চরাচর-সড়কদ্বীপের গাছ by আহমেদ রিয়াজ

মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পূর্ব মাথার গোল চত্বরটা ছিল ছোটখাটো একটা বনের মতো। বিশাল বিশাল গাছ। ২০০৫ সালের আগে পথশ্রান্ত কোনো পথিক ওখানে বসে দুদণ্ড জিরিয়ে নিতে পারতেন।


২০০৫ সালে কেটে ফেলা হলো সব গাছ। সংসদ ভবনের পূর্ব দিকের বেগম রোকেয়া সরণির আইল্যান্ডটিতেও পাওয়া যেত বড় বড় গাছের ছায়া। দেশি প্রজাতির গাছগুলোতে অনেক পাখির বাসাও ছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে কেটে ফেলা হলো বড় বড় গাছ। পরিবর্তে লাগানো হলো বিদেশি প্রজাতির ছোট ছোট গাছ। এসব গাছ পাহারায় আবার সড়কদ্বীপ ঘিরে ফেলা হলো কাঁটাতার, রড, লোহার পাইপ দিয়ে বানানো বেড়া দিয়ে। ২০০৫ সালে চতুর্দশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের কারণে মেগাসিটি ঢাকার সৌন্দর্য বাড়ানোর অংশ হিসেবে পুরনো যত গাছ ছিল, সব কেটে সাফ করা হয়। পরিবর্তে লাগানো হয় শোভাবর্ধনকারী গাছ, ফুলগাছ ও ঘাস। আর এ কাজটি সারে ঢাকা সিটি করপোরেশন। সার্ক সম্মেলনের আগে ঢাকার অর্ধেকেরও বেশি আইল্যান্ডকে গাছশূন্য করা হয়। প্রতিদিন রুটিন করে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সংস্থার গাড়ি ওসব আইল্যান্ডের গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য পানি দিত। ডিসিসির তত্ত্বাবধানে সরকারি-বেসরকারি প্রায় ১০০টি প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল এ কাজে।
কেবল বেগম রোকেয়া সরণি নয়, গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ ঢাকার অনেক জায়গাকে তখন চকচকে-ঝকঝকে করে তোলা হয় বড় গাছ কেটে। তারপর চলে গাছ কেটে পানি ঢেলে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার কাজ। সম্মেলনের পর ধীরে ধীরে কদর কমতে থাকে আইল্যান্ডের গাছগুলোর। কমে যায় ডিসিসিসহ সৌন্দর্য বর্ধনকারী বিভিন্ন সংস্থার রুটিন ওয়ার্ক। তীব্র রোদ সইতে না পেরে আর পানির অভাবে হলুদ হতে হতে একসময় অনেক জায়গায় মরে যেতে থাকে ভিনদেশি গাছগুলো। এরপর গত বছর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক হয় বাংলাদেশ। নতুন কদর পেতে শুরু করে আইল্যান্ডের গাছগুলো। আবারও নিয়মিত পানি ঢালা, ঘাস ছেঁটে দেওয়া, হলুদ পাতা সরানোর কাজ চলতে থাকে। নতুন করে বেড়াও দেওয়া হয়। বেড়ায় আবার রংও করা হয়। আইল্যান্ডের পুরনো পলেস্তারা ফেলে দিয়ে নতুন পলেস্তারা দেওয়া হয়।
দিন দিন নিসর্গ হারাচ্ছে ঢাকা। ৩০৪ বর্গকিলোমিটারের ঢাকার নৈসর্গিক রূপ বলতে রয়েছে কেবল হাতে গোনা কয়েকটি উদ্যান। কোনো উঁচু ভবন থেকে তাকালে ঢাকায় দেখা যায় কেবল ইট আর ইট। ধুলাবালিতে সয়লাব পুরো শহর। আইল্যান্ডের গাছগুলো রাজধানীর সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি অঙ্েিজন উৎপাদনকারী হিসেবেও বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সে জন্য দেশি প্রজাতির গাছের কোনো বিকল্প নেই। দেশি প্রজাতির গাছ যেমন দীর্ঘায়ু, তেমনি অধিক অঙ্েিজন উৎপাদনে সক্ষম। এতে তেমন যত্নেরও প্রয়োজন পড়ে না।
আহমেদ রিয়াজ

No comments

Powered by Blogger.