তালেবানি নির্মমতার শিকার সেই আয়শা এখন

আয়শা
এক আফগান তালেবান জঙ্গির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বিবি আয়শার (১৮)। কিন্তু সুখ হয়নি সংসারে। দিন-রাত খাটাখাটনি তো ছিলই, তার পরও চলত শ্বশুরবাড়ির লোকজনের শারীরিক নির্যাতন। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে পালান তিনি। কিন্তু পিছু নিয়ে স্বামী তাঁকে পাকড়াও করেন। শাস্তি হিসেবে কেটে দেন তাঁর নাক-কান। এভাবে অঙ্গহানির মাধ্যমে তাঁর চেহারা বিকৃত করে দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে এই নির্মম ঘটনার শিকার হন আয়শা। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে নাক-কানের আদল ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন তিনি। প্রসিদ্ধ সাময়িকী টাইম-এর ৯ আগস্ট সংখ্যার প্রচ্ছদে আয়শার নাকহীন ছবি ছাপা হয়েছে। আয়শা লিখতে-পড়তে জানেন না। টাইম সাময়িকীর নামও শোনেননি কখনো। তাঁকে নিয়ে এতে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর কী উপকারে আসবে, তাও অনুধাবন করার কোনো ক্ষমতা নেই তাঁর।
যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে স্বদেশে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে দীর্ঘ ১০ মাস ছিলেন আয়শা। সাময়িকীতে ছবি ছাপা হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এতে অন্য কোনো নারীর উপকার হবে কি হবে না, তা জানি না। তবে আমি আমার নাক-কান ফিরে পেতে চাই।’
ঘটনার শুরু আরও আগে। আয়শার বয়স তখন ১২ বছর। ছোট বোনের বয়স আরও কম। আফগানিস্তানের উরুজগান প্রদেশে এক তালেবান জঙ্গির পরিবারের কাছে এই দুই বোনকে হস্তান্তর করেন তাঁদের বাবা। সেখানকার আদিবাসী সমাজে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী একটি বিরোধ মেটাতেই এ ব্যবস্থা। স্থানীয় ভাষায়, এই বিরোধ ‘বাদ’ নামে পরিচিত। আয়শার এক চাচা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। এই রক্তঋণ শোধ করতে আয়শার বাবা দুই মেয়েকে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন।
কিশোরী বয়সে আয়শার বিয়ে হয় ওই জঙ্গির সঙ্গে। জঙ্গি হওয়ায় স্বামীকে বেশির ভাগ সময় পালিয়ে থাকতে হয়। এদিকে শ্বশুরবাড়িতে আয়শা ও তাঁর বোনের খাটতে খাটতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। চাচার কৃতকর্মের জন্য দুই বোনকে বেদম পিটুনি দিত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে আয়শা পালান সেখান থেকে। কিন্তু স্বামী তাঁকে ধাওয়া করে কান্দাহার থেকে পাকড়াও করেন।
আফগানিস্তানের পশতুন সমাজে স্ত্রীর কারণে কোনো স্বামী লজ্জা পেলে নাক-কাটা গেছে বলে তাঁকে ভর্ৎসনা করা হয়। আয়শা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সেই অপবাদ এসে পড়ে স্বামীর গায়ে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীর নাক ও কান কেটে দেন তিনি। মার্কিন সাহায্যকর্মীরা আয়েশাকে কাবুলে আফগান-আমেরিকান সংস্থা ‘উইমেন ফর আফগান উইমেন’-এর আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান।
টাইম সাময়িকীর প্রচ্ছদে আয়শার ছবির সঙ্গে যে কথাটি রয়েছে, তা হলো ‘আমরা আফগানিস্তান ছাড়লে কী ঘটবে।’ এতে আভাস দেওয়া হয়েছে, এখনই যে অবস্থা, দেশটি ত্যাগ করলে না জানি কী ঘটবে!
উইমেন ফর আফগান উইমেনের কর্মকর্তা মনিজা নাদেরি বলেন, দেশটি ত্যাগ করলে কী ঘটবে তা লোকজনের দেখা ও জানা প্রয়োজন।
তবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁরা বলছেন, এটি হচ্ছে আবেগকে পুঁজি করে জোর করে সেখানে থেকে যাওয়ার চেষ্টা।

No comments

Powered by Blogger.