আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর বহিরাগতদের হামলা

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন দাবি আদায়ে গত কয়েকদিনের টানা শ্রমিক বিক্ষোভের পর বিজিএমইএ, সরকার ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৮ দফা দাবি মেনে নেয়ায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আশুলিয়ার কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি শিল্প এলাকায় সেনা টহলও অব্যাহত রয়েছে। এদিকে দুপুরের পর আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার ডংলিয়ান ফ্যাশন লিমিটেড নামক চায়না মালিকানাধীন কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করলে কারখানার স্টোর ম্যানেজার কনকের নেতৃত্বে কারখানাটিতে সাব-কন্ট্রাকে কাজ করা স্থানীয় সন্ত্রাসী অনিক বহিরাগত লোকজন নিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। লোহার রড, স্টিলের পাইপ, কাঠ এবং বাঁশের লাঠি দিয়ে শ্রমিকদের বেধড়ক পেটানো হলে কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারী কনকসহ ১৭ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে কারখানাটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানাটির এক শ্রমিক জানান, কিছুদিন আগে শ্রমিকদের দাবির মুখে নানা অনিয়মের অভিযোগে কারখানার এইচআর ম্যানেজার রফিকুল ইসলামসহ চার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মধ্যে থেকে ৮৮ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করেন। অপর এক শ্রমিক জানান, কারখানার শ্রমিকরা যাতে দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে না পারে এজন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ এক হাজার টাকা হাজিরায় বহিরাগত তিন শত লোক নিয়োগ করেছে। তারা সাদা এবং কালো গেঞ্জি পরে প্রতিদিন কারখানার ভেতরে এবং বাইরে পাহারা দেয়। এদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করা চার কর্মকর্তাকে আবারো চাকরিতে পুনর্বহাল করলে শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ করায় কনক, অনিক ও রফিকের নেতৃত্বে বহিরাগত লোক দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।

কারখানাটির সিকিউরিটি অফিসার আতিয়ার রহমান বলেন, কোম্পানি নিরাপত্তার জন্য হাজিরা ভিত্তিতে বহিরাগত লোক রেখেছিল। শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বাকবিতণ্ডা হলে বহিরাগত লোকজন শ্রমিকদের ওপর হামলা চালালে অনেকেই আহত হয়। পরবর্তীতে কারখানাটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, স্টোর ম্যানেজার কনক ও সাব-কন্ট্রাকে কাজ করানো অনিক এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে মিলে কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের কাছে শ্রমিকরা অসহায়। কথায় কথায় তারা শ্রমিকদের মারধরসহ ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়ে থাকে। কারখানার শ্রমিকরা যাতে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে না পারে সেজন্য টাকা দিয়ে সন্ত্রাসী ভাড়া করে কারখানার ভেতরে ও বাইরে পাহারা বসিয়েছে। সেই ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরাই শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে। অন্যদিকে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকায় লুসাকা গ্রুপের শ্রমিকরা সকালে কারখানায় প্রবেশ করে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কর্মবিরতী পালন করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে কারখানাটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। একই এলাকার তাহারাত কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় গত বৃহস্পতিবার ১০ দফা দাবি আদায়ে শ্রমিকদের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গতকাল থেকে শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া নরসিংহপুর ইথিক্যাল গার্মেন্টস, জামগড়া এলাকার পলমল গ্রুপের আয়েশা ক্লথিং ও ইয়ারপুর এলাকার আঞ্জুমান গার্মেন্টসও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইউসুফ মার্কেট এলাকার জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশের এএসপি আনোয়ার হোসেন বলেন, ডংলিয়ান ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই ও চাকরিচ্যুত চার কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনায় বহিরাগতরা শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। এ ঘটনায় আমরা ১৭ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। বর্তমানে কারখানাটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির বলেন, দু/একটি কারখানায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সকাল থেকে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় ২৪টি কারখানা বন্ধ রয়েছে এবং কয়েকটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ, শিল্প পুলিশ, এপিবিএন, আর্মড পুলিশ, বিজিবিসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কারখানায় অবস্থানের পাশাপাশি টহল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.