গোয়ালিয়রে ‘দুই গরমে’ পুড়ছে বাংলাদেশ by ইশতিয়াক পারভেজ

দিল্লির বাতাস এখন ‘বাংলাদেশ’ নামে ভীষণ উত্তপ্ত। ফিসফাঁস! নানা গুঞ্জন। পরিচিত সংবাদকর্র্মীদের আগ্রহ ঢাকাকে ঘিরে। নানা প্রশ্ন তো আছেই। যতটা না ক্রিকেট, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক আলাপ। ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে মাত্র ৩৫১ কিলোমিটার দূরে গোয়ালিয়র শহর। প্রাচীন এই স্থান ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বড় ধারক হিসেবেই পরিচিত। এখানেও যুগের পর যুগ রাজাদের নানা রকম শাসন চলেছে। হয়েছে রাজ্য দখলে কত না কূটনীতি।  গোয়ালিয়র দুর্গ আজও সাক্ষী হয়ে আছে মমতাজ-শাহজাহানের বড় পুত্র আওরঙ্গজেবের রাজ্য দখলের ষড়যন্ত্রে মুরাদ সহ আপন তিন ভাইয়ের করুণ মৃত্যুর। দিল্লি থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেস যখন সেখানে থামে তার আগেই ঘোষণা দিয়ে গোয়ালিয়রকে রাজা-বাদশাহদের শহর হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো যাত্রীদের। এখানেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যেখানে তারা ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে পুড়ছে দুই ‘গরমে’। উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভারতের উগ্র ধর্মভিত্তিক দল অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার এই ম্যাচ ঘিরে বন্ধের (হরতাল) হুমকি। তারা এই ম্যাচের সরাসরি বিরোধিতা করছে। যে কারণে এখানে নিরাপত্তায় নামানো হয়েছে ২৫ হাজার পুলিশ। তবে বাইরের গরম নিয়ে খুব ভাবনা নেই দলের টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট তাওহীদ হৃদয়ের। এমনকি সূর্যের উত্তাপ নিয়েও। ট্রেন থেকে নামতেই তাপমাত্রা জানা গেলে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু অনুভূত হচ্ছে ৪০ ডিগ্রি। এরই মধ্যে গতকাল অনুশীলনটা সেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দলের তরুণ ব্যাটার হৃদয় বলেন, ‘এখানকার গরম আমাদের জন্য তেমন দুশ্চিন্তার বিষয় নয়। আমরা এই গরমে খেলে অভ্যস্ত। বাংলাদেশেও একই আবহাওয়া।’

গোয়ালিয়র শহরে দিনের বেলা যেন বাইরে হাঁটাই যায় না। রোদের তাপটা যেন সুঁইয়ের মতো শরীরে বিঁধে। যদিও সন্ধ্যার পর ম্যাচ, তাই ধারণা করা হচ্ছে- গরম তখন হয়তো একটু কমেই আসবে। রাজা-বাদশাহদের শহর হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে এখনো খুব একটা লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। শহর না বলে এটিকে বিশাল বড় একটি গ্রাম বললেও ভুল হবে না। যদিও এয়ারপোর্ট, পাঁচ তারকা হোটেল আছে। কিন্তু এখানকার মানুষের জীবনে তা বড় কোনো প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয় না। স্টেশন থেকে নেমে শহরের দিকে যতই প্রবেশ করেছি দেখা যাচ্ছিল বাড়তি নিরাপত্তা। মোড়ে মোড়ে যেমন পুলিশ আছে তেমনি দেখা মিলেছে হিন্দু মহাসভার কর্মদেরও। শ্রীমন্ত মাধব রাও সিন্ধিয়া স্টেডিয়ামে হতে যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। যার নামে স্টেডিয়াম তিনিও এখানকার রাজনীতি ও রাজা-বাদশাহদের বংশের একজন। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এই  স্টেডিয়াম। কিন্তু পুরো পথ জুড়ে গতকাল থেকেই নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্টেডিয়ামের দুই কিলোমিটারের মধ্যে সবাইকেই পুলিশের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পরিচয়পত্র ছাড়া মাঠের কাছে কারও যাওয়ারও সুযোগ নেই। আজ ম্যাচের দিন সেই নিরাপত্তা আরও বাড়বে তা সহজেই অনুমেয়। এমন উত্তাপের মাঝেও হৃদয় বেশ আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের খুব ভালো সুযোগ আছে পারফর্ম করার। আমরা অবশ্যই জিততে চাইবো। এটাই, আর কিছু নয়।’

ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ আয়োজনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। তাদের দাবি, গত ৫ই আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ‘নিপীড়ন’ করা হচ্ছে। সেটার প্রতিবাদে প্রথম টি-টোয়েন্টির দিন শহরটিতে ‘বন্‌ধ’ ডেকেছে ভারতের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলটি। এছাড়া, সমমনা আরও কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। তবে স্থানীয় প্রশাসন নির্বিঘ্নে ম্যাচটি আয়োজন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গোয়ালিয়রের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ  হচ্ছে, সীমানার মধ্যে কোনো ব্যক্তি যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এই আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাঘাত ঘটায় বা ধর্মীয় উস্কানি দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই ধরনের সমস্ত ব্যানার, পোস্টার, কাটআউট, পতাকা ও অন্যান্য আপত্তিকর সামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পাঁচ বা এর বেশি লোকের জমায়েত, আগ্নেয়াস্ত্র, তলোয়ার বা বর্শার মতো তীক্ষ্ণ ও ধারালো অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের সমস্ত ভবনের ২০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কেরোসিন, পেট্রোল ও অ্যাসিডের মতো দাহ্য পদার্থের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না দুই দলের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় এমন উত্তেজনার কোনো ছাপ দেখা না গেলেও ভিতরে ভিতরে শঙ্কা নেই তা কে বলবে!

mzamin

No comments

Powered by Blogger.