দল যার যার, দেশটা হোক সবার- শুভেচ্ছা বিনিময়ের রাজনীতি

প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত শনিবার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এটি ভালো দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে নানা পেশার মানুষ ক্ষণিকের জন্য হলেও নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান।


কিন্তু এই শুভেচ্ছা বিনিময়ের আনন্দঘন অনুষ্ঠানও যদি নেতা-নেত্রীরা দলীয় সভায় পরিণত করে ফেলেন, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?
শনিবার গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁদের আমলে দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে বলেই মানুষ এবার আনন্দের সঙ্গে পশু কোরবানি দিতে পেরেছেন। অন্যদিকে ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নেই বলে পশুর দাম কম হওয়া সত্ত্বেও মানুষ কোরবানি দিতে পারেনি। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি।
এ ধরনের উৎসব-পর্বে মানুষ নিশ্চয়ই দলীয় রাজনীতির কথা শুনতে চায় না, নির্বিঘ্নে আনন্দ উপভোগ করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে তা যেমন সত্য, তেমনি এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে যতটা উন্নতি আমাদের করার কথা ছিল, ততটা করতে পারিনি। এই না পারার দায় বর্তমানে এবং অতীতে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন বা আছেন, তাঁরা কেউই এড়াতে পারেন না। আবার বিরোধীদলীয় নেতার কথা অনুযায়ী বর্তমান সরকারের আমলে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ক্রমাগত খারাপই হবে, তাহলে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হলো কীভাবে? বিরোধী দলের নেতা বলেছেন, গত চার বছর তাঁরা সহযোগিতা করতে চাইলেও সরকারের কাছ থেকে সাড়া পাননি। কিন্তু লাগাতার সংসদ বর্জন কি সহযোগিতার নমুনা? পৃথিবীর কোনো দেশে বিরোধী দল এভাবে সংসদ বর্জন করে না। অন্যদিকে আন্দোলন দমনের নামে সরকার বিরোধী দলের প্রতি যে চণ্ড নীতি চালাচ্ছে, তাও অগণতান্ত্রিক ও নিন্দনীয়।
শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার যে অঙ্গীকার করেছেন, দেশবাসী তার বাস্তবায়নই দেখতে চায়। ঈদের পর বিরোধী দল আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি নেবে বলে যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তা আমাদের শঙ্কিত না করে পারে না। আমরা সরকারের দমন-পীড়ন নীতির পাশাপাশি বিরোধী দলের কঠোর কর্মসূচিরও বিরোধী। সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখলে, তাঁরা আলোচনায় বসলে কোনো সমস্যারই সমাধান অসম্ভব নয়। ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কথাটি মনে রাখলে এবং মেনে চললে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
দেশবাসী ঈদ বা অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে দলীয় রাজনীতির অত্যুগ্র বহিঃপ্রকাশ চায় না, তারা সবাই মিলে আনন্দ ভাগ করে নিতে চায়। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এটা উপলব্ধি করতে হবে, দল যার যার, দেশটা সবার।

No comments

Powered by Blogger.