ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করব? by গোলাম মোর্তোজা
রাজনীতি
বা সমাজকে যেভাবে দেখি সেভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। ক্ষমতার
কেন্দ্রকে প্রশ্ন করতে পছন্দ করি। বিশ্বাস করি, একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী
হিসেবে এটাই দায়িত্ব। আমার বিশ্লেষণের সঙ্গে সবাই একমত হবেন, তা মনে করি
না। প্রশ্ন করলেই উত্তর পাওয়া যাবে, তেমন ধারণা নিয়েও বসে থাকি না। আমাদের
বিশ্লেষণ বা প্রশ্ন ক্ষমতাসীনরা বিবেচনায় নিবেন বা নেন, বিষয়টি মোটেই তেমন
নয়। এতে তারা বিরক্ত হন, ক্ষুব্ধতারও প্রকাশ ঘটান। তবুও নিজের কাজ করে
যাওয়ার চেষ্টা করি।
গত প্রায় ২৫ বছর এভাবেই কাজ করছি, কথা বলছি, লিখছি। ক্ষমতায় যেই থাকুক, আমার কলমের ভাষা একই রকম থেকেছে। তা গোপনীয় কিছু নয়, সবই দৃশ্যমান। প্রিন্ট মিডিয়াতে হাতে খড়ি। পরবর্তীতে নানা আঙ্গিকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে জড়ালেও এখন পর্যন্ত সনাতন গণমাধ্যমই আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজের জায়গা।
যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলনামূলক অনেক দেরিতে নাম লেখানো। যে মাধ্যমে রাতারাতি মানুষ তারকা বনে যায়, সে মাধ্যমে ভরসা করতে একটু সময় নিয়েছি। কিন্তু এক পর্যায়ে শুধু যোগাযোগের সহজতম মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার করতে শুরু করি ২০১৩’র মাঝামাঝি সময় থেকে। অল্পদিনেই ফলোয়ারের সংখ্যা যখন লাখ খানেক ছাড়িয়ে গেল, বুঝলাম সনাতন মিডিয়ায় কাজের কারণে এতোদিনে যে পাঠক শ্রেণী তৈরি হয়েছে, তাদের মতামত জানার দ্বিপাক্ষিক প্লাটফরমটা দুই পক্ষের জন্যই উপযোগী। আস্তে আস্তে একটা অভ্যস্ততায় পরিণত হলো ফেসবুক।
অথচ আমার এই ফেসবুক ব্যবহার কখনোই খুব স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক ছিলো না। ব্যবহার শুরুর পর থেকেই নানাবিধ সমস্যায় পড়ছিলাম। রিপোর্ট করে আইডি ডিজেবল করে দেয়ার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে চলছিল। গত প্রায় ৫ মাস যাবৎ আমার ফেসবুক ব্যবহার একেবারেই বন্ধ।
এর আগে ২০১৮ সালে আইডি টানা প্রায় দুই মাস বন্ধ ছিল। প্রথমে আইডি হ্যাকড করা হয়েছে, তারপর ফেসবুক ডিজেবল করে দিয়েছে। পরিচিতজন, শুভানুধ্যায়ীরা এগিয়ে এসেছেন। তাদের সহায়তায় ফেসবুকের হেড কোয়ার্টারের এক বড় কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হলো। আনঅফিসিয়ালি জানলাম যা লিখি তা যাদের পছন্দ নয়, তাদের চাওয়ায় আইডি ব্লক করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ফেসবুক নির্দিষ্ট করে কোনো কারণ দেখাতে পারেনি, যার প্রেক্ষিতে তারা আইডি ব্লক করে দিয়েছিল। আইডি আবার খুলে দিল। ছোটখাটো ঝামেলার মধ্য দিয়ে চলছিল। গত মে মাসের ২০ তারিখে আইডি আবার ডিজেবল করে দিল ফেসবুক। এবারও ডিজেবল করার ক্ষেত্রে কোনো কারণ দেখায়নি। শুধু ইমেল দিয়ে জানিয়েছে, আইডি যে আমারই- ফেক নয়, তা প্রমাণ করতে হবে।
পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, সাংবাদিকতার অফিসিয়াল পরিচয়পত্রসহ ফেসবুককে চার থেকে পাঁচ বার ইমেল করে প্রমাণ দিলাম। ফেসবুক একবারও জবাব দিল না। এরপর ইউরোপের একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আমার হয়ে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ফেসবুক তাদের জানায়, এই আইডিটি আর খুলে দেয়া সম্ভব নয়। সম্ভবত: ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমার আইডি ডিলিট করে দিয়েছে। ফেসবুক আমাকে কোনো কারণ জানায়নি। ফেসবুককে বারবার চ্যালেঞ্জ করে লিখেছি, নিয়মবহির্ভূত একটি শব্দও কখনো পোস্ট করিনি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তির আইডি ও পেজ ডিলিট করে দিয়েছিল, গুজব ও অসত্য প্রপাগান্ডা চালানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে। যাদের আইডি ও পেজ ডিলিট করে দিয়েছিল, তারা ফেসবুককে চ্যালেঞ্জ করা তো দূরে থাকুক প্রকাশ্যে বলতেও পারেনি যে, তাদের আইডি ডিলিট করে দিয়েছে। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শতভাগ সত্য ছিল, তথ্য-প্রমাণ ছিল। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সত্য বা অর্ধসত্য বা অসত্য কোনো তথ্য-প্রমাণ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। কারণ আমি অসত্য বা প্রপাগান্ডামূলক কর্মকাণ্ড কখনো ফেসবুকে পোস্ট করিনি।
বর্তমান পৃথিবীতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। ফেসবুক আইডি না থাকায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছিলাম। এমন অবস্থায় কয়েকদিন আগে একজন শুভাকাক্ষীর বুদ্ধি ও পরামর্শে ফেসবুকে একটি পেজ খুলেছি। নতুন একটি আইডিও খুলতে হয়েছিল পেজে প্রবেশের জন্যে। নতুন আইডিতে কোনো লেখা পোস্ট করিনি। আইডিটি সবার দেখার জন্যে উন্মুক্ত ছিল না। শুধু পেজে চার পাঁচটি লেখা পোস্ট করেছি। হঠাৎ করে দেখলাম ফেসবুক আমার নতুন আইডিও ডিজেবল করে দিয়েছে। কোনো কিছুই লিখলাম না! তবুও আইডি ডিজেবল? ক্লান্ত লাগছে। ফেসবুককে আর কিছু লিখিনি।
এখন প্রশ্ন হলো, আমি কেন ফেসবুক ব্যবহার করতে পারব না? কেন আমি মতপ্রকাশ করতে পারব না? এর জন্যে কাকে দায়ী করব?
‘সরকার কারও ফেসবুক আইডি বন্ধ করতে পারে না’- জোর প্রচারণা বা প্রপাগান্ডা চলছে। আবার সরকারের মন্ত্রীরা বারবার বলেছেন, ‘ফেসবুক এখন আমাদের কথা শুনতে শুরু করেছে।’
গত ২৯শে জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, ‘চলতি বছরের শেষ দিকে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে বাংলাদেশ৷’ (ডয়চে ভেলে, ১৮ই অক্টোবর ২০১৯)।
সেই নিয়ন্ত্রণ কি ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে?
সরকার আইডি বন্ধ করিয়েছে, এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে নেই। সুতরাং সরকারকে দায়ী করতে পারছি না। ‘ফেসবুক সরকারের কথা শুনছে’- কী কথা শুনছে? কারও আইডি বন্ধ বা ডিলিট করে দিতে বললে, ফেসবুক কি সে ‘কথা শুনছে’? জানিনা, মন্ত্রীর ওই বক্তব্য ছাড়া কোনো প্রমাণ হাতে নেই।
আমার লেখা অন্য যে কারও কাছে গুরুত্বহীন হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের মে মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ফেসবুকে যা লিখেছি, সবকিছু ডিলিট করে দিয়েছে ফেসবুক। কোনো কারণ জানায়নি। লেখা ও বহু ছবি সংগ্রহে নেই। ছিল শুধু ফেসবুকে।
এখন করণীয় কী? আমি কি আইনের আশ্রয় নিতে পারি? ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি? পারলে কোথায় করতে পারি, দেশে না বিদেশে? দেশে বা বিদেশে আইন ব্যবসার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত আছেন, তাদের কেউ কি বুদ্ধি বা পরামর্শ দিতে পারেন? করতে পারেন সক্রিয় কোনো সহায়তা?
কয়েকদিন আগে নিউইয়র্কে কথা হচ্ছিল একজন সংবাদকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টের সঙ্গে। তার আইডি বারবার ব্লক করে দেয়ায় তিনি ফেসবুকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তারপর অতি অল্প সময়ের মধ্যে ফেসবুক তার আইডি খুলে দেয়। যার কথা বলছি, তিনি একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। তার ক্ষেত্রে ফেসবুক যা করেছে, আমার ক্ষেত্রেও কি তা করবে? আমার নামের আগে তো ‘আমেরিকান’ শব্দটি নেই। আমি তো বাংলাদেশের অতি সাধারণ একজন সংবাদকর্মী। আমার গায়ের রঙ কালো, আমি বাংলাদেশের নাগরিক, এ কারণেই কি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এসব নির্দয়-অগ্রহণযোগ্য ও বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারছে?
মুক্তচিন্তা-বাক স্বাধীনতা-মতপ্রকাশ, কত কথাই না বলে ফেসবুক! অথচ আমার মতপ্রকাশে বাধা তৈরি করছে। যারা মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, ফেসবুক তাদের সহায়তা করছে?
একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কি কোনো অধিকার আছে এ ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণ করার?
গত প্রায় ২৫ বছর এভাবেই কাজ করছি, কথা বলছি, লিখছি। ক্ষমতায় যেই থাকুক, আমার কলমের ভাষা একই রকম থেকেছে। তা গোপনীয় কিছু নয়, সবই দৃশ্যমান। প্রিন্ট মিডিয়াতে হাতে খড়ি। পরবর্তীতে নানা আঙ্গিকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে জড়ালেও এখন পর্যন্ত সনাতন গণমাধ্যমই আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজের জায়গা।
যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলনামূলক অনেক দেরিতে নাম লেখানো। যে মাধ্যমে রাতারাতি মানুষ তারকা বনে যায়, সে মাধ্যমে ভরসা করতে একটু সময় নিয়েছি। কিন্তু এক পর্যায়ে শুধু যোগাযোগের সহজতম মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার করতে শুরু করি ২০১৩’র মাঝামাঝি সময় থেকে। অল্পদিনেই ফলোয়ারের সংখ্যা যখন লাখ খানেক ছাড়িয়ে গেল, বুঝলাম সনাতন মিডিয়ায় কাজের কারণে এতোদিনে যে পাঠক শ্রেণী তৈরি হয়েছে, তাদের মতামত জানার দ্বিপাক্ষিক প্লাটফরমটা দুই পক্ষের জন্যই উপযোগী। আস্তে আস্তে একটা অভ্যস্ততায় পরিণত হলো ফেসবুক।
অথচ আমার এই ফেসবুক ব্যবহার কখনোই খুব স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক ছিলো না। ব্যবহার শুরুর পর থেকেই নানাবিধ সমস্যায় পড়ছিলাম। রিপোর্ট করে আইডি ডিজেবল করে দেয়ার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে চলছিল। গত প্রায় ৫ মাস যাবৎ আমার ফেসবুক ব্যবহার একেবারেই বন্ধ।
এর আগে ২০১৮ সালে আইডি টানা প্রায় দুই মাস বন্ধ ছিল। প্রথমে আইডি হ্যাকড করা হয়েছে, তারপর ফেসবুক ডিজেবল করে দিয়েছে। পরিচিতজন, শুভানুধ্যায়ীরা এগিয়ে এসেছেন। তাদের সহায়তায় ফেসবুকের হেড কোয়ার্টারের এক বড় কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হলো। আনঅফিসিয়ালি জানলাম যা লিখি তা যাদের পছন্দ নয়, তাদের চাওয়ায় আইডি ব্লক করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ফেসবুক নির্দিষ্ট করে কোনো কারণ দেখাতে পারেনি, যার প্রেক্ষিতে তারা আইডি ব্লক করে দিয়েছিল। আইডি আবার খুলে দিল। ছোটখাটো ঝামেলার মধ্য দিয়ে চলছিল। গত মে মাসের ২০ তারিখে আইডি আবার ডিজেবল করে দিল ফেসবুক। এবারও ডিজেবল করার ক্ষেত্রে কোনো কারণ দেখায়নি। শুধু ইমেল দিয়ে জানিয়েছে, আইডি যে আমারই- ফেক নয়, তা প্রমাণ করতে হবে।
পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, সাংবাদিকতার অফিসিয়াল পরিচয়পত্রসহ ফেসবুককে চার থেকে পাঁচ বার ইমেল করে প্রমাণ দিলাম। ফেসবুক একবারও জবাব দিল না। এরপর ইউরোপের একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আমার হয়ে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ফেসবুক তাদের জানায়, এই আইডিটি আর খুলে দেয়া সম্ভব নয়। সম্ভবত: ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমার আইডি ডিলিট করে দিয়েছে। ফেসবুক আমাকে কোনো কারণ জানায়নি। ফেসবুককে বারবার চ্যালেঞ্জ করে লিখেছি, নিয়মবহির্ভূত একটি শব্দও কখনো পোস্ট করিনি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তির আইডি ও পেজ ডিলিট করে দিয়েছিল, গুজব ও অসত্য প্রপাগান্ডা চালানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে। যাদের আইডি ও পেজ ডিলিট করে দিয়েছিল, তারা ফেসবুককে চ্যালেঞ্জ করা তো দূরে থাকুক প্রকাশ্যে বলতেও পারেনি যে, তাদের আইডি ডিলিট করে দিয়েছে। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শতভাগ সত্য ছিল, তথ্য-প্রমাণ ছিল। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সত্য বা অর্ধসত্য বা অসত্য কোনো তথ্য-প্রমাণ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। কারণ আমি অসত্য বা প্রপাগান্ডামূলক কর্মকাণ্ড কখনো ফেসবুকে পোস্ট করিনি।
বর্তমান পৃথিবীতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। ফেসবুক আইডি না থাকায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছিলাম। এমন অবস্থায় কয়েকদিন আগে একজন শুভাকাক্ষীর বুদ্ধি ও পরামর্শে ফেসবুকে একটি পেজ খুলেছি। নতুন একটি আইডিও খুলতে হয়েছিল পেজে প্রবেশের জন্যে। নতুন আইডিতে কোনো লেখা পোস্ট করিনি। আইডিটি সবার দেখার জন্যে উন্মুক্ত ছিল না। শুধু পেজে চার পাঁচটি লেখা পোস্ট করেছি। হঠাৎ করে দেখলাম ফেসবুক আমার নতুন আইডিও ডিজেবল করে দিয়েছে। কোনো কিছুই লিখলাম না! তবুও আইডি ডিজেবল? ক্লান্ত লাগছে। ফেসবুককে আর কিছু লিখিনি।
এখন প্রশ্ন হলো, আমি কেন ফেসবুক ব্যবহার করতে পারব না? কেন আমি মতপ্রকাশ করতে পারব না? এর জন্যে কাকে দায়ী করব?
‘সরকার কারও ফেসবুক আইডি বন্ধ করতে পারে না’- জোর প্রচারণা বা প্রপাগান্ডা চলছে। আবার সরকারের মন্ত্রীরা বারবার বলেছেন, ‘ফেসবুক এখন আমাদের কথা শুনতে শুরু করেছে।’
গত ২৯শে জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, ‘চলতি বছরের শেষ দিকে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে বাংলাদেশ৷’ (ডয়চে ভেলে, ১৮ই অক্টোবর ২০১৯)।
সেই নিয়ন্ত্রণ কি ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে?
সরকার আইডি বন্ধ করিয়েছে, এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে নেই। সুতরাং সরকারকে দায়ী করতে পারছি না। ‘ফেসবুক সরকারের কথা শুনছে’- কী কথা শুনছে? কারও আইডি বন্ধ বা ডিলিট করে দিতে বললে, ফেসবুক কি সে ‘কথা শুনছে’? জানিনা, মন্ত্রীর ওই বক্তব্য ছাড়া কোনো প্রমাণ হাতে নেই।
আমার লেখা অন্য যে কারও কাছে গুরুত্বহীন হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের মে মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ফেসবুকে যা লিখেছি, সবকিছু ডিলিট করে দিয়েছে ফেসবুক। কোনো কারণ জানায়নি। লেখা ও বহু ছবি সংগ্রহে নেই। ছিল শুধু ফেসবুকে।
এখন করণীয় কী? আমি কি আইনের আশ্রয় নিতে পারি? ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি? পারলে কোথায় করতে পারি, দেশে না বিদেশে? দেশে বা বিদেশে আইন ব্যবসার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত আছেন, তাদের কেউ কি বুদ্ধি বা পরামর্শ দিতে পারেন? করতে পারেন সক্রিয় কোনো সহায়তা?
কয়েকদিন আগে নিউইয়র্কে কথা হচ্ছিল একজন সংবাদকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টের সঙ্গে। তার আইডি বারবার ব্লক করে দেয়ায় তিনি ফেসবুকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তারপর অতি অল্প সময়ের মধ্যে ফেসবুক তার আইডি খুলে দেয়। যার কথা বলছি, তিনি একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। তার ক্ষেত্রে ফেসবুক যা করেছে, আমার ক্ষেত্রেও কি তা করবে? আমার নামের আগে তো ‘আমেরিকান’ শব্দটি নেই। আমি তো বাংলাদেশের অতি সাধারণ একজন সংবাদকর্মী। আমার গায়ের রঙ কালো, আমি বাংলাদেশের নাগরিক, এ কারণেই কি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এসব নির্দয়-অগ্রহণযোগ্য ও বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারছে?
মুক্তচিন্তা-বাক স্বাধীনতা-মতপ্রকাশ, কত কথাই না বলে ফেসবুক! অথচ আমার মতপ্রকাশে বাধা তৈরি করছে। যারা মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, ফেসবুক তাদের সহায়তা করছে?
একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কি কোনো অধিকার আছে এ ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণ করার?
No comments