কোরবানি পশুর বর্জ্য-শতভাগ পরিচ্ছন্নতা অসম্ভব নয়
পবিত্র ঈদুল আজহায় রাজধানীতে কোরবানি হওয়া বিপুলসংখ্যক পশুর বর্জ্য অপসারণ নিয়ে প্রতিবছর যে বিড়ম্বনা তৈরি হতো, এবার তা হয়নি। সর্বজনীন উৎসবটি উদযাপনে নাগরিকের সাধ্যমতো সাজসজ্জা, উদ্দীপনা, অলিগলিতে স্তূপাকার বর্জ্য ও তার দুর্গন্ধে ধাক্কা খাওয়ার চিত্র এবার প্রায় দুর্লভ।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ জন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছুটি বাতিলসহ অতিরিক্ত কয়েক হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে তারা ঈদের আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। এমনকি দুই সিটি করপোরেশনও যৌথভাবে ভূমিকা নিয়েছিল। যোগাযোগমন্ত্রী নিজেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নেমেছিলেন। স্বীকার করতে হবে, বর্জ্য মোটামুটি অপসারিত হলেও দুর্গন্ধের অভিযোগ পাওয়া গেছে কোথাও কোথাও। কোরবানি পশুর সংখ্যা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সন্দেহ নেই। জনবল ও তদারকি সংকটও সম্পূর্ণ কাটেনি এখনও। কিন্তু নাগরিকরা সচেতন হলে এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ঈদের পর শতভাগ পরিচ্ছন্নতা অসম্ভব নয়। লক্ষণীয়, কোরবানির পশু ক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও মাংস সংগ্রহের কাজ যতটা যত্নের সঙ্গে করা হয়, বর্জ্য অপসারণে যেন ততটাই অবহেলা। এমন নজির গলিতে গলিতে কোরবানি পশুর রক্তে পানি ঢেলে দেওয়ার কাজটি সিটি করপোরেশন কর্মীর জন্য ফেলে রেখেছেন অনেকে। পশু ক্রয় থেকে মাংস সংরক্ষণ যেখানে নিজেরাই করেন, সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কেন পৌর কর্মীদের জন্য অপেক্ষা? এটা সাধারণ বিবেচনার বিষয় যে, হাজার হাজার কোরবানি পশুর বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা ডিসিসির পক্ষে যতটা শ্রম ও জনবলসাধ্য, একটি পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কয়েকজন কোরবানিদাতার পক্ষে ততটাই সহজ। আমরা বলছি না যে, নাগরিকরা বর্জ্য বহন করে কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে নিয়ে যাবেন। রক্ত ও অন্যান্য তরল ধুয়ে ফেলার পর একটি পশুর যে সামান্য বর্জ্য অবশিষ্ট থাকে, তা সহজেই বস্তাবন্দি করে উপযুক্ত জায়গায় স্তূপ করা সম্ভব। নাগরিকের সামান্য সচেতনতায় কোরবানি-পরবর্তী নগর-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। খোদ বর্জ্য অপসারণেও তারা কি সক্রিয় হতে পারে না। আগামী বছরগুলোতে শতভাগ পরিচ্ছন্নতার প্রত্যাশায় আমরা সবার প্রতি সেই আহ্বানই জানাই।
No comments