অপেক্ষা বাড়ল টেন্ডুলকারের
‘প্লিজ, গিভ আস আ হিস্টোরিক সেঞ্চুরি’—ব্যানারটা ধরে আছে একদল উল্লসিত তরুণ-তরুণী। সামনে টিভি ক্যামেরা। পুলিশ অফিসার এসে সরিয়ে দিতে চাইলে অ্যাংকরের অনুরোধ, ‘স্যার, দো মিনিট...দেনা চাউঙ্গে।’
এটি একটা খণ্ড চিত্র। চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের গেট খেলার আগেই বাইরের চত্বরটা জানাতে থাকল এমন আকুতি। ভারত টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর আকুতিটা পরিণত হলো অপেক্ষায়। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৯৯ সেঞ্চুরির মালিকের দিকে সবার চোখ।
কিন্তু পিপাসু সেই চোখ টেন্ডুলকারের বদলে দ্বিতীয় ওভারেই দেখছে বিরাট কোহলিকে! প্রথম বলেই ২ রান নিয়ে শুরু করা টেন্ডুলকার তিন বল পর প্যাভিলিয়নে। গোটা স্টেডিয়াম স্তব্ধ। সাংবাদিকদের আবেগের ঊর্ধ্বে থাকতে হয়, কিন্তু প্রেসবক্সও যেন শোকে পাথর!
স্টেডিয়ামে আসার পথে টেন্ডুলকার নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন, তাঁর ‘ঐতিহাসিক’ সেঞ্চুরি দেখার জন্য চেন্নাই কেমন উৎসবমুখর ছিল! সেই উৎসব থেমে যাওয়ার হতাশা রেকর্ডের বরপুত্রকে না পুড়িয়ে পারেই না!
টেন্ডুলকারের আউট দেখে সাবেক ভারতীয় উইকেটকিপার দীপ দাশগুপ্তার অনুভূতি কী ছিল কে জানে, তবে ম্যাচের আগে একটা চ্যানেলে ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি নিয়েই প্রত্যাশার জাল বুনছিলেন। সঙ্গে এও ছিল, ‘গ্যারি কারস্টেন ছেলেদের ওপর চাপের বোঝা চাপিয়ে দেয়নি। কাল (পরশু) অনুশীলনে ভারতীয় ক্রিকেটাররা ছিল নির্ভার, হাসি-ঠাট্টা, মজা করেছে অনেক...’ বলে যাচ্ছিলেন দীপ।
কিন্তু ভালো করে শোনা গেলে তো! চারপাশে এমন হইহুল্লোড় যে মিরপুরে বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে তৈরি হওয়া উচ্ছ্বাসের প্রতিচ্ছবি এখানেও। ভারত ‘ক্রিকেটের দেশ’ বলে এখানকার উচ্ছ্বাস নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। তবে কাল ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ ঘিরে চিদাম্বরম স্টেডিয়াম নতুন করে জানাল, ক্রিকেট আসলেই ভারতীয়দের শয়নে-স্বপনে।
প্রবাসজীবন ছেড়ে আপাতত ভারত ঘুরে ঘুরে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখা দীনেশের বড় বিজ্ঞাপন। গায়ে ভারতীয় পতাকা জড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে তুমুল আনন্দে মেতে থাকা মাঝবয়সীর হাতে একটা ব্যানার। টিভি ক্যামেরায় দেখানোর আশায় লন্ডনে থাকা স্ত্রীর উদ্দেশে মজা করে লিখেছেন, ‘তাড়াতাড়ি টাকা-পয়সা পাঠাও। আমি আর এখানে চলতে পারছি না!’
৫০০ রুপির টিকিট ৫ হাজার রুপি দিয়ে কিনে নাকি ভারতীয় ম্যাচগুলো দেখতে হয়েছে তাঁকে! ভদ্রলোক বাংলাদেশে একটা কোয়ার্টার ফাইনাল দেখার আকাঙ্ক্ষায় এই প্রতিবেদকের কাছে চেয়ে বসলেন একটা টিকিট! হাসি-ঠাট্টার মধ্যে হঠাৎই এমন সিরিয়াস অনুরোধ।
এই ভিড়ে দেদার চলেছে মুখে রং, ভারতীয় পতাকা আঁকার মহাযজ্ঞ। একে সকাল থেকেই চলেছে রাস্তায় রাস্তায় ঐতিহ্যবাহী রং খেলা, তার ওপর ভারতীয় ক্রিকেটে ‘বিশেষ’ দিন। স্টেডিয়াম চত্বরে রঙের কৌটা নিয়ে ঘুরছে একদল ‘ব্যবসায়ী’, সমর্থকেরাও এসে কেউ মুখ কেউ হাত এগিয়ে দিচ্ছে। কয়েকটি মুখ তো দেখা গেল একদমই বদলে গেছে। দিনের বেলা বলে ভূতের মতো লাগছিল লেখা যাচ্ছে না! নইলে তো ‘ভূত’ই!
ম্যারি সি কিজুসিকে দেখলে সেই ‘ভয়’ নেই। মুখে কিছু আঁকেননি। জাপানি ভদ্রমহিলা জীবনে এই প্রথম মাঠে বসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে এলেন! ভারতের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে ক্রিকেট দেখতে টোকিও থেকে তাঁর ছুটে আসা। ক্রিকেটের ওপর একটা বই লেখার প্রাক-অভিজ্ঞতা নেওয়াও একটা উদ্দেশ্য।
পেশায় শিক্ষক কিজুসি বলছিলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-মানসিকতা বোঝার জন্য ক্রিকেট দেখা চাই। আশির দশকে ছাত্রী হিসেবে এ দেশে এসে তখন দেখেছিলাম একটা পরিবারের সবাই সারা দিন টিভির সামনে বসে ক্রিকেট দেখে। তখন থেকেই এর প্রতি আমার আগ্রহ। টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি দেখতে পেলে সেটি আমার জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে।’ টেন্ু্ভ্রলকার আউট হয়ে যাওয়ার পর ফোনে ধরা গেলে কিজুসির কণ্ঠে ঝরল হতাশা, ‘আই অ্যাম ভেরি ডিজহার্টেড।’
তবে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি না দেখুন, জীবন্ত কিংবদন্তিকে মাঠে বসে দেখাও তো কম নয় এক জাপানিজের জন্য। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কিজুসি বলতে ভুললেন না, ‘এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। কোনো দিন ভোলার নয়!’
এটি একটা খণ্ড চিত্র। চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের গেট খেলার আগেই বাইরের চত্বরটা জানাতে থাকল এমন আকুতি। ভারত টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর আকুতিটা পরিণত হলো অপেক্ষায়। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৯৯ সেঞ্চুরির মালিকের দিকে সবার চোখ।
কিন্তু পিপাসু সেই চোখ টেন্ডুলকারের বদলে দ্বিতীয় ওভারেই দেখছে বিরাট কোহলিকে! প্রথম বলেই ২ রান নিয়ে শুরু করা টেন্ডুলকার তিন বল পর প্যাভিলিয়নে। গোটা স্টেডিয়াম স্তব্ধ। সাংবাদিকদের আবেগের ঊর্ধ্বে থাকতে হয়, কিন্তু প্রেসবক্সও যেন শোকে পাথর!
স্টেডিয়ামে আসার পথে টেন্ডুলকার নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন, তাঁর ‘ঐতিহাসিক’ সেঞ্চুরি দেখার জন্য চেন্নাই কেমন উৎসবমুখর ছিল! সেই উৎসব থেমে যাওয়ার হতাশা রেকর্ডের বরপুত্রকে না পুড়িয়ে পারেই না!
টেন্ডুলকারের আউট দেখে সাবেক ভারতীয় উইকেটকিপার দীপ দাশগুপ্তার অনুভূতি কী ছিল কে জানে, তবে ম্যাচের আগে একটা চ্যানেলে ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি নিয়েই প্রত্যাশার জাল বুনছিলেন। সঙ্গে এও ছিল, ‘গ্যারি কারস্টেন ছেলেদের ওপর চাপের বোঝা চাপিয়ে দেয়নি। কাল (পরশু) অনুশীলনে ভারতীয় ক্রিকেটাররা ছিল নির্ভার, হাসি-ঠাট্টা, মজা করেছে অনেক...’ বলে যাচ্ছিলেন দীপ।
কিন্তু ভালো করে শোনা গেলে তো! চারপাশে এমন হইহুল্লোড় যে মিরপুরে বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে তৈরি হওয়া উচ্ছ্বাসের প্রতিচ্ছবি এখানেও। ভারত ‘ক্রিকেটের দেশ’ বলে এখানকার উচ্ছ্বাস নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। তবে কাল ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ ঘিরে চিদাম্বরম স্টেডিয়াম নতুন করে জানাল, ক্রিকেট আসলেই ভারতীয়দের শয়নে-স্বপনে।
প্রবাসজীবন ছেড়ে আপাতত ভারত ঘুরে ঘুরে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখা দীনেশের বড় বিজ্ঞাপন। গায়ে ভারতীয় পতাকা জড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে তুমুল আনন্দে মেতে থাকা মাঝবয়সীর হাতে একটা ব্যানার। টিভি ক্যামেরায় দেখানোর আশায় লন্ডনে থাকা স্ত্রীর উদ্দেশে মজা করে লিখেছেন, ‘তাড়াতাড়ি টাকা-পয়সা পাঠাও। আমি আর এখানে চলতে পারছি না!’
৫০০ রুপির টিকিট ৫ হাজার রুপি দিয়ে কিনে নাকি ভারতীয় ম্যাচগুলো দেখতে হয়েছে তাঁকে! ভদ্রলোক বাংলাদেশে একটা কোয়ার্টার ফাইনাল দেখার আকাঙ্ক্ষায় এই প্রতিবেদকের কাছে চেয়ে বসলেন একটা টিকিট! হাসি-ঠাট্টার মধ্যে হঠাৎই এমন সিরিয়াস অনুরোধ।
এই ভিড়ে দেদার চলেছে মুখে রং, ভারতীয় পতাকা আঁকার মহাযজ্ঞ। একে সকাল থেকেই চলেছে রাস্তায় রাস্তায় ঐতিহ্যবাহী রং খেলা, তার ওপর ভারতীয় ক্রিকেটে ‘বিশেষ’ দিন। স্টেডিয়াম চত্বরে রঙের কৌটা নিয়ে ঘুরছে একদল ‘ব্যবসায়ী’, সমর্থকেরাও এসে কেউ মুখ কেউ হাত এগিয়ে দিচ্ছে। কয়েকটি মুখ তো দেখা গেল একদমই বদলে গেছে। দিনের বেলা বলে ভূতের মতো লাগছিল লেখা যাচ্ছে না! নইলে তো ‘ভূত’ই!
ম্যারি সি কিজুসিকে দেখলে সেই ‘ভয়’ নেই। মুখে কিছু আঁকেননি। জাপানি ভদ্রমহিলা জীবনে এই প্রথম মাঠে বসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে এলেন! ভারতের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে ক্রিকেট দেখতে টোকিও থেকে তাঁর ছুটে আসা। ক্রিকেটের ওপর একটা বই লেখার প্রাক-অভিজ্ঞতা নেওয়াও একটা উদ্দেশ্য।
পেশায় শিক্ষক কিজুসি বলছিলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-মানসিকতা বোঝার জন্য ক্রিকেট দেখা চাই। আশির দশকে ছাত্রী হিসেবে এ দেশে এসে তখন দেখেছিলাম একটা পরিবারের সবাই সারা দিন টিভির সামনে বসে ক্রিকেট দেখে। তখন থেকেই এর প্রতি আমার আগ্রহ। টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি দেখতে পেলে সেটি আমার জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে।’ টেন্ু্ভ্রলকার আউট হয়ে যাওয়ার পর ফোনে ধরা গেলে কিজুসির কণ্ঠে ঝরল হতাশা, ‘আই অ্যাম ভেরি ডিজহার্টেড।’
তবে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি না দেখুন, জীবন্ত কিংবদন্তিকে মাঠে বসে দেখাও তো কম নয় এক জাপানিজের জন্য। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কিজুসি বলতে ভুললেন না, ‘এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। কোনো দিন ভোলার নয়!’
No comments