কন্যাহারা পিতার শোকের নিদর্শন পরী বিবির সমাধি by নওশাদ জামিল
বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আদরের কন্যা ছিলেন ইরান দুখত রহমত বানু। তবে এ নামে খুব কম লোকেই তাঁকে চিনত বা চেনে। পরীর মতোই সুন্দর ছিলেন বলেই হয়তো পরী বিবি নামে তিনি পরিচিত সবার কাছে। অপরূপা এ রাজকন্যার অকালমৃত্যু বৃদ্ধ পিতা শায়েস্তা খাঁর কাছে ছিল অসহনীয়। বুঝিবা শেল বিঁধেছিল বুকে। প্রিয় কন্যার মৃত্যুতে শায়েস্তা খাঁর হৃদয়ে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। ক্ষোভে-দুঃখে লালবাগ কেল্লাকে তিনি 'অপয়া' ভাবলেন, বন্ধ করে দিলেন এর নির্মাণকাজ। কন্যার মৃত্যুর কিছু দিন আগেই তিনি শুরু করেছিলেন লালবাগ কেল্লা নির্মাণ। পরে ওই কেল্লার ভেতরই সমাহিত করা হয় পরী বিবিকে। তঁাঁর অন্তিম শয্যার ওপর যে সৌধ নির্মাণ করেছিলেন অগাধ স্থাপত্যজ্ঞানের অধিকারী পিতা, সেটি ঢাকার অন্যতম সেরা সৌন্দর্যময় এক মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন।
কন্যাহারা পিতার সেই শোকের নিদর্শনটি দেখতে এখনো শত শত মানুষ ভিড় করে লালবাগ কেল্লায়। সেখানে মাঠের মাঝখানে একই সরলরেখা বরাবর তিনটি স্থাপনার মাঝখানেরটি পরী বিবির সমাধি। সমাধিটি বিখ্যাত অনেক কারণেই। শায়েস্তা খাঁ সুদূর রাজমহল থেকে কালো ব্যাসল্ট পাথর, চুনার থেকে বেলেপাথর ও জয়পুর থেকে সাদা মার্বেল পাথরের বড় বড় ফলক এনেছিলেন ঢাকায় সমাধিটি নির্মাণের জন্য। দরজা ও খিলানের জন্য এনেছিলেন শ্বেত চন্দন কাঠ। দূর থেকে বিশালাকার মার্বেল পাথরের ফলক আনাটা ছিল রীতিমতো দুরূহ কাজ।
সমাধির ফলকগুলো আস্ত রেখে এর ওপর নকশা কাটা হয়। আর এই ফুলেল নকশাখচিত জালি ও ফলক দিয়ে সমাধিসৌধের বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কালো পাথর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যেন পিতৃহৃদয়ের গভীর বেদনারই নীরব প্রকাশ।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজমের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল পরীবিবির। শাহজাদা আজম ঢাকায় সুবাদার হয়ে এসেছিলেন ১৬৭৮ সালের ২৯ জুলাই। এসেই তিনি পিতার নামে কেল্লা আওরঙ্গবাদ নির্মাণ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় তাঁকে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সুবাদার শায়েস্তা খাঁ দ্বিতীয় মেয়াদে ঢাকায় আসেন। শাহজাদা আজম কেল্লাটির কাজ শেষ করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবও এটি দান করেছিলেন সুবাদারকে। বাংলার সুবাদার নির্মাণকাজ শুরুও করেছিলেন। কিন্তু পরে শায়েস্তা খাঁ কেল্লায় আর ইট গাঁথেননি। অনেকে মনে করেন, কন্যার মৃত্যুর ফলে তিনি এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেছিলেন। তাই ইট না গেঁথে এর প্রাঙ্গণে রচনা করেছিলেন পরীবিবির সমাধিসৌধ।
কন্যার সমাধিসৌধের গম্বুজটি সোনার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন বেদনাহত পিতা। সূর্যের কিরণ এসে পড়লে দেদীপ্যমান হয়ে উঠত সেই স্বর্ণগম্বুজ। বাংলাপিডিয়ায় এ রকমই বলা হয়েছে। কালক্রমে সেই সোনার পাত সরিয়ে ফেলেছে তস্কররা। এখন যে কালো গম্বুজটি দেখা যায়, তা তামা বা পিতলের পাত দিয়ে মোড়ানো। তাজমহল ও সম্রাট হুমায়ুনের সমাধির স্থাপত্যরীতির সঙ্গে মুসলিম স্থাপনা ও হিন্দু মন্দিরের স্থাপত্যরীতির সমন্বয়ে শায়েস্তা খাঁ এ সমাধিসৌধটি নির্মাণ করেছিলেন। শুধু মুঘল স্থাপত্যই নয়, স্থপতি শায়েস্তা খাঁর একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবেও উচ্চ প্রশংসিত এই সমাধিসৌধ।
পরীবিবির সত্যিকার পরিচয় নিয়ে অনেকের মধ্যে এখনো রহস্য রয়েছে। তিনি কি সত্যি সত্যি শায়েস্তা খাঁর কন্যা ছিলেন, নাকি অন্য কেউ; শাহজাদা আজমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল কি হয়নি_এসব নিয়ে বেশ খানিকটা রহস্য রয়ে গেছে। কিছু বিষয়ে ইতিহাসবিদরাও একমত হতে পারেননি। তাঁদের কেউ কেউ মত দেন, পরীবিবি ছিলেন অহম রাজকুমারী। সুবাদার মীর জুমলার আসাম জয়ের সময় তিনি মাত্র ৯ বছর বয়সে বন্দি হয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শাহজাদা আজম তাঁর পাণি গ্রহণ করেন। তবে বেশির ভাগ ইতিহাসবিদই পরীবিবিকে শায়েস্তা খাঁর কন্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, 'বিবি পরী (ইরান দুখত রহমত বানু) যে শায়েস্তা খাঁর কন্যা, এর প্রমাণ হলো শায়েস্তা খাঁর নিজস্ব অসিয়তনামা। এই অসিয়তনামা বাংলাদেশ সরকারের কাটরা ওয়াকফ পরিদপ্তরে সংরক্ষিত আছে।' পরীবিবির বিয়ে সম্পর্কে বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, ১৬৬৮ সালের ৩ মে শাহজাদা আজমের সঙ্গে এক লাখ ৮০ হাজার টাকার দেনমোহরে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল ১৬ বছরের।
লালবাগ কেল্লার ভেতরে থাকায় পরীবিবির সমাধিসৌধ দখলের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে এখনো টিকে আছে মুঘল ঐতিহ্য নিয়ে। তবে এর আদি সৌন্দর্য ও কারুকাজ নেই। এর পরও কন্যাহারা পিতার শোকের এই নিদর্শন যুগ যুগ ধরে আপ্লুত করে যাচ্ছে মানুষকে।
সমাধির ফলকগুলো আস্ত রেখে এর ওপর নকশা কাটা হয়। আর এই ফুলেল নকশাখচিত জালি ও ফলক দিয়ে সমাধিসৌধের বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কালো পাথর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যেন পিতৃহৃদয়ের গভীর বেদনারই নীরব প্রকাশ।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজমের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল পরীবিবির। শাহজাদা আজম ঢাকায় সুবাদার হয়ে এসেছিলেন ১৬৭৮ সালের ২৯ জুলাই। এসেই তিনি পিতার নামে কেল্লা আওরঙ্গবাদ নির্মাণ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় তাঁকে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সুবাদার শায়েস্তা খাঁ দ্বিতীয় মেয়াদে ঢাকায় আসেন। শাহজাদা আজম কেল্লাটির কাজ শেষ করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবও এটি দান করেছিলেন সুবাদারকে। বাংলার সুবাদার নির্মাণকাজ শুরুও করেছিলেন। কিন্তু পরে শায়েস্তা খাঁ কেল্লায় আর ইট গাঁথেননি। অনেকে মনে করেন, কন্যার মৃত্যুর ফলে তিনি এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেছিলেন। তাই ইট না গেঁথে এর প্রাঙ্গণে রচনা করেছিলেন পরীবিবির সমাধিসৌধ।
কন্যার সমাধিসৌধের গম্বুজটি সোনার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন বেদনাহত পিতা। সূর্যের কিরণ এসে পড়লে দেদীপ্যমান হয়ে উঠত সেই স্বর্ণগম্বুজ। বাংলাপিডিয়ায় এ রকমই বলা হয়েছে। কালক্রমে সেই সোনার পাত সরিয়ে ফেলেছে তস্কররা। এখন যে কালো গম্বুজটি দেখা যায়, তা তামা বা পিতলের পাত দিয়ে মোড়ানো। তাজমহল ও সম্রাট হুমায়ুনের সমাধির স্থাপত্যরীতির সঙ্গে মুসলিম স্থাপনা ও হিন্দু মন্দিরের স্থাপত্যরীতির সমন্বয়ে শায়েস্তা খাঁ এ সমাধিসৌধটি নির্মাণ করেছিলেন। শুধু মুঘল স্থাপত্যই নয়, স্থপতি শায়েস্তা খাঁর একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবেও উচ্চ প্রশংসিত এই সমাধিসৌধ।
পরীবিবির সত্যিকার পরিচয় নিয়ে অনেকের মধ্যে এখনো রহস্য রয়েছে। তিনি কি সত্যি সত্যি শায়েস্তা খাঁর কন্যা ছিলেন, নাকি অন্য কেউ; শাহজাদা আজমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল কি হয়নি_এসব নিয়ে বেশ খানিকটা রহস্য রয়ে গেছে। কিছু বিষয়ে ইতিহাসবিদরাও একমত হতে পারেননি। তাঁদের কেউ কেউ মত দেন, পরীবিবি ছিলেন অহম রাজকুমারী। সুবাদার মীর জুমলার আসাম জয়ের সময় তিনি মাত্র ৯ বছর বয়সে বন্দি হয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শাহজাদা আজম তাঁর পাণি গ্রহণ করেন। তবে বেশির ভাগ ইতিহাসবিদই পরীবিবিকে শায়েস্তা খাঁর কন্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, 'বিবি পরী (ইরান দুখত রহমত বানু) যে শায়েস্তা খাঁর কন্যা, এর প্রমাণ হলো শায়েস্তা খাঁর নিজস্ব অসিয়তনামা। এই অসিয়তনামা বাংলাদেশ সরকারের কাটরা ওয়াকফ পরিদপ্তরে সংরক্ষিত আছে।' পরীবিবির বিয়ে সম্পর্কে বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, ১৬৬৮ সালের ৩ মে শাহজাদা আজমের সঙ্গে এক লাখ ৮০ হাজার টাকার দেনমোহরে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল ১৬ বছরের।
লালবাগ কেল্লার ভেতরে থাকায় পরীবিবির সমাধিসৌধ দখলের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে এখনো টিকে আছে মুঘল ঐতিহ্য নিয়ে। তবে এর আদি সৌন্দর্য ও কারুকাজ নেই। এর পরও কন্যাহারা পিতার শোকের এই নিদর্শন যুগ যুগ ধরে আপ্লুত করে যাচ্ছে মানুষকে।
No comments