের কাজ করতে উৎসাহী হয়। তাদের সাহস বেড়ে যায়। পুলিশও প্রশাসনের লোকজনের মতো ক্ষমতাধর ভাবা শুরু করে।
শিক্ষকদের ক্ষমতাহীন ভাবার কারণ হলো_রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ক্ষমতায় তাঁরা সরাসরি সম্পৃক্ত নন। এ কারণে শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার প্রতি কোনো সরকারই পুরোপুরি আন্তরিক নয়। সহজভাবে বলতে গেলে, রাষ্ট্র পরিচালনায় শাসকগোষ্ঠী মনে করে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী তাদের অতীব প্রয়োজন। এ জন্য তাদের খুশি করার যত চেষ্টা তা সরকার করে থাকে। সচিব থেকে সিনিয়র সচিব, থানার দ্বিতীয় শ্রেণীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) পদবি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীতকরণ কিংবা সাংবাদিকদের মহার্ঘ ভাতা কোনোটাই বাদ যায় না। তারা চাইলেও পায় আবার না চাইলেও তাদের খুশি করার জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষকরা আন্দোলন করার পরও তাঁদের দাবি পূরণে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় না। এই দেওয়া হবে, আগামী বাজেটে দেওয়া হবে ইত্যাদি প্রলোভন দেখানো হয়। বিরোধী দলে থাকার সময় শহীদ মিনারে শরবত পান করিয়ে ঘোষণা করা হয় ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আপনাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হবে। শিক্ষকরা ফাঁদে পড়ে হয়তো ভোট দিয়ে তাদের ক্ষমতাসীন করেন, কিন্তু চাকরি আর জাতীয়করণ করা হয় না। নির্র্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, শিক্ষকদের জন্য পৃথক স্কেল দেওয়া হবে, কিন্তু পৃথক স্কেল তো দূরের কথা সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্য বেতন-ভাতাও শিক্ষকরা পান না। আমরা মুখে শিক্ষকদের অবদানের কথা স্বীকার করলেও বাস্তবে তাঁদের জন্য কিছু করার তাগিদ বোধ করছি কি না সন্দেহ। ফলে আর্থিক ও সামাজিক দিক দিয়ে ক্ষমতাহীন এই মানুষগুলোর কাছ থেকে সুযোগ কমবেশি আমরা সবাই নিচ্ছি। আমরা ধরেই নিই, শিক্ষকদের আবার কী ক্ষমতা? তাই তো পুলিশ ও প্রশাসনের লোক থেকে শুরু করে এখন রাজনৈতিক দলের লোক দ্বারাও শিক্ষকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অবশ্য এরা পুলিশ কিংবা প্রশাসনের লোকজনের তুলনায় কম কী? কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদের চেয়ে ঢের বেশিও।
সমাজের অরাজকতা, নৈরাজ্য, বর্বরতা, নির্যাতন, অন্যায় বন্ধ করার দুটো পন্থা রয়েছে। একটি হলো সমাজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের পন্থা যেখানে মানুষকে সঠিক শিক্ষা ও নির্দেশনার মাধ্যমে এমনভাবে গড়ে তোলা, যাতে সে অন্যায় আচরণ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। এ কাজটি আমরা সঠিকভাবে করতে পারি না বিধায় অনেকেই অন্যায় আচরণ করে বসে। দ্বিতীয় পন্থাটি হলো, আইনের শাসন কার্যকর করা অর্থাৎ অপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করা। শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অপরাধীর ভেতর অনুশোচনা কাজ করবে এবং অপরাধ আচরণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারি না বিধায় তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। এ দৃষ্টান্ত অন্যদের একই কাজ করতে উৎসাহিত করে। আর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের ঘাটতি তো রয়েই যায়। প্রতিটি ঘটনা ঘটার পর পুলিশ কিছুটা তৎপর হয়ে কাউকে কাউকে আটকও করে, কিন্তু এখানেই শেষ। আবার একটি ঘটনার জন্ম হয়। তবু আমরা সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আমরা চাই, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটুক।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
ই-মেইল-neayahmed-2002@yahoo.com
No comments