মেধাবীরা পেল পুরস্কার -চারদিক by সাইফুল সামিন
ছেলেটা প্রায় বখেই গিয়েছিল। কিন্তু কী অবাক কাণ্ড! সে-ই কিনা বিএসএস সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হলো। এও কি সম্ভব!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অকাল প্রয়াত অধ্যাপক সিতারা পারভীনের সান্নিধ্যে একবার যে শিক্ষার্থী এসেছে, তাদের জীবন এমনভাবেই বদলে গেছে। এই যেমন, কাজী এম আনিসুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন ছাত্ররাজনীতিতে। সে চক্রে পড়ে তিনি নিয়মিত শুরু করেন মারামারি-কাটাকাটি আর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছাত্রনেতাদের পিছু পিছু ঘোরাঘুরি। ছেলেটার পড়ালেখায় মন নেই, মন নেই ক্লাসেও। ব্যাপারটা নজরে এল বিভাগের অধ্যাপক সিতারা পারভীনের। ছেলেটাকে ক্লাস শেষে দেখা করতে বললেন তিনি। নরম সুরে তিনি ওকে দিলেন মানুষ হওয়ার মন্ত্র। এই মন্ত্রবলেই বদলে গেল আনিসুলের জীবন। নিয়মিত ক্লাসে আসা শুরু হয় তাঁর, ঠিক ঠিক মনও থাকে ক্লাসে। প্রায় রসাতলে যাওয়া সেই আনিসুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০০৭ সালের বিএসএস সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হলেন।
একে কী বলা যায়? কোন বিশেষণে একে বাঁধব? অদ্ভুত, আশ্চর্য, নাকি অন্য কিছু? সময়ানুবর্তিতা, সততা, কর্মনিষ্ঠতার প্রতীক অধ্যাপক সিতারা পারভীন এমনই ছিলেন। মানুষ গড়া ছিল তাঁর পেশা আর নেশা। তাঁর পরামর্শ অনুসরণ করে পথহারা অনেক শিক্ষার্থীই পেয়েছেন পথের দিশা। কিন্তু এ মানুষটিই বড় অকালে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন চিরতরে। ২০০৫ সালের ২৩ জুন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। সিতারা পারভীন চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর আদর্শ চিরঞ্জীব হয়ে আছে। তাঁর জীবনাদর্শ, নীতি-নৈতিকতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে চালু করা হয়েছে অধ্যাপক সিতারা পারভীন স্মৃতি পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রতিবছর অনার্স সম্মান পরীক্ষায় প্রথম ১০ মেধাবী শিক্ষার্থীকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ মিলনায়তনে ২০০৭ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনার্স সম্মান পরীক্ষায় প্রথম ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন কাজী এম আনিসুল ইসলাম, উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল, মোহসিনা ইসলাম, মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, এ এইচ এম ইয়াসিন, মিনহাজ উদ্দিন, তানিয়া আফরিন, রাজীব আহমেদ, সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ রেজা-উল করিম শাম্মী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নীরবতা পালন করে সিতারা পারভীনের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাঁর আবেগঘন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উপস্থিত শ্রোতাদের নিয়ে যান অধ্যাপক সিতারা পারভীনের কর্মময় দিনগুলোতে। তিনি বলেন, সিতারা পারভীনের সময়ানুবর্তিতা, পেশাদারি, সততা, কর্মদক্ষতার প্রতিফলন এ প্রজন্মের মানুষের মধ্যে আজকাল আর তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না।’
সিতারা পারভীন ছিলেন এক অন্য রকম মানুষ। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন তিনি। তাঁর বেশ-ভূষায় ছিল না কোনো আভিজাত্যের ছোঁয়া। তাঁর অমায়িক আচার-ব্যবহারে ছিল না কোনো অহমিকা। তাই অতি সহজেই তিনি মিশে যেতে পারতেন তাঁর সহকর্মী কিংবা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তিনি ছিলেন সবার থেকে আলাদা। সর্বদাই তিনি ললিতকণ্ঠে শিক্ষার্থীদের শোনাতেন জীবনের কথা। তাঁর পাঠদান-প্রক্রিয়ায় সিলেবাসভুক্ত বিষয়াবলির বাইরেও স্থান পেত নানা বিষয়। সিতারা পারভীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সাধারণ আদব-কায়দার শিক্ষা দিতেন। তাঁর নীতি-নৈতিকতা, সততা, কর্মস্পৃহা, দায়িত্বশীলতা, কর্মদক্ষতা সত্যিই বিরল। এমন মানুষ কোথায় মিলবে!
প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া কাজী এম আনিসুল ইসলাম তাঁর অনুপ্রেরণার উত্স হিসেবে সিতারা পারভীনকেই দেখেন। তাই তো তিনি সিতারা পারভীনকে অভিহিত করলেন ‘শিল্পী’ হিসেবে; যিনি আমৃত্যু নিঃস্বার্থভাবে নিপুণ কারিগরের মতো মানুষ গড়ে গেছেন। তাতেই ছিল তাঁর সুখ। আর তাই তো সিতারা পারভীন মরেও অমর হয়ে আছেন। সিতারা পারভীনকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত অপর শিক্ষার্থী মোহসিনা ইসলাম আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘মা যেমন তাঁর সন্তানদের আগলে রাখেন, সিতারা আপাও তেমনিভাবে আমাদের আগলে রাখতেন। তাঁর অনুপ্রেরণা হতাশ বুকেও আশা জাগায়। অধ্যাপক সিতারা পারভীন চলে গেছেন। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর কর্ম, আদর্শ, জীবনদর্শন। এসবই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ। তাঁর শারীরিক উপস্থিতি হয়তো আমরা টের পাই না। কিন্তু তিনি আছেন সবার অন্তরে, সবার চেতনায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অকাল প্রয়াত অধ্যাপক সিতারা পারভীনের সান্নিধ্যে একবার যে শিক্ষার্থী এসেছে, তাদের জীবন এমনভাবেই বদলে গেছে। এই যেমন, কাজী এম আনিসুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন ছাত্ররাজনীতিতে। সে চক্রে পড়ে তিনি নিয়মিত শুরু করেন মারামারি-কাটাকাটি আর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছাত্রনেতাদের পিছু পিছু ঘোরাঘুরি। ছেলেটার পড়ালেখায় মন নেই, মন নেই ক্লাসেও। ব্যাপারটা নজরে এল বিভাগের অধ্যাপক সিতারা পারভীনের। ছেলেটাকে ক্লাস শেষে দেখা করতে বললেন তিনি। নরম সুরে তিনি ওকে দিলেন মানুষ হওয়ার মন্ত্র। এই মন্ত্রবলেই বদলে গেল আনিসুলের জীবন। নিয়মিত ক্লাসে আসা শুরু হয় তাঁর, ঠিক ঠিক মনও থাকে ক্লাসে। প্রায় রসাতলে যাওয়া সেই আনিসুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০০৭ সালের বিএসএস সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হলেন।
একে কী বলা যায়? কোন বিশেষণে একে বাঁধব? অদ্ভুত, আশ্চর্য, নাকি অন্য কিছু? সময়ানুবর্তিতা, সততা, কর্মনিষ্ঠতার প্রতীক অধ্যাপক সিতারা পারভীন এমনই ছিলেন। মানুষ গড়া ছিল তাঁর পেশা আর নেশা। তাঁর পরামর্শ অনুসরণ করে পথহারা অনেক শিক্ষার্থীই পেয়েছেন পথের দিশা। কিন্তু এ মানুষটিই বড় অকালে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন চিরতরে। ২০০৫ সালের ২৩ জুন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। সিতারা পারভীন চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর আদর্শ চিরঞ্জীব হয়ে আছে। তাঁর জীবনাদর্শ, নীতি-নৈতিকতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে চালু করা হয়েছে অধ্যাপক সিতারা পারভীন স্মৃতি পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রতিবছর অনার্স সম্মান পরীক্ষায় প্রথম ১০ মেধাবী শিক্ষার্থীকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ মিলনায়তনে ২০০৭ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনার্স সম্মান পরীক্ষায় প্রথম ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন কাজী এম আনিসুল ইসলাম, উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল, মোহসিনা ইসলাম, মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, এ এইচ এম ইয়াসিন, মিনহাজ উদ্দিন, তানিয়া আফরিন, রাজীব আহমেদ, সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ রেজা-উল করিম শাম্মী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নীরবতা পালন করে সিতারা পারভীনের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাঁর আবেগঘন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উপস্থিত শ্রোতাদের নিয়ে যান অধ্যাপক সিতারা পারভীনের কর্মময় দিনগুলোতে। তিনি বলেন, সিতারা পারভীনের সময়ানুবর্তিতা, পেশাদারি, সততা, কর্মদক্ষতার প্রতিফলন এ প্রজন্মের মানুষের মধ্যে আজকাল আর তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না।’
সিতারা পারভীন ছিলেন এক অন্য রকম মানুষ। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন তিনি। তাঁর বেশ-ভূষায় ছিল না কোনো আভিজাত্যের ছোঁয়া। তাঁর অমায়িক আচার-ব্যবহারে ছিল না কোনো অহমিকা। তাই অতি সহজেই তিনি মিশে যেতে পারতেন তাঁর সহকর্মী কিংবা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তিনি ছিলেন সবার থেকে আলাদা। সর্বদাই তিনি ললিতকণ্ঠে শিক্ষার্থীদের শোনাতেন জীবনের কথা। তাঁর পাঠদান-প্রক্রিয়ায় সিলেবাসভুক্ত বিষয়াবলির বাইরেও স্থান পেত নানা বিষয়। সিতারা পারভীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সাধারণ আদব-কায়দার শিক্ষা দিতেন। তাঁর নীতি-নৈতিকতা, সততা, কর্মস্পৃহা, দায়িত্বশীলতা, কর্মদক্ষতা সত্যিই বিরল। এমন মানুষ কোথায় মিলবে!
প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া কাজী এম আনিসুল ইসলাম তাঁর অনুপ্রেরণার উত্স হিসেবে সিতারা পারভীনকেই দেখেন। তাই তো তিনি সিতারা পারভীনকে অভিহিত করলেন ‘শিল্পী’ হিসেবে; যিনি আমৃত্যু নিঃস্বার্থভাবে নিপুণ কারিগরের মতো মানুষ গড়ে গেছেন। তাতেই ছিল তাঁর সুখ। আর তাই তো সিতারা পারভীন মরেও অমর হয়ে আছেন। সিতারা পারভীনকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত অপর শিক্ষার্থী মোহসিনা ইসলাম আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘মা যেমন তাঁর সন্তানদের আগলে রাখেন, সিতারা আপাও তেমনিভাবে আমাদের আগলে রাখতেন। তাঁর অনুপ্রেরণা হতাশ বুকেও আশা জাগায়। অধ্যাপক সিতারা পারভীন চলে গেছেন। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর কর্ম, আদর্শ, জীবনদর্শন। এসবই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ। তাঁর শারীরিক উপস্থিতি হয়তো আমরা টের পাই না। কিন্তু তিনি আছেন সবার অন্তরে, সবার চেতনায়।
No comments