মাদারীপুর থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছে রোহিঙ্গারা
অভিযোগ রয়েছে মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলি আহম্মদ এবং শিবচর উপজেলা নির্বাচন কর্মকতা এসএম কাদেরের জোগসাজশে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই নারীকে ভোটার তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রদান করা হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, জমিলা খাতুন ও তার স্বামী মুক্তাবিজ ইসলাম পরিবারসহ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জাদির মুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৩ নম্বর ব্লকে বসবাস করতেন। কয়েক বছর আগে মুক্তাবিজ ইসলাম বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। এরপর তার স্ত্রী জমিলা খাতুনকে সৌদি আরব নেয়ার জন্য বাংলাদেশের নাগরিক বানিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। অভিযোগ রয়েছে, মাদারীপুরের স্থানীয় ঠিকানা ব্যহার করে ভোটার হচ্ছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা একাধিক রোহিঙ্গা। টাকার বিনিময়ে এমনটা করছেন নির্বাচন অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১লা অক্টোবর মাদারীপুর সদর উপজেলায় এক নাগরিক ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ভোটার হতে আসে। পরে তার জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে না পাওয়ায় তার ভোটার হওয়ার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) বানিয়ে পাসপোর্ট করে মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশে চলেও যাচ্ছে।
জানা যায়, রোহিঙ্গারা তাদের নাম-পরিচয় গোপন করে স্থানীয় কোনো পরিবারের স্বামী-স্ত্রীকে পিতা-মাতা বানিয়ে জনপ্রতিনিধি এবং নির্বাচন অফিসের কতিপয় কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ভোটার আইডি কার্ড বানাচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধিকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে এনআইডি তৈরি করছে। পাসপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশি সেজে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। একটি এনআইডি তৈরি করতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র। অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া প্রসঙ্গে জমিলা খাতুনের স্বামী সৌদি আরবে অবস্থানরত মুক্তাবিজ ইসলাম হোয়াটসঅ্যাপে দাবি করেন তিনি মিয়ানমারের নাগরিক হলেও তার স্ত্রী জমিলা খাতুন বাংলাদেশের নাগরিক। কীভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আমি রোহিঙ্গা হয়েছি তাতে কি হয়েছে? রোহিঙ্গারা কি বাংলাদেশের পাসপোর্ট পাবে না?
স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে ভোটার হচ্ছেন। এ দায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচন অফিস এড়াতে পারে না। টাকার বিনিময় ছাড়া এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি খুব সহজ নয়। কমপক্ষে পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করে এই কার্ড পাওয়া যায়। আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর তথ্য সংগ্রহ, পরিচিতি যাচাই, উপজেলা সার্ভারে প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রভৃতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদনকারীকে এনআইডি কার্ড দেয়া হয়। এজন্য বেশ সময়ও লাগে। উল্লিখিত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যদি কার্ড পেয়ে থাকে, তাহলেও বলতে হবে এক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা এসএম কাদের বর্তমানে ভোলা জেলা নির্বাচন অফিসে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলি আহম্মদ নিজের দায় অস্বীকার করে বলেন, শিবচর উপজেলায় এক রোহিঙ্গা নারী ভোটার হয়েছে, এমন ঘটনা জানার পর পুলিশ সুপারকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করেছি। পরে পুলিশ সুপারের তদন্তে বিষয়টি সত্যতা পাওয়া যায়। পরে আমরা সেই রোহিঙ্গা নারীর নাম তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছি। এ ছাড়াও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের শৃঙ্খলা শাখা থেকে অভিযুক্ত আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। রোহিঙ্গারা ভোটার হচ্ছে কিনা জানা নেই। তবে গত ১লা অক্টোবর মাদারীপুর সদর উপজেলায় এক নাগরিক ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ভোটার হতে আসে। পরে তার জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে না পাওয়ায় তার ভোটার হওয়ার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।
No comments