পবিত্র কোরআনের আলো-হজ-পরবর্তী করণীয় ও হজের মর্মবাণী
২০০. ফাইযা- ক্বাদ্বাইতুম্ মানা-ছিকাকুম ফাযকুরুল্লা-হা কাযিকরুকুম আবা-আকুম আও আশাদ্দা যিকরা। ফামিনা ন্না-ছি মাইঁয়্যাক্বূলু রাব্বানা- আ-তিনা- ফিদ্ দুনইয়া- ওয়ামা- লাহূ ফিল আ-খিরাতি মিন খালা-ক্ব। ২০১. ওয়ামিনহুম্ মাইঁয়্যাক্বূলু রাব্বানা- আ-তিনা- ফিদ্ দুনইয়া- হাছানাতাওঁয়াফিল আ-খিরাতি হাছানাতাওঁয়াকি্বনা- আ'যা-বান্নার।
২০২. উলায়িকা লাহুম নাসীবুম্ মিম্মা- কাছাবূ; ওয়াল্লা-হু ছারীউ'ল হিছাব।
২০৩. ওয়াযকুরুল্লা-হা ফী আইয়্যা-মিম্ মা'দূদা-ত; ফামান তাআ'জ্জালা ফী ইয়াওমাইনি ফালা- ইছমা আলাইহি; ওয়ামান তায়াখ্খারা ফালা- ইছমা আ'লাইহি লিমানিত্তাক্বা-; ওয়াত্তাক্বুল্লা-হা ওয়া'লামূ আন্নাকুম ইলাইহি তুহশারূন।
[সুরা বাকারা, আয়াত ২০০-২০৩]
অনুবাদ : ২০০. যখন তোমাদের (হজের) আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নেবে, তখন যেভাবে তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে তেমনি করে; বরং এর চেয়ে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করো। লোকদের মধ্যে এমন একদল আছে যারা বলে, 'হে প্রভু, সব কল্যাণ তুমি আমাদের এই দুনিয়াতেই দান করো' (যারা এ ধরনের বলে), তাদের জন্য আখিরাতে আর কোনো পাওনাই থাকে না।
২০১. আরেক দল আছে যারা বলে, 'হে প্রতিপালক, এ দুনিয়ায়ও তুমি আমাদের কল্যাণ দান করো, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো; তুমি আমাদের আগুনের আজাব থেকে মুক্তি দাও।'
২০২. এ ধরনের লোকদের জন্য তাদের নিজ নিজ উপার্জন মোতাবেক যথার্থ হিস্যা রয়েছে; আল্লাহ তায়ালাই আছেন দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
২০৩. নির্দিষ্ট কয়টি দিন তোমরা আল্লাহকে এভাবে স্মরণ করো; যদি কেউ তাড়াহুড়ো করে দুদিনের মধ্যেই (মিনা থেকে মক্কায়) ফিরে আসে, তাতে কোনো দোষ নেই; আর যদি কেউ সেখানে আরো বেশি সময় অপেক্ষা করতে চায়, তাতেও কোনো দোষ নেই। এসব তাদের জন্য, যারা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ; তোমরা শুধু আল্লাহর প্রতিই দায়িত্বনিষ্ঠ থাকো এবং জেনে রেখো, তোমাদের তাঁর কাছেই জড়ো করা হবে।
ব্যাখ্যা : উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে হজ-পরবর্তী কিছু আনুষ্ঠানিকতার কথা বলা হয়েছে এবং হজের মর্মবাণীসহ জীবনের মূল দিকনির্দেশনার কিছু কথা বলা হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে হজ সম্পন্ন করে লোকেরা মিনা প্রান্তরে সমবেত হয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের গৌরবগাথা বর্ণনা করত। এসব বাদ দিয়ে সেখানে আল্লাহকে স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে। হজের মূল উদ্দেশ্য ইহজাগতিক কোনো স্বার্থ হাসিল করা নয়। বরং এর উদ্দেশ্য ইহজাগতিক জীবনকে সুন্দর ও শৃঙ্খলামণ্ডিত করে তোলা এবং অনন্ত পরকালের চেতনায় নিজেকে উদ্ভাসিত করে তোলা। যারা শুধু এই দুনিয়ার তাৎক্ষণিক স্বার্থ হাসিলের পেছনে ছোটে এবং আল্লাহর কাছেও এই প্রার্থনাই জানায় তারা মূলত নির্বোধ। তাদের জন্য অনন্ত পরকালে আর কিছু থাকে না। তারা ইহজীবনেও আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়ার অশান্তিতে ভোগে আর পরকাল তাদের জন্য শূন্য। অপরদিকে যারা ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ সন্ধান করে এবং আল্লাহর কাছেও অনুরূপ কল্যাণের প্রার্থনা জানায়, তারা ইহকালের পরিতৃপ্তির শান্তি লাভ করে আর পরকালেও তাদের জন্য সুন্দর পরিণাম রয়েছে। কারণ আল্লাহ তায়ালার কাছে সব কিছুরই হিসাব রয়েছে এবং তিনি ন্যায়বিচারক।
১০৩ নম্বর আয়াতে যে নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জিকিরের কথা বলা হয়েছে, সেটি বিশেষ ধরনের একটি জিকির। এই জিকিরের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। অর্থাৎ তিনটি পাথরের ওপর 'আল্লাহু আকবার' বলে কংকর নিক্ষেপ করা। এটি মিনায় হজ-পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতার প্রথা। মিনা নামক স্থানে তিনটি পাথর আছে। এর মধ্যে একটি পাথর বড়, এটাকে 'জমরায়ে আকবা' বলা হয়। জিলহজের দশম তারিখে মুজদালিফা থেকে ফিরে এসে 'জমরায়ে আকবা' নামক পাথরটিতে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। নিক্ষেপের সময় প্রতিবারই 'আল্লাহু আকবার' বলা মুস্তাহাব। অতঃপর ১১ ও ১২ তারিখেও তিনটি পাথরের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। 'কয়েক দিন' বলতে তিন বা চার দিনের কথা বলা হয়েছে_১০, ১১ ও ১২ জিলহজ কিংবা ১৩ তারিখও। এই কয়েক দিন শব্দটিকে কেন্দ্র করে আইয়ামে তাসদিকও পালন করা হয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
২০৩. ওয়াযকুরুল্লা-হা ফী আইয়্যা-মিম্ মা'দূদা-ত; ফামান তাআ'জ্জালা ফী ইয়াওমাইনি ফালা- ইছমা আলাইহি; ওয়ামান তায়াখ্খারা ফালা- ইছমা আ'লাইহি লিমানিত্তাক্বা-; ওয়াত্তাক্বুল্লা-হা ওয়া'লামূ আন্নাকুম ইলাইহি তুহশারূন।
[সুরা বাকারা, আয়াত ২০০-২০৩]
অনুবাদ : ২০০. যখন তোমাদের (হজের) আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নেবে, তখন যেভাবে তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে তেমনি করে; বরং এর চেয়ে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করো। লোকদের মধ্যে এমন একদল আছে যারা বলে, 'হে প্রভু, সব কল্যাণ তুমি আমাদের এই দুনিয়াতেই দান করো' (যারা এ ধরনের বলে), তাদের জন্য আখিরাতে আর কোনো পাওনাই থাকে না।
২০১. আরেক দল আছে যারা বলে, 'হে প্রতিপালক, এ দুনিয়ায়ও তুমি আমাদের কল্যাণ দান করো, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো; তুমি আমাদের আগুনের আজাব থেকে মুক্তি দাও।'
২০২. এ ধরনের লোকদের জন্য তাদের নিজ নিজ উপার্জন মোতাবেক যথার্থ হিস্যা রয়েছে; আল্লাহ তায়ালাই আছেন দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
২০৩. নির্দিষ্ট কয়টি দিন তোমরা আল্লাহকে এভাবে স্মরণ করো; যদি কেউ তাড়াহুড়ো করে দুদিনের মধ্যেই (মিনা থেকে মক্কায়) ফিরে আসে, তাতে কোনো দোষ নেই; আর যদি কেউ সেখানে আরো বেশি সময় অপেক্ষা করতে চায়, তাতেও কোনো দোষ নেই। এসব তাদের জন্য, যারা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ; তোমরা শুধু আল্লাহর প্রতিই দায়িত্বনিষ্ঠ থাকো এবং জেনে রেখো, তোমাদের তাঁর কাছেই জড়ো করা হবে।
ব্যাখ্যা : উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে হজ-পরবর্তী কিছু আনুষ্ঠানিকতার কথা বলা হয়েছে এবং হজের মর্মবাণীসহ জীবনের মূল দিকনির্দেশনার কিছু কথা বলা হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে হজ সম্পন্ন করে লোকেরা মিনা প্রান্তরে সমবেত হয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের গৌরবগাথা বর্ণনা করত। এসব বাদ দিয়ে সেখানে আল্লাহকে স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে। হজের মূল উদ্দেশ্য ইহজাগতিক কোনো স্বার্থ হাসিল করা নয়। বরং এর উদ্দেশ্য ইহজাগতিক জীবনকে সুন্দর ও শৃঙ্খলামণ্ডিত করে তোলা এবং অনন্ত পরকালের চেতনায় নিজেকে উদ্ভাসিত করে তোলা। যারা শুধু এই দুনিয়ার তাৎক্ষণিক স্বার্থ হাসিলের পেছনে ছোটে এবং আল্লাহর কাছেও এই প্রার্থনাই জানায় তারা মূলত নির্বোধ। তাদের জন্য অনন্ত পরকালে আর কিছু থাকে না। তারা ইহজীবনেও আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়ার অশান্তিতে ভোগে আর পরকাল তাদের জন্য শূন্য। অপরদিকে যারা ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ সন্ধান করে এবং আল্লাহর কাছেও অনুরূপ কল্যাণের প্রার্থনা জানায়, তারা ইহকালের পরিতৃপ্তির শান্তি লাভ করে আর পরকালেও তাদের জন্য সুন্দর পরিণাম রয়েছে। কারণ আল্লাহ তায়ালার কাছে সব কিছুরই হিসাব রয়েছে এবং তিনি ন্যায়বিচারক।
১০৩ নম্বর আয়াতে যে নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জিকিরের কথা বলা হয়েছে, সেটি বিশেষ ধরনের একটি জিকির। এই জিকিরের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। অর্থাৎ তিনটি পাথরের ওপর 'আল্লাহু আকবার' বলে কংকর নিক্ষেপ করা। এটি মিনায় হজ-পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতার প্রথা। মিনা নামক স্থানে তিনটি পাথর আছে। এর মধ্যে একটি পাথর বড়, এটাকে 'জমরায়ে আকবা' বলা হয়। জিলহজের দশম তারিখে মুজদালিফা থেকে ফিরে এসে 'জমরায়ে আকবা' নামক পাথরটিতে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। নিক্ষেপের সময় প্রতিবারই 'আল্লাহু আকবার' বলা মুস্তাহাব। অতঃপর ১১ ও ১২ তারিখেও তিনটি পাথরের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। 'কয়েক দিন' বলতে তিন বা চার দিনের কথা বলা হয়েছে_১০, ১১ ও ১২ জিলহজ কিংবা ১৩ তারিখও। এই কয়েক দিন শব্দটিকে কেন্দ্র করে আইয়ামে তাসদিকও পালন করা হয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments