দুর্গোৎসবের সাজ সাজ রব
শুরু হচ্ছে বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা । সারা দেশে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে চলছে পূজাকে ঘিরে নানা প্রস্তুতি। সাড়ম্বরে পূজা উদযাপনের জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এবার সারাদেশে প্রায় ২৮ হাজারেরও বেশি পূজামণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এবার মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার। রাজধানীতে এবার ১৯৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। মৃৎশিল্পীরা শহর-গ্রাম আর চা বাগানে প্রতিমা তৈরির কাজ ও সাজসজ্জা শেষ করে ফেলেছেন। আগামী কাল ২ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা এবং ৬ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব।
এবার মা দুর্গা গজে অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মর্ত্যে আগমন করবেন। আর কৈলাশে ফিরবেন দোলায় চড়ে। গজ হল মায়ের পবিত্র বাহন। প্রতিবছর মা দুর্গা কোন না কোন বাহনে করে মর্ত্যে আগমন করেন। এবং যেকোন বাহনে চড়ে কৈলাসে ফেরেন। দেবীর আগমন ও গমন নিয়ে এই পৃথিবীতে নানা ঘটনা ঘটে থাকে বলে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন। দেবীর গজে আগমনের অর্থই হল- এই বসুন্ধরা এবার শস্যপূর্ণ হবে। আর দোলায় গমন অর্থই হল পৃথিবীতে ঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ধ্বংস-প্রলয় আর মড়কের ইঙ্গিত।
মা দুর্গার গজ ও দোলা ছাড়া আরও দুটি বাহন আছে। তাহল ঘোড়া ও নৌকা। দেবীর ঘোড়ায় চড়ে আসার অর্থ হল- যুদ্ধ, খরা আর দুর্ভিক্ষ। আর নৌকায় করে কৈলাসে ফেরার ইঙ্গিত দেয় বন্যা। দেবীর প্রত্যেক বাহনের মর্ত্যে আগমন আর কৈলাসে ফেরার প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন জ্যোতিষীরা। এগুলোই যদি দেবীর মর্ত্যে আগমন আর কৈলাসে ফেরার বাহন হয়- তবে সিংহ গেল কোথায়। কেননা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানেন দেবীর বাহন হচ্ছে সিংহ।
নানা আয়োজনে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মহাখালী, মিরপুর বিভিন্নস্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজার অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী কাল ২ আক্টোবর রোববার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারাম্ভ, ছায়াকালে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান। ৩ অক্টোবর সোমবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর মহাসপ্তমী বিহিত পূজা আরম্ভ ও বস্ত্র বিতরণ। ৪ আক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩০মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী পূজা আরম্ভ ও মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ। সন্ধিপূজা রাত্রি ১টা ২১ মিনিট থেকে ২টা ৯ মিনিটের মধ্যে পূজা সমাপন করতে হবে। ৫ অক্টোবর বুধবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী বিহিত পূজা আরম্ভ এবং সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা। ৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন। স্বেচ্ছায় রক্তদান দুপুর ১২ টায়। বিজয় শোভাযাত্রা বিকেল ৪ টায়। পূজা শেষে প্রতিদিন সকালে প্রত্যেক পূজা মণ্ডপে অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ ও আরতি অনুষ্ঠিত হবে।
No comments