জ্বালানি সম্পদ- মার্কিন নির্বাচন ও জ্বালানি-বিতর্ক by মুশফিকুর রহমান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী বারাক ওবামা ও মিট রমনিকে বিভিন্ন ইস্যুতে নিজ নিজ অবস্থান স্পষ্ট করতে হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৬ অক্টোবর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়
প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে জ্বালানি নীতি, জ্বালানি সম্পদ আহরণ ও তার ব্যবহার বিষয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থীদ্বয় তাঁদের অবস্থান অনেকটাই তুলে ধরেছেন। মতভিন্নতা থাকলেও উভয় প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা, গ্যাস ও তেলসম্পদ ব্যবহারের দৃঢ় সমর্থক হিসেবে নিজেদের প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। ওবামা প্রশাসন ৯০ মিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে পরিবেশসম্মত জ্বালানি (গ্রিন এনার্জি) ব্যবহার উৎসাহিত করার চেষ্টার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানো এবং নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ বাড়ানোর কৃতিত্ব দাবি করেছেন। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন যে তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, সেটিও জোর দিয়ে বলেছেন। মিট রমনি অবশ্য অভিযোগ করেছেন, ওবামার প্রশাসন পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ) দেশের কয়লাশিল্প ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য নতুন ও কঠোর পরিবেশ মানমাত্রা আরোপ করে এই শিল্পকে ধ্বংস করতে উদ্যোগী হয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে, গত মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে ভবিষ্যতে নতুন যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে, সেগুলোর জন্য প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ এক হাজার পাউন্ড গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এ নিষেধাজ্ঞার ফলে নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন আপাতত বন্ধ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কেননা, এখনো বাণিজ্যিকভাবে প্রয়োগ-উপযোগী কোনো প্রযুক্তি নেই, যা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক হাজার পাউন্ডে সীমিত করবে। সাধারণভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক হাজার ৮০০ পাউন্ড, আর প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৮০০ থেকে ৮৫০ পাউন্ড গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে। কয়লাশিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, ওবামা প্রশাসন গ্যাসশিল্পের নতুন প্রযুক্তি সম্ভাবনা ও সরবরাহ পেয়ে কয়লাশিল্পের প্রতি বৈরী অবস্থান নিয়েছে। সংগত কারণেই কয়লাসমৃদ্ধ রাজ্যগুলোর ভোটারদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কয়লাশিল্পের জন্য প্রতিকূল নতুন পরিবেশ আইন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এবং রিপাবলিকান প্রার্থী রমনি সেই সুযোগ ব্যবহার করতে চাইছেন।
উভয় প্রার্থী বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি হ্রাস করে দেশের জ্বালানি সম্পদ আহরণ, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পক্ষে প্রচারণা জোরদার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০৩৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎস (পারমাণবিক শক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, দক্ষ প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ও কয়লা ব্যবহারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্জিত) থেকে উৎপাদন পরিকল্পনা ইতিপূর্বে ঘোষণা করেছেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থী মিট রমনি জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জনের কথা বলছেন। তিনি শিল্পকে ব্যাহত না করে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বলছেন। সমালোচকেরা অবশ্য তাঁর জ্বালানি স্বনির্ভরতার অর্থ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন সৌর, বায়ুশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য ভর্তুকি ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা হ্রাস করার প্রচারণা হিসেবে। মিট রমনি স্পষ্টতই বারাক ওবামার পরিবেশসম্মত জ্বালানি বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিকল্পনার বদলে তেল, গ্যাস, কয়লা ও পরমাণু শক্তির বিকাশের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের পক্ষে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অব্যাহতভাবে জ্বালানির টেকসই সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মাথাপ্রতি জ্বালানি ব্যবহার সূচকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো পৃথিবীতে শীর্ষে। কয়লার ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রযুক্তিতে আহরিত ও তুলনামূলক সস্তা বিপুল পরিমাণ জ্বালানি গ্যাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খানিক পিছিয়ে পড়লেও তার ব্যবহার নগণ্য নয়। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ওপর নির্ভরতা যেখানে ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ, ২০১১ সালে হ্রাস পেয়ে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ১৩ শতাংশ বিদ্যমান কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ) আশা করছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেবে। সে সময় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে প্রায় ৭ শতাংশ বিদ্যুতের জোগান আসবে। কয়লাসমৃদ্ধ রাজ্যগুলোর ভোটাররা আশঙ্কার সঙ্গে খেয়াল করছেন, ইতিমধ্যে কয়লাখনি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কর্মী ছাঁটাই ও প্ল্যান্ট সংকোচন শুরু করেছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রণীত নতুন পরিবেশ আইনকে এ জন্য অনেকে দায়ী করলেও বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে জ্বালানির মূল্য বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে কয়লার পিছিয়ে পড়াকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। খেয়াল করার বিষয়, নতুন দূষণ নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগ কয়লার বদলে সস্তা প্রাকৃতিক গ্যাসকে জনপ্রিয় করছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে নয়। যদিও প্রাকৃতিক গ্যাস তুলনামূলকভাবে কম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে, কিন্তু তা নবায়নযোগ্য জ্বালানির সঙ্গে তুলনীয় নয়। সংগত কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এক অর্থে বিশ্ববাসীর জন্যও বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ ও প্রকৃতির সঙ্গে বিশ্বের জ্বালানি বাজারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা বিলক্ষণ জানেন যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে ব্যয়বহুল। অনেক ভোটদাতা এও জানেন, ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানি, সম্প্রতি পর্যায়ক্রমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, তাদের মাসান্তে বিদ্যুৎ বিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার উৎসাহিত করতে জার্মানি ভর্তুকির টাকার অনেকটুকু ভোক্তাদের ওপর চাপিয়েছে। অতি সম্প্রতি জার্মান বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো ঘোষণা করেছে, ব্যবহূত প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) নবায়নযোগ্য উৎসের বিদ্যুতের জন্য ২০১৩ সালে ভোক্তাদের ০.০৫২৭৭ ইউরো (প্রায় ৫.৬২ টাকা) সারচার্জ দিতে হবে। এখন অবধি দেয় সারচার্জ প্রতি ইউনিটে ০.০৩৫৯২ ইউরো (প্রায় ৩.৮৩ টাকা)। জার্মানিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য এখন প্রায় ২৬ দশমিক ৭৮ টাকা গ্রাহককে ব্যয় করতে হয়। নতুন সারচার্জ বিদ্যুতের মূল্য আরও ৪৭ শতাংশ বাড়াবে। জার্মানির গড় মাসিক গৃহস্থালি বিদ্যুতের মূল্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (ডেনমার্কে সর্বোচ্চ) এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উৎসাহিত করতে জার্মানদের উচ্চ হারে ট্যাক্স গুনতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনপূর্ব বিতর্ক ব্যাপক জনপ্রিয় প্রচারণা উপাদান এবং সাময়িক হলেও প্রার্থীর জনপ্রিয়তা সূচকে তার প্রভাব স্পষ্ট করে। তবে নির্বাচনপূর্ব বিতর্কে জয়ী হওয়া নির্বাচনের জয়ের নিশ্চয়তা নয়। জনমত সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, আগামী ৬ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন খুবই জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
ড. মুশফিকুর রহমান: খনি প্রকৌশলী এবং জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক।
উভয় প্রার্থী বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি হ্রাস করে দেশের জ্বালানি সম্পদ আহরণ, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পক্ষে প্রচারণা জোরদার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০৩৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎস (পারমাণবিক শক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, দক্ষ প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ও কয়লা ব্যবহারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্জিত) থেকে উৎপাদন পরিকল্পনা ইতিপূর্বে ঘোষণা করেছেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থী মিট রমনি জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জনের কথা বলছেন। তিনি শিল্পকে ব্যাহত না করে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বলছেন। সমালোচকেরা অবশ্য তাঁর জ্বালানি স্বনির্ভরতার অর্থ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন সৌর, বায়ুশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য ভর্তুকি ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা হ্রাস করার প্রচারণা হিসেবে। মিট রমনি স্পষ্টতই বারাক ওবামার পরিবেশসম্মত জ্বালানি বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিকল্পনার বদলে তেল, গ্যাস, কয়লা ও পরমাণু শক্তির বিকাশের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের পক্ষে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অব্যাহতভাবে জ্বালানির টেকসই সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মাথাপ্রতি জ্বালানি ব্যবহার সূচকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো পৃথিবীতে শীর্ষে। কয়লার ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রযুক্তিতে আহরিত ও তুলনামূলক সস্তা বিপুল পরিমাণ জ্বালানি গ্যাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খানিক পিছিয়ে পড়লেও তার ব্যবহার নগণ্য নয়। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ওপর নির্ভরতা যেখানে ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ, ২০১১ সালে হ্রাস পেয়ে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ১৩ শতাংশ বিদ্যমান কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ) আশা করছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেবে। সে সময় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে প্রায় ৭ শতাংশ বিদ্যুতের জোগান আসবে। কয়লাসমৃদ্ধ রাজ্যগুলোর ভোটাররা আশঙ্কার সঙ্গে খেয়াল করছেন, ইতিমধ্যে কয়লাখনি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কর্মী ছাঁটাই ও প্ল্যান্ট সংকোচন শুরু করেছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রণীত নতুন পরিবেশ আইনকে এ জন্য অনেকে দায়ী করলেও বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে জ্বালানির মূল্য বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে কয়লার পিছিয়ে পড়াকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। খেয়াল করার বিষয়, নতুন দূষণ নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগ কয়লার বদলে সস্তা প্রাকৃতিক গ্যাসকে জনপ্রিয় করছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে নয়। যদিও প্রাকৃতিক গ্যাস তুলনামূলকভাবে কম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে, কিন্তু তা নবায়নযোগ্য জ্বালানির সঙ্গে তুলনীয় নয়। সংগত কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এক অর্থে বিশ্ববাসীর জন্যও বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ ও প্রকৃতির সঙ্গে বিশ্বের জ্বালানি বাজারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা বিলক্ষণ জানেন যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে ব্যয়বহুল। অনেক ভোটদাতা এও জানেন, ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানি, সম্প্রতি পর্যায়ক্রমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, তাদের মাসান্তে বিদ্যুৎ বিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার উৎসাহিত করতে জার্মানি ভর্তুকির টাকার অনেকটুকু ভোক্তাদের ওপর চাপিয়েছে। অতি সম্প্রতি জার্মান বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো ঘোষণা করেছে, ব্যবহূত প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) নবায়নযোগ্য উৎসের বিদ্যুতের জন্য ২০১৩ সালে ভোক্তাদের ০.০৫২৭৭ ইউরো (প্রায় ৫.৬২ টাকা) সারচার্জ দিতে হবে। এখন অবধি দেয় সারচার্জ প্রতি ইউনিটে ০.০৩৫৯২ ইউরো (প্রায় ৩.৮৩ টাকা)। জার্মানিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য এখন প্রায় ২৬ দশমিক ৭৮ টাকা গ্রাহককে ব্যয় করতে হয়। নতুন সারচার্জ বিদ্যুতের মূল্য আরও ৪৭ শতাংশ বাড়াবে। জার্মানির গড় মাসিক গৃহস্থালি বিদ্যুতের মূল্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (ডেনমার্কে সর্বোচ্চ) এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উৎসাহিত করতে জার্মানদের উচ্চ হারে ট্যাক্স গুনতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনপূর্ব বিতর্ক ব্যাপক জনপ্রিয় প্রচারণা উপাদান এবং সাময়িক হলেও প্রার্থীর জনপ্রিয়তা সূচকে তার প্রভাব স্পষ্ট করে। তবে নির্বাচনপূর্ব বিতর্কে জয়ী হওয়া নির্বাচনের জয়ের নিশ্চয়তা নয়। জনমত সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, আগামী ৬ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন খুবই জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
ড. মুশফিকুর রহমান: খনি প্রকৌশলী এবং জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক।
No comments