টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশ্লেষণ- খালেদা জিয়ার কাছে ভারতের তিন প্রশ্ন
সপ্তাহব্যাপী ভারত সফরে এসেছেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এই সময়ে দ্রুত বাস্তব কিছু বিনিময় যে কেউ আশা করতেই পারেন। খালেদা জিয়ার এই সফর শুধু সৌজন্য সফর নয়, আরও বেশি কিছু অন্তত দুটি কারণে। প্রথমত, আগামী বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ওই নির্বাচনে জিতে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির ক্ষমতায় আসার বেশ সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেকগুলো কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। এই সুযোগ বিএনপি অবশ্যই কাজে লাগাতে চাইবে।
আর নয়াদিল্লির জন্য, বাংলাদেশের প্রতিটি পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টারই অংশ খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই আলোচনা। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হতে চলেছে, দিনে দিনে এমন বোঝাপড়াও মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো একটি রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি পক্ষপাত দেখাতে চাইবে না ভারত। নয়াদিল্লির নিজস্ব স্বার্থ বা পছন্দ-অপছন্দ অবশ্যই আছে। তবে তারা এটাও বোঝে যে, ঢাকার ক্ষমতায় কে থাকবে, তা তারা ঠিক করে দিতে পারে না। গত চার বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে, তা সত্ত্বেও আরও উন্নতির সুযোগ আছে। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তার পরও এই অগ্রগতি বজায় রাখতে চাইবে নয়াদিল্লি।
কাজেই খালেদা জিয়ার এই সফরে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ এবং দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। কিন্তু এসবের বাইরেও তিনটি বিষয় খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পরিষ্কার হতে চাইবে ভারত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার: বাংলাদেশে এটি বহুল বিতর্কিত রাজনৈতিক বিষয়, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হচ্ছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এই ব্যবস্থা গত বছর বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপি চাইছে, ওই ব্যবস্থা আবার চালু করা হোক, তা না হলে নির্বাচন বর্জনের হুমকিও তারা দিয়ে রেখেছে। যদিও সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলটি সুখকর ছিল না। সেনা-সমর্থিত ওই সরকারের সময় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল এবং তা স্থায়ী হয়েছিল প্রায় দুই বছর। আবারও সেই অবস্থার সৃষ্টি হলে তা হবে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য একটি সমস্যা। অন্যদিকে, বিএনপি যদি তাদের দাবিতে অনড় থাকে এবং নির্বাচন বর্জন করে, তা হলে পরবর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতার ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কাজেই এ বিষয়ে বিএনপি কী কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তা জানতে চাইবে ভারত। দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে তারা কি সত্যিই অনড় থাকবে? আরেক দফায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের কোনো পক্ষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের জন্য অন্যতম অর্থনৈতিক সুযোগ ট্রানজিট। ভারত তার নিজের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল ও বাংলাদেশ-ভুটান ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতকে একই সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি। ভারত শুধু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মালামাল পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতের সুবিধা চায় এবং ওই রাজ্যগুলোর জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায়। বিএনপি ভারতকে এই সুবিধা দিতে আগ্রহী নয়, বরং তারা সম্ভবত চায় ট্রানশিপমেন্ট, যার আওতায় ভারতীয় পণ্য বা মালামাল বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তা পরিবহন করা হবে বাংলাদেশেরই যানে। কাজেই ভারতকে ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার প্রকৃত অবস্থান জানতে চাইবে নয়াদিল্লি।
যুদ্ধাপরাধের বিচার: বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। শক্তিশালী এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। বস্তুত বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা নির্ভর করছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সফল সমাপ্তির ওপর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওই অপরাধের জন্য যাঁরা অভিযুক্ত হয়েছেন এবং যাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে, তাঁরা বিএনপি এবং তাঁদের মিত্র দল জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান নেতা। কাজেই বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের আমলে বিচার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তাই এ ক্ষেত্রেও খালেদা জিয়ার অবস্থান কী এবং তিনি ক্ষমতায় গেলে বিচার অব্যাহত রাখবেন কি না, তা জানতে চাইবে ভারত।
খালেদা জিয়াকে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য তিনি কি তাঁর ঐতিহ্যগত ভারতবিরোধী অবস্থানে অনড় থাকবেন, নাকি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিতে তাঁর নীতি পরিবর্তন করবেন? এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির মন্তব্যটি স্মরণ করতে পারেন। ‘আমরা আমাদের বন্ধু বেছে নিতে পারি, কিন্তু প্রতিবেশী বেছে নিতে পারি না।’
আর নয়াদিল্লির জন্য, বাংলাদেশের প্রতিটি পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টারই অংশ খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই আলোচনা। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হতে চলেছে, দিনে দিনে এমন বোঝাপড়াও মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো একটি রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি পক্ষপাত দেখাতে চাইবে না ভারত। নয়াদিল্লির নিজস্ব স্বার্থ বা পছন্দ-অপছন্দ অবশ্যই আছে। তবে তারা এটাও বোঝে যে, ঢাকার ক্ষমতায় কে থাকবে, তা তারা ঠিক করে দিতে পারে না। গত চার বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে, তা সত্ত্বেও আরও উন্নতির সুযোগ আছে। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তার পরও এই অগ্রগতি বজায় রাখতে চাইবে নয়াদিল্লি।
কাজেই খালেদা জিয়ার এই সফরে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ এবং দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। কিন্তু এসবের বাইরেও তিনটি বিষয় খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পরিষ্কার হতে চাইবে ভারত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার: বাংলাদেশে এটি বহুল বিতর্কিত রাজনৈতিক বিষয়, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হচ্ছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এই ব্যবস্থা গত বছর বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপি চাইছে, ওই ব্যবস্থা আবার চালু করা হোক, তা না হলে নির্বাচন বর্জনের হুমকিও তারা দিয়ে রেখেছে। যদিও সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলটি সুখকর ছিল না। সেনা-সমর্থিত ওই সরকারের সময় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল এবং তা স্থায়ী হয়েছিল প্রায় দুই বছর। আবারও সেই অবস্থার সৃষ্টি হলে তা হবে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য একটি সমস্যা। অন্যদিকে, বিএনপি যদি তাদের দাবিতে অনড় থাকে এবং নির্বাচন বর্জন করে, তা হলে পরবর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতার ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কাজেই এ বিষয়ে বিএনপি কী কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তা জানতে চাইবে ভারত। দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে তারা কি সত্যিই অনড় থাকবে? আরেক দফায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের কোনো পক্ষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
ট্রানজিট বা ট্রানশিপমেন্ট: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের জন্য অন্যতম অর্থনৈতিক সুযোগ ট্রানজিট। ভারত তার নিজের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল ও বাংলাদেশ-ভুটান ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতকে একই সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি। ভারত শুধু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মালামাল পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতের সুবিধা চায় এবং ওই রাজ্যগুলোর জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায়। বিএনপি ভারতকে এই সুবিধা দিতে আগ্রহী নয়, বরং তারা সম্ভবত চায় ট্রানশিপমেন্ট, যার আওতায় ভারতীয় পণ্য বা মালামাল বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তা পরিবহন করা হবে বাংলাদেশেরই যানে। কাজেই ভারতকে ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার প্রকৃত অবস্থান জানতে চাইবে নয়াদিল্লি।
যুদ্ধাপরাধের বিচার: বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। শক্তিশালী এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। বস্তুত বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা নির্ভর করছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সফল সমাপ্তির ওপর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওই অপরাধের জন্য যাঁরা অভিযুক্ত হয়েছেন এবং যাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে, তাঁরা বিএনপি এবং তাঁদের মিত্র দল জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান নেতা। কাজেই বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের আমলে বিচার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তাই এ ক্ষেত্রেও খালেদা জিয়ার অবস্থান কী এবং তিনি ক্ষমতায় গেলে বিচার অব্যাহত রাখবেন কি না, তা জানতে চাইবে ভারত।
খালেদা জিয়াকে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য তিনি কি তাঁর ঐতিহ্যগত ভারতবিরোধী অবস্থানে অনড় থাকবেন, নাকি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিতে তাঁর নীতি পরিবর্তন করবেন? এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির মন্তব্যটি স্মরণ করতে পারেন। ‘আমরা আমাদের বন্ধু বেছে নিতে পারি, কিন্তু প্রতিবেশী বেছে নিতে পারি না।’
No comments