‘মহিপালে গুলি চালাতে ৮ জনকে অস্ত্র দেয় যুবলীগ সভাপতি-সেক্রেটারি’

ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৪ঠা আগস্ট শহরের মহিপালে ছাত্র-জনতাকে গণহত্যায় দুইজন আসামি গতকাল সন্ধ্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়া র‌্যাব’র হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মুরাদ হোসেন বাবু ও পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি লিটন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আইনজীবী মেসবাহ উদ্দিন ভূঞা জানান, শহীদ মাহবুবুল হাসান মাসুম হত্যা মামলায় ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমানের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি মুরাদ। শহীদ ওয়াকিল আহম্মদ শিহাব হত্যা মামলায় ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট সাইয়েদ মো. শাফায়াতের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি ওসমান।

আদালত ও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জবানবন্দিতে ওসমান আদালতকে জানিয়েছে- ৪ঠা আগস্ট সকালে সে সহ ৮জন পৌরসভায় যায়। সেখানে আরও ৩শ’ থেকে ৪শ’ মানুষ উপস্থিত ছিল। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী ওইস্থানে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্যে রাখেন। তার বক্তব্যে যেকোনো মূল্যে ছাত্র-জনতাকে প্রতিহত করার জন্য উপস্থিত নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। এ সময় তার পাশে ছিলেন- সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল ও পৌর সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। এরপর মাস্টারপাড়া নিজাম হাজারীর বাড়ির এলাকা থেকে সাদা প্রাইভেটকারের মাধ্যমে ব্যাডমিন্টন ব্যাগে করে শর্টগান আনা হয়। পৌরসভার লিবার্টি সুপার মার্কেটের নিচতলায় কৃষকলীগের অফিস কক্ষে ওসমানসহ ৮জনকে ডেকে নিয়ে ৮টি শর্টগান ও ১০ রাউন্ড করে কার্তুজ (গুলি) দেয় পৌর যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম ভূঞা ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বাবলু। সূত্র আরও জানায়, মহিপালে হামলার সময় জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মজিবুল হক রিপন ও ফুলগাজী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদারকে অনুসরণ করতে অস্ত্রধারীদের নির্দেশ দেয়া হয়। হামলায় অংশ নিতে ৪০-৫০জন বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও ১শ’ থেকে ২শ’ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহিপালের দিকে যায়। ৫ ঘণ্টাব্যাপী জবানবন্দিতে অস্ত্রধারী ও অস্ত্র ছিল না এমন বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম আদালতকে জানায় লিটন। মহিপালে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য  করে গুলি করার সময় চৌধুরীবাড়ীর মুখে অবস্থান করায় উপরের দিকে ৮ রাউন্ড গুলি ছোড়ে লিটন। সংঘর্ষ শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কৃষকলীগের অফিসে গিয়ে যুবলীগ নেতা রফিক-বাবলুর কাছে অস্ত্র জমা দেয় তারা। এ সময় ব্যবহার না হওয়া ২ রাউন্ড গুলিও ফেরত দেয় লিটন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোতাহের হোসেন জানান, গত ১লা অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে র?্যাব’র একটি দল লিটনকে গ্রেপ্তার করে। জবানবন্দিতে লিটনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্ত চলছে।
এদিকে ৪ঠা আগস্ট ফেনীর মহিপালে গণহত্যায় জড়িত বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের অর্থ-বিষয়ক সম্পাদক মুরাদ হোসেন বাবু ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কলেজছাত্র মাহবুবুল হাসান মাসুম হত্যা মামলায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  ফারহানা লোকমান ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে গণহত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন আসামি। এর আগে ৩রা অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকালে সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের মিয়ার বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৭)। বাবু বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের অর্থ সম্পাদক ও ওই এলাকার রসুল আমিনের ছেলে। মাহবুবুল হাসান মাসুম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ার পর থেকে সে পলাতক ছিল।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.