ভারত :মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাসকাব্য by এম জে আকবর
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই_ এই আপ্তবাক্যকে ধরে নিয়েও বলা যায়, মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় সর্বশেষ পুনর্বিন্যাসে রাহুল গান্ধী যোগ দিলে আমি হতবিহ্বল না হলেও আশ্চর্যান্বিত হতাম। একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে নেহরু পরিবারের কেউ (এখন নেহরু-গান্ধী ডাইনেস্টি নামে পরিচিত) কখনও আঞ্চলিক পর্যায়ে অথবা অন্য কোনো নেতার নেতৃত্বাধীন সরকারে কোনো পদ অলঙ্কৃত করেননি।
১৯৪৭ সালে যে ভারত স্বাধীন হয়ে যাবে সেটা ১৯৩৭ সালে বোঝাই যায়নি। তৎকালীন সময়ের যুক্ত প্রদেশের (ব্যাপক অর্থে উত্তর প্রদেশ) প্রখ্যাত নেতা জওয়াহেরলাল নেহরু ওই প্রদেশের সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা মনেই আনেননি। এটা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব অর্জনের পথকে সুগম করতে পারে সেটাও তিনি চিন্তা করেননি। আসলে দিলি্লর মসনদের জন্য যতদিন অপেক্ষা করতে হয় বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, তাও সই_ এই একটা ভাবনা থেকে থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হলেন ইন্দিরা গান্ধী। মিসেস গান্ধী লাল বাহাদুর মন্ত্রিসভার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হয়েছিলেন। অবশ্য বেশিদিন তিনি ওই পদে ছিলেন না। শিগগিরই তিনি মাঝারি ওজনের মন্ত্রিত্ব পদ ছেড়েছিলেন। আসলে তিনি আরও উচ্চপদের জন্যই জন্মেছিলেন কিনা।
সোনিয়া গান্ধী ২০০৪ সালে প্রধামন্ত্রিত্ব গ্রহণ না করার পর স্বরাষ্ট্র বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিপরীত দিক থেকে বলতে গেলে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে তখন মনমোহন সিং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেই খুশি থাকতেন। এখন অবশ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নেহরু পরিবারের কোনো উত্তরাধিকারী নেই। জওয়াহেরলাল নেহরু জীবিত থাকা অবস্থায় ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি কেরালায় প্রথম বাম জোট সরকারকে বাতিল করা এবং ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের পর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু তিনি নেহরুর মন্ত্রিসভায় কোনো মন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেননি। এমনকি রাজীব গান্ধীও তার মার আসনে বসার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে তার মায়ের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার কথা ভাবেননি।
পারিবারিকভাবে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নতুবা বিরোধীদলীয় নেতা_ এই দুটি পদের বাইরে চিন্তা করার কথা নয়।
১৯৭৭ সালে রায়বেরেলি আসনে জিততে পারলে ইন্দিরা গান্ধী বিরোধীদলীয় নেতার আসন গ্রহণ করতেন। তিনি যখন পরে উপনির্বাচনে চিকমাগালুয়া থেকে বিজয়ী হলেন তখন বিচলিত (বা জড়বুদ্ধি) জনতা পার্টি বোকার মতো তাকে লোকসভার আসনে বসা ঠেকাতে গিয়ে বেহুদা সময়ক্ষেপণ করে। ১৯৮৯-৯১ পর্যন্ত সংসদে রাজীব গান্ধী বিরোধীদলীয় নেতার আসন অলঙ্কৃত করেন। আগামী সাধারণ নির্বাচনের পর রাহুল গান্ধী বিরোধী দলের আসনে বসলে তিনি অবধারিতভাবেই জনগণের সহানুভূতি এবং সরকার পদ্ধতির কারণে প্রকৃত প্রশিক্ষণও পেয়ে যাবেন।
'ওয়েবতত্ত্বের' ওপর কংগ্রেসের বড় আসক্তি। তারা মনে করে, কংগ্রেসকে ভোটাররা সহানুভূতির চোখে দেখে এবং তারা দলটিকে সংগঠনের অবস্থা ও আদর্শ দিয়ে বিচার করার পরিবর্তে স্থিতিশীল সরকারের প্রতীক মনে করে। তাই তারা বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো বা সময়ক্ষেপণ করতে রাজি নয়। এমন তো নয় যে, আদর্শগতভাবে সংগঠিত বাম দল বা বিজেপির কংগ্রেসের চেয়ে বেশি অনুগত সংগঠন বা নেতাকর্মী রয়েছে।
এটা যথার্থই যৌক্তিক হবে যে, রাহুল সামনের কমপক্ষে তিন দশক পর্যন্ত রাজনীতি নিয়ে ভাবতে পারেন। তাকে বিশেষভাবে সামনের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাজনীতির কথা ভাবতে হবে। সামনের উত্তাল দিনগুলোতে শুধু নেতার নেতৃত্বের দক্ষতা ও বিচক্ষণতারই পরীক্ষা হবে না, তরীটি কতটা টেকসই তারও যাচাই হবে।
এই মুহূর্তে কংগ্রেস পানি ছিটানোর যন্ত্রের মতো লিক করছে। যুব কংগ্রেস ভিত্তি শক্তিশালী করার মাধ্যমে রাহুল গান্ধী দলের অবস্থান ভালো করার যে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন তা অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে। ক্যাডাররা যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের করণীয় বুঝতে পারছে ততক্ষণ তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত।
জয় ও পরাজয় চক্রাকারে ঘোরে। ইউপিএ-২ সরকার ক্ষমতাটা চিরস্থায়ী ভাবার কারণেই তাদের অবস্থা এখন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। পরাজয়ের পর একটি দলকে ফের ঘুরে দাঁড়াতে হয়। দুটি কারণে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৭ সালে পরাজয়ের পরও কংগ্রেসকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন। দুটি কারণে এটা তার পক্ষে করা সম্ভব হয়েছিল। এর একটি হচ্ছে, গরিবদের সঙ্গে তার অতুলনীয় সম্পর্ক এবং অপরটি হচ্ছে, কংগ্রেস সাংগঠনিকভাবে তখনও নিঃশেষ হওয়ার পর্যায়ে চলে না যাওয়া। রাহুল গান্ধীর কাছে এই দুটি সুবিধার কোনোটিই নেই। সামনে কঠিন সময়, মন্ত্রিসভায় রদবদলে এ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না।
এম জে আকবর :ভারতীয় সাংবাদিক; খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
সোনিয়া গান্ধী ২০০৪ সালে প্রধামন্ত্রিত্ব গ্রহণ না করার পর স্বরাষ্ট্র বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিপরীত দিক থেকে বলতে গেলে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে তখন মনমোহন সিং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেই খুশি থাকতেন। এখন অবশ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নেহরু পরিবারের কোনো উত্তরাধিকারী নেই। জওয়াহেরলাল নেহরু জীবিত থাকা অবস্থায় ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি কেরালায় প্রথম বাম জোট সরকারকে বাতিল করা এবং ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের পর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু তিনি নেহরুর মন্ত্রিসভায় কোনো মন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেননি। এমনকি রাজীব গান্ধীও তার মার আসনে বসার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে তার মায়ের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার কথা ভাবেননি।
পারিবারিকভাবে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নতুবা বিরোধীদলীয় নেতা_ এই দুটি পদের বাইরে চিন্তা করার কথা নয়।
১৯৭৭ সালে রায়বেরেলি আসনে জিততে পারলে ইন্দিরা গান্ধী বিরোধীদলীয় নেতার আসন গ্রহণ করতেন। তিনি যখন পরে উপনির্বাচনে চিকমাগালুয়া থেকে বিজয়ী হলেন তখন বিচলিত (বা জড়বুদ্ধি) জনতা পার্টি বোকার মতো তাকে লোকসভার আসনে বসা ঠেকাতে গিয়ে বেহুদা সময়ক্ষেপণ করে। ১৯৮৯-৯১ পর্যন্ত সংসদে রাজীব গান্ধী বিরোধীদলীয় নেতার আসন অলঙ্কৃত করেন। আগামী সাধারণ নির্বাচনের পর রাহুল গান্ধী বিরোধী দলের আসনে বসলে তিনি অবধারিতভাবেই জনগণের সহানুভূতি এবং সরকার পদ্ধতির কারণে প্রকৃত প্রশিক্ষণও পেয়ে যাবেন।
'ওয়েবতত্ত্বের' ওপর কংগ্রেসের বড় আসক্তি। তারা মনে করে, কংগ্রেসকে ভোটাররা সহানুভূতির চোখে দেখে এবং তারা দলটিকে সংগঠনের অবস্থা ও আদর্শ দিয়ে বিচার করার পরিবর্তে স্থিতিশীল সরকারের প্রতীক মনে করে। তাই তারা বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো বা সময়ক্ষেপণ করতে রাজি নয়। এমন তো নয় যে, আদর্শগতভাবে সংগঠিত বাম দল বা বিজেপির কংগ্রেসের চেয়ে বেশি অনুগত সংগঠন বা নেতাকর্মী রয়েছে।
এটা যথার্থই যৌক্তিক হবে যে, রাহুল সামনের কমপক্ষে তিন দশক পর্যন্ত রাজনীতি নিয়ে ভাবতে পারেন। তাকে বিশেষভাবে সামনের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাজনীতির কথা ভাবতে হবে। সামনের উত্তাল দিনগুলোতে শুধু নেতার নেতৃত্বের দক্ষতা ও বিচক্ষণতারই পরীক্ষা হবে না, তরীটি কতটা টেকসই তারও যাচাই হবে।
এই মুহূর্তে কংগ্রেস পানি ছিটানোর যন্ত্রের মতো লিক করছে। যুব কংগ্রেস ভিত্তি শক্তিশালী করার মাধ্যমে রাহুল গান্ধী দলের অবস্থান ভালো করার যে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন তা অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে। ক্যাডাররা যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের করণীয় বুঝতে পারছে ততক্ষণ তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত।
জয় ও পরাজয় চক্রাকারে ঘোরে। ইউপিএ-২ সরকার ক্ষমতাটা চিরস্থায়ী ভাবার কারণেই তাদের অবস্থা এখন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। পরাজয়ের পর একটি দলকে ফের ঘুরে দাঁড়াতে হয়। দুটি কারণে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৭ সালে পরাজয়ের পরও কংগ্রেসকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন। দুটি কারণে এটা তার পক্ষে করা সম্ভব হয়েছিল। এর একটি হচ্ছে, গরিবদের সঙ্গে তার অতুলনীয় সম্পর্ক এবং অপরটি হচ্ছে, কংগ্রেস সাংগঠনিকভাবে তখনও নিঃশেষ হওয়ার পর্যায়ে চলে না যাওয়া। রাহুল গান্ধীর কাছে এই দুটি সুবিধার কোনোটিই নেই। সামনে কঠিন সময়, মন্ত্রিসভায় রদবদলে এ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না।
এম জে আকবর :ভারতীয় সাংবাদিক; খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments